ন্যানোরসায়ন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমে কার্বনের আটটি অবস্থা দর্শন একটি ন্যানো রসায়ন কার্যক্রম।

ন্যানোরসায়ন হল রসায়ন এবং ন্যানোবিজ্ঞানের সম্মেলন। ন্যানোরসায়ন হল সংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সহিত সংযুক্ত একটি বিভাগ, যা উপাদানের আকার, আকৃতি, ক্ষেত্রফল এবং বিচ্যুতি ধর্মগুলির উপর নির্ভরশীল। ন্যানোরসায়ন রসায়ন, বস্তু বিদ্যা, ভৌত বিদ্যা ছাড়াও প্রযুক্তিবিদ্যা, জীববিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যদিও ন্যানোরসায়ন এবং অন্যান্য ন্যানোবিজ্ঞান ক্ষেত্রগুলির মূল ধারণা একই, কিন্তু তাদের ব্যবহার বিভিন্ন। ন্যানোরসায়ন তাই ন্যানোবিজ্ঞানের রসায়নের দিকটি চিত্রিত করে।

বিজ্ঞানীরা যখন দেখলেন যে উপাদানের আকার ন্যানোমিটার স্কেলে এলে সেটির প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে, রসায়ন এর সহিত ন্যানো-উপসর্গটি তখন যুক্ত করলেন। ন্যানোমিটার স্কেল কাঠামোতে বিভিন্ন রসায়নগত পরিবর্তন ঘটে, যা আকারগত নির্ভরতার প্রমাণ। ন্যানোরসায়নের পিছনে আছে উপাদানের আকার, আকৃতি, স্ব-সংযুক্তি করণ, বিচ্যুতি এবং জৈব-ন্যানো স্ংক্রান্ত ধারণা। সুতরাং কোনো নব্য ন্যানোউপাদান গঠনের সহিত এই ধারণা গুলি ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত থাকে। ন্যানোকাঠামো সংশ্লেষ নির্ভর করে কীভাবে উপাদানের আকার,আকৃতি বা ক্ষেত্রফল দ্বারা একক ক্ষুদ্র উপাদান থেকে কার্যকরী পরিকাঠামো তৈরী হতে পারে তার উপর; ন্যানোকাঠামোতে সম্ভবতঃ থাকে গঠনগত বিচ্যূতি এবং তা চিকিৎসা, ফোটনিক, ইলেকট্রনিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

সিলিকা, স্বর্ণ, পলিডাইমিথাইলজাইলঅক্সেন, ক্যাডমিয়াম সেলেনাইড, লৌহের অক্সাইড এবং কার্বন- এই উপাদান গুলি ন্যানোরসায়ন এর পরিবর্তনকারি ক্ষমতা প্রদর্শনে সাহায্য করে। রাস্ট বা লৌহের অক্সাইড থেকে এমআরআই করার জন্য বৈসাদৃশ্য বা কন্ট্রাস্টিং উপাদান তৈরী হয় যা ক্যান্সার সনাক্তকরণে এমনকি প্রাথমিক দশাতে ধরা পরলে সারাতেও সাহায্য করে থাকে। সিলিকা (কাচ) আলোক পথের বক্রীকরণ বা অবরূদ্ধকরণে সাহায্য করে। উন্ন্ত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশের জলে রোগজনক জীবাণু নিরূপণের জন্য তড়িৎবর্তনী বানাতে সিলিকোন নামক পলিমার ব্যবহার করে। বিভিন্ন আকার ও আকৃতির কার্বন ব্যবহৃত হয় এবং ইলেক্ট্রনিক উপাদান হিসাবেও এটি উত্তম পছন্দ।

তাই ন্যানোরসায়ন কোনো যৌগের পারমাণবিক গঠনের সহিত সম্পর্কিত না হয়ে উপাদানের বিভিন্ন উপায়ে পরিবর্তন ঘটানোর সাথে যুক্ত হয়ে সমস্যার সমাধান করে। রসায়ন পর্যায় সারণীতে কেবল পরমাণুর স্বাধীনতার মাত্রা নিয়ে চিন্তিত থাকে অন্যদিকে ন্যানোরসায়ন উপাদানের অন্য স্বাধীনতার মাত্রাগুলির বিকাশ ঘটিয়ে ঐ উপাদানের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।[১] ন্যানোরসায়ন দ্বারা কার্বন ন্যানো উপাদান বানানো যায় যেমন কার্বন ন্যানোটিউব, গ্রাফিন এবং ফুলারিন-এই গুলি হালে বিজ্ঞানীদের নজর কেড়েছে তাদের যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক শক্তির জন্য। [২]

ন্যানোটোপোগ্রাফি[সম্পাদনা]

ন্যানোটোপোগ্রাফি বলতে বোঝায় পৃষ্ঠতলের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা কেবল ন্যানোস্কেলেই দেখা যায়। শিল্পে ন্যানোটোপোগ্রাফির ব্যবহারিক প্রয়োগ ইলেক্ট্রিক্স এবং কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত পৃষ্ঠতলের বৈশিষ্ট্যে দেখা যায়। যদিও প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুত পৃষ্ঠতলও এক্ষেত্রে বিচার্য-যেমন আণবিক কোষ বিক্রিয়া এবং জীবের সজ্জিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এই প্রাকৃতিক ন্যানোটোপোগ্রাফি স্ংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলি জীবনীশীল উপাদানের কার্য এবং নিয়ন্ত্রণ দুইই করে, যেহেতু ন্যানোটোপোগ্রাফিকাল বৈশিষ্ট্যগুলি জীবনীশীল কোষের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়।[৩]

ন্যানোলিথোগ্রাফি[সম্পাদনা]

একটি পৃষ্ঠতলে কৃত্রিম উপায়ে ন্যানোটোপোগ্রাফিকাল বৈশিষ্ট্য গুলি খোদাই করাকে ন্যানোলিথোগ্রাফি বলে। কম্পিউটারে ব্যবহৃত অর্ধপরিবাহীর চিপ গুলিতে ন্যানোলিথোগ্রাফির প্রয়োগ আছে। ন্যানোলিথোগ্রাফি অনেক রকম হয় [৪],[৫]| যেমন-

  • ফোটোলিথোগ্রাফি
  • ইলেকট্রনিক বিম লিথোগ্রাফি (ইবিএল)
  • এক্স-রে লিথোগ্রাফি
  • প্রান্তিয় অতিবেগুণী লিথোগ্রাফি (ইইউভিএল)
  • আলোক সংযোজী লিথোগ্রাফি (এলসিএম)
  • স্ক্যানিং প্রোব মাইক্রোস্কোপি (এসপিএম)
  • ন্যানো প্রতীক লিথোগ্রাফি
  • ডিপ-পেন লিথোগ্রাফি
  • কোমল লিথোগ্রাফি

ন্যানোলিথোগ্রাফির কৌশলগুলির প্রত্যেকটির বিভাজন, অতিবাহিত সময় এবং অর্থনৈতিক মূল্য বিভিন্ন। ন্যানোলিথোগ্রাফির তিনটি প্রাথমিক পদ্ধতি আছে। প্রথম পদ্ধতিতে একটি বস্তুর উপর নক্শা খোদাই করা হয় এচিং পদ্ধতিতে আর যে স্থানগুলি মসৃন থাকবে তাদের উপর মাস্ক বা প্রতিরোধী আবরণ স্টেনশিলের ন্যায় দিয়ে পরিবর্তনে বাধা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে কোয়ান্টাম কণা যথা আলোকরশ্মি বা ইলেকট্রনের ধারা দিয়ে এচিং করা হয়, কখনো বা রাসায়নিক পদ্ধতি যেমন জারন বা স্ব-একত্রিত স্তর (স্যাম) ব্যবহৃত হয়। তৃতীয় পদ্ধতিতে বস্তুর উপর প্রয়োজনীয় নকশাটি সরাসরি ফেলে অন্তিম পণ্যটি তৈরী করা হয় ও এটি খুবই পাতলা স্তর হয় (মাত্র কিছু ন্যানোমিটার মোটা)। যে পাতলা স্তর তৈরী হলো তা দেখতে ন্যানো বিভাজক স্ক্যানিং প্রোব মাইক্রোস্কোপি বা পারমাণবিক বল মাইক্রোস্কোপি (এএফএম) প্রয়োজন। অন্তিম উপাদান দেখতে দুটি মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রই একত্রে ব্যবহৃত হয়। [৬]

স্যামস[সম্পাদনা]

ন্যানোলিথোগ্রাফি দ্বারা স্ব-একত্রিত একস্তরের (স্যাম) ব্যবহার হয়। স্যাম হল দীর্ঘ চেইন (শিকল) অ্যালক্যানোথিওলেট যা স্বর্ণ পৃষ্ঠতলের উপর ক্রমান্বয়ে একস্তরীয় রূপে সাজানো হয়। উচ্চ গুণ সম্পন্ন গঠন, যার পার্শ্বীয় মাত্রা ৫ ন্যানোমিটার থেকে ৫০০ ন্যানোমিটার, গঠন করতে পারাই হল এই পদ্ধতির সুবিধা। এই পদ্ধতিতে পলিডাইমিথাইলসাইলোক্সেন (পিডিএমএস) নির্মিত সজ্জিত ইলাস্টোমার মাস্ক-রূপে ব্যবহৃত হয়। পিডিএমএস বানাতে সিলিকন বিস্কুটের উপর আলোক প্রতিরোধী আবরণের পাতলা স্তর ফেলা হয়। তার পরে ঐ স্তরটিতে অতিবেগুণী রশ্মি ফেলা হয় ও শেষে আলোক প্রতিরোধী আবরণটি ধুয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। প্রাক-পলিমার-টির পুরুত্ব কমাতে পারফ্লুরোঅ্যালকাইলট্রাইক্লোরোসাইলেন বস্তুটির উপরে ব্যবহৃত হয় [৭]। এর ফলে পিডিএমএস ইলাস্টোমার গুলি সমতলীয় ও বক্রতলীয় পৃষ্ঠতলে মাইক্রন এবং নিম্ন্তর-মাইক্রন সজ্জান্বিত হতে সাহায্য লাভ করে।

ব্যবহারিক প্রয়োগ[সম্পাদনা]

ঔষধ[সম্পাদনা]

ন্যানোরসায়নের একটি অত্যধিক গবেষণাকৃত প্রয়োগ ঔষধপত্রের মধ্যে দেখা যায়। ন্যানোরসায়নের ত্বক-চর্চায় একটি প্রয়োগ হল সানসক্রীম (সৌরক্রীম), যেটিতে জিঙ্ক অক্সাইড [৮] ও টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের [৯]. ন্যানোকণা থাকে। এই ন্যানোকণাগুলি ত্বককে রৌদ্রের ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্মি শোষন বা প্রতিফলন ঘটিয়ে রক্ষা করে, বিশেষতঃ ন্যানোকণাগুলির ইলেকট্রন সূর্যালোকে উত্তেজিত হয়ে যায় আর ত্বকের ডিএনএ কে কিছুতেই নষ্ট হতে দেয় না।

ঔষধ বিতরণ[সম্পাদনা]

ঔষধ বিতরণের ন্যানোপ্রযুক্তিগত নব্য পদ্ধতি গুলি শরীরের পক্ষে অতীব সুবিধাজনক হয় শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি, বিশেষ লক্ষ্যে ঔষধ বিতরণ করা এবং সুদক্ষভাবে নির্বিষ বিপাকের জন্য। নানান ন্যানোপ্রযুক্তিগত পদ্ধতি এবং উপাদান ঔষধ বিলি করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। আদর্শ বস্তু নিয়ন্ত্রিত-সক্রিয় ভাবে ন্যানোবস্তুর মাধ্যমে ঔষধপত্র শরীরে বহন করে। মধ্যবর্তী মাপের ছিদ্রসম্পন্ন সিলিকা ন্যানোকণা (এমএসএন) তার বৃহৎ পৃ্ষ্ঠ ক্ষেত্রফল এবং নমনীয়তার জন্য ইমেজিং বা প্রতিমূর্তি প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রূপান্তর ও সুউচ্চ বিভাজন প্রভৃতি গুণের সমাবেশ ঘটাতে পারে এবং গবেষণা ক্ষেত্রেও এ কারণে খ্যাতি পেয়েছে [১০]। সক্রিয় বা অ্যাক্টিভেশন পদ্ধতি ন্যানোস্কেলে ঔষধ বিতরণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে তার সর্বাধিক ব্যবহার আলোকের একটি বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে ঔষধের পরিবহনে হয়। ন্যানোভাল্ভ নিয়ন্ত্রিত ঔষধ কম তীব্রতার আলো এবং প্লাজমনিক উত্তাপের মাধ্যমে স্বর্ণ অণুর পরিবর্তনের দ্বারা দেহে ঔষধ পরিবহন করে। দুইটি ফোটন কণার দ্বারা সক্রিয় আলোক-ট্রান্সডিউসার (২-এনপিটি) নিকট-অতিবেগুণী আলোকের মাধ্যমে ডাইসালফাইড গঠন ভেঙ্গে ঔষধ বিলি করে। সম্প্রতি ন্যানোহীরক তার বিষহীন রূপ, ত্বকের দ্বারা স্বতঃস্ফূর্ত শোষণ, রক্ত-মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করার গুণাবলীর জন্য ঔষধ পরিবহনে বিশেষত্ব দেখিয়েছে। [১১].

কলা-প্রযূক্তি[সম্পাদনা]

কোষেরা ন্যানোটোপোগ্রাফি স্ংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলির উপর খুবই স্ংবেদনশীল, তাই কলা-প্রযুক্তিবিদ্যা পৃষ্ঠতলের সর্বোৎকৃষ্টতার জন্য প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়েছে। কোষ বীজ থেকে কৃত্রিম অঙ্গের উন্নতি করতে সযত্নে একটি ত্রিমাত্রিক স্ক্যাফোল্ড বা অস্থায়ী গঠনের ব্যবহার করা হয়, সঠিক শর্তানুযায়ী। ত্রিমাত্রিক স্ক্যাফোল্ডে থাকে বিভিন্ন ন্যানোস্কেল গুণক। এগুলি পরিবেশের সঠিক কার্যকারীতার জন্য শর্তাদি নিয়ন্ত্রণ করে। স্ক্যাফোল্ড হল বহিঃক্ষেত্রে জীবদেহের ভিতরে স্থিত বহিঃকোষীয় ধাত্রের অনূরূপ যা জীবদেহের বাইরে প্রয়োজনীয় জটিল জৈব গুণাঙ্ক সরবরাহ করে সফল কৃত্রিম অঙ্গের উন্নতি বিধান করে। এছাড়াও কোষের অভিব্যাক্তি রূপান্তর, স্ংযোজন ও ঔষধ বিতরণের ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায় [১২]

ক্ষত[সম্পাদনা]

ক্ষত এবং ঘর্ষণে সারানোর পদ্ধতি ন্যানোরসায়নের দ্বারা উন্নত হয়। তড়িৎঘূর্ণন নামক পলিমারকরন পদ্ধতি জৈব কলা-প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্ষত-আচ্ছাদন এবং ঔষধ বিতরণে কাজে লাগে।এর মাধ্যমে ন্যানোতন্তু প্রস্তুত করা যায় যা কোষের স্ংখ্যার বর্ধন, জীবাণু ধ্বংসকরণ এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগে। এই বৈশিষ্ট্য বৃহৎ স্কেলে পাওয়া গেলেও ন্যানোস্কেলে দক্ষতা বেশি দেখায়। ন্যানোতন্তু ও ক্ষতের মধ্যবর্তী স্থানের অধিক ক্ষেত্রফলের জন্য বিক্রিয়া বেশি হয় এবং তা জীবদেহের ভিতরে হওয়ায় সুবিধাজনক হয়।[১৩]

রৌপ্য ন্যানোকণা ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়াকে প্রতিরোধ করে এর প্রমাণও পাওয়া যায়। ন্যানোরসায়নের উন্নতি ন্যানোগঠনের বিবিধতা দিয়েছে যাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর প্রয়োগ স্যাম, লিথোগ্রাফি,ন্যানোএনজাইম এবং সেন্সরে ন্যানোতারের মধ্যে দেখা যায় [১৪]|

ইলেক্ট্রিক্স[সম্পাদনা]

ন্যানোতারের উপাদান[সম্পাদনা]

বিজ্ঞানীরা বাষ্প ও দ্রবণের দশাকৌশলের মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রিত দৈর্ঘ্য, ব্যাস, ডোপিং,ও পৃষ্ঠতলের গঠনের দ্বারা ন্যানোতারের উপাদান তৈরী করেন। অভিমুখদর্শিত একক কেলাসগুলি দিয়ে অর্ধপরিবাহী ন্যানোতার নির্মিত যন্ত্রগুলি যথা ডায়োড, ট্রান্জিস্টর, লজিক বর্তনী, লেসার আর সেন্সর বানানো হয়। একমাত্রিক বলে অধিক ক্ষেত্রফল ও আয়তন অনুপাতের জন্য প্রচার প্রসারন রোধ কমে। আবার কোয়ান্টাম আবদ্ধকরণের জন্য কর্মদক্ষতা বাড়ে। তাই স্বল্প বিচলিতকরণেই ইলেক্ট্রোডের সাড়া পাওয়া যায়,যা ন্যানোসেন্সরের কাজে একটি ভালো গুণ। একমাত্রিকতা ও রাসায়নিক নমনীয়তার জন্য অর্ধপরিবাহী ন্যানোতার ন্যানোলেসারেও লাগে। পেইডন ইয়ং ও তার সহকর্মীরা ঘরোয়া উষ্ণতায় অতিবেগুণী ন্যানোতার ন্যানোলেসারে গবেষণা করেছেন এবং জানিয়েছেন যে এই ন্যানোলেসারের প্রয়োগ আলোক গণনা, তথ্য সঞ্চয় ও ক্ষূদ্র বিশ্লেষণে কাজে লাগতে পারে [১৫].

অনুঘটন[সম্পাদনা]

ন্যানো এনজাইম[সম্পাদনা]

ন্যানোকাঠামো দ্রব্য, যা ন্যানোকণা ভিত্তিক এনজাইম তৈরী করে, বর্তমানে বহুল প্রচলিত। অতি ক্ষূদ্র আকারের (১-১০০ ন্যানোমিটার) ন্যানো এনজাইমে বিশেষ আলোক, চৌম্বক, ইলেক্ট্রনিক,অনুঘটন ইত্যাদি ধর্ম থাকে। ন্যানোকণার পৃষ্ঠতলের কার্যের নিয়ন্ত্রণ এবং আশা মত গঠন ন্যানো এনজাইমের পৃষ্ঠতলে জটিল কাঠামো বানাতে সাহায্য করে যাদের বিশেষ প্রয়োগ আছে। [১৬].

গবেষণা[সম্পাদনা]

ন্যানোহীরক[সম্পাদনা]

স্ংশ্লেষ[সম্পাদনা]

প্রতিপ্রভ ন্যানোকণাকে বৃহৎ সজ্জায় রাখা যেতে পারে এবং প্লাজমনিক্স, ফোটনিক্স ও কোয়ান্টাম যোগাযোগে কাজে লাগানো যেতে পারে। অশুষ্ক রসায়নে ন্যানোকণা সজ্জার স্ংযোগ ভালো হয় না তার পরিবর্তে ন্যানোহীরক আরো ভালোভাবে কাজ করে বিশেষতঃ কোয়ান্টাম প্লাজমনিক্স শিল্পে। মাস্ক বিহীন ইলেক্ট্রন গুচ্ছ পদ্ধতিতে অ্যামাইন শ্রেনী যুক্ত করে ন্যানোহীরকের সজ্জাতে স্ব-স্ংযুক্তীকরণের মাধ্যমে ও ন্যানোস্কেলে কার্বন সমন্বিত বীজ স্ংশ্লেষের দ্বারা ন্যানোহীরক তৈরী করা যায়। ন্যানোহীরক-পৃষ্ঠে ড্যাংলিং বণ্ড থাকায় বিভিন্ন লিগেণ্ড এর সাথে মূলদাকারে যুক্ত হতে পারে।

ন্যানোহীরক পৃষ্ঠের অন্তিমে থাকে কার্বক্সিলিক অ্যাসিড শ্রেণী, যা কার্বডিমাইড স্ংযুক্তীকরণের রসায়নের সাহায্যে অ্যামিনচ্ছেদী পৃষ্ঠের সহিত যুক্ত হয়। নির্দিষ্ট আকারহীন কার্বন ও ন্যানোহীরকের উপর অ্যামিন ও কার্বক্সিল মূলকের মধ্যে কোভ্যালেন্ট বা সমযোজী বণ্ডের মাধ্যমে ইডিসির উপস্থিতিতে এই পদ্ধতি উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। তাই স্বর্ণ-ন্যানোকণার মত না হয়ে ন্যানোহীরক বিভিন্ন উপচার সহ্য করতে পারে ও বহুগুণ টেঁকসই হয় [১৭],[১৮]

প্রতিপ্রভ (নাইট্রোজেন শূন্যস্থান)[সম্পাদনা]

ন্যানোহীরকের উপর উচ্চ শক্তির কণা (ইলেক্ট্রন, প্রোটন, হিলিয়াম) বর্ষণ করে এবং তারপর ৬০০-৮০০ডিগ্রী তাপমাত্রায় অ্যানিল করার মাধ্যমে নাইট্রোজেন-শূন্যস্থান তৈরী করে তার উপর প্রতিপ্রভ বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়। বর্ষণ শূন্যস্থান (এনভি) তৈরী করে আবার অ্যানিল পদ্ধতি সেই শূন্যস্থানের বিচরন ঘটায়, যা ন্যানোহীরকের মধ্যে নাইট্রোজেন পরমানুকে অবরূদ্ধ করে । এটি দুই প্রকার এনভি তৈরী করে-আধানহীন (এনভি০) এবং ঋণাত্মক আধান যুক্ত (এনভি-) যাদের বিচ্ছুরন বর্ণালি বিভিন্ন। এনভি- কেন্দ্রটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটিতে এস=১ স্পিন বা আবর্তন কারীর নিম্নস্থ বা ভূমিস্থ শক্তি দশা থাকে যাকে আলোক-পাম্পিং এর সাহায্যে স্পিন-পোলারাইজ করা যায় এবং ইলেক্ট্রন উপচুম্বকীয় অনুরণন প্রক্রিয়াতে নিপুণভাবে নাড়াচাড়া করা যায়। প্রতিপ্রভ ন্যানোহীরকের মধ্যে অর্ধ-পরিবাহী কোয়ান্টাম বিন্দুর গুণ (ক্ষূদ্রতা, উচ্চ আলোক স্থিতি, উজ্জ্বল রঙ্গীন প্রতিপ্রভতা) থাকে আবার জৈব সামঞ্জস্যতা, নির্বিষতা, বহুল পৃষ্ঠতলীয় রসায়ন ইত্যাদির জন্য জীবদেহের মধ্যে ইমেজিং প্রয়োগেরও বিশেষ ক্ষমতা থাকে[১৯]

ঔষধ বিতরণ ও জৈব সামঞ্জস্য[সম্পাদনা]

ন্যানোহীরকের স্ব-স্ংযুক্তির ক্ষমতা থাকে এবং বিভিন্ন ক্ষূদ্র অণু, প্রোটিন অ্যান্টিবডি, থেরাপেটিকস্ ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ন্যানোহীরকের সাথে স্ংযুক্তিকরণের দ্বারা ঔষধ বিলি, প্রোটিন-নকলীকরণ, অস্ত্রোপচার ইমপ্ল্যান্টের কার্যকারীতা থাকে। কঠিন দশায় পেপটিড স্ংশ্লেষের জন্য, নির্বিষকরণের জন্য এবং প্রতিপ্রভতার জন্য ন্যানোহীরকের ব্যবহার হয়। ঔষধ বিলির জন্য জৈব সামঞ্জস্য, থেরাপেটিকস্-এর বৃহৎ সীমার মধ্যে ব্যবহার, জলে বিচ্ছুরনের ক্ষমতা এবং সঠিক লক্ষিত চিকিৎসা খুবই দরকার। ক্ষূদ্রাকৃতি, স্থিত অভ্যন্তর, পৃষ্ঠতলের বিবিধতা, স্ব-স্ংযুক্তির ক্ষমতা, স্বল্প সাইটোবিষ ন্যানোহীরক কে ক্ষূদ্র প্রোটিন হিসাবে দেখায়। ন্যানোহীরক সাধারণতঃ ঔষধ বিলির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ইনজেকশন দ্বারা প্রযুক্ত থেরাপেটিক সামগ্রী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দুই দিন থেকে এক মাস অবধি স্থানীয় ভাবে ও টেকসই ভাবে ঔষধ মুক্ত ও বিতরণ করার জন্য পেরিলিন ন্যানোহীরক এর যৌগিক পদার্থের দ্বারা প্রস্তুত সরের উপযোগিতা আছে। [২০].

ন্যানোমিটার আকৃতির গুচ্ছাদি[সম্পাদনা]

কলয়েড স্থিত ন্যানোমিটার আকৃতির গুচ্ছাদি হল কৃত্রিম ভাবে উৎপন্ন কেলাস যার আকার এবং আকৃতি তার গুণাবলী কে কোয়ান্টাম আবদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রভাবান্বিত করে। বিপরীত কলয়েড স্থিত গুচ্ছাদির খাঁচার মাধ্যমে জলহীন দ্রাবকে এই কেলাস তৈরী হয়। মলিবডেনাম সালফাইডের ন্যানোগুচ্ছাদির আলোক বৈশিষ্ট্যের বপুবিশিষ্ট কেলাসের সঙ্গে তুলনা হয় বিভিন্ন গবেষণায় তাদের শোষণ বর্ণালির মাধ্যমে। আকৃতির উপর নির্ভরতা বপুবিশিষ্ট কেলাসে একটানা শোষন বর্ণালিতে, অন্যদিকে ন্যানোকেলাসে বিযুক্ত শক্তি সমূহ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দেখা যায়। এটি কঠিনের ন্যায় চরিত্র থেকে অণুর ন্যায় চরিত্রে রদবদল ঘটার স্ংকেত দেয় বিশেষতঃ যখন গুচ্ছের আকৃতি ৩-৪ ১/২ ন্যানোমিটারের মধ্যে থাকে।

ন্যানোগুচ্ছাদির চৌম্বকীয় গুণাবলী নিয়ে আগ্রহের কারণ তাদের চৌম্বকীয় রেকর্ডিং, তরল, স্থির চুম্বক এবং অনুঘটন ইত্যাদিতে ব্যবহার করা যায়। ন্যানোমিটার আকৃতির লৌহ গুচ্ছাদি তিয়শ্চুম্বক বা অতিরিক্ত পরাচুম্বকের ন্যায় ব্যবহার করে এবং নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী চৌম্বকীয় বিক্রিয়া দেখায়।

ন্যানোমিটার আকৃতির গুচ্ছাদির অপরিবাহীতা ধর্মের সম্ভাব্য প্রয়োগ অনুঘটন, আলোক অনুঘটন, ক্ষূদ্র আধানবাহক বা ক্যাপাসিটর, ক্ষূদ্র ইলেক্ট্রনিক্স ও অরৈখিক আলোকবিদ্যায় হয়। [২১].

স্মরণীয় গবেষক[সম্পাদনা]

জিয়ফ্রে এ ওজিন টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন এবং তাকে ন্যানোরসায়নের জনক বলা হয়। তিনি সাড়ে চার দশক ধরে এই বিষয়ে গবেষণা করেন, যেমন ধাত্র একাকীকরণ, লেসার রামন বর্ণালীবিদ্যা, নগ্ন ধাতু গুচ্ছ রসায়ন, আলো রসায়ন, ন্যানোছিদ্র বস্তু, হাইব্রিড ন্যানোপদার্থ, মধ্যবর্তী পদার্থ এবং অতি-সূক্ষ অজৈব ন্যানোতার [২২]

আরেকজন ন্যানোরসায়নের প্রবাদপুরুষ ছিলেন চার্লস এম লিবার। তিনি ন্যানোস্কেল প্রযূক্তির উন্নয়ন করেন, বিশেষতঃ জীববিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যায়। একটি নতুন প্রায়-একমাত্রিক বস্তুশ্রেণী যা সু-বৈদ্যুতিক, আলোক, যান্ত্রিক এবং তাপীয় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে আবার সম্ভাব্য জৈব-সেন্সর হিসাবেও কাজে লাগে [২৩]। লিবারের গবেষণা ন্যানোতারকে মস্তিষ্ক কার্যের মান্চিত্র গঠনে সাহায্য করেছে।

শিমন বাইস, লস এঞ্জেলিসে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কোয়ান্টাম বিন্দুর সাব-শ্রেণী, প্রতিপ্রভ অর্ধপরিবাহীর উপর গবেষণা করেন বাইস, বিশেষতঃ জৈব-নামাঙ্কণের জন্য। পল আলিভিসাতস, যিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিলেন, ন্যানোকেলাসের ব্যবহার ও প্রস্তুতকরণের গবেষণা করেন। ক্ষূদ্রাকৃতি ন্যানোকণার বিভিন্ন নিউক্লিয়েশন, ক্যাটায়ন বিতরন এবং শাখা আদানপ্রদান ইত্যাদি নিয়ে সূক্ষ্মদৃষ্টিও পাওয়া যায়। এর বিশেষ প্রয়োগ কোয়ান্টাম বিন্দুর উন্নতি।[২৪]

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেইডং ইয়াং একমাত্রিক ন্যানোগঠন নিয়ে বিশেষ কাজ করেন। বর্তমানে ইয়াং-এর দল ন্যানোতার ফোটোনিক্স, ন্যানোতার সৌরসেল, সৌর থেকে জ্বালানী রূপান্তর, ন্যানোতার তাপীয়ইলেক্ট্রিক্স, ন্যানোতার-বৈদ্যুতিক কোষ ইন্টারফেস, ন্যানোটিউব, ন্যানোতরল এবং প্লাজমনিক্স ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সক্রিয়ভাবে ব্যস্ত [২৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Cademartiri, Ludovico; Ozin, Geoffrey. Concepts of Nanochemistry. Germany: Wiley VCH. (2009) pp. 4–7. ISBN 978-3527325979.
  2. Klabunde, K; Sargeev, G , Nanochemistry. Elsevier. (2013) pp.1-9. ISBN 9780444593979.
  3. Feng, L. et al "Super-Hydrophobic Surfaces: From Natural to Artificial". Advanced Materials. 14 (24): 1857–1860 (2002) doi:10.1002/adma.200290020.
  4. Klabunde, K; Sargeev, G, Nanochemistry. Elsevier. (2013) pp.75-78. ISBN 9780444593979.
  5. Nanolithography Overview - Definition and Various Nanolithography Techniques". AZO Nano.
  6. "What is Nanolithography? - How Nanolithography Works?". Wifi Notes.
  7. Ozin,, Geoffery A. Nanochemistry: A Chemical Approach to Nanochemistry. pp. 59–62 (2009). ISBN 9781847558954
  8. Wang, Z L (2004). Journal of physics: condensed matter: Zinc oxide nanostructures: growth, properties and applications।
  9. Uses of nanoparticles of titanium(IV) oxide (titanium dioxide, TiO2)". Doc Brown's Chemistry Revision Notes NANOCHEMISTRY
  10. Bharti, Charu. "Mesoporous silica nanoparticles in target drug delivery system: A review". Int J Pharm Investig. 5: 124–33. doi:10.4103/2230-973X.160844.
  11. Nanovalve-Controlled Cargo Release Activated by Plasmonic Heating". American Chemical Society. Journal of the American Chemical Society
  12. Langer, Robert. "Nanotechnology in Drug Delivery and Tissue Engineering: From Discovery to Applications". Nano Lett. 10: 3223–30.
  13. Kingshott, Peter. "Electrospun nanofibers as dressings for chronic wound care" (PDF). Materials Views. Macromolecular Bioscience
  14. Klabunde, K; Sargeev, G, Nanochemistry. (2013) Elsevier. ISBN 9780444593979.
  15. Huang, M et al, "Room Temperature Ultraviolet Nanowire Nanolasers". Science 292, 1897-1899 (2001). doi.10.1126/science.1060367
  16. Aravamudhan S (2007) Development of micro/nanosensor elements and packaging techniques for oceanography. Ph.d. thesis, University of South Florida
  17. Xiao, J.; Liu, P. and Yang, G W. "Nanodiamonds from coal under ambient conditions."
  18. "The properties and applications of nanodiamonds". Nature Nanotechnology. 7 (1): 11. ISSN 1748-3387.
  19. Kianinia, Mehran; Shimoni, Olga; Bendavid, Avi; Schell, Andreas W.; Randolph, Steven J.; Toth, Milos; Aharonovich, Igor; Lobo, Charlene J. "Robust, directed assembly of fluorescent nanodiamonds". Nanoscale. 8 (42): 18032–18037 (2016). doi:10.1039/C6NR05419F.
  20. Mochalin, Vadym N.; Shenderova, Olga; Ho, Dean; Gogotsi, Yury. "The properties and applications of nanodiamonds". Nature Nanotechnology. 7 (1): 11–23 (2012). doi:10.1038/nnano.2011.209. ISSN 1748-3387
  21. Wilcoxon, J.P. (October 1995). "Fundamental Science of Nanometer-Size Clusters" (PDF). Sandia National Laboratories
  22. Ozin, Geoffrey. Nanochemistry Views. Toronto. (2014) p. 3
  23. Wang, L, Zhong. Nanowires and Nanobelts: Materials, Properties, and Devices: Volume 2: Nanowires and Nanobelts of Functional Materials.(2003) Spring Street, New York, NY 10013, USA: Springer. pp. ix
  24. Dahan, M., Laurence, T.; Herten, D.P.; Schumacher, A.; Chemla, D.S.; Alivisatos, A.P.; Sauer, M. and Weiss,S. "Time-gated biological imaging using colloidal quantum dots", Optics Letters, 26, 825-827 (2001)
  25. Yang, P. "Room-temperature ultraviolet nanowire nanolasers", Science, 292, 1897-1899 (2001)

নির্বাচিত গ্রন্থ[সম্পাদনা]

  • J.W. Steed, D.R. Turner, K. Wallace Core Concepts in Supramolecular Chemistry and Nanochemistry (Wiley, 2007) 315p. ISBN 978-0-470-85867-7
  • Brechignac C., Houdy P., Lahmani M. (Eds.) Nanomaterials and Nanochemistry (Springer, 2007) 748p. ISBN 978-3-540-72993-8
  • H. Watarai, N. Teramae, T. Sawada Interfacial Nanochemistry: Molecular Science and Engineering at Liquid-Liquid Interfaces (Nanostructure Science and Technology) 2005. 321p. ISBN 978-0-387-27541-3
  • Ozin G., Arsenault A.C., Cademartiri L. Nanochemistry: A Chemical Approach to Nanomaterials 2nd Eds. (Royal Society of Chemistry, 2008) 820p. ISBN 978-1847558954
  • Kenneth J. Klabunde; Ryan M. Richards, eds. (2009). Nanoscale Materials in Chemistry (2nd ed.). Wiley. ISBN 978-0-470-22270-6.