দি অ্যাশেজ
দি অ্যাশেজ | |
---|---|
দেশ | অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ড |
ব্যবস্থাপক | আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল |
খেলার ধরন | টেস্ট ক্রিকেট |
প্রথম টুর্নামেন্ট | ১৮৮২-৮৩ (অস্ট্রেলিয়া) |
শেষ টুর্নামেন্ট | ২০২১-২২ |
পরবর্তী টুর্নামেন্ট | ২০২৩ (ইংল্যান্ড) |
প্রতিযোগিতার ধরন | ৫ টেস্টের সিরিজ |
দলের সংখ্যা | ২ ( ব ) |
বর্তমান ট্রফি ধারক | অস্ট্রেলিয়া (৩৪তম জয়) |
সর্বাধিক সফল | অস্ট্রেলিয়া (৩৪টি শিরোপা) |
সর্বাধিক রান | ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (৫,০২৮) |
সর্বাধিক উইকেট | শেন ওয়ার্ন (১৯৫) |
অ্যাশেজ বা দি অ্যাশেজ (ইংরেজি: The Ashes) ক্রিকেটের ট্রফিবিশেষ। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজ বিজয়ী দলকে ১৮৮২ সাল থেকে এই ট্রফি প্রদান করা হয়। ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ইংরেজ ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওভালে পরাভূত হলে ইংরেজরা বিদ্রুপাত্মকভাবে শোক প্রকাশ করে। এ প্রেক্ষিতেই ধারাবাহিকভাবে ইংরেজরা একটি ছাইপূর্ণ পাত্র উপস্থাপন করে যা পরবর্তীতে ট্রফির মর্যাদা লাভ করে।
এটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় প্রতিপক্ষ দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে উদযাপিত বিষয়রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। বর্তমানে এটি দ্বি-বার্ষিকাকারে পালাক্রমে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ থেকে ৩০ মাসের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অ্যাশেজে পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ, প্রতি ম্যাচে দুই ইনিংস নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের যাবতীয় আইন-কানুন প্রতিপালন করে অনুষ্ঠিত হয়। কোন কারণে সিরিজ ড্র হলে পূর্বেকার অ্যাশেজ বিজয়ী দলের কাছেই ট্রফিটি রক্ষিত থাকে।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজ থেকে ওয়াটারফোর্ড ক্রিস্টাল কর্তৃপক্ষ অ্যাশেজ পাত্র প্রদর্শন করে ও অ্যাশেজ বিজয়ী দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রফি আকারে প্রদান করে। অস্ট্রেলিয়া দল বর্তমানে এ ট্রফিটির ধারক। তারা ২০১৯ মৌসুমে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজ ড্র করে। পরবর্তী অ্যাশেজ ২০২১-২২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইতিহাস
অ্যাশেজ সিরিজের নামকরণ হয়েছে বিদ্রুপাত্মকভাবে, শোকের প্রতীকিরূপে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ১৮৮২ সালে ওভাল টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়লাভ। ৪র্থ ইনিংসে ফ্রেড স্পফোর্থের অবিস্মরণীয় ক্রীড়ানৈপুণ্যে ইংল্যান্ড মাত্র ৮৫ রানের লক্ষ্যমাত্রায়ও পৌঁছুতে পারেনি। এতে স্পফোর্থ ৪৪ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট লাভ করেছিলেন। ফলে, ইংল্যান্ড তার নিজ ভূমিতে অনুষ্ঠিত প্রথম সিরিজে ঐ মাঠে প্রথমবারের মতো ১–০ ব্যবধানে হেরে যায়। ফলে লন্ডনের প্রধান সংবাদপত্র দ্য স্পোর্টিং টাইমস্ তাদের প্রতিবেদনে ইংরেজ ক্রিকেট নিয়ে বিদ্রুপাত্মকভাবে বিখ্যাত উক্তি মুদ্রিত করে:[১]
ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মিভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে প্রদান করেছে।
ইংরেজ গণমাধ্যমগুলো ১৮৮২-৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পরবর্তী ইংরেজ দলের সফরে "অ্যাশেজ পুণরুদ্ধারে যাত্রা শুরু ..." উল্লেখ করে। ঐ সফরে মেলবোর্নের একদল নারী ইংল্যান্ড অধিনায়ক আইভো ব্লাইকে ছোট্ট ভস্ম স্তুপাকারে প্রদান করে। পাত্রে রক্ষিত ছাই হিসেবে ক্রিকেটের অন্যতম উপকরণ বেইলের ভস্ম ছিল। এভাবেই বিখ্যাত অ্যাশেজ সিরিজের সূত্রপাত ঘটে যাতে কেবলমাত্র অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট সিরিজই অন্তর্ভুক্ত থাকে। যে দল সিরিজ জয় করে তারা অ্যাশেজ ট্রফিটি লাভ করে। দুই দলের মধ্যকার টেস্ট সিরিজ নিয়ে গঠিত এ প্রতিযোগিতাটিকে ঘিরে অদ্যাবধি ক্রীড়া বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহ-কৌতূহলের সৃষ্টি করে আসছে।
অ্যাশেজ পাত্রটিকে ভুলবশতঃ কেউ কেউ অ্যাশেজ সিরিজের ট্রফি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তবে, এটি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু ব্লাই সর্বদাই এটিকে ব্যক্তিগত উপহার হিসেবে বিবেচনা করতেন।[২] প্রায়শঃই পাত্রের অনুলিপি বা রেপ্লিকাকে অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ের প্রতীক হিসেবে প্রদান করা হয়। কিন্তু এভাবে প্রকৃত পাত্রটিকে কখনো প্রদান কিংবা প্রদর্শন করা হয়নি। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী লর্ডসে অবস্থিত এমসিসি’র যাদুঘরে প্রকৃত পাত্রটি দান করেন।[৩]
সিরিজ ও ম্যাচ
অ্যাশেজ পুণরুদ্ধারে যাত্রা শুরু
১৮৮২ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার অবিস্মরণীয় বিজয়ের পর ব্লাই ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। সেখানে তিনি অ্যাশেজ পুণরুদ্ধারের কথা বলেন। সাধারণের মাঝেও এ সিরিজকে ঘিরে বেশ উত্তেজনা ছিল। একসময় মনে করা হচ্ছিল যে অ্যাশেজ পাত্রটি বোধহয় ইংল্যান্ডে চলে যাবে। অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টে বিজয়ী হলেও ইংল্যান্ড পরবর্তী দুই টেস্টে বিজয়ী হয়। তৃতীয় টেস্ট শেষে ইংল্যান্ডকে ২-১ ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় অ্যাশেজ বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চতুর্থ খেলায় একীভূত অস্ট্রেলীয় একাদশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে। দলটিকে পূর্বেকার তিন খেলায় অংশগ্রহণকারী মূল একাদশের চেয়েও অধিকতর শক্তিশালীরূপে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু, এ খেলাটিকে সচরাচর ১৮৮২-৮৩ সিরিজের খেলা হিসেবে গণ্য করা হয় না। এটিকে টেস্ট হিসেবে গণ্য করা হলেও তা ছিল নামেমাত্র। খেলাটি অস্ট্রেলিয়াকে বিজয়ের স্বাদ প্রদান করেছিল।
ফলাফল ও পরিসংখ্যানের সার-সংক্ষেপ
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট জয় সংখ্যা | ১৩৬
|
ইংল্যান্ডের টেস্ট জয় সংখ্যা | ১০৮
|
খেলা ড্র | ৯১
|
অ্যাশেজ অধিকারের জন্য একটি দলকে অবশ্যই সিরিজ বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। সিরিজ ড্র হলে পূর্বেকার অ্যাশেজ অধিকারী দলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭১টি সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছে যাতে অস্ট্রেলিয়া ৩৩ এবং ইংল্যান্ড ৩৩ সিরিজ জয় করেছে। বাকী ৬ সিরিজ ড্র হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া ১৯৩৮, ১৯৬২-৬৩, ১৯৬৫-৬৬, ১৯৬৮ এবং ২০১৯ মৌসুমে ও ইংল্যান্ড ১ বার মাত্র ১৯৭২ সালে অ্যাশেজ নিজেদের দখলে রাখে। অ্যাশেজ টেস্টের জয়-পরাজয়ের অনুপাত হচ্ছে[৪] (২০১৯ সিরিজসহ এ পর্যন্ত) অস্ট্রেলিয়া ১৩৬ জয়, ইংল্যান্ড ১০৮ জয়, ৯১ ড্র।[৫]
অ্যাশেজ সিরিজ সাধারণতঃ পাঁচ বা ততোধিক টেস্টের হয়ে থাকে। তন্মধ্যে ১৯৩৮ এবং ১৯৭৫ মৌসুমে চার টেস্ট ও ১৯৭০-৭১, ১৯৭৪-৭৫, ১৯৭৮-৭৯, ১৯৮১, ১৯৮৫, ১৯৮৯, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৭ সালে ছয় টেস্টের হয়েছিল। অস্ট্রেলীয়রা ২৭১ সেঞ্চুরি করে, তন্মধ্যে দুই শতাধিক রান আসে ২৩টি। ইংরেজরা ২১২ সেঞ্চুরি করে ও ১০ বার দুই শতাধিক রানের ইনিংস গড়ে। টেস্টে ১০ উইকেট লাভকারী অস্ট্রেলীয়দের সংখ্যা ৪১, ইংরেজদের সংখ্যা ৩৮।
অ্যাশেজ সিরিজের সামগ্রিক ফলাফল
সকল টেস্ট ফলাফল | |||
---|---|---|---|
খেলা | অস্ট্রেলিয়া জিতেছে |
ইংল্যান্ড জিতেছে |
ড্র |
৩৩৮ | ১৩৯ | ১০৮ | ৯১ |
সিরিজ ফলাফল | |||
---|---|---|---|
সিরিজ | অস্ট্রেলিয়া জিতেছে |
ইংল্যান্ড জিতেছে |
ড্র |
৭২ | ৩৪ | ৩২ | ৬ |
খেলার মাঠ
যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার সিরিজগুলো পালাক্রমে অনুষ্ঠিত হলেও ৫টি খেলা বিভিন্ন ক্রিকেট মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে।T
অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিসবেনের গাব্বা, অ্যাডিলেড ওভাল, পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ড, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) ও সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এসসিজি)-তে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে ব্রিসবেন এক্সিবিশন গ্রাউন্ডে একমাত্র টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সনাতনী ধারায় মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট এবং সিডনি নববর্ষের টেস্টের আয়োজন করে থাকে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ২০১০-১১ মৌসুমে ছয় টেস্টের প্রস্তাবনা দিয়েছিল যাতে হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে অতিরিক্ত খেলার কথা ছিল। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড তা অনুমোদন না করলেও পাঁচের অধিক টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
তথ্যসূত্র
- ↑ Wendy Lewis, Simon Balderstone and John Bowan (২০০৬)। Events That Shaped Australia। New Holland। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-1-74110-492-9।
- ↑ "The Ashes History"। Lords: The home of cricket। ১১ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৩।
- ↑ "Ashes urn heads to Australia"। BBC Sport। ১৫ অক্টোবর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০০৭। In 2006–07 the urn was taken to Australia and exhibited at each of the Test match grounds to coincide with the England tour.
- ↑ Australia and England have played an additional 16 Tests but the Ashes were not at stake in those games. Including these Tests, the win-loss record stands at 136 Australian wins, 108 English wins, and 91 draws (up to and including the 2019 series). See Cricinfo statistics
- ↑ Cricinfo statistics
পাদটীকা
- Berry, S. (২০০৬)। Cricket's Burning Passion। London: Methuen। আইএসবিএন 0-413-77627-1।
- Birley, D. (২০০৩)। A Social History of English Cricket। London: Aurum Press। আইএসবিএন 1-85410-941-3।
- Frith, D. (১৯৯০)। Australia versus England: a pictorial history of every Test match since 1877। Victoria (Australia): Penguin Books। আইএসবিএন 0-670-90323-X।
- Gibb, J. (১৯৭৯)। Test cricket records from 1877। London: Collins। আইএসবিএন 0-00-411690-9।
- Gibson, A. (১৯৮৯)। Cricket Captains of England। London: Pavilion Books। আইএসবিএন 1-85145-395-4।
- Green, B. (১৯৭৯)। Wisden Anthology 1864–1900। London: M & J/QA Press। আইএসবিএন 0-356-10732-9।
- Harte, Chris (২০০৩)। Penguin history of Australian cricket। Penguin Books। আইএসবিএন 0-670-04133-5।
- Munns, J. (১৯৯৪)। Beyond reasonable doubt – Rupertswood, Sunbury – the birthplace of the Ashes। Australia: Joy Munns। আইএসবিএন 0-646-22153-1।
- Warner, P. (১৯৮৭)। Lord's 1787–1945। London: Pavilion Books। আইএসবিএন 1-85145-112-9।
- Warner, P. (২০০৪)। How we recovered the Ashes: MCC Tour 1903–1904। London: Methuen। আইএসবিএন 0-413-77399-X।
- Willis, R. Cricket's Biggest Mystery: The Ashes ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ মে ২০১৩ তারিখে, The Lutterworth Press (1987), আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭১৮৮-২৫৮৮-১.
- Wynne-Thomas, P. (১৯৮৯)। The complete history of cricket tours at home and abroad। London: Hamlyn। আইএসবিএন 0-600-55782-0।
- অন্যান্য
- Wisden's Cricketers Almanack (various editions)
বহিঃসংযোগ
- Cricinfo's Ashes website
- MCC's Ashes website
- The Origin of the Ashes – Rex Harcourt
- Listen to a young Don Bradman speaking after the 1930 Ashes tour on australianscreen online