২০১৪-এ ইবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যু ও বিক্ষোভ

২০১৪-এ ইবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যু ও বিক্ষোভ ইবিতে তৌহিদুর রহমান টিটুর মৃত্যু
বাস পুড়ানোর চিত্র
তারিখ	৩০ নভেম্বর ২০১৪
অবস্থান	ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
কারণ	তৌহিদুর রহমান টিটুর বাস চাপায় মৃত্যু
লক্ষ্য	টিটুর মৃত্যুর প্রতিবাদ জানানো
পদ্ধতি	বাস ভাংচুর, বাসে আগুন ধরানো, ভবন ভাংচুর
ফলাফল	সফল
পক্ষ
ইবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাস মালিক সমিতি বাংলাদেশ পুলিশ
নেতৃত্ব দানকারী
কোন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব নেই বাংলাদেশ পুলিশ
সংখ্যা
কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কয়েক শত পুলিশ
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
২২+ শিক্ষার্থী আহত বাস মালিক সমিতির কয়েক কোটি টাকার গাড়ি নষ্ট ২+ পুলিশ আহত

২০১৪ সালে ইবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যু ও বিক্ষোভ বলতে বুঝায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে বাস দুর্ঘটনায় তৌহিদুর রহমান টিটু নামক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ও বাস পুড়ানোর ঘটনা। এটি সেই ক্যাম্পাস ভিত্তিক একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর টিটুর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বাস চাপায় মৃত্যুবরণকে কেন্দ্র করে ৩০ টি বাস পোড়ানো এবং ৮-১০ টা বাস ভাংচুর করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়, পরবর্তীতে চার মাসের অধিক সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকার দিক থেকে এটি অন্যতম দীর্ঘকালীন বন্ধ থাকার ঘটনা।

প্রেক্ষাপট

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর বারটার দিকে দিকে ক্যাম্পাস থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহগামী কিছু বাস সারিবদ্ধ ভাবে বের হচ্ছিলো। প্রধান ফটকের কাছে একটি বাসের ভেতর থেকে তৌহিদুর রহমান টিটু নামের এক ছাত্র বাস থেকে বাইরে মুখ বের করে বাসে ওঠার জন্য ডাকছিলেন এক সহপাঠীকে। হঠাৎ আরেকটি বাস পাশ দিয়ে দ্রুত অতিক্রম করার চেষ্টা করে, বাসের ধাক্কায় মাটিতে ছিটকে পড়ে চাকায় টিটুর মাথা পিষ্ট হয়ে যায়, ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

নিহত তৌহিদুর রহমান টিটুর বাসা ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামে, সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলোজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

ছাত্রদের প্রতিবাদ

এই ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পরে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বাস ভাংচুর, বাস আগুনে পোড়ানো, ক্যাম্পাসে মিছিল বের করা প্রভৃতি বিক্ষোভ শুরু করে, শিক্ষার্থীরা দুপুর বারটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এই সহিংস বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। এমনকি ফায়ার সার্ভিস ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলেও, শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে দেয়নি।

বাস ভাংচুর

টিটুর বাসে চাপা পরে মৃত্যুর খবর শুনে বিক্ষুব্ধ শত শত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা ৩৩টি ও নিজস্ব দুটি বাসে প্রথমে ভাঙচুর চালান এবং পরবর্তীতে সেগুলোতে আগুনে ধরিয়ে দেন। ৩৩টি বাসের মধ্যে ক্যাম্পাসের একটি কোনায় বাসের ডিপোতে ২১টি বাস পোড়ানো হয়।

উপাচার্যের বাসভবন আক্রমণ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ছিলেন আব্দুল হাকিম সরকার, ছাত্ররা উপাচার্যের বাসভবনে হামলা। কয়েক শত ছাত্ররা লাঠিসোঁটা দিয়ে প্রধান ফটকে হামলা করে ভাংচুর করে কিন্তু তারা প্রধান ফটক ভাঙতে না পেরে পাশেই নিরাপত্তাকর্মীদের কক্ষের জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়।

মিছিল ও প্রশাসনিক ভবন আক্রমণ

বাস ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে, ১৭৫ একরের সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস মিছিল করে সবশেষে তারা প্রশাসনিক ভবনে আক্রমণের প্রচেষ্টা চালায়। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে সাথে সাথে বেশ কিছু ফাঁকা গুলিও ছোড়ে। এরপর ধীরে ধীরে বিকাল চারটার দিকে ক্যাম্পাস শান্ত হতে শুরু করে।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমান

এই সহিংস বিক্ষোভের ফলে বাস মালিক সমিতির অনেক গাড়ি ভাংচুর ও পুড়ানো হয়েছিলো, এতে কয়েক কোটির টাকা সমমুল্যের গাড়ি ক্ষতি হয়েছিলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবী করেছে, যে পরিমাণ গাড়ি ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ সোয়া কোটির মত।

পুলিশ ও শিক্ষার্থী সংঘর্ষে ২২ জন শিক্ষার্থী ও দুই জন পুলিশ আহত হয়েছিলো। এছাড়া আরো অল্প পরিমাণে আহত হয়েছেন ৩৫ জন শিক্ষার্থী।

পরবর্তী প্রতিক্রিয়া

এই সহিংস আন্দোলন ও বিক্ষোভের ফলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস অনিদিষ্ট কালের বন্ধ করে দেয়। এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে প্রায় চার মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে, হিসাব অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ নভেম্বর-৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাস ৫ দিন বন্ধ থাকে। এটা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ইতিহাসের মধ্যে সর্বাধিক বন্ধ থাকার রেকর্ড,

এই ঘটনার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বাস মালিক সমিতি অনিদিষ্ট কালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা ধর্মঘট তুলে নেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ কয়েক হাজার ইবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তবে পরবর্তীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ডিসেম্বর মাসে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রী অধিকার রক্ষামঞ্চ সংগঠনের ব্যানারে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।

সমালোচনা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও দেশের কিছু ব্যক্তিদের মতে, এই বিক্ষোভের পিছনে বাংলাদেশ ছাত্রদলের উস্কে দেওয়ার ইন্ধন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এই কাজের চরম নিন্দা জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও এই কাজের নিন্দা জানিয়েছে, তারা বলেছে ছাত্রদের কখনোই এমন আগ্রাসী হওয়া উচিত হয়নি। একজন শিক্ষক বলেছে, এই ধ্বংসাত্মক ঘটনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ঘটেনি। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট, অনিয়ম, বাস দুর্ঘটনার রোষে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এই বাস ভাংচুর করেন, শুধু তৌহিদুর রহমান টিটুর মৃত্যু একা দায়ী নয়।

আরও দেখুন

• ২০২৩-এ ইবিতে ফুলপরী খাতুন নির্যাতন
• বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহিংসতা
• আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড
• ইডেন কলেজ কেলেঙ্কারি
• বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড
• ২০১৫ বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভ
• ১৯৯৯-এ জাবিতে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন
• ২০১৮-র নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন
• ২০১৮-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন

বহিঃ সংযোগ

• প্রথম আলোয় ঘটনাপ্রবাহ