রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
জন্ম(১৯৫৬-১০-১৬)১৬ অক্টোবর ১৯৫৬
বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে
মৃত্যু২১ জুন ১৯৯১(1991-06-21) (বয়স ৩৪)
পেশাকবি ও সাহিত্যিক
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিউপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮২), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪), ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারমুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০)
দাম্পত্যসঙ্গীতসলিমা নাসরিন (বি. ১৯৮২; বিচ্ছেদ. ১৯৮৬)

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ - ২১ জুন ১৯৯১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি ও গীতিকার৷ তার জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম “বাতাসে লাশের গন্ধ”৷[১] এই কবির স্মরণে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে “রুদ্র স্মৃতি সংসদ”৷[২]

জন্ম ও শিশুকাল[সম্পাদনা]

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম তার পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়৷ তিনি বরিশাল আমানত গঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার সাহেবের মাঠ গ্রামে৷ তার বাবার নাম ডাঃ শেখ ওয়ালিউল্লাহ ও মায়ের নাম শিরিয়া বেগম৷[৩] উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম৷ ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল কবি রুদ্রর৷ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বোনের ট্র্যাংক থেকে তিনি ও তার মামাতো ভাইয়েরা মিলে টাকা ধার করেন৷ কথা ছিল তারা সিনেমা দেখতে যাবেন৷ কিন্তু সেটি না করে রুদ্র আরেকটি কাজ করলেন৷ তারা একটি লাইব্রেরি তৈরি করলেন৷ সেই লাইব্রেরির নাম দেয়া হয়েছিল বনফুল লাইব্রেরি৷ এছাড়া ছোটবেলায় রুদ্র অনেক অভিমানীও ছিলেন৷ একটা ঘটনা থেকে তা আঁচ করা যায়৷ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি তার স্কুলের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম হন৷ আবার একই স্কুলের পরিচালনা পরিষদে ছিলেন তার বাবা৷ নিজের ছেলেকে প্রথম স্থানের পুরস্কার দেয়াটা তিনি সমীচীন মনে করেননি৷ তিনি ভেবেছিলেন সেটা স্বজনপ্রীতি হতে পারে৷ অনুষ্ঠান শেষে তিনি অবশ্য অনেক বই কিনে দিয়েছিলেন তার ছেলেকে৷ কিন্তু রুদ্র তার বাবার দেয়া সব বই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অভিমান করে৷[৪]

যৌবন[সম্পাদনা]

যৌবনে রুদ্র ছিলেন প্রাণবন্ত এবং কিছুটা উচ্ছন্ন৷ খেয়ালীপনা তার মধ্যে ছিল না৷ তার চুল ছিল কোঁকরা৷ তার মুখে ছিল খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি৷ জিন্স পরতেন প্রায় সময়ই৷ সবসময় আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন৷ তবে কবিতার ক্ষেত্রে তিনি অনেক মনোযোগী থাকতেন৷ তার এই অস্থির ভাব নিয়ে কবি শামসুল হক বলেছিলেন, “তার মধ্যে যে বাউন্ডুলেপনা ছিল তা তাকে সুস্থির হতে দেয়নি৷”[৪]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন৷ ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন৷ চার বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়েছিলেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন৷[৩] ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন৷ অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন৷ ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ৷[৫]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক৷ ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন৷ প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত৷ এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত৷ কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাদের অন্যতম৷[৫] তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং “ভালো আছি ভালো থেকো”সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন৷[৬]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত-সমালোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন৷ ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে৷

প্রকাশিত গ্রন্থ[সম্পাদনা]

কবিতা[সম্পাদনা]

  • উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯)
  • ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১)
  • মানুষের মানচিত্র (১৯৮৬)
  • ছোবল (১৯৮৬)
  • গল্প (১৯৮৭)
  • দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮)
  • মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)[৭]

ছোটগল্প[সম্পাদনা]

  • সোনালি শিশির

নাট্যকাব্য[সম্পাদনা]

  • বিষ বিরিক্ষের বীজ

বড়গল্প[সম্পাদনা]

  • মনুষ্য জীবন

পুরস্কার[সম্পাদনা]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তসলিমা নাসরিনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি আরো মুক্ত জীবন যাপন করতে শুরু করেন৷ তিনি খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করতেন৷ ঠিক ঠাক সময়ে খেতেন না এবং নিজের শরীরের যত্ন নিতেন না৷ ফলে তার পাকস্থলিতে ক্ষত তৈরি হয়েছিল৷ ১৯৯১ সালের ২১ জুন ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে তিনি মারা যান৷[৮][৪][৫]বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার মিঠাখালি মামার বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত কবি৷

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১১ 
  2. "রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত - প্রথম আলো"। ২০১৫-০১-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  3. "কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন আজ"। ১৬ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২১ 
  4. "গল্পস্বল্প: প্রেম, দাম্পত্য, বিচ্ছেদ- তসলিমাকে নিজের হাতে গড়েছিলেন কবি রুদ্র"। জি। ২৪ জুন ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২১ 
  5. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান; ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩৫৭।
  6. http://www.bangladeshfirst.com/newsdetails.php?cid=2&scid=0&nid=2447
  7. কবি ও কবিতা – রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ | শব্দনীড়
  8. "AmaderBarisal.com - এক যে ছিল রুদ্র: রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ'র ২৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী"www.amaderbarisal.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]