লুঙ্গি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
লিমন২০১০ (আলোচনা | অবদান)
115.127.24.179-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Addbot-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
১১ নং লাইন: ১১ নং লাইন:
==আঞ্চলিক প্রভেদসমূহ==
==আঞ্চলিক প্রভেদসমূহ==
===বাংলাদেশ===
===বাংলাদেশ===
লুঙ্গি সাধারণতঃ বাংলাদেশী সকল সম্প্রদায়ের পুরুষদেরই পরতে দেখা যায়, এটি কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা দিনে পরা হয় না। বাংলাদেশে লুঙ্গি বেশিরভাগ পুরুষই দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহার্য পোষাক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কখনও কখনও বিয়ের উপহার হিসেবে বরকে সুতায় নকশা করা, বাটিক করা অথবা সিল্কের লুঙ্গি দেওয়া হয়। কোন বিশেষ দিন উপলক্ষে শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামদের, গুরুজনদেরও লুঙ্গি উপহার দেওয়ার রীতি চালু আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপজাতীয় মহিলারা একই পোষাক পরিধান করেন, বাঙালি মহিলারা লুঙ্গি পরিধান করেন না। উপজাতীয়দের কাছে এ পোষাক ''থামি'' নামে পরিচিত।
লুঙ্গি সাধারণতঃ বাংলাদেশী সকল সম্প্রদায়ের পুরুষদেরই পরতে দেখা যায়, যদিও এটি কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা দিনে পরা হয় না। বাংলাদেশে লুঙ্গি বেশিরভাগ পুরুষই দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহার্য পোষাক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। যদিও সুতায় নকশা করা, বাটিক করা অথবা সিল্কের লুঙ্গি কখনও কখনও বিয়ের উপহার হিসেবে বরকে দেওয়া হয়। কোন বিশেষ দিন উপলক্ষে শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামদের লুঙ্গি উপহারের রীতি এখনও চালু আছে। যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপজাতীয় মহিলারা একই পোষাক পরিধান করেন, বাঙালি মহিলারা লুঙ্গি পরিধান করেন না। উপজাতীয়দের কাছে এ পোষাক ''থামি'' নামে পরিচিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুরুষের দৈনন্দিন পোষাক হিসেবে ধুতির পরিবর্তে লুঙ্গির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন কোন বাঙালি লুঙ্গি পরেন না, কারণ তারা মনে করেন লুঙ্গি খুবই অনানুষ্ঠানিক এবং মানানসই নয়, যদিও এটি আরামদায়ক এবং অনেকেই ব্যবহার করছেন। যদিও আস্তে আস্তে লুঙ্গির ব্যবহার কমে আসছে, কিন্তু তা এখনও বাংলাদেশের প্রায় সকল গ্রাম্য পুরুষের পরিচ্ছেদ পোষাক।

লুঙ্গি ধুতির তুলনায় আরামদায়ক ও নিরাপদ। দমকা হাওয়ায় ধুতি খুলে গিয়ে জন সম্মুখে লজ্জিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, লুঙ্গিতে পরিধায়ক নিরাপদ থাকেন। লুঙ্গিতে কোন মেশিন [আমির খান অভিনীত হিন্দি ছবি ‘Three Idiots’ দ্রষ্টব্য] না থাকায়, এর ব্যবহার বাচ্চা ছেলেদের মধ্যে বিশেষ করে গ্রাম-বাংলার ছেলেদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লুঙ্গি ব্যবহারে ‘ঢাকাইয়া’রা এক উচ্চমার্গীয় শৈল্পিকতার ছাপ ফেলতে সমর্থ হয়েছেন। সাদা লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবি [এক ধরনের পোশাক, পাকিস্তানি নয়], সাদা টুপি ও সাদা স্যান্ডেল, আর গালে পান - ঢাকাইয়া ছেলে-যুবা-বৃদ্ধদের অসম্ভব প্রিয় কম্বিনেশান।

এছাড়া, লুঙ্গি বাংলাদেশের জাতীয় ড্রাইভার ‘রিকশাওয়ালা’দের প্রথম পছন্দের পোশাক। এদিকে আগেরদিনের বাংলা ছায়াছবিতেও অভিনেতাদের লুঙ্গি পরিধান করতে দেখা যেত।

যদিও আস্তে আস্তে লুঙ্গির ব্যবহার কমে আসছে, কিন্তু ইদানিং কালে ‘আমানত শাহ লুংগি’র বিজ্ঞাপনের পরে লুঙ্গি এখন শহুরে ছেলেদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুরুষের দৈনন্দিন পোষাক হিসেবে ধুতির পরিবর্তে লুঙ্গির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন কোন বাঙালি লুঙ্গি পরেন না, কারণ তারা বারিধারা নামক অসামাজিক স্থানে অবস্থান করেন। তারা মনে করেন লুঙ্গি খুবই অনানুষ্ঠানিক এবং মানানসই নয়। তাদের মনে রাখা উচিত, একাত্তরে বীর বাঙ্গালি লুঙ্গি ‘কাছা মেরে’ [ লুংগির সামনের অংশ সরু করে রেখে, লুঙ্গি হাটুর উপরে তুলে বিশেষ পদ্ধতিতে পেছনে নিয়ে গিয়ে গিঁট দিয়ে পরা। অনেকে একে ‘মালকোঁচা’ও বলেন।] কাপুরুষ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেছিল। তাই লুঙ্গি ‘বীর’ এর পোশাকও! [এছাড়া, Spartacus (tv series), Gladiators (movie) দ্রষ্টব্য]।


===দক্ষিণ ভারত===
===দক্ষিণ ভারত===

১৩:২৯, ৪ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

লুঙ্গি পরিহিত বাংলাদেশের নরাইল গ্রামের এক বালক যে এক গেঁড়ো দিয়ে লুঙ্গিটি পরেছে।

লুঙ্গি দেহের নিচের অংশে পরার একধরনের পোষাক, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং মায়ানমারে এর প্রচলন দেখা যায়। যদিও এটির সূচনা দক্ষিণ ভারতে কিন্তু এটি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক সম্প্রদায়ই ব্যবহার করে থাকে। যদিও এক রঙের লুঙ্গিই বেশী জনপ্রিয় কিন্তু সাধারণত এটি বিভিন্ন নকশা এবং রঙে সুতায় বুনা হয়। নকশা ও রঙ ছাড়াও লুঙ্গির উপরে এবং নিচে সাদা বা কালো রঙের ডোরা কাটা দাগ থাকে। ধুতি চাদরের মত হলেও লুঙ্গি স্কার্টের মতন করে গোল করে সেলানো থাকে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ভেদে লুঙ্গি পুরুষ ও মহিলা উভয়ই, বিভিন্নভাবে কোমরে বেঁধে পরে থাকে যা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পরা হয়। দৈনন্দিন পরার ক্ষেত্রে লুঙ্গি সাধারণ দুই গেড়ো বাঁধন বেশি জনপ্রিয়, কারণ এতে লুঙ্গি খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। লুঙ্গি সাধারণত নিজের স্বস্তিপূর্ণভাবে পরা হয়, যাতে এর দৈর্ঘ্য সহজেই ঠিক করে নেওয়া যায়। যে সকল অঞ্চল গরম এবং আর্দ্রতার কারণে আবহাওয়া অসহনীয় হয়ে উঠে সে সব অঞ্চলে এটি পরা হয়।

লুঙ্গি অথবা লোঙ্গাই মায়ানমারের জাতীয় পোষাক হিসেবে স্বীকৃত।[১]

উৎস

লুঙ্গি পরিহিত একজন ব্যক্তি

গবেষণায় দেখা গেছে, এর সূচনা হয়েছে দক্ষিণ ভারতে বর্তমানে তামিলনাডুয়। ভেস্তি নামক এক ধরনের পোষাককে লুঙ্গির পূর্বসূরী বলে মনে করা হয়। ইতিহাসে উল্লেখিত আছে মসলিন কাপড়ের ভেস্তি পোষাক তামিল থেকে ব্যবিলনে রপ্তানী হত। ব্যবিলনের প্রত্নতাত্বিক নিবন্ধে 'সিন্ধু' শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়। তামিল ভাষায় সিন্ধু অর্থ কাপড় বা পোষাক। 'বারাদাভারগাল' নামের তামিলনাডুর জেলে সম্প্রদায় পশ্চিম আফ্রিকা, ইজিপ্ট বা মিশর এবং মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে লুঙ্গি রপ্তানীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সময়ের সাথে, সাদা কাপড়ে ফুল এবং অন্যান্য নকশা চিত্রিত হয়ে পরবর্তীতে লুঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে লুঙ্গি বার্মা, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় এটি বেশি জনপ্রিয়।

আঞ্চলিক প্রভেদসমূহ

বাংলাদেশ

লুঙ্গি সাধারণতঃ বাংলাদেশী সকল সম্প্রদায়ের পুরুষদেরই পরতে দেখা যায়, যদিও এটি কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা দিনে পরা হয় না। বাংলাদেশে লুঙ্গি বেশিরভাগ পুরুষই দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহার্য পোষাক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। যদিও সুতায় নকশা করা, বাটিক করা অথবা সিল্কের লুঙ্গি কখনও কখনও বিয়ের উপহার হিসেবে বরকে দেওয়া হয়। কোন বিশেষ দিন উপলক্ষে শিক্ষক এবং মসজিদের ইমামদের লুঙ্গি উপহারের রীতি এখনও চালু আছে। যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপজাতীয় মহিলারা একই পোষাক পরিধান করেন, বাঙালি মহিলারা লুঙ্গি পরিধান করেন না। উপজাতীয়দের কাছে এ পোষাক থামি নামে পরিচিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুরুষের দৈনন্দিন পোষাক হিসেবে ধুতির পরিবর্তে লুঙ্গির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন কোন বাঙালি লুঙ্গি পরেন না, কারণ তারা মনে করেন লুঙ্গি খুবই অনানুষ্ঠানিক এবং মানানসই নয়, যদিও এটি আরামদায়ক এবং অনেকেই ব্যবহার করছেন। যদিও আস্তে আস্তে লুঙ্গির ব্যবহার কমে আসছে, কিন্তু তা এখনও বাংলাদেশের প্রায় সকল গ্রাম্য পুরুষের পরিচ্ছেদ পোষাক।

দক্ষিণ ভারত

মুন্ডু পরিহির এক পুরুষ

কেরালায় লুঙ্গি পুরুষ ও মহিলা উভয়েই পরে থাকেন। এটিকে খুবই অনানুষ্ঠানিক এবং দিনমজুরদের পোষাক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে লুঙ্গি সাধারণতঃ রঙ্গিন এবং বিভিন্ন নকশা করা থাকে। সাদা রঙের নকশা ছাড়া লুঙ্গির সংস্করণকে মুন্ডু নামে ডাকা হয়। কোন অনুষ্ঠানের (যেমনঃ বিয়ে) ক্ষেত্রে, মুন্ডুতে কখনো কখনো সোনালি সুতায় এমব্রয়ডারি করা থাকে যা কাসাভু নামে পরিচিত। লুঙ্গি সাধারণতঃ বিয়ে বা অন্য কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরা হয় না। জাফরান রঙের মুন্ডু কাভি মুন্ডু নামে পরিচিত।

রঙ্গিন লুঙ্গিকে কারনাটকে ডাকা হয় মুন্ডা বলে। লুঙ্গির মত সাদা রঙের নকশা ছাড়া দুই ভাঁজের কাপড়কে ডাকা হয় পাঞ্চে বলে। পাঞ্চে যা লুঙ্গির বিপরিত পরা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানসমূহে। অন্ধ প্রদেশেও এগুলো ব্যবহার করা হয়।

কেরালায় স্থানীয় পুরুষেরা সাধারণতঃ তাদের মুন্ডু ও লুঙ্গিকে গুটিয়ে পরেন। কাপড়ের নিচের অংশ ভাজ করে গুটিয়ে তুলে আবার কোমরে বাঁধা হয়। এভাবে পরলে মুন্ডু বা লুঙ্গি দিয়ে কোমর থেকে হাটু পর্যন্ত ঢাকা থাকে। এ ধরনের কাপড় পরা অনেকটা ভাঁজ ছাড়া স্কটল্যান্ডের স্থানীয় ঘাগড়ার মত দেখা যায়।

তামিলনাডুয় শুধু পুরুষেরা লুঙ্গি পরিধান করেন এবং কেরালার লোকদের মত করেই ব্যবহার করেন। দক্ষিণ তামিলনাডুয় এটি কাইলি অথবা সারং/চারাং বলে ডাকা হয়। মুন্ডু মত ভেত্তি বা ভেস্তি যা আসলে ভারতীয় ধুতি কোমরে পেঁচিয়ে পরা হয়, যা লুঙ্গি ভেবে ভুল হতে পারে।

জাভানীয় পুরুষ কখনো কখনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সারং পরিধান করেন, এ ছবিতে সুরাবায়া, পশ্চিম জাভয় সারং এর ব্যবহার দেখানো হয়েছে।

মায়ানমার

লোঙ্গাই পরিহিত বার্মিজ পুরুষ

মায়ানমারে বার্মিজ ভাষায় লুঙ্গিকে লোঙ্গাই বলে ডাকা হয়। পুরুষের জন্য এটি ঘর থেকে কাজে জীবনের সর্বত্রই ব্যবহৃত হয়। সাধারণতঃ শুধু সৈনিকগণ পায়জামা পরেন এবং যে সকল যুবক পাশ্চাত্য চিন্তাধারায় মত্ত তারা বাড়িতে লোঙ্গাই পরে থাকেন। মহিলাদের জন্য এটি তামাইন (htamain) হিসেবে পরিচিত, যা খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন সুতায় বোনা যেমন সুতি এবং সিল্কের লুঙ্গি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক সময়ে পরিধান করা হয়।

ইয়েমেন

ইয়েমেনে এ ধরনের পোষাককে মা' আউইস (Ma'awiis) বলে ডাকা হয় এবং সকল বয়সের পুরষই এ পোষাক পরিধান করেন।

সোমালিয়া

সোমালিয়ায় মা' আউইস এর হুস গুনতি পুরুষদের পরিধেয়। এটি বয়োজ্জ্যেষ্ঠ পুরুষই বেশি পরে থাকেন যারা সাথে কুফি বারাওয়ে পরেন, এটি সাধারণতঃ অনেক সোমালীয় পরিধান করেন যখন বাড়ীতে অবসর সময় কাটান। এ পোষাকের ঐতিহ্যবাহী রঙ হচ্ছে সাদা নকশা ছাড়া, কিন্তু এশিয়ার প্রভাবে এবং সোমালিয়া মসলা রপ্তানীর পথিমধ্যে হওয়ায় এশিয়া বণিকদের ব্যবহৃত রঙ্গিন লুঙ্গির সাথে এ দেশের মানুষের পরিচয় ঘটে।

তথ্যসূত্র

  1. http://www.orient-express.com/web/rtm/rtm_c2d4_burmese.jsp