শ্রীলঙ্কার ভূগোল
| স্থানীয় নাম: ডাকনাম: ভারত মহাসাগরের মুক্তা | |
|---|---|
শ্রীলঙ্কার মানচিত্র | |
| ভূগোল | |
| অবস্থান | ভারত মহাসাগর |
| স্থানাঙ্ক | ৭° উত্তর ৮১° পূর্ব / ৭° উত্তর ৮১° পূর্ব |
| দ্বীপপুঞ্জ | 9 (mkpm) |
| আয়তন | ৬৫,৬১০ বর্গকিলোমিটার (২৫,৩৩০ বর্গমাইল) |
| আয়তনে ক্রম | ২৫তম |
| তটরেখা | ১,৩৪০ কিমি (৮৩৩ মাইল) |
| সর্বোচ্চ উচ্চতা | ২,৫২৪.১৩ মিটার (৮,২৮১.২৭ ফুট) |
| সর্বোচ্চ বিন্দু | প্যাড্রোটালাগালা |
| প্রশাসন | |
| বৃহত্তর বসতি | কলম্বো (জনসংখ্যা ৭,৫২,৯৯৩) |
| জনপরিসংখ্যান | |
| জনসংখ্যা | ২০,২৭৭,৫৯৭ (২০১২) |
| জনঘনত্ব | ৩২৩ /বর্গ কিমি (৮৩৭ /বর্গ মাইল) |
| জাতিগত গোষ্ঠীসমূহ | সিংহলি - ৭৫%, তামিল - ১১%, মুর - ৯% |

দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা এর প্রধান দ্বীপ শ্রীলঙ্কার নামানুসারে (পূর্বনামঃ সিলন, লংকাদ্বীপ, সিংহলদ্বীপ ইত্যাদি) শ্রীলঙ্কা নামে পরিচিত, ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণপূর্বে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপ যেটি ভারত মহাসাগরের প্রধান সমুদ্র পথের নিকটে একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে।
এই দেশটির মোট আয়তন ৬৫,৬১০ বর্গ কিমি; এর মধ্যে ৬৪,৬৩০ বর্গ কিমি ভূভাগ এবং ৯৮০ বর্গ কিমি জলভাগের অন্তর্ভুক্ত। এর উপকূলভূমি ১,৩৪০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। শ্রীলঙ্কার জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত: উত্তর-পূর্ব মৌসুমি জলবায়ু (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (জুন থেকে অক্টোবর) এখানে প্রভাব বিস্তার করে। ভূমিরূপের দিক থেকে এই দেশটির বেশিরভাগ অংশই নিম্ন সমভূমি এলাকাভূক্ত; সমতল হতে ধীরে ধীরে উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে মধ্য ভাগে অগ্রসর হয়েছে যার দক্ষিণ-মধ্য অঞ্চলটি পার্বত্যভূমি সমৃদ্ধ। শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ বিন্দুটি হলো ২৫২৪.১৩ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট পেড্রোটালাগালা পর্বত। প্রাপ্ত প্রধান প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে চুনাপাথর, গ্রাফাইট, খনিজ বালু, রত্নাদি, ফসফেট, কর্দম, জলশক্তি প্রভৃতি।
ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের সাথে ভূমিজ সংযোগ স্থাপনকারী শিকলাকৃতির "আদমের সেতু" (Adam's Bridge), যা চুনাপাথরের মিশ্রণে গঠিত একটি প্রাকৃতিক বেস্টনী তা এখন প্রায় সমুদ্রতলে তলিয়ে গিয়েছে। মন্দিরের রেকর্ড অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক পলিজ পথটি পূর্বে সম্পূর্ণ ছিল কিন্তু ১৪৮০ সালে সংগঠিত একটি প্রলংকারী ঝড়ে (সম্ভবতঃ এটি একটি ঘূর্ণিঝড় ছিলো) দ্বারা বিভক্ত হয়ে পড়ে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, এটি রামের ব্রিজ হিসাবে পরিচিত, যেটি প্রভু রামের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
ভূতত্ত্ব
[সম্পাদনা]শ্রীলঙ্কার ৯০% ভূমিই প্রাক-ক্যামব্রিয়াম যুগে গঠিত। এর কিছু কিছু ভূভাগ ২০০ কোটি বছরেরও বেশি পুরোনো।
ভূমির বন্ধুরতা
[সম্পাদনা]শ্রীলঙ্কা মূলতঃ নিম্ন সমভূমির ভূভাগে সমৃদ্ধ যার দক্ষিণাংশের মধ্যভাগে পার্বত্যভূমি রয়েছে।
জলবায়ু
[সম্পাদনা]শ্রীলঙ্কা নিরক্ষীয় জলবায়ুর অন্তর্গত। এই দেশের ভূভাগ ৫ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি অক্ষরেখার মধ্যে বিস্তৃত। সারাবছর এইখানে উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। এখানে বছরে গড় তাপমাত্রা থাকে ২৮ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি এর মধ্যে।
পরিসংখ্যান
[সম্পাদনা]ভূমি ব্যবহার:
চাষযোগ্য ভূমি:
১৩.৯৬%
নির্ধারিত ফসল:
১৫.২৪%
অন্যান্য:
৭০.৮% (২০০৫)।
সেচের আওতাভূক্ত জমি: ৫,৭০০ বর্গ কিমি (২০০৩)।
মোট পুনঃব্যবহারযোগ্য জলজ সম্পদ: ৫২.৮ কিউবিক কিমি।
প্রাকৃতিক সম্পদ: চুনাপাথর, গ্রাফাইট, খনিজ বালু, রত্নাদি, ফসফেট, কর্দম, জলশক্তি।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ: আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় এবং টর্নেডো।
পরিবেশগত বিষয়াবলী: বনধ্ববংস; ভূমিক্ষয়; বন্যপ্রাণী পাচার ও নগরায়নের কারণে হুমকীগ্রস্ত; ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং খনিজ উত্তোলনের ফলে উপকূলীয় এলাকার মানের অবনমন; কলকারখানার শিল্প বর্জ্য এবং পয়ঃনিষ্কাশনের দূষক পতিত হয়ে স্বাদু পানির সম্পদ দূষণ; পানি ক্ষরণ; কলম্বোর বায়ু দূষণ।
সামুদ্রিক অধিকারভূক্ত এলাকা
[সম্পাদনা]- মহীসোপান এলাকা: ২৪ নটিক্যাল মাইল (৪৪.৪ কিমি; ২৭.৬ মা)।
- মহীঢাল এলাকা: ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০.৪ কিমি; ২৩০.২ মা) বা, মহাদেশীয় প্রান্ত সীমানা পর্যন্ত।
- বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা: ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০.৪ কিমি; ২৩০.২ মা)।
- আঞ্চলিক সমুদ্র: ১২ নটিক্যাল মাইল (২২.২ কিমি; ১৩.৮ মা)।
ভূসংস্থান
[সম্পাদনা]
সময়ের সাথে সাথে ব্যাপক চ্যুতি এবং ক্ষয় বিভিন্ন ধরণের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে। উচ্চতা অনুসারে তিনটি অঞ্চলকে আলাদা করা যায়: কেন্দ্রীয় উচ্চভূমি, সমভূমি এবং উপকূলীয় অঞ্চল। [১]
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-মধ্য অংশ—দুর্গম মধ্য উচ্চভূমি —দেশটির প্রাণকেন্দ্র। এই এলাকার মূল অংশটি একটি উঁচু মালভূমি, যা প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। [১] এই অঞ্চলে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ পর্বতমালা [১] পিদুরুতালাগালা (২,৫২৪ মিটার) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মালভূমির দক্ষিণ প্রান্তে, পর্বতশ্রেণীগুলি পশ্চিমে অ্যাডামস পিক (২,২৪৩ মিটার) ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং পূর্বে নামুনুকুলার (২,০৩৬ মিটার) পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। [১] উচ্চ কেন্দ্রীয় শৈলশিরাগুলির পাশে দুটি নিম্ন মালভূমি রয়েছে। [১] পশ্চিমে হ্যাটন মালভূমি, উত্তর দিকে ঢালু হয়ে গভীরভাবে বিচ্ছিন্ন শৈলশিরাগুলির একটি সিরিজ। [১] পূর্বে, উভা অববাহিকা ঘাসে ঢাকা ঢালু পাহাড় নিয়ে গঠিত, যা কিছু গভীর উপত্যকা এবং গিরিখাত দ্বারা বেষ্টিত। [১] উত্তরে, প্রধান পর্বত এবং মালভূমি থেকে বিস্তৃত উপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন, নাকলস ম্যাসিফ অবস্থিত: খাড়া ঢাল, গভীর গিরিখাত এবং ১,৮০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতার চূড়া। [১] অ্যাডামস পিকের দক্ষিণে রাকওয়ানা পাহাড়ের সমান্তরাল শৈলশিরা অবস্থিত, যেখানে ১,৪০০ মিটারেরও বেশি উঁচু বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ রয়েছে। [১] এই ভূমিটি মধ্য উচ্চভূমি থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার উঁচুতে ঢালু খাড়া ঢালু অংশে নেমে এসেছে এবং উপকূলীয় সমভূমির দিকে ঢালু হয়ে পড়েছে। [১]
দ্বীপের বেশিরভাগ অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ থেকে ২০০ মিটার উঁচু সমভূমি দ্বারা গঠিত। দক্ষিণ-পশ্চিমে, শৈলশিরা এবং উপত্যকাগুলি ধীরে ধীরে উঠে মধ্য উচ্চভূমির সাথে মিশে যায়, যা সমভূমিকে একটি বিচ্ছিন্ন চেহারা দেয়। [১] এই অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙনের ফলে পাহাড়ি ঢালগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং ভাটিতে কৃষিকাজের জন্য উর্বর মাটি জমা হয়েছে। [১] দক্ষিণ-পূর্বে, লাল, ল্যাটেরাইটিক মাটি তুলনামূলকভাবে সমতল ভূমি জুড়ে রয়েছে যা খালি, একশিলা পাহাড় দ্বারা পরিপূর্ণ। [১] দক্ষিণ-পূর্বে সমভূমি থেকে মধ্য উচ্চভূমিতে স্থানান্তর হঠাৎ করে ঘটে এবং পাহাড়গুলি প্রাচীরের মতো উঁচুতে উঠে আসে। [১] পূর্ব এবং উত্তরে, সমভূমিটি সমতল, মধ্য উচ্চভূমি থেকে প্রবাহিত গ্রানাইটের দীর্ঘ, সরু শৈলশিরা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। [১]

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ত্রিশ মিটার উঁচু একটি উপকূলীয় অঞ্চল দ্বীপটিকে ঘিরে রেখেছে। উপকূলের বেশিরভাগ অংশই উপকূলীয় উপহ্রদ দ্বারা সজ্জিত মনোরম বালুকাময় সৈকত দ্বারা গঠিত। [১] জাফনা উপদ্বীপে, চুনাপাথরের স্তরগুলি কয়েকটি স্থানে নিম্ন-স্তম্ভের মতো ঢেউয়ের সংস্পর্শে আসে। [১] উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে, যেখানে উপকূল স্ফটিক শিলার স্তরবিন্যাস জুড়ে বিস্তৃত, সেখানে পাথুরে খাড়া খাড়া পাহাড়, উপসাগর এবং উপকূলীয় দ্বীপপুঞ্জ পাওয়া যায়; এই পরিস্থিতি উত্তর-পূর্ব উপকূলে ত্রিনকোমালিতে বিশ্বের সেরা প্রাকৃতিক বন্দরগুলির মধ্যে একটি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে গ্যালেতে একটি ছোট শিলা বন্দর তৈরি করেছে। [১]
শ্রীলঙ্কার নদীগুলি মধ্য উচ্চভূমিতে উৎপন্ন হয় এবং সমুদ্রের দিকে একটি রেডিয়াল প্যাটার্নে প্রবাহিত হয়। এই নদীগুলির বেশিরভাগই ছোট। [১] ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যের ১৬টি প্রধান নদী রয়েছে, যার মধ্যে বারোটি সমগ্র দেশের গড় নদী প্রবাহের প্রায় ৭৫% বহন করে। [১] দীর্ঘতম নদী হল মহাভেলি গঙ্গা (৩৩৫ কিমি) এবং মালভাথু নদী (১৭০ কিমি)। [১] উচ্চভূমিতে, ভূখণ্ডের বিচ্ছিন্নতার কারণে নদীর গতিপথ প্রায়শই ভেঙে যায় এবং যেখানে তারা ঢালু পথের মুখোমুখি হয়, সেখানে অসংখ্য জলপ্রপাত এবং দ্রুত স্রোত একটি পথকে ক্ষয় করে ফেলে। [১] একবার তারা সমভূমিতে পৌঁছালে, নদীগুলির গতি কমে যায় এবং জল প্লাবনভূমি এবং ব-দ্বীপ জুড়ে এলোমেলো হয়ে যায়। [১] নদীর উপরের অংশগুলি বন্য এবং সাধারণত চলাচলের অযোগ্য, এবং নিম্ন অংশগুলি মৌসুমী বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। [১] জলবিদ্যুৎ, সেচ এবং পরিবহন প্রকল্প তৈরির জন্য মানব হস্তক্ষেপ কিছু নদীর প্রবাহকে পরিবর্তন করেছে। [১] উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বে, নদীগুলি অসংখ্য কৃত্রিম হ্রদ বা জলাধার (ট্যাঙ্ক) তৈরি করে যা শুষ্ক মৌসুমে জল সঞ্চয় করে। [১] ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে, বৃহৎ পরিসরে প্রকল্পগুলি মহাভেলি গঙ্গা এবং পার্শ্ববর্তী নদীগুলিকে বাঁধ দিয়ে তাদের গতিপথ বরাবর বৃহৎ হ্রদ তৈরি করেছিল। [১] শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অভ্যন্তরীণ জলপথগুলিকে সংযুক্ত করে কয়েকশ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল, যার বেশিরভাগই ১৮ শতকে ডাচরা তৈরি করেছিল। [১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
এই নিবন্ধটিতে Library of Congress Country Studies থেকে পাবলিক ডোমেইন কাজসমূহ অন্তর্ভুক্ত যা পাওয়া যাবে এখানে ।