দেববাণী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেববাণী
Inspired Talks
Cover
১৯১০ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকস্বামী বিবেকানন্দ
ভাষাইংরেজি, বাংলা
পাঠ্যদেববাণী
Inspired Talks
উইকিসংকলন

দেববাণী (মূল ইংরেজিতে: ইন্সপায়ার্ড টকস) হল স্বামী বিবেকানন্দের দেওয়া কয়েকটি বক্তৃতার সংকলন গ্রন্থ। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৯ সালে। ১৮৯৫ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আগস্ট মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত থাউজেন্ড আইল্যান্ড পার্কে কয়েকজন নির্বাচিত শিষ্যের সামনে বিবেকানন্দ কয়েকটি বক্তৃতা দেন। সারা এলেন ওয়াল্ডো এর কতকগুলি নথিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তিনি পরে এটিকে বই আকারে প্রকাশ করেন।[১][২]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

বিশ্বধর্ম মহাসভা[সম্পাদনা]

১৮৯৩ সালে বিশ্বধর্ম মহাসভায় বিবেকানন্দ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে তার বক্তৃতাগুলি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার দরুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের নজরে আসে সেগুলি। মহাসভা শেষ হলে বিবেকানন্দ অন্যত্র বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি ডেট্রয়েট যান। সেখানে বেশ কয়েকটি বক্তৃতা দেন। সেখানেই ভগিনী ক্রিস্টিন ও মেরি ফাঙ্কের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়। ডেট্রয়েটে বক্তৃতা দেওয়ার পর তিনি নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্য শহরে বক্তৃতা দেন।

ব্রুকলিনের বক্তৃতা[সম্পাদনা]

১৮৯৫ সালের জুলাইয়ে থাউজেন্ড আইল্যান্ড পার্কে বিবেকানন্দ

১৮৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বিবেকানন্দ ব্রুকলিন এথিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে বক্তৃতা দেন। তার বক্তৃতার বিষয় ছিল হিন্দুধর্ম। এই বক্তৃতার পর শ্রোতাদের আগ্রহ বাড়ে এবং তারা ব্রুকলিনে নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার অনুরোধ জানান। এই সময় বিবেকানন্দ পাউচ ম্যানসন ও অন্যান্য জায়গায় বেশ কিছু ক্লাস নেন।[৩]

নিউ ইয়র্কের ক্লাস[সম্পাদনা]

ব্রুকলিনের বক্তৃতা শেষ করে বিবেকানন্দ চলে আসেন নিউ ইয়র্কে। তার শিষ্যেরাও কেউ কেউ সেখানে আসেন। তাই বিবেকানন্দকে সেখানেও ক্লাস নেওয়া শুরু করতে হয়। সেই সময় তিনি একটি ছোটো ঘর ভাড়া নিয়ে ছিলেন। শিষ্যদের সংখ্যা বাড়লে সেই ছোটো ঘরটিতে স্থানাভাব দেখা দিতে লাগল। তখন চেয়ারের বদলে তারা মেঝেতে বা ড্রেসারে বসে তার কথা শুনতে লাগলেন।[৩]

এই বক্তৃতা শুনতে সেই সময় অর্থ দিতে হত না। তাই খরচ চালানোর জন্য তাকে স্বেচ্ছাসেবীদের অর্থসাহায্যের উপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু সেই অর্থ সামান্য ছিল। তাতে ঘর ভাড়া দেওয়া বা অন্যান্য খরচ নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই অর্থাভাবে ক্লাসের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিবেকানন্দ স্থির করেন বাইরে বক্তৃতা দিয়ে সেই খরচে ঘরে ক্লাস চালাবেন। তিনি শিষ্যদের ব্যাখ্যা করে বলেন, হিন্দু রীতি অনুযায়ী শিক্ষককে শিক্ষাদানের খরচ বহন করতে হয়।[৪]

থাউজেন্ড আইল্যান্ড পার্কের বক্তৃতা[সম্পাদনা]

শিষ্যদের অনুরোধে বিবেকানন্দকে সারা গ্রীষ্ম জুড়ে বক্তৃতা দিতে হয়। এই সময় বক্তৃতা দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে শিষ্যদের অনুরোধে বক্তৃতা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নেন। এই সময় দেখা যায়, তার অনেক শিষ্যকে শহরের বাইরে যেতে হবে এবং তাদের ক্লাসের জন্য একটি জায়গা নির্বাচন করতে হবে। সমস্যার সমাধান করেন তার এক শিষ্যা। তিনি থাউজেন্ড আইল্যান্ড পার্কে তার একটি কটেজ ক্লাসের জন্য ব্যবহার করতে দেবার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বিবেকানন্দ ও তার শিষ্যেরা রাজি হন।[৪]

১৮৯৫ সালের মধ্য-জুন থেকে অগস্টের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বিবেকানন্দ সেখানে নির্বাচিত কয়েকজন শিষ্যের সামনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন।[১][২]

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

বিবেকানন্দের কয়েকটি বক্তৃতা তারা শিষ্যা সারা এলেন ওয়াল্ডো (যাঁকে তিনি হরিদাসী বলে ডাকতেন) লিখে রেখেছিলেন।[৫] স্বামী রামকৃষ্ণানন্দের মতে, "স্বামীজির দেববাণীর জন্য জগৎ হরিদাসী মায়ের (কুমারী এস. এলেন ওয়াল্ডো) কাছে কৃতজ্ঞ।"[৬] বইটি ইংরেজিতে মাদ্রাজ রামকৃষ্ণ মিশন প্রকাশ করেন ১৯০৯ সালে।[৭] পরে বাংলায় প্রকাশ করে উদ্বোধন কার্যালয়। এটি স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা বইয়ের চতুর্থ খণ্ডে সংকলিত।

টীকা[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Sheean 2005, পৃ. 346–347
  2. Michelis 2005, পৃ. 121
  3. Vivekananda ও Waldo 1910, পৃ. 8–10
  4. Vivekananda ও Waldo 1910, পৃ. 11–23
  5. Levinsky 1984, পৃ. 131
  6. Vivekananda ও Waldo 1910, পৃ. iii
  7. Vivekananda ও Waldo 1910

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]