বিষয়বস্তুতে চলুন

ঢেঁড়শ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ঢেঁড়শ
Abelmoschus esculentus
গাছে ঢেঁড়শ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Malvales
পরিবার: মালভেসি
গণ: Abelmoschus
প্রজাতি: A. esculentus
দ্বিপদী নাম
Abelmoschus esculentus
(L.) Moench
প্রতিশব্দ[]
  • Abelmoschus bammia Webb
  • abelmoschus longifolius (Willd.) Kostel.
  • Abelmoschus officinalis (DC.) Endl.
  • Abelmoschus praecox Sickenb.
  • Abelmoschus tuberculatus Pal & Singh
  • Hibiscus esculentus L.
  • Hibiscus hispidissimus A.Chev. nom. illeg.
  • Hibiscus longifolius Willd.
  • Hibiscus praecox Forssk.
ঢেঁড়শ ফুল

ঢেঁড়শ (অন্য নাম ভেন্ডি) মালভেসি পরিবারের এক প্রকারের সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি তুলা, কোকোহিবিস্কাসের সাথে সম্পর্কিত। ঢেঁড়শ গাছের কাঁচা ফলকে সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus esculentus; অথবা Hibiscus esculentus L। এটি পৃৃৃথিবীর ক্রান্তীয় অঞ্চল জন্মে।[]

ঢেঁড়শ গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা ১০-২০ সেমি দীর্ঘ এবং চওড়া। পাতায় ৫-৭টি অংশ থাকে। ফুল হয় ৪-৮ সেমি চওড়া, পাপড়ির রঙ সাদাটে হলুদ, ৫ টি পাপড়ি থাকে। প্রতিটি পাপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপী বিন্দু থাকে। ঢেঁড়শ ফল ক্যাপসুল আকারের, প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, এবং এর ভেতরে অসংখ্য বীজ থাকে।

উৎস, নাম ও বিস্তৃতি

[সম্পাদনা]

ঢেঁড়শকে ইংরেজিতে বলা হয় ওকরা (Okra)। আমেরিকার বাইরের ইংরেজিভাষী স্থানে এটি লেডিজ ফিঙ্গার (Lady's Fingers) নামেও পরিচিত [],। কোনো কোনো স্থানে, যেমন আমেরিকার কিছু অংশ এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এটি গাম্বো (gumbo) নামেও খ্যাত, যা এসেছে এর পর্তুগিজ নাম "quingombo," থেকে, যার আদি উৎস হলো পূর্ব আফ্রিকীয় শব্দ "quillobo,"[]

ওকরা নামটি পশ্চিম আফ্রিকা থেকে এসেছে।[] আফ্রিকার বান্টু ভাষায় এটাকে বলা হয় কিঙ্গুম্বো। আরবি ভাষায় এর নাম বামিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটিকে ভেন্ডি বা ভিন্ডি বলা হয়।

ঢেঁড়শ ফুলের মুকুল ও অপরিপক্ক বীজ শুঁটি

ঢেঁড়শের আদি নিবাস ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি এলাকায়। সেখান থেকে কীভাবে এটি অন্যত্র ছড়িয়ে যায়, তা জানা যায় না। মিশরীয় ও মূর জাতির বিভিন্ন রচনায় ১২শ ও ১৩শ শতকে আরবি ভাষায় ঢেঁড়শের কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে ধারণা করা যায় যে, প্রাচ্য হতেই এটি সেখানে এসেছে। সম্ভবত ইথিওপিয়া হতে লোহিত সাগর বা আরব উপদ্বীপের নিকটবর্তী বাব-আল-মান্দিব প্রণালী পেরিয়ে এটি আরবে ও পরে ইউরোপে যায়। ১২১৬ সালে এক স্পেনীয় মূর জাতির ব্যক্তির লেখায় এর উল্লেখ রয়েছে। মিশর ভ্রমণকালে এই মূর তার রচনায় উল্লেখ করেন, স্থানীয় ব্যক্তিরা ঢেঁড়শের ফল আটার সাথে মিশিয়ে খেতো। []

আরব থেকে ঢেঁড়শ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে, ও পরে পূর্বদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষের প্রাচীন ভাষাগুলোতে এই গাছটির নামের উল্লেখ নেই, তা থেকে ধারণা করা যায়, খ্রিস্টের জন্মের পরেই কেবল এই গাছটি ভারতবর্ষে আসে। আটলান্টিক মহাসাগরের দাস বাণিজ্যের অংশ হিসেবে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোর মাধ্যমে ঢেঁড়শ আমেরিকা মহাদেশে আসে। []। ১৬৫৮ সাল নাগাদ ব্রাজিলে এর উপস্থিতির উল্লেখ পাওয়া গেছে। ১৬৮৬ সাল নাগাদ এটি সুরিনামে পৌছে যায়।

উত্তর আমেরিকাতে, বিশেষত দক্ষিণ-পূর্বাংশে ঢেঁড়শের আগমন ঘটে ১৮শ শতকের শুরুর দিকে। ১৭৪৮ সালে এটি উত্তরে ফিলাডেলফিয়া এলাকাতেও চাষ করা হতো। টমাস জেফারসনের রচনায় উল্লেখ রয়েছে, ১৭৮১ সালে ভার্জিনিয়াতে ব্যাপকভাবে ঢেঁড়শের চাষ করা হতো। []

ব্যবহার

[সম্পাদনা]
ঢেঁড়শ
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি১৪৫ কিজু (৩৫ kcal)
৭.৬ g
খাদ্য তন্তু৩.২ g
০.১ g
২.০ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
ফোলেট (বি)
২২%
৮৭.৮ μg
ভিটামিন সি
২৫%
২১ মিগ্রা
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
৮%
৭৫ মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম
১৬%
৫৭ মিগ্রা

Vitamin A (660 IU)
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
ঢেঁড়শ ভর্তা

ঢেঁড়শের ফল সবজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা অবস্থাতেই ফল পেড়ে নেয়া হয়। ঢেঁড়শ ভর্তা, ভাজি এবং তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। বাঙালিদের মধ্যে ঢেঁড়স ভাজি খুব জনপ্রিয়।

A high resolution scan showing pentagonal cross-section of fruit

চাষাবাদ

[সম্পাদনা]
ঢেঁড়শ ফুলের বিস্তৃতি সাদা থেকে হলুদে

জাত নির্বাচন: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রধানত শাউনি, পারবনি কানি, বারি ঢেঁড়স, পুসা সাওয়ানি, পেন্টা গ্রিন, কাবুলি ডোয়ার্ফ, জাপানি প্যাসিফিক গ্রিন প্রভৃতি জাতের ঢেঁড়স চাষ হয়। সারা বছর ঢেঁড়স চাষ হলেও গ্রীষ্মকালে ফলন বেশি হয়। আমাদের রাজ্যে প্রধানত ফাল্গুন-চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস ঢেঁড়সের বীজ বোনা হয়। নির্দিষ্ট প্রজাতি নির্বাচনের পরে ঢেঁড়সের বীজ ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। চাষ করার সময়ে প্রথমে এক রাত ধরে ১-২ সেমি জলে ঢেঁড়শের বীজ ভিজিয়ে রাখা হয়। ৬ দিন থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে অঙ্কুরোদগম হয়।

জমি তৈরি: দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ঢেঁড়স চাষের পক্ষে অনুকূল। তবে জল নিষ্কাশনের সুবিধা থাকলে এঁটেল মাটিতেও ঢেঁড়স চাষ করা যায়। প্রধানত উষ্ণ জলবায়ুতে ঢেঁড়সের ফলন ভাল হয়। মোটামুটি জল নিষ্কাশনের সুবিধা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিকে কয়েক বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমি তৈরির পরে তাকে কয়েকটি বেডে ভাগ করতে হবে। দু'টি বেডের মাঝে জল নিকাশির জন্য নালা রাখতে হবে। বেডে ত্রিশ ইঞ্চি দূরে সারি তৈরি করতে হবে। প্রতিটি সারিতে ১৮ ইঞ্চি দূরে মাদা তৈরি করে তাতে ২-৩টি বীজ বুনতে হবে। জাত ও চারা অনুসারে, দু'টি সারির ও মাদার মধ্যবর্তী দূরত্ব কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। চারা গজানোর পরে একটি করে পুষ্ট সবল চারা রেখে বাকি যারা তুলে ফেলতে হবে। সাধারণত প্রতি শতক জমিতে ২০ থেকে ২৫ কেজি বীজ লাগে। সার প্রয়োগ:ঢেঁড়স চাষে সাফল্য পেতে সার প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি শতক জমিতে ৭৫ কেজি গোবর ১.০৫ কেজি সর্ষের খোল, ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োজন হয়। জমি তৈরির সময়ে হয়বিয়া বাদে বাকি সব সার মাটির সঙ্গে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তার ১০-১৫ দিন পরে জমিতে ঢেঁড়সের বীজ বপন করতে হবে। ইউরিয়া সার সমান দুটি, কিস্তিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পরে প্রথম কিস্তির এবং ৪০-৪৫ দিন পরে দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগ করতে হবে।

পরিচর্যা:ঢেঁড়স চাষে সাফল্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল বিজ্ঞানসম্মত পরিচর্যা। ঢেঁড়স গাছের বৃদ্ধির সময়ে জমি নিয়মিত আগাছামুক্ত করতে হবে। গাছের গোড়ার মাটির উপরিভাগ মাঝেমধ্যে আলগা করে দিতে হবে। জমিতে সেচ দেওয়ার পরে 'জো' এলে কোদাল নিয়ে মাটির উপরের মাটি ভেঙে দিতে হবে। এর ফলে মাটির ভিতরে আলো-বাতাস ঢুকতে পারে ও মাটির রস অনেক দিন পর্যন্ত বজায় থাকে। মাটির প্রকারভেদ অনুসারে = ১০ থেকে ১২ দিন অন্তর সেচ দিতে হবে। জমির জল নিকাশির জন্য দুটি বেডের মাঝে নালা রাখতে হবে।

রোগ পোকা দমন

[সম্পাদনা]

ঢেঁড়স গাছে যাতে রোগ এবং পোকা না লাগে সেজন্য মাঝেমধ্যে উপযুক্ত কীট নাশক স্প্রে করা দরকার। ফ্লি বিটল দমনের জন্য সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মাজরা পোকার আক্রমণ হলেও সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ১০-১২ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করা যেতে পারে। জমিতে শোষক পোকার উপদ্রব হলে ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। লেদা পোকা দমনে এমামেক্টিন বেনজোয়েট, জাব পোকা দমনে ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়। পাতা মোড়ানো পোকা দমনের জন্য ফেনিট্রোথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার জলে গুলে ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ঢেঁড়সের পাতার দাগ ও আগাম ধসা রোগ হলে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক অথবা ম্যানকোজেব ও মেটাল্যাক্সিল জাতীয় ছত্রাকনাশক ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার জলে গুলে ৭-১০ দিন অন্তর ৩ বার স্প্রে করতে হবে। ঢেঁড়সের পাতায় সাদা গুঁড়োর আস্তরণ পড়লে (পাউডারি মিলডিউ রোগ) সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক বা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। গোড়া পচা রোগ রোধে কার্বেন্ডাজিম, শুটি মোল্ড রোগে ফেনিট্রোথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ও ডাউনি মিলডিউ রোগে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়। [][]

আরও জানা দরকার

[সম্পাদনা]

ঢেঁড়শের চারার প্রচুর জলের দরকার হয়। তাই সেচের ব্যবস্থা ঠিক মতো রাখা দরকার। পরাগায়ণের ১ সপ্তাহের মধ্যেই ঢেঁড়শের ফল পেড়ে নিতে হয়, নতুবা এটি আঁশযুক্ত হয়ে পড়ে। [] যেসব সবজি সবচেয়ে বেশি খরা ও তাপ সহ্য করতে পারে, তাদের মধ্যে ঢেঁড়শ অন্যতম। শুকনো শক্ত মাটিতেও এর ফলন হয়। ঢেঁড়শের ফলের ভেতরে পিচ্ছিল পদার্থ থাকে, ফলে রান্না করার পরে পিচ্ছিল তরল বেরিয়ে আসে। এটা এড়ানোর জন্য ঢেঁড়শকে ভাজা হয়।

উপকারিতা

[সম্পাদনা]

বেশ কয়েকটি রোগে ঢেঁড়স খুবই উপকারী। ঢেঁড়সে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সার রোগ সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে এ রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। হাঁপানিতে খুব ভালো কাজ করে ঢেঁড়স। রোগটির হারবাল চিকিৎসায় ঔষুধ হিসেবে ঢেঁড়স ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া ঢেঁড়স বীজের তেল শ্বাসকষ্ট কমাতে পারে। ব্লাড সুগার কমাতে এর বিকল্প নেই। প্রতি একশ’ গ্রাম ঢেঁড়সে শূন্য দশমিক শূন্য সাত মিলিগ্রাম থায়ামিন, শূন্য দশমিক শূন্য ছয় মিলিগ্রাম নিয়াসিন ও শূন্য দশমিক শূন্য এক মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন রয়েছে। যা ডায়াবেটিস রোগীর স্নায়ুতন্ত্রে পুষ্টি সরবরাহ করে সতেজ রাখে। ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর আঁশ যা কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। সহজে হজম হয় বলে বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করে।

নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে সহজেই রক্তশূন্যতা দূর হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। এর মধ্যে রয়েছে আঁশ, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া রয়েছে আরো অনেক গুণ। হেলদি ফুড টিম দিয়েছে ঢেঁড়সের ১০ গুণের কথা, যা জানার পর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ঢেঁড়স রাখতে চাইবেন আপনি।

উপাদান

[সম্পাদনা]

ঢেঁড়স (Okra) Malvaceae গোত্রের সবজি (Abelmoschus eseulentus)। এই সবজি ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও লোহাসমৃদ্ধ। ঢেঁড়সে প্রতি ১০০ গ্রামে ভক্ষণযোগ্য অংশে আমিষ বা প্রোটিন (১.৮ গ্রাম), ভিটামিন-সি (১৮ মিলিগ্রাম), খনিজ পদার্থ বিশেষ করে ক্যালশিয়াম (৯০ মিলিগ্রাম), লোহা (১ মিলিগ্রাম) ও আয়োডিন রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যারোটিন, ফলিক এসিড, থায়ামিন, রিবোফ্লেভিন, নিয়াসিন, অক্সালিক এসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড।

পুষ্টিগুণ

[সম্পাদনা]

বহু পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই সবজি আয়োডিনের অভাবে সৃষ্ট গলগণ্ড- রোগ এবং মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড- দুর্বলতার প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। প্রতিটি ঢেঁড়সে রাইবোফ্লাভিনের পরিমাণ বেগুন, মুলো, টমেটো আর শিমের থেকে বহুগুণ বেশি। তা ছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, শুকনো কাশির জন্য এটি বেশ উপকারী।

পৃথিবীর অনেক দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ফল হিসেবে গ্রহণ করে। ভারতে গুড় তৈরিতে আখের রসের সঙ্গে ঢেঁড়সের শেকড় ও কাণ্ডর ব্যবহার প্রচলিত আছে। তুরস্কে এর বীজ কফির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাকার পর এর খোসা কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় যাদের হজমে সমস্যা তাদের এটি কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

অনেকেরই প্রিয় সবজি ঢেঁড়স। স্বাদের বাহার যেমন ভর্তা, ভাঁজি আর চচ্চড়িতে, কমতি নেই মাছের সঙ্গে ঝোলেও। গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় ঢেঁড়স। জনপ্রিয় সবজিগুলোর মধ্যে ঢেঁড়স অন্যতম। আবার কচি ঢেঁড়স ভালো করে শুকিয়ে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্যে সংরক্ষণ করা যায়।

ঢেঁড়স শুধু সবজিই নয় আছে অনেক পুষ্টিগুণও। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন এ,বি এবং সি। আয়োডিনের অভাবে সৃষ্ট গলগন্ড, মস্তিষ্ক ও হৃৎপিন্ডের দুর্বলতা প্রতিরোধে ঢেঁড়স খুবই উপকারি একটি সবজি।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ঢেঁড়স। ঢেঁড়সে রাইবোফ্লেভিনের পরিমাণ এতো বেশি, যা বেগুন, মুলা, টমেটো আর শিমের থেকেও বেশি। কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে ঢেঁড়স বেশ উপকারি। এজন্য বীজ ফেলে দিয়ে দু’তিনটা কাঁচা ঢেঁড়স প্রায় ৪৫০ গ্রাম পানিতে এমনভাবে সেদ্ধ করুন যাতে এক কাপ পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে। এবার পানিটা ছেঁকে নিয়ে দুবার খাবেন একঘণ্টা পর পর। এতে প্রস্রাব-পায়খানা উভয়ই পরিষ্কার হবে।

ঢেঁড়স রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকলে কালো জামের বীজ চূর্ণ করে এক গ্রাম পরিমাণ চূর্ণের সাথে তিন-চারটে কচি ঢেঁড়স সেদ্ধ পানির সঙ্গে ক’দিন খেলে ব্লাড সুগার কমে যাবে।

কাশি দূর করে ঢেঁড়স। ঢেঁড়স খেলে খুসকুসে কাশির উপকার হয়। সেক্ষেত্রে বীজ ফেলে দিয়ে কয়েকটি কাঁচা ঢেঁড়স রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। পাঁচ/ছয় গ্রাম ঢেঁড়সের শুকনো গুঁড়ো আর চিনি দিয়ে বড়ি বানাতে হবে। বড়ি চুষে খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।

প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ ঠিক রাখে ঢেঁড়স। ঢেঁড়স প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দুর করতেও সহায়ক। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলেও অনেক সময় প্রস্রাবের পরিমাণ কম হতে পারে। এমনটি হলে বীজ ফেলে দিয়ে ৩/৪টা কাঁচা ঢেঁড়স আধা সের পরিমাণ পানিতে সেদ্ধ করুন। পানি অর্ধেক পরিমাণ থাকতেই নামিয়ে ছেঁকে নিন। এই পিচ্ছিল পানি খেলে প্রস্রাব সরল হয় এবং পরিমাণেও বেড়ে যায়। কয়েকদিন এই পানি খেলে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণের সমস্যা দূর হয়।

১. বাজে কোলেস্টেরল কমায়: ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার (আঁশ) পেকটিন; যা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রতিরোধ করে।

২. গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ তৈরির জন্য ভালো: ঢেঁড়স গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে, মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে।

৩. ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে: ঢেঁড়স ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

৪. শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে: এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢেঁড়স বেশ উপকারী।

৫. কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়: ঢেঁড়স কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ঢেঁড়সের উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।

৬. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়: ঢেঁড়স রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া আরো প্রয়োজনীয় মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ; যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

৭. উচ্চমাত্রার আঁশ: ঢেঁড়সে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আঁশ। এটা হজমে সাহায্য করে। পেকটিন অন্ত্রের ফোলাভাব কমায় এবং অন্ত্র থেকে বর্জ্য সহজে পরিষ্কার করে।

৮. চুলের যত্নে: ঢেঁড়স চুলের কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এটি খুশকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য উপকারী।

৯. বিষণ্ণতা দূর করে: ঢেঁড়স বিষণ্ণতা, দুর্বলতা এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।

১০. দৃষ্টি ভালো রাখে: ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন; যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "The Plant List: A Working List of All Plant Species"। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৪ 
  2. "ঢেঁড়স [okra]"Lost Crops of Africa (ইংরেজি ভাষায়)। । পৃষ্ঠা ২৮৭। আইএসবিএন 978-0-309-10333-6 
  3. "Alternative Cold Remedies: Lady's Fingers Plant" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মে ২০০৯ তারিখে, curing-colds.com (accessed 3 June 2009)
  4. "Okra, or 'Gumbo,' from Africa ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ মার্চ ২০০৯ তারিখে, tamu.edu
  5. McWhorter, John H. (২০০০)। The Missing Spanish Creoles: Recovering the Birth of Plantation Contact Languages। University of California Press। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 0-520-21999-6। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-২৯ 
  6. " Okra gumbo and rice" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ অক্টোবর ২০০৫ তারিখে by Sheila S. Walker, The News Courier, unknown date
  7. আনন্দবাজার পত্রিকা,১৬ এপ্রিল ২০২৫, পুরুলিয়া বাঁকুড়া সংস্করণ,খেত- খামার, তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী কর্তৃক সংগৃহীত।
  8. গুহ-গুহ (২০০১)। ঢেঁড়স। শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৪২। আইএসবিএন 81-7384-229-9 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]