কাঞ্জি (খাদ্য)
অন্যান্য নাম | আম্বিলা |
---|---|
ধরন | তরকারি, পরিজ |
প্রকার | পার্শ্ব খাবার |
উৎপত্তিস্থল | ভারত |
অঞ্চল বা রাজ্য | ওড়িশা |
পরিবেশন | গরম |
প্রধান উপকরণ | ভাতের ফেন, দই, শাক |
ভিন্নতা | দই কাঞ্জি, পরিবা কাঞ্জি, তোরানি কাঞ্জি, শাক কাঞ্জি |
কাঞ্জি (ওড়িয়া: କାଞ୍ଜି) হল ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ঐতিহ্যগতভাবে প্রস্তুত ভাতের ফেন দিয়ে তৈরি একটি খাবার। এটি কীভাবে তৈরি করা হয় তার উপর নির্ভর করে, এটি পরিজ, স্যুপ বা তরকারি হিসাবে খাওয়া হয়। এটি ছাপান্ন ভোগের মধ্যে একটি (৫৬টি খাদ্য সামগ্রী যা মহাপ্রসাদ নামেও পরিচিত), যেটি দিনের শেষ খাবারের অংশ হিসাবে পুরীর জগন্নাথকে অর্পণ করা হয় ("বাদাউ সিংহারা ভোগ" নামে পরিচিত)।[১] কাঞ্জি আনলা ওশা এই ওড়িয়া উৎসব চলাকালীন,[২][৩] দেবী সাথীকে কাঞ্জি নিবেদন করা হয়।
বৈচিত্র
[সম্পাদনা]ওড়িশার বিভিন্ন অংশে অনেক ধরনের কাঞ্জি প্রস্তুত করা হয়।[৪][৫]
দই কাঞ্জি
[সম্পাদনা]দই কাঞ্জির দুটি বৈচিত্র রয়েছে। একটিতে, ভাত এর প্রধান উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয় এবং অন্যটিতে বেসন বা চালের আটা ব্যবহার করা হয়।
১) ভাত ব্যবহার করে দই কাঞ্জি: একটি কড়াইতে (ওড়িয়া: କଡ଼େଇ রান্নার পাত্র) চাল রান্না করা হয়, সঙ্গে দেওয়া হয় হলুদ গুঁড়ো এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ। চাল বেশি সেদ্ধ হতে দেওয়া হয় যাতে এটি বেশ নরম হয়ে যায় এবং তারপরে এতে দই যোগ করা হয়। কিছু সময়ের জন্য রান্না করার পরে এটিকে আগুন থেকে সরানো হয় এবং ফোড়ন (ওড়িয়া: ଛୁଙ୍କ) দিয়ে ভালো করে মেশানো হয়। কিছু সর্ষের তেল গরম করে তাতে পাঁচ ফোড়ন, আদা ও রসুন কুচি, শুকনো লঙ্কা, কারি পাতা, হিং (ঐচ্ছিক) যোগ করে এবং কিছুক্ষণ ভেজে ফোড়ন প্রস্তুত করা হয়। দই কাঞ্জি সাধারণত ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয় বা একটি প্রধান খাবার হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।[৬]
২) বেসন ব্যবহার করে দই কাঞ্জি (ওড়িয়া: ବେସନ) এই খাবারটি তৈরি করতে, দই ও জলের সাথে বেসন বা চালের আটা মেশানো হয় এবং ফোটানো হয়। স্বাদ অনুযায়ী লবণ ও হলুদ গুঁড়ো যোগ করা হয় এবং রান্না হয়ে গেলে আগুন থেকে সরানো হয়। তারপর এতে ফোড়ন দেওয়া হয়।[৭]
পরিবা (সবজি) কাঞ্জি
[সম্পাদনা]কাঁচা কাটা শাক সবজি যেমন মূলা, চালকুমড়া, ঢেঁড়শ, কুমড়া, সজনে ডাঁটা এবং বেগুন একটি কড়াইতে জলের মধ্যে দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে জন্মানো অন্য যে কোনো শাকও ব্যবহার করা যেতে পারে। হলুদ গুঁড়ো, আদা এবং লবণ যোগ করা হয় এবং শাক সবজি সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ফোটানো হয়। একটি আলাদা বাটিতে, দই এবং বেসন বা চালের আটা জলের সাথে মেশানো হয় এবং ফুটন্ত শাক সবজিতে যোগ করা হয়। রান্না হয়ে গেলে তা আঁচ থেকে সরানো হয় এবং ফোড়ন (ওড়িয়া: ଛୁଙ୍କ) দিয়ে ভালো করে মেশানো হয়। পরিবা কাঞ্জি ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। এটি আম্বিলা (ওড়িয়া: ଆମ୍ବିଳ) বা শুধুই কাঞ্জি নামেও পরিচিত, এই খাবারটি পশ্চিম এবং দক্ষিণ ওড়িশায় বেশ জনপ্রিয়।[৮]
এই খাবারটি তৈরির প্রধান উপাদান হল তোরানি (ওড়িয়া: ତୋରାଣି) "পেজা তোরানি" (ওড়িয়া: ପେଜ ତୋରାଣି) নামেও পরিচিত, যেটি হল চাল সিদ্ধ করার পর বের করে নেওয়া ভাতের ফেন। বার করে নেওয়া ফেন সাধারণত গাঁজন করার জন্য কয়েক দিনের জন্য রেখে দেওয়া হয় যতক্ষণ না এটি টক স্বাদ তৈরি করে। ঐচ্ছিকভাবে আমসির (শুকনো করা আম) একটি টুকরো (ওড়িয়া: ଆମ୍ବୁଲ) এতে দেওয়া যেতে পারে। গাঁজন প্রক্রিয়া চলাকালীন, প্রতিদিন তাজা ফেন আগের ফেনের সাথে যোগ করা হয়। যখনি এটি থেকে টক গন্ধ বার হতে শুরু করে, বোঝা যায় তোরানি কাঞ্জি তৈরি করার জন্য এটি প্রস্তুত হয়ে গেছে। কাঞ্জি তৈরি করতে, শাক সবজি যেমন কুমড়ো, মূলা, সজনে ডাঁটা, শিম, তেলাকুচা, ঢেঁড়শ, চালকুমড়া বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত যেকোনো শাকসবজি কেটে কাঞ্জিতে কিছু জল দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। হলুদ গুঁড়ো এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ যোগ করা হয়। ঐচ্ছিকভাবে ১-২ টুকরো আমসি (আচারযুক্ত সবুজ আম) যোগ করা যেতে পারে এটি টক করতে, যদি ভাতের ফেন যথেষ্ট টক না হয়। সব শাক সবজি সিদ্ধ হয়ে গেলে এবং কাঞ্জি ঘন হয়ে গেলে, এটি আগুন থেকে সরানো হয় এবং ফোড়ন যোগ করা হয়। ফোড়ন তৈরি করার জন্য, সর্ষের তেল গরম করে তাতে পাঁচ ফোড়ন, কারি পাতা, আদা, শুকনো লঙ্কা যোগ করা হয় এবং কিছু সময়ের জন্য এটি ভাজা হয়। রঙ পরিবর্তন শুরু হলে তাপ থেকে সরানো হয়। কাঞ্জির এই বৈচিত্রটি দক্ষিণ ওড়িশাতে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।[৯][৪] [১০]
কাঞ্জি আনলা ওশা চলাকালীন (যা অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পড়ে),[২][৩] তোরানি কাঞ্জি দেবী সাথীকে (ওড়িয়া: ଷଠି) নিবেদন করা হয়, সঙ্গে থাকে শুঁটকি মাছ এবং আমলকী, মূলা শাক, পুঁই শাক এবং অন্যান্য পূজা সামগ্রী। কৃষকেরা তাদের ক্ষেতের জমিতে ভাল ফসলের জন্য কাঞ্জি প্রদান করে।
যখন শাক (ওড়িয়া: ଶାଗ) যোগ করে তোরানি কাঞ্জি তৈরি করা হয়, তাকে বলে শাগ বা পত্র কাঞ্জি। সাধারণত স্থানীয়ভাবে পাওয়া শাক যেমন সজনে (ওড়িয়া: ସଜନା ଶାଗ) পাতা বা ছোট পেঁয়াজ পাতা (ওড়িয়া: ଗନ୍ଧନା) বা অমরনাথ (ওড়িয়া: କୋସଳା) বা গোঙ্গুরা (ওড়িয়া: ଗୋର୍କୁରା) এতে দেওয়া হয়। যদিও উপরের রান্নাগুলি সাধারণত ওড়িশা জুড়ে প্রস্তুত করা হয়, কাঞ্জির আরও অনেক আঞ্চলিক বৈচিত্রও রয়েছে, যেমন চিংড়ি (ওড়িয়া: ଚିଙ୍ଗୁଡି) কাঞ্জি, কাঁকড়া (ওড়িয়া: କଙ୍କଡା) কাঞ্জি, শুঁটকি মাছ (ওড়িয়া: ଶୁଖୁଆ কাঞ্জি।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
[সম্পাদনা]কাঞ্জি গ্রীষ্মকালে শরীর শীতল করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং খুবই পুষ্টিকর।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Das, Suryanarayan (মে ১৮, ২০১০)। Lord Jagannath। Sanbun Publishers। আইএসবিএন 9789380213224 – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ "The perishing tradition" (পিডিএফ)। magazines.odisha.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "12 Exclusive And Authentic Odia Festivals That Are Auspiciously Celebrated!"। Mycitylinks- Bhubaneswar | Cuttack | Puri।
- ↑ ক খ "Kanji: The Odia Appetizer – BBSR Pulse"।
- ↑ "Kanji, A Unique Odia Recipe That Resembles The North India Kadhi!"। Mycitylinks- Bhubaneswar | Cuttack | Puri।
- ↑ "Taste Of Odisha || Dahi Kanji || Odia Cuisine"। YouTube। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১।
- ↑ "ଦହି କାଞ୍ଜି|Dahi Kanji Odia Authentic Recipe|Dahi Kadhi Recipe|Besan Kadhi|Chawal Kadhi|Dahi Ka Kadi"। YouTube। ২০১৮-০৩-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১।
- ↑ "Taste Of Odisha || Ambila || ଆମ୍ବିଳ - Odia Cuisine"। YouTube। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১।
- ↑ "Torani Kanji Authentic Odia/Odisha Recipe|Tanka Torani Kanji|Kadi|Torani Kadhi|Torani Ambila"। YouTube। ২০১৭-১২-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০১।
- ↑ "Torani Kanji recipe by Alka Jena at BetterButter"। www.betterbutter.in।