জামাল নজরুল ইসলাম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
জন্মস্থানের নাম।
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১৮ নং লাইন: ১৮ নং লাইন:


==জন্ম ও শিক্ষাজীবন==
==জন্ম ও শিক্ষাজীবন==
জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি [[ঝিনাইদহ]] শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তখন সে শহরের মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজের সমতুল্য) ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১ বছর তখনই তার বাবা কলকাতায় বদলি হন। জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন [[কলকাতা|কলকাতার]] মডেল স্কুলে। এই স্কুল থেকে পরবর্তীতে শিশু বিদ্যাপীঠে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যাপীঠেই পড়েন। পরবর্তীতে আবার মডেল স্কুলে ফিরে যান। কলকাতায় মডেল স্কুলের পর [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামে]] চলে আসেন। এখানে [[চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল|চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে]] ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। এই ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে "ডাবল প্রমোশন" দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে নেয়া হয়। নবম শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশোনা করেন। এখানে পড়ার সময়ই [[গণিত|গণিতের]] প্রতি তার অন্যরকম ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। অনেক অতিরিক্ত [[জ্যামিতি]] সমাধান করতে থাকেন। নবম শ্রেণীতে উঠার পর পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিম [[পাকিস্তান|পাকিস্তানে]] চলে যান। সেখানে গিয়ে ভর্তি হন ''লরেন্স কলেজে''। এই কলেজ থেকেই তিনি ''সিনিয়র কেমব্রিজ'' ও ''হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ'' পাশ করেন। সে সময় সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ''ও-লেভেল'' এবং হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ''এ-লেভেল'' বোঝাতো। এ সময় নিজে নিজে অনেক অঙ্ক কষতেন। বিভিন্ন বই থেকে সমস্যা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন যা পরবর্তীতে তার অনেক কাজে আসে। উল্লেখ্য, হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজে তিনি একাই কেবল গণিত পড়েছিলেন। এটা বেশ উচ্চ পর্যায়ের গণিত হওয়ায় সবাই নিতে চাইতো না। এ সময়ই গণিতের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] [[সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা|সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে]] পড়তে যান।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি |ইউআরএল=http://www.eaward.org.bd/eaward_new/PDF/16-84-90-Science.pdf |সংগ্রহের-তারিখ=১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20120404011922/http://www.eaward.org.bd/eaward_new/PDF/16-84-90-Science.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=৪ এপ্রিল ২০১২ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> এখান থেকে ''বিএসসি অনার্স'' করেন। এই কলেজের একজন শিক্ষককে তিনি নিজের প্রিয় শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই শিক্ষকের নাম "ফাদার গোরে"। গণিতের জটিল বিষয়গুলো খুব সহজে বুঝিয়ে দিতেন বলেই জে এন ইসলাম তার ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। গোরে তার কাছে গণিতের বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইতেন, ইসলাম আগ্রহভরে তা শেয়ার করতেন। গোরের সাথে ইসলামের এই সম্পর্কের কারণ বলতে গিয়ে ইসলাম বলেন,
জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি [[ঝিনাইদহ]] শহরে জন্মগ্রহণ করেন।তবে তার আদিনিবাস চট্টগ্রাম জেলায়। তার বাবা তখন সে শহরের মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজের সমতুল্য) ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১ বছর তখনই তার বাবা কলকাতায় বদলি হন। জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন [[কলকাতা|কলকাতার]] মডেল স্কুলে। এই স্কুল থেকে পরবর্তীতে শিশু বিদ্যাপীঠে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যাপীঠেই পড়েন। পরবর্তীতে আবার মডেল স্কুলে ফিরে যান। কলকাতায় মডেল স্কুলের পর [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামে]] চলে আসেন। এখানে [[চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল|চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে]] ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। এই ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে "ডাবল প্রমোশন" দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে নেয়া হয়। নবম শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশোনা করেন। এখানে পড়ার সময়ই [[গণিত|গণিতের]] প্রতি তার অন্যরকম ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। অনেক অতিরিক্ত [[জ্যামিতি]] সমাধান করতে থাকেন। নবম শ্রেণীতে উঠার পর পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিম [[পাকিস্তান|পাকিস্তানে]] চলে যান। সেখানে গিয়ে ভর্তি হন ''লরেন্স কলেজে''। এই কলেজ থেকেই তিনি ''সিনিয়র কেমব্রিজ'' ও ''হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ'' পাশ করেন। সে সময় সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ''ও-লেভেল'' এবং হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ''এ-লেভেল'' বোঝাতো। এ সময় নিজে নিজে অনেক অঙ্ক কষতেন। বিভিন্ন বই থেকে সমস্যা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন যা পরবর্তীতে তার অনেক কাজে আসে। উল্লেখ্য, হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজে তিনি একাই কেবল গণিত পড়েছিলেন। এটা বেশ উচ্চ পর্যায়ের গণিত হওয়ায় সবাই নিতে চাইতো না। এ সময়ই গণিতের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] [[সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা|সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে]] পড়তে যান।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি |ইউআরএল=http://www.eaward.org.bd/eaward_new/PDF/16-84-90-Science.pdf |সংগ্রহের-তারিখ=১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20120404011922/http://www.eaward.org.bd/eaward_new/PDF/16-84-90-Science.pdf |আর্কাইভের-তারিখ=৪ এপ্রিল ২০১২ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> এখান থেকে ''বিএসসি অনার্স'' করেন। এই কলেজের একজন শিক্ষককে তিনি নিজের প্রিয় শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই শিক্ষকের নাম "ফাদার গোরে"। গণিতের জটিল বিষয়গুলো খুব সহজে বুঝিয়ে দিতেন বলেই জে এন ইসলাম তার ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। গোরে তার কাছে গণিতের বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইতেন, ইসলাম আগ্রহভরে তা শেয়ার করতেন। গোরের সাথে ইসলামের এই সম্পর্কের কারণ বলতে গিয়ে ইসলাম বলেন,
{{উক্তি|গণিতকে এমনিতেই অনেকে ভয় পেত। কিন্তু এটির প্রতিই ছিল আমার অসীম আগ্রহ, ঝোঁক। এ কারণেই বোধহয় তিনি আমাকে পছন্দ করতেন।|sign=|source=}}
{{উক্তি|গণিতকে এমনিতেই অনেকে ভয় পেত। কিন্তু এটির প্রতিই ছিল আমার অসীম আগ্রহ, ঝোঁক। এ কারণেই বোধহয় তিনি আমাকে পছন্দ করতেন।|sign=|source=}}



০৫:৫৭, ৩ মে ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

জামাল নজরুল ইসলাম
কসমোলজিস্ট জামাল নজরুল ইসলাম
জন্ম (1939-02-24) ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ (বয়স ৮৫)
মৃত্যুমার্চ ১৬, ২০১৩(2013-03-16) (বয়স ৭৪)
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ববিদ্যা
প্রতিষ্ঠানসমূহক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড, কলেজ পার্কক
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন
ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি
সিটি ইউনিভার্সিটি লন্ডন
ক্লেয়ার হল, ক্যামব্রিজ
কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়
জ্যোতির্বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, ক্যামব্রিজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

জামাল নজরুল ইসলাম (জন্ম : ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৯৩৯ - মৃত্যু : মার্চ ১৬, ২০১৩) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানীবিশ্বতত্ত্ববিদ[১] তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। ড. ইসলাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল অ্যান্ড ফিজিকাল সায়েন্সের গবেষক এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।[২] ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৩][৪][৫]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।তবে তার আদিনিবাস চট্টগ্রাম জেলায়। তার বাবা তখন সে শহরের মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজের সমতুল্য) ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১ বছর তখনই তার বাবা কলকাতায় বদলি হন। জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন কলকাতার মডেল স্কুলে। এই স্কুল থেকে পরবর্তীতে শিশু বিদ্যাপীঠে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যাপীঠেই পড়েন। পরবর্তীতে আবার মডেল স্কুলে ফিরে যান। কলকাতায় মডেল স্কুলের পর চট্টগ্রামে চলে আসেন। এখানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। এই ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে "ডাবল প্রমোশন" দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে নেয়া হয়। নবম শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশোনা করেন। এখানে পড়ার সময়ই গণিতের প্রতি তার অন্যরকম ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। অনেক অতিরিক্ত জ্যামিতি সমাধান করতে থাকেন। নবম শ্রেণীতে উঠার পর পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে গিয়ে ভর্তি হন লরেন্স কলেজে। এই কলেজ থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজহায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পাশ করেন। সে সময় সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ও-লেভেল এবং হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের এ-লেভেল বোঝাতো। এ সময় নিজে নিজে অনেক অঙ্ক কষতেন। বিভিন্ন বই থেকে সমস্যা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন যা পরবর্তীতে তার অনেক কাজে আসে। উল্লেখ্য, হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজে তিনি একাই কেবল গণিত পড়েছিলেন। এটা বেশ উচ্চ পর্যায়ের গণিত হওয়ায় সবাই নিতে চাইতো না। এ সময়ই গণিতের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে যান।[৬] এখান থেকে বিএসসি অনার্স করেন। এই কলেজের একজন শিক্ষককে তিনি নিজের প্রিয় শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই শিক্ষকের নাম "ফাদার গোরে"। গণিতের জটিল বিষয়গুলো খুব সহজে বুঝিয়ে দিতেন বলেই জে এন ইসলাম তার ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। গোরে তার কাছে গণিতের বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইতেন, ইসলাম আগ্রহভরে তা শেয়ার করতেন। গোরের সাথে ইসলামের এই সম্পর্কের কারণ বলতে গিয়ে ইসলাম বলেন,

গণিতকে এমনিতেই অনেকে ভয় পেত। কিন্তু এটির প্রতিই ছিল আমার অসীম আগ্রহ, ঝোঁক। এ কারণেই বোধহয় তিনি আমাকে পছন্দ করতেন।

বিএসসি শেষে ১৯৫৭ সালে ইসলাম কেমব্রিজে পড়তে যান। কেমব্রিজের প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে আবারও স্নাতক ডিগ্রি (১৯৫৯) অর্জন করেন। তারপর এখান থেকেই মাস্টার্স (১৯৬০) ডিগ্রি লাভ করেন।[৭][৮] ১৯৬৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অফ সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন

১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ডে ডক্টরাল-উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইসলাম কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি) কাজ করেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভিজিটিং সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ, কার্ডিফ (বর্তমানে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়) এর সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলে ফেলো ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে রিডার পদে উন্নীত হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে ১৯৬৮, ১৯৭৩ ও ১৯৮৪ সালে ভিজিটিং সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ সালে ইসলাম বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পদার্থবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপক কোটা খালি না থাকায় তিনি গণিত বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং গড়ে তোলেন উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণাগার আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গাণিতিক ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র  বা রিসার্স সেন্টার ফর ম্যাথম্যাটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স (আরসিএমপিএস)।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন

বই পড়তে ভালবাসেন। তবে তিনি শখ হিসেবে গান শোনা ও ছবি আঁকার কথা বলেছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত সবচেয়ে প্রিয়। কম্পিউটারইন্টারনেট এর প্রতি তার কোন আগ্রহ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই ক্যালকুলেটর ব্যবহারে তার অনীহা ছিল। গাণিতিক হিসাব মাথা খাটিয়ে করতে পছন্দ করতেন। তাই কম্পিউটারের ব্যবহারও তার কাছে ভালো লাগত না। এই অপছন্দের মূল কারণ অবশ্য অপ্রয়োজনীয়তা। তিনি বলতেন, কম্পিউটার তার কাজে লাগে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

তার চিন্তার অনেকখানি জুড়ে ছিল দেশ ও সমাজের উন্নতি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ। নিজের আয় থেকে কিছু অর্থ জমিয়ে দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এই পরোক্ষ অবদান ও পরবর্তীকালে দেশে ফিরে আসা থেকে তার দেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া তিনি বিদেশে পড়াশোনা করছে এমন সব শিক্ষার্থীকেই পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত করেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত লেখক ও শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশে ফেরার আগে জামাল নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। ইসলাম তৎক্ষণাৎ তাকে দেশে ফেরার ব্যাপারে উৎসাহ দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

২০০১ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে একটি গুজব রটেছিল। বাংলাদেশেও এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় জামাল নজরুল ইসলাম গণিতের হিসাব কষে দেখান যে, সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়মে সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ এক সরলরেখা বরাবর চলে এলেও তার প্রভাবে পৃথিবীর কোন ক্ষতি হবে না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মৃত্যু

ইসলাম ২০১৩ সালের ১৬ই মার্চ ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

রচনাবলী

  • দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স (১৯৮৩) - কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় অনূদিত হয়।
  • ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪) - ডব্লিউ বি বনোর এর সাথে যৌথভাবে সম্পাদনা করেন।
  • রোটেটিং ফিল্ড্‌স ইন জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৫) - কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত।
  • অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি (১৯৯২)
  • কৃষ্ণ বিবর - বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত।
  • মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ - রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা
  • শিল্প সাহিত্য ও সমাজ - রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা
  • স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ - কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত
  • দ্য ফার ফিউচার অফ দি ইউনিভার্স - এনডেভারে প্রকাশিত

পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী ১৯৮৫ সালে তাকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। ১৯৯৪ সালে তিনি ন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মেডেল পান। ১৯৯৮ সালে ইতালির আবদুস সালাম সেন্টার ফর থিওরিটিকাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাকে মেডাল লেকচার পদক দেয়া হয়।[৯] তিনি ২০০০ সালে কাজী মাহবুবুল্লাহ এন্ড জেবুন্নেছা পদক পান। ২০০০ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পদক লাভ করেন।

সদস্য

  • বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি
  • রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি
  • কেমব্রিজ ফিলোসফিক্যাল সোসাইটি
  • ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স
  • বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী
  • এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ

তথ্যসূত্র

  1. মামুনুর রশিদ, গণিত বিভাগ, চবি (মার্চ ১৭, ২০১৬)। "বাঙালির রত্ন বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম"সাপ্তাহিক। চবি: সাপ্তাহিক। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৪, ২০১৯ 
  2. "Syndicate of CUET"। Cuet.ac.bd। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৪ 
  3. "খ্যাতিমান বিজ্ঞানী প্রফেসর জামাল নজরুল আর নেই | chittagong-barta | natunbarta.com | Top Online Newspaper in Bangladesh"। natunbarta.com। ২০১৩-০৩-১৬। ২০১৩-০৫-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৪ 
  4. "বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম আর নেই (ভিডিও) - প্রথম আলো"। Archive.prothom-alo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৪ 
  5. নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম (২০১৩-০৩-১৬)। "অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম আর নেই - bdnews24.com"। Bangla.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৪ 
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ 
  7. ":: Welcome to GUNIJAN :: The Eminent :: Largest electronic journal of bangladeshi eminents :"। Gunijan.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৪ 
  8. http://www.bas.org.bd/fellowship/list-of-fellows-/userprofile/jnislam.html
  9. "TWAS Medal Lecture in Physics and Astronomy"। ৭ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ 

বহিঃসংযোগ