জলেশ্বর শিবমন্দির
জলেশ্বর শিব মন্দির | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
ঈশ্বর | শিব |
অবস্থান | |
অবস্থান | ভুবনেশ্বর |
রাজ্য | ওড়িশা |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২০°২১′৪০″ উত্তর ৮৫°৫১′১০″ পূর্ব / ২০.৩৬১১১° উত্তর ৮৫.৮৫২৭৮° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | কলিঙ্গশৈলী |
সম্পূর্ণ হয় | ১২ শতক |
উচ্চতা | ২৩ মি (৭৫ ফু) |
জলেশ্বর শিবমন্দির ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভুবনেশ্বরে অবস্থিত একটি শিবমন্দির।[১] মন্দিরটি কালারাহাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণাংশে অবস্থিত যা পাতিয়া থেকে ২.০০ কিলোমিটার এবং চুয়াডাঙ্গাগড় থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে ভুবনেশ্বরের উত্তরাংশে অবস্থিত। এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা বৃত্তাকার যোনিপিঠের উপর অধিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ।
কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]কিংবদন্তি অনুযায়ী রাজা চুয়াডাঙ্গাগদা লিঙ্গরাজের একনিষ্ঠ পূজারী ছিলেন। তিনি প্রতিদিন লিঙ্গরাজ মন্দিরে যেতেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন লিঙ্গরাজ মন্দিরে যাওয়া সম্ভব হতো না। তাই দেবতা তাকে স্বপ্নাদেশ করেন পার্শ্ববর্তী পদ্ম পুকুরের মাঝখানে মন্দির নির্মাণের যেখানে তিনি জলাশয়ী রূপে অবস্থান করেন। দেবতার ইচ্ছাপূরণে তিনি জলেশ্বর পুকুরের পশ্চিমপাড়ে বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন। পূজা অর্চনা এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য রাহাঙ্গা শাসনের ব্রাহ্মণ ও অন্যান্য সেবায়েতদের জন্য রাজা জমি প্রদান করেন। স্থানটি কালারাহাঙ্গা নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী মন্দিরটি কেশরী শাসক পদ্ম কেশরী নির্মাণ করেন কিন্ত সোমবংশের বংশলতিকা সেটা নিশ্চিত করে না। শিববিবাহ, শিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী, দোলপূর্ণিমা, শীতলাষষ্ঠী, চন্দন যাত্রা, পিণ্ডদান, ধনু মকর ইত্যাদি অনুষ্ঠান এখানে পালিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক আচার যেমন বিবাহ উৎসব, মুন্ডানাক্রিয়া ও বাগদান ইত্যাদির আয়োজন করা হয় এখানে। একটি বড় দেয়াল দিয়ে মন্দির চত্বরের চতুর্পাশ ঘেরা। দেয়ালের বাইরে পূর্বদিকে জলেশ্বর পুকুর, উত্তর ও দক্ষিণে ধানক্ষেত এবং পশ্চিম দিকে রাস্তা। পাশের নিচু ধানক্ষেতের অবস্থানের কারণে ধারণা করা হয় একসময় মন্দিরটি চারদিক থেকে পানিতে ঘেরা ছিলো যা স্থানীয় কিংবদন্তিকে সমর্থন করে।
স্থাপত্যশৈলী
[সম্পাদনা]মন্দিরটিতে একটি বিমান, একটি অন্তরাল, একটি জগমোহন আছে এবং অল্প কিছু দূরত্বে একটি নটমন্দির অবস্থিত। বিমানটি ৫.৪০ বর্গমিটার, অন্তরাল ১.৩০ মিটার এবং জগমোহন ৯.০০ বর্গমিটার। বিমানটি রেখাশৈলীর বড়, গান্ধী এবং মস্তকযুক্ত। মন্দিরটির জগমোহন পরশুরামেশ্বরের মত পরবর্তীতে নির্মিত।
উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বের কুলুঙ্গির প্রতিটির পরিমাপ ১.০৮ মিটার উঁচু ও ০.৫৬ মিটার চওড়া এবং ০.৫৬ মিটার গভীর। দক্ষিণে গণেশ, পূর্বে কার্তিক এবং উত্তরে মহিষমর্দিনী অবস্থান করছে। কুলুঙ্গির নিচের তলগর্ভিকা খাখড়ামুন্ডি নকশা এবং উপরের উর্ধগর্ভিকা কীর্তিমুখ মোটিফ দ্বারা নকশাকৃত। উত্তরের কুলুঙ্গিতে পার্বতীর স্থানে মহিষমর্দিনী অবস্থান করছেন যার দশটি হাত। অধিকাংশ হাত এবং সরঞ্জামাদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মনুষ্যরূপী অসুর কাটা মহিষের মধ্য থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। অসুরটি ছুটন্ত অবস্থায় আছে, ডান থেকে বামে সরছে। দুই অসুর শুম্ভ ও নিশুম্ভ অস্ত্র উঁচিয়ে ছুটছে। দুজন কাত্যায়নী ছুরি হাতে এই অসুরদের তাঁড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণের কুলুঙ্গিতে গণেশ পদ্ম ফুলের উপর ত্রিভঙ্গ মুদ্রায় দাঁড়িয়ে আছে। তার নিচের বাম হাত পরশুর হাতলে রাখা ও ডান হাতে অক্ষমালা ধরা এবং উপরের বামহাতে মোদকপাত্র এবং ডানহাতে ভাঙা দাঁত ধরা। মূর্তির মাথায় জটামুকুট পরা এবং উড়ন্ত বিদ্যাধারা পাখা দিয়ে হাওয়া করছে। মূর্তিটি মকর তোরণের সামনে অবস্থিত। ভিত্তির কাছে ঈঁদুর অবস্থান করছে। পূর্বের কুলুঙ্গিতে সজ্জিত ভিত্তির উপরে ত্রিভঙ্গ মুদ্রায় চার হাতযুক্ত কার্তিক বিরাজমান। তার উপরের ডান হাত ভাঙা।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lesser Known Monuments of Bhubaneswar by Dr. Sadasiba Pradhan (আইএসবিএন ৮১-৭৩৭৫-১৬৪-১)