শার্লট সেভিয়ার
শালর্ট সেভিয়ার Charlotte Sevier | |
---|---|
জন্ম | ১৮৪৭ |
মৃত্যু | ২০ অক্টোবর ১৯৩০ (বয়স ৮২-৮৩) |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
পেশা | স্বামী বিবেকানন্দরশিষ্যা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ক্যাপ্টেন জেমস হেনরি সেভিয়ার |
শার্লট সেভিয়ার বা 'মিসেস সেভিয়ার' (১৮৪৭ - ২০ অক্টোবর ১৯৩০), ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত প্রত্যক্ষ শিষ্য। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশে তার স্বামী ক্যাপ্টেন জেমস হেনরি সেভিয়ারের সহযোগে উত্তরাখণ্ডের মায়াবতীতে রামকৃষ্ণ আদেশের একটি শাখা অদ্বৈত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে সাক্ষাত
[সম্পাদনা]শার্লট এলিজাবেথ সেভিয়ারের স্বামী জেমস হেনরি সেভিয়ার ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন নন-কমিশনড অফিসার। তারা উভয়েই আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধানী ছিলেন।[১]১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে ক্যাপ্টেন জেমস হেনসি সেভিয়ার ও তার স্ত্রী শার্লট এলিজাবেথ সেভিয়ারের প্রথম ব্যক্তিগত আলাপ হয়। সেই একান্ত সাক্ষাতে বিবেকানন্দ মিসেস সেভিয়ারকে "মা" বলে সম্বোধন করেন, তাদের আশ্বাস দেন শঙ্করাচার্যের বেদান্তের অদ্বৈত দিক, অদ্বৈত বেদান্তের উপর সর্বোত্তম উপলব্ধি লাভ করাবেন এবং বিবেকানন্দ তাদের ভারতে আসার অনুরাধ করেন। লন্ডনে দ্বিতীয় সফরের সময়, স্বামী বিবেকানন্দ বেশ কিছু বক্তৃতা দেন এবং ব্যক্তিগত আলোচনাচক্রে অংশ নেন।সেভিয়ার দম্পতি তার বক্তৃতায় বেদান্ত দর্শনে আকৃষ্ট হন।[২]স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য হওয়ার এবং ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। [১] ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রায় নয় মাস সেভিয়ার-দম্পতি স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও ইতালি ভ্রমণ করেন। আল্পস পর্বতমালায় ভ্রমণকালে স্বামী বিবেকানন্দের মনে ভারতের হিমালয়ের মতো অনুরূপ একটি স্থানে বেদ-চর্চার কেন্দ্র স্থাপনের ইচ্ছা জাগে। [৩] অতঃপর ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সেভিয়ার-দম্পতি স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে ইতালির নেপলস থেকে একটি স্টিমারে চড়ে সোজা ভারতে চলে আসেন। তাদের লক্ষ্য ছিল আলমোড়ার কাছে কোনো একটি জায়গা খুঁজে নিয়ে স্বামীজির ইচ্ছানুসারে একটি আশ্রম স্থাপন করা। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে তারা মাদ্রাজে এসে পৌঁছান। বিবেকানন্দ কলকাতায় আসেন আর সেভিয়ার দম্পতি ইংল্যান্ডে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে আলমোড়ায় এক বাংলো ভাড়া করে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তী দুই বছর সেভিয়ার-দম্পতির সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দও এই বাংলোয় বাস করেছিলেন।
বিবেকানন্দ যখন কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়েছিলেন, সেই সময় সেভিয়ার-দম্পতি বিবেকানন্দের সন্ন্যাসী-শিষ্য স্বামী স্বরূপানন্দকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রমের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনে বের হন। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ঘন দেবদারু, পাইন ও ওক বন পরিবেষ্টিত এক চা বাগানের অংশে একটি জায়গার সন্ধান পান। সেভিয়ার দম্পতির সহযোগিতায় স্বামী স্বরূপানন্দের সাহায্যে আশ্রম স্থাপিত হয়।[৪] একই সময় কলকাতায় বেলুড় মঠ স্থাপিত হয়েছিল।[৫]
অদ্বৈত আশ্রম, মায়াবতী
[সম্পাদনা]১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশে তৎকালীন মাদ্রাজের (বর্তমানে চেন্নাইয়ের শিষ্যরা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসী ও তপস্বীদের রচিত সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়ের উপর মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশনার জন্য প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। কিন্ত কোন সংকটের জন্য কিছুদিনের জন্য প্রকাশনা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছিল।স্বামী বিবেকানন্দ তখন সেভিয়ার দম্পতিকে এই পত্রিকার প্রকাশনা দেখাশোনার ভার দেন এবং তিনি তার শিষ্য স্বামী স্বরূপানন্দকে সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। স্বামী স্বরূপানন্দের সাথে, সেভিয়ার দম্পতি আলমোড়া জেলায় হিমালয়ের পাহাড় সংলগ্ন উপত্যকার মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ৬০০০ থেকে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় মায়াবতীর এস্টেট পছন্দ করেন অদ্বৈত আশ্রম প্রতিষ্ঠার। মানবের ব্যক্তি জীবনকে তথা মানবজাতিকে এক মুক্ত ও পূর্ণ সুযোগে এমন এক সত্যে উন্নীত করতেই হিমালয়ের এই উচ্চতায় অদ্বৈত আশ্রম শুরুতে প্রাথমিক প্রয়াস সম্পন্ন হয়। আর জগতের সমস্ত প্রাণীর একত্বের চিন্তায় উৎসর্গীকৃত। [৬]আর সেখান থেকেই তারা সন্ন্যাসীদের কঠোর জীবনযাপনের মধ্যে পুনরায় শুরু করেন নিয়মিত ভাবে প্রবুদ্ধ ভারত প্রকাশনার। [৩]
ক্যাপ্টেন জেমস হেনরি সেভিয়ার ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর মূত্রনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎই মারা যান। তার শেষকৃত্য তার ইচ্ছা অনুসারে হিন্দুমতে সারদা নদীর পাড়ে সম্পন্ন করা হয়। শোকাতুরা সেভিয়ারকে ব্যক্তিগত ভাবে শোকজ্ঞাপন ও সান্ত্বনা দিতে স্বামী বিবেকানন্দ মায়াবতী আসেন ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি এবং পনের দিন অবস্থান করেন। বিভিন্ন সময়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মায়াবতীতে মিসেস সেভিয়ার কাছে এসেছেন। এরা হলেন - সিস্টার নিবেদিতা , সিস্টার ক্রিস্টিন , স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এবং তাঁর স্ত্রী লেডি অবলা বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, নন্দলাল বসু, গারট্রুড এমারসন সেন, জোসেফাইন ম্যাকলিওড এবং ভগিনী গার্গী নামে পরিচিত মেরি লুইস বার্ক ।
ক্যাপ্টেন সেভিয়ার যেখানে বসবাস করতেন সেটি একটি গ্রন্থাগারে পরিণত করা হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর বেশ কয়েক বছর অদ্বৈত আশ্রমে বসবাস করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২০ অক্টোবর পরলোক গমন করেন।
অবদানসমূহ
[সম্পাদনা]অদ্বৈত আশ্রম প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, মিসেস সেভিয়ার আশ্রমের দৈনন্দিন দেখাশোনা কাজের তদারকি করতেন। প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকার সম্পাদনাতেও সহায়তা করতেন। এছাড়াও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিষ্যদের দৃষ্টিতে স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও আদর্শ সংকলনে ও সম্পাদনে অবদান রেখেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের সম্পূর্ণ রচনা সংকলনে সহায়তা করেন। [১]
মিসেস সেভিয়ার শ্যামলাতলে বিবেকানন্দ আশ্রম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমিও কিনেছিলেন।
তিনি স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিতে গঠিত "বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল টেম্পল ফান্ড"-এর জন্য কিছু অবদান রেখেছিলেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ "Advaita Ashrama-Seviers"। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ Virajananda, Swami (১৯৪৭)। Life of Swami Vivekananda by His Eastern and Western Disciples। Mayavati: Advaita Ashrama। পৃষ্ঠা 432। আইএসবিএন 9788180902253।
- ↑ Mayabati: A journey towards Self – Dr. Subhendu Chakravrati on a spiritual journey to Mayavati ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জুলাই ২০১১ তারিখে Outlook, 2008.
- ↑ Mayawati Route – Visitors Booklet of Advaita Ashrama ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে Advaita Ashrama.
- ↑ The Life of the Swami Vivekananda, by His Eastern and Western Disciples, the Advaita Ashrama, Himalayas, by Advaita Ashrama, Published by the Swami Virajananda from the Prabuddha Bharata Office, Advaita Ashrama, 1947. Page 341.
- ↑ "Photo of Mayavati"। Vivekananda.net।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- মায়াবতীর মা: শার্লট সেভিয়ার এবং অদ্বৈত আশ্রমের গল্প, অমৃতা এম সালমের দ্বারা, অদ্বৈত আশ্রম, মায়াবতী, 2013