গ্রিক সাহিত্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গ্রিক সাহিত্য বলতে গ্রিক প্রভাবযুক্ত সমমনস্ক অঞ্চলগুলিতে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে রচিত প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য থেকে আজকের আধুনিক গ্রিক সাহিত্যকে বোঝায়। এগুলি সাধারণত কোনও গ্রিক উপভাষায় রচিত।

প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য প্রাচীন গ্রিক উপভাষায় রচিত হয়েছিল। এই সাহিত্যের পরিসর টিকে থাকা প্রাচীনতম লিখিত রচনা থেকে শুরু করে আনুমানিক পঞ্চম শতাব্দীর সৃষ্টিকর্ম পর্যন্ত। এই সময়কালকে প্রাক-ধ্রুপদী, ধ্রুপদী, হেলেনিস্টিক এবং রোমান সময়কালে ভাগ করা হয়। প্রাক-ধ্রুপদী গ্রিক সাহিত্য প্রাথমিকভাবে পুরাণকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এবং এতে হোমারের সৃষ্টিকর্ম ইলিয়াডওডিসি অন্তর্ভুক্ত। ধ্রুপদী যুগে নাটক ও ইতিহাস রচনার সূচনা হয়। তিনজন দার্শনিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: সক্রেটিস, প্লেটো এবং অ্যারিস্টটল। রোমান যুগে ইতিহাস, দর্শন এবং বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা হয়।

বাইজেন্টাইন সাহিত্য বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাহিত্য, যা অ্যাথেন্সের রচনাশৈলী, মধ্যযুগীয় এবং প্রারম্ভিক আধুনিক গ্রিক ভাষায় রচিত হয়। এই সময়ের মধ্যে ইতিহাস থেকে স্বতন্ত্র সৃষ্টিকর্ম কড়চা বা ঘটনাপুঞ্জির উদ্ভব হয়। এই যুগে বিশ্বকোষেরও বিকাশ ঘটে।

আধুনিক গ্রিক সাহিত্য সাধারণ আধুনিক গ্রিক ভাষায় রচিত। ক্রিটান রেনেসাঁ কবিতা ইরোটোক্রিটোস এই সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে একটি। অ্যাডামান্টিওস কোরাইস এবং রিগাস ফেরাইওস সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য (৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ)[সম্পাদনা]

হোমারের প্রতিকৃতি

প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য বলতে প্রাচীন গ্রিক উপভাষায় রচিত সাহিত্যকে বোঝায়। এই সৃষ্টিকর্মসমূহের পরিসর গ্রিক ভাষার টিকে থাকা প্রাচীনতম লিখিত রচনা থেকে শুরু করে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর সৃষ্টিকর্ম পর্যন্ত। প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে গ্রিক ভাষার উদ্ভব হয়; এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শব্দ জিহ্বার বিভিন্ন পুনর্গঠন থেকে নেওয়া যেতে পারে। গ্রিক ভাষা পেশ করার জন্য বেশ কিছু বর্ণমালা এবং পাঠ্যক্রম ব্যবহার করা হয়েছিল, কিন্তু টিকে থাকা গ্রিক সাহিত্য ফিনিশীয় থেকে প্রাপ্ত বর্ণমালায় লেখা হয়েছিল যা প্রাথমিকভাবে গ্রিক আইওনিয়াতে উদ্ভূত হয়েছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে অ্যাথেন্সে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করা হয়েছিল।[১]

প্রাক-ধ্রুপদী যুগ (৮০০-৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)[সম্পাদনা]

সোফোক্লেসের প্রতিকৃতি
হেরোডোটাসের প্রতিকৃতি

সমস্ত প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য কিছু মাত্রায় মৌখিক প্রকৃতির ছিল এবং প্রাচীনতম সাহিত্য সম্পূর্ণরূপে মৌখিকই ছিল।[২] সাহিত্যের উদ্দেশ্যে লেখার ব্যবহার করার আগে গ্রিকরা কবিতা সৃষ্টি করেছিল। প্রাক-ধ্রুপদী যুগে সৃষ্ট কবিতাসমূহ গাওয়া বা আবৃত্তি করা হত (খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর আগে লেখার কথা খুব কমই জানা ছিল)। বেশিরভাগ কবিতাই পৌরাণিক কাহিনী এবং আংশিক লোককথা ও আংশিক ধর্মনির্ভর কিংবদন্তির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রচিত হত। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দের দিকে বিয়োগান্ত এবং হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্মের আবির্ভাব ঘটে।[৩]

গ্রিক সাহিত্যের শুরুর দিকের অন্যতম সৃষ্টিকর্ম হল হোমারের ইলিয়াডওডিসি। যদিও সৃষ্টিকর্ম দুটির সময়কাল নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তবে এই সৃষ্টিকর্ম দুটি ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা তার পরে রচিত হয়েছিল। আরেকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন কবি হেসিয়ড। তার টিকে থাকা দুটি সৃষ্টিকর্ম হল ওয়ার্কস অ্যান্ড ডেজথিওগনি

ধ্রুপদী যুগ (৫০০-৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)[সম্পাদনা]

প্লেটোর প্রতিকৃতি

ধ্রুপদী যুগে পাশ্চাত্য সাহিত্যের অনেক ধারা আরও প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। গীতি কাব্য, গাঁথা, রাখালী কবিতা, শোকগাঁথা, ক্ষুদ্র কবিতা; হাস্যরসাত্মক ও বিগোয়ান্ত সৃষ্টিকর্মের নাটকীয় উপস্থাপনা; ইতিহাস, অলঙ্কারশাস্ত্র, দার্শনিক দ্বান্দ্বিকতা, এবং দার্শনিক গ্রন্থসমূহ এই সময়ের মধ্যে উদ্ভূত হয়।[৩]

এই সময়ের দুই প্রধান গীতিকবি ছিলেন স্যাফোপিন্ডার। এই সময়ের মধ্যে রচিত ও অভিনীত শত শত বিগোয়ান্ত নাটকের মধ্যে সীমিত সংখ্যক নাটকই টিকে ছিল। এই নাটকগুলো লিখেছেন ইস্কিলাস, সোফোক্লেসইউরিপিদেস[৪]

হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম দিয়োনুসোসের সম্মানে একটি অনুষ্ঠান থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। এই নাটকগুলো অশ্লীলতা, গালিগালাজ ও অপমানে ভরপুর ছিল। অ্যারিস্টোফেনিসের টিকে থাকা নাটকগুলো এই ধরনের হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনার ভান্ডার।

এই যুগের দুই প্রভাবশালী ঐতিহাসিক হলেন হেরোডোটাসথুসিডাইডিস। তৃতীয় একজন ঐতিহাসিক জেনোফন "হেলেনিকা" রচনা করেন, যা থুসিডাইডিসের কাজের একটি সম্প্রসারিত রূপ বলে বিবেচিত হয়।[৪]

খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ গদ্য কৃতিত্ব ছিল দর্শনে। ধ্রুপদী যুগে প্রাচীন গ্রিক দর্শনের বিকাশ ঘটে। এই সময়ের দার্শনিকদের মধ্যে সক্রেটিস, প্লেটোঅ্যারিস্টটল সবচেয়ে বিখ্যাত। প্লেটো রিপাবলিক গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য ও থিয়্যাটিটাস গ্রন্থে রাষ্ট্র ও দর্শন তথা ইন্দ্রিয়লব্ধ ও বৌদ্ধিক জ্ঞানের অসঙ্গতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। অন্যদিকে এরিস্টটল পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, অধিবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, নন্দনতত্ত্ব, কবিতা, মঞ্চনাটক, সঙ্গীত, মনোবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতিসরকার-সহ বিস্তৃত পরিসর নিয়ে লিখেছেন।

হেলেনিস্টিক (৩২৩-৩১ খিস্টপূর্বাব্দ)[সম্পাদনা]

৩৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ম্যাসিডনের দ্বিতীয় ফিলিপ অনেকগুলো প্রধান গ্রিক শহর জয় করেন। ফিলিপের পুত্র আলেকজান্ডার তার পিতার সাম্রাজ্যের আরও বিস্তৃতি ঘটান।

হেলেনিস্টিক যুগ হল মহান আলেকজান্ডারের মৃত্যু থেকে শুরু করে রোমান আধিপত্য পর্যন্ত সময়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর পর উত্তর মিশরের গ্রিক উপনিবেশ আলেকজান্দ্রিয়া গ্রিক সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

থিওক্রিটাস, ক্যালিমাকাস এবং রোডসের অ্যাপোলোনিয়াসের উল্লেখযোগ্য অবদানে গ্রিক কবিতার বিকাশ ঘটে। থিওক্রিটাস আনুমানিক ৩১০ থেকে ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে জীবিত ছিলেন। তিনি রাখালী কবিতার স্রষ্টা ছিলেন, এমন একটি ধরন যা রোমান কবি ভের্গিলের গ্রামীণ কবিতায় দেখা যায়।[৫]

নাটকে নব্য হাস্যরসাত্মক ধারার উপস্থাপন করা হয়, যার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন মেনান্ডার। তার টিকে থাকা একমাত্র প্রায় সম্পূর্ণ রচনা ডিস্কোলোস[৬]

হেলেনিস্টিক যুগের সবচেয়ে মূল্যবান অবদানগুলোর মধ্যে একটি ছিল ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রিক ভাষায় সেপ্টুয়াজিন্ট অনুবাদ। এই কাজটি আলেকজান্দ্রিয়ায় করা হয়েছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে সম্পন্ন হয়েছিল।

রোমান যুগ (৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ২৮৪ খ্রিস্টাব্দ)[সম্পাদনা]

জর্জিওস কোর্তাতজিসের এরোফিলি বইয়ের প্রচ্ছদ

রোমান যুগে গ্রিক ভাষায় সাহিত্য কবিতা, হাস্যরসাত্মক, ইতিহাস এবং বিয়োগান্ত বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে। এই সময়ের সাহিত্যের একটি বড় অংশ ছিল ইতিহাস।

এই যুগের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ছিলেন টিমেউস, পলিবিউস, ডিওডোরুস সিকুলুস, হালিকার্নাসুসের ডিওনিসিউস, আলেকজান্দ্রিয়ার এপিয়ান, এরিয়ান, ও প্লুতার্ক। তাদের সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীর শেষ থেকে খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

এই সময়কালে কোইনে গ্রিকে বিভিন্ন মানসম্পন্ন বিভিন্ন লেখকের রচিত নিউ টেস্টামেন্ট পাওয়া যায়। সুসমাচার এবং সন্ত পৌলের পত্রগুলোও এই সময়ে লেখা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. লেহমান, উইনফ্রেড পি.; স্লোকাম, জোনাথন। "Classical Greek Online: Series Introduction"লিঙ্গুইস্টিক রিসার্চ সেন্টার। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  2. রিস, স্টিভ (২০১৫)। Orality and Literacy: Ancient Greek Literature as Oral Literature। অক্সফোর্ড: ব্ল্যাকওয়েল। পৃষ্ঠা ৪৩–৫৭। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  3. "Greek literature"এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  4. গুট্‌জউইলার, ক্যাথলিন জে. (২০০৭)। "Review of: A Guide to Hellenistic Literature. Blackwell Guides to Classical Literature"ব্রিন মার ক্লাসিক্যাল রিভিউ: ২৬১। আইএসএসএন 1055-7660। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  5. "Historiography of the Hellenistic Age"। ৯ ডিসেম্বর ২০১৬। ২০১৭-১০-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. কনস্টান, ডেভিড (২০১০)। Menander of Athens। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৩–৬। আইএসবিএন 978-0199805198 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]