পাকিস্তানের প্রাণিকুল
পাকিস্তান এর স্থানীয় প্রাণী এর বৈচিত্র্যময় জলবায়ু অঞ্চলকে বিশেষভাবে প্রতিফলিত করে। বলা যায়, উত্তর পাকিস্তান, যার মধ্যে রয়েছে খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং গিলগিট বাল্টিস্তান, দুটি এলাকাই পাকিস্তানের জীব বৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবে পরিচিত, এবং যার মধ্যে মধ্য এশিয়ার পর্বতমালা এবং হিমালয় অংশ বিশেষভাবে জুড়ে রয়েছে।[১]
বিন্যাস
[সম্পাদনা]উত্তরের উচ্চভূমি এবং সমতলভূমি
[সম্পাদনা]উত্তরের উচ্চ ভূমি গুলোর মধ্যে রয়েছে পোটোহার এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর অঞ্চলের নিম্ন উচ্চ ভূমি এলাকা এবং হিমালয়ান, কারাকোরাম এবং হিন্দুকুশ পর্বতের পাদদেশে ঘেরা উচ্চতর অঞ্চল। এখানকার উত্তর পার্বত্য অঞ্চল এবং পোথোহার মালভূমি তে পাওয়া কিছু বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে ভারাল, ইউরেশিয়ান লিংকস, হিমালয়ান গরাল, ইন্ডিয়ান চিতাবাঘ, মার্কো পোলো ভেড়া, মারমোট যা দেওসাই জাতীয় উদ্যানে দেখা যায় এবং হলুদ-গলাযুক্ত মার্টেন, চুকার তিতির প্রজাতির পাখি, ইউরেশিয়ান ঈগল- পেঁচা, হিমালয়ান মোনাল এবং হিমালয়ান স্নোকক এবং উভচর প্রজাতির হিমালয়ান টোড এবং মারে হিলস ব্যাঙ। জীব বৈচিত্রের বিপর্যের ফলে যেসব প্রাণীরা এখানে হুমকির মুখে রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: এশিয়াটিক কালো ভাল্লুক, হিমালয়ান বাদামী ভাল্লুক, ইন্ডিয়ান নেকড়ে, কাশ্মীর ধূসর লাঙ্গুর, কাশ্মীরের লাল হরিণ, মার্কোর, রিসাস ম্যাকাক, সাইবেরিয়ান আইবেক্স, মসৃণ-কোটেড ওটার, সাদা পেটযুক্ত কস্তুরী হরিণ, চিয়ার ফিজ্যান্ট, পেরগ্রিন ফ্যালকন, ওয়েস্টার্ন ট্রাগোপান এবং সরীসৃপ প্রজাতির মুগার কুমির।
সিন্ধু সমভূমি এবং সিন্ধু মরুভূমি
[সম্পাদনা]সিন্ধু এবং চেনাব নদীর অসংখ্য পূর্ব উপনদীগুলো অনেকগুলো ফ্লুভিয়াল বা নদী থেকে উৎপন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে যা পাকিস্তানের পাঞ্জাব এবং পশ্চিম সিন্ধু সমভূমি এর বেশিরভাগ এলাকা দখল করে আছে। সিন্ধু সমভূমি এবং সিন্ধুর মরুভূমির কিছু স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যারা তুলনামূলক কম হুমকিতে রয়েছে তাদের মধ্যে: নীলগাই, লাল শিয়াল এবং বন্য শুয়োর, পক্ষীকুল শ্রেণির মধ্যে আলেক্সান্দ্রিন প্যারাকিট, শস্যাগার পেঁচা, কালো ঘুড়ি, ময়না, হুপো, ইন্ডিয়ান ময়ূর, লাল-ভেন্টেড বুলবুল, পাথর কবুতর , শেলডাক এবং শিকরা, সরীসৃপ প্রজাতির ইন্ডিয়ান কোবরা, ইন্ডিয়ান তারকা কাছিম, সিন্ধ ক্রাইট এবং হলুদ মনিটর। উভচর প্রজাতির ইন্ডাস ভ্যালি বুলফ্রগ এবং সিন্ধু উপত্যকা টোড। যে সকল স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী হুমকির সম্মুখীন তন্মধ্যে রয়েছে: অক্ষ হরিণ, ব্ল্যাকবাক, হগ হরিণ, ইন্ডিয়ান গন্ডার, পাঞ্জাব ইউরিয়াল এবং সিন্ধ আইবেক্স , পক্ষী প্রজাতির মধ্যে সাদা-ব্যাকড শকুন এবং সরীসৃপ প্রজাতির কালো পুকুরের কচ্ছপ, ঘড়িয়াল। চোলিস্তান মরুভূমিতে যে কয়েকটি পাখি পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি হলো ধূসর তিতির। থারপারকার মরুভূমির চিঙ্কারা অঞ্চল এর প্রাণীদের বসবাসের জন্য বেশ অনূকুল রয়েছে। এশিয়াটিক বন্য গাধারা খাদ্যের সন্ধানে ভারতীয় কচ্ছের গ্রেট রান অংশ থেকে পাকিস্তানের বন্য অংশে চলে এসেছে।
বিলুপ্ত প্রাণী
[সম্পাদনা]এই অঞ্চলে এক সময় এশিয়াটিক সিংহ দেখা যেত। ১৮১০সালে, কোট ডিজি এর কাছে এই প্রজাতির একটি সিংহকে তখন হত্যা করা হয়েছিলো।[২]
পশ্চিমের উচ্চভূমি, সমভূমি এবং মরুভূমি
[সম্পাদনা]পাকিস্তানের পশ্চিম অঞ্চল, যার বেশিরভাগই বেলুচিস্তান প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত যেখানে ভূপ্রকৃতি জটিল পর্যায়ের। এই অঞ্চলের কিছু স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে রয়েছে: ক্যারাকাল, বেলুচিস্তান চিতাবাঘ, বেলুচিস্তান ফরেস্ট ডরমাউস, ব্ল্যানফোর্ডের শিয়াল, ড্রোমেডারি উট, গোয়েটারেড গাজেল, ইন্ডিয়ান ক্রেস্টেড সজারু, লম্বা-কানের হেজহগ, মারখোর, রেটেল এবং ডোরাকাটা হায়েনা, দাড়িওয়ালা শকুন], হাউবার বাস্টার্ড এবং মার্লিন, সরীসৃপ প্রজাতির লেপার্ড গেকো এবং স-স্কেলড ভাইপার এবং বেলুচিস্তান টোড এর উভচর প্রজাতি।
জলাভূমি, উপকূলীয় অঞ্চল এবং সামুদ্রিক জীবন
[সম্পাদনা]পাকিস্তান জুড়ে বেশ কয়েকটি সুরক্ষিত জলাভূমি রামসার কনভেনশন রয়েছে। এসব জলাভূমি গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি যেমন: ডালমাশিয়ান পেলিকান, ডেমোইসেল ক্রেন এর পাশাপাশি ওসপ্রে, সাধারণ কিংফিশার, মাছ ধরা বিড়াল উল্লেখযোগ্য। চিতা বাঘের মতো শিকারী প্রজাতির প্রাণীদের আবাসস্থল যেটি হচ্ছে উপকূলবর্তী। চাশমা ও তৌনসা ব্যারেজ ডলফিন অভয়ারণ্য মিঠা পানিতে বসবাসকারী সিন্ধু নদীর ডলফিন এর বিপন্ন প্রজাতিকে রক্ষা করছে। পাকিস্তানের উপকূলরেখাটি প্রায় ১০৫০;কিমি দীর্ঘ এবং এতে বিভিন্ন ধরনের আবাসস্থল রয়েছে, যা বিভিন্ন প্রাণীদের বেচে থাকতে সহায়তা করছে, যার মধ্যে ১০০০ টিরও বেশি মাছের প্রজাতি রয়েছে যা মহাদেশীয় শেলফ এর প্রাচীররে অবস্থিত। কচ্ছের গ্রেট রণ-এর পশ্চিম উপকূল, পূর্বে সিন্ধু নদীর ব-দ্বীপ এবং নীচে থারপারকার মরুভূমি, এমন কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি যেখানে বৃহত্তর ফ্ল্যামিঙ্গোরা বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এটি কম সংখ্যক ফ্লোরিকান-এর বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থলও বটে। ইন্ডাস রিভার ডেল্টা সাধারণ স্নেকহেড, দৈত্য স্নেকহেড, সিন্ধু বারিল এবং ক্যাটফিশ এর মতো অনেক প্রজাতির জন্য বাসা বাধার জায়গা যেমন রিতা। ইলিশ বাচ্চা দিতে আরব সাগর থেকে সাঁতার কেটে মিঠা পানিতে চলে আসে। যেসব প্রজাতি খাদ্য হিসেবে মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন গোল্ডেন মাহসির এবং বড় মিঠা পানির চিংড়ি (ম্যাক্রোব্রাকিয়াম প্রজাতি), তারা অগাধ জলজ জীবনে অভ্যস্ত। বেলুচিস্তানের [[আস্তোলা দ্বীপ সিন্ধুর সৈকত হল পাঁচটি বিপন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপদের বাসা বাধার স্থান: সবুজ সমুদ্র, লগারহেড, হকসবিল, অলিভ রিডলি এবং লেদারব্যাক উল্লেখযোগ্য। সামুদ্রিক সাপ যেমন হলুদ-পেটযুক্ত সামুদ্রিক সাপও সমুদ্রের পেলাজিক জোন এ পাওয়া যায়। পাকিস্তানের জলাভূমি ঘড়িয়াল এবং মুগার কুমির-এর বিপন্ন প্রজাতিরও বাসস্থান, এবং যারা স্বাদুপানির আবাসস্থল বেশি পছন্দ করে।
সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
[সম্পাদনা]শিরোনাম | প্রতীক | ছবি |
---|---|---|
জাতীয় পশু | মারখোর (কাপর ফালকানেরি) | |
রাষ্ট্রীয় প্রাণী | তুষার চিতা (উনচিয়া) | |
জাতীয় পাখি | চুকার পার্টট্রিজ (অ্যালেক্টোরিস চুকার) | |
রাষ্ট্রীয় পাখি | শাহীন ফ্যালকন বা শাহীন (পেরগ্রিন ফ্যালকন) | |
জাতীয় জলজ প্রাণী | সিন্ধু ডলফিন এবং ভুলান (প্ল্যাটানিস্তা মাইনর) | |
জাতীয় প্রজাপতি | ভারতীয় বেগুনি সম্রাট (মিমাথিমা আম্বিকা) | |
জাতীয় মাছ | মাহসির (তোর পুটিতোরা) | |
জাতীয় সরীসৃপ | মুগার কুমির (ক্রোকোডাইলাস প্যালুস্ট্রিস) | |
জাতীয় উভচর | সিন্ধু উপত্যকা টোড (বুফো স্টোমাটিকাস) |
শ্রেণীবিন্যাস/শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]- পাকিস্তানের মোলাস্কস
- পাকিস্তানের আর্থ্রোপডস
- পাকিস্তানের কর্ডেটস
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Biodiversity Hot spots of Pakistan and the world - SU LMS"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-৩০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Nowell, Kristin; Jackson, Peter (১৯৯৬)। "Panthera Leo"। Wild Cats: Status Survey and Conservation Action Plan (PDF)। Gland, Switzerland: IUCN/SSC Cat Specialist Group। পৃষ্ঠা 17–21। আইএসবিএন 2-8317-0045-0।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Pakista largest Wildlife Website
- Pakistan Avicultural Foundation ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে