মুহাম্মদ আবদুল গফুর হাযারভী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শায়খ-উল-কুরআন
حضرت شیخ القرآن

মোহাম্মদ আবদুল গফুর হাযারভী
محمد عبدالغفور ہزاروی
উপাধিরাহবার-এ-শরিয়া, কুদওয়াতুল সালিকিন, জুবদাত উল আরফিন, বুরহান-উল-ওয়াসলিন, মখদুম আহলে সুন্নাত, হযরত শায়খুল কুরআন, আবু আল হাকাইক
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম৯ জিলহজ্জ ১৩২৬ হিজরি, ১লা জানুয়ারি ১৯০৯ সাল
ছাম্বা পিন্দ, কোট নাজিবুল্লাহ,উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৭ শাবান ১৩৯০ হিজরি ৯ অক্টোবর ১৯৭০(১৯৭০-১০-০৯) (৬১ বছর)
সমাধিস্থলওয়াযিরাবাদ, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
ধর্মইসলাম
জাতীয়তা পাকিস্তান
জাতিসত্তাকারলাল
যুগআধুনিক যুগ
অঞ্চলদক্ষিণ এশিয়া
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসসুফিবাদ
আন্দোলনবেরলভী
প্রধান আগ্রহফিকহ, তাফসির, সুন্নাহ, হাদিস, শরিয়া, ʿআক্বিদাহ, সিরাহ, মানতিক, ইসলামি দর্শন, বাগ্মিতা, তাসাউফ
উল্লেখযোগ্য ধারণাজমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তান, মজলিস-এ-তাহাফফুজ-এ-খতমে নবুওয়াত
উল্লেখযোগ্য কাজজামিয়া নিজামিয়া গাউসিয়া, মানাকিব-আল-জালিলা
যেখানের শিক্ষার্থীদারুল উলুম বেরেলী
তরিকাচিশতি, কাদেরিয়া, উওয়াইসি
কাজরাজনৈতিক নেতা, প্রধান মুফতি
মুসলিম নেতা
এর শিষ্যহামিদ রেজা খান
পুরস্কারনিশান-এ-ইমতিয়াজ (১৯৫৮)
জমিয়ত উলামায়ে পাকিস্তানের সভাপতি
কাজের মেয়াদ
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ – ৯ অক্টোবর ১৯৭০
পূর্বসূরীঅফিস নির্মিত
উত্তরসূরীখাজা কামার উল দীন সিয়ালভি
বেরেলীর মানজার-এ -ইসলাম

আখুন্দজাদা মোহাম্মদ আবদুল গফুর হাযারভী (উর্দু: اخوندزادہ محمد عبدالغفور ہزاروی چشتی‎‎) (১ জানুয়ারি ১৯০৯ – ৯ অক্টোবর ১৯৭০) পাকিস্তানের (দক্ষিণ এশিয়া) একজন মুসলিম তাত্ত্বিক, ফক্বিহ এবং মুফাসসির।[১] তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডিওলজির সদস্য ছিলেন। তিনি মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মাওলানা জাফর আলী খানের সহচর এবং ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।[২] তিনি চিশতি সুফি তরিকার একজন সুফি এবং বেরলভি সুন্নি রাজনৈতিক দল জমিয়ত উলেমা-এ-পাকিস্তানের (JUP) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে এটির সভাপতি হন। এছাড়াও তিনি পাকিস্তানে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিশান-এ-ইমতিয়াজের (অর্ডার অব এক্সিলেন্স) প্রথম গ্রহণকারী ছিলেন। তিনি আরো মজলিস-এ-তাহাফফুজ খতমে নবুওয়াতের চেয়ারম্যান ছিলেন, আহমদিয়া আন্দোলনের বিরোধী একটি সংগঠন যা ভন্ড নবী মির্জা গোলাম আহমদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

হাযারভি ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের কোট নাজিবুল্লাহের চাম্বা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল হামিদ হাযারভি একজন ইসলামি পণ্ডিত, হাযারেওয়াল কারলাল উপজাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি চিশতি তরিকার অনুসারী ছিলেন।[৩][৪] তিনি ছাম্বা গ্রামের স্থানীয় মক্তবে ইসলামি আইন, উর্দু, ফার্সি এবং আরবি ভাষার অধ্যয়ন শুরু করেন, হাযারভী মুহিব-উন-নবী সহ আলেমদের কাছ থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি মুশতাক আহমদ কানপুরির ছাত্র ছিলেন, যেখানে তিনি ইসলামি আইনশাস্ত্র ও ঐতিহ্যবাহী দরস-ই-নিজামি শিখতেন। তিনি বেরেলীর মাদ্রাসা মানজার-এ-ইসলামে আহমদ রেজা খান বেরলভীর বড় পুত্র হামিদ রেজা খানের সাথে দাওরা হাদিস ও কুরআন ব্যাখ্যা সম্পন্ন করেছিলেন। হামিদ রেজা খান তার খেলাফত এই ছাত্রকে দিয়েছিলেন, এই কারণে তার সমাধিফলকে কাদেরী লিখিত। হাযারভি গণিতের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং গণিতের মৌলিক ধারণাগুলি গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন।[৫]

আনুগত্য এবং পরিষেবার প্রতিশ্রুতি[সম্পাদনা]

হাজারভি ১১ বছর বয়সে মেহের আলী শাহের কাছে বাইয়াহ (আনুগত্য) গ্রহণ করেছিলেন এবং তাকে আলেম হওয়ার জন্য দোয়া করতে বলেছিলেন। পীর মেহের আলী শাহ তাকে বলেছিলেন যে "যাও! এক দিন তুম বোহত বড়ে মৌলভী বানো গে" (সেই দিনগুলিতে আলিমের জন্য মৌলভী উপাধি ছিল)। [৬] ২৮ বছর বয়সে, ১৯৩৭ সালে আবদুল গাফুর হাযারভি উয়েসী-এ-ওয়াকাত খাজা গোহর মুনির জেন্দারভীর সেবায় গুজরাটের জেন্দার শরীফ যান, যিনি উয়েসী তরিকার এক মহান সুফি ছিলেন, যিনি তাঁর অনুসারীদের জন্য সমস্ত কিছু উৎসর্গ করেছিলেন। এই বিশাল ফয়েজের (দোয়া) কারণে হাজারভি আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ এবং তাসাউউফের পর্যায়ে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেছিলেন। তিনি হাজারভিকে খিলাফাত প্রদান করেছিলেন এবং এভাবে উয়াইসি তরিকার পক্ষে তাঁকে কথা বলার অনুমতি দিয়েছিলেন।[৭]

শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি ভারতের বেরেলির মাদ্রাসা মানজার-ই-ইসলামে কুরআন ও হাদীস শিক্ষার সূচনা করেন। এরপরে তিনি গুজরাটের জামিয়া খুদাম-উল-সুফিয়ায় দরস-ই-নিজামী পড়াতেন, সেখানে তিনি মুদাররিস হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে হাযারভি ওয়াজিরাবাদে জামিয়া নিজামিয়া গাউসিয়া প্রতিষ্ঠা করেন, সেখানে তিনি মোহতামিম ও খতিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। হাযারভি ছিলেন এক মহান মুদাররিস এবং বিশেষত রমজান মাসে ৩০ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উন্নত করতে দাওরা কুরআন শিক্ষা দিতেন।[৭]

আবদুল গফুর হাযারভি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা বক্তা, তিনি একজন দীপ্তিমান বক্তা এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তর ও প্রত্যুত্তর দেওয়ার প্রতিভাধর দক্ষতা তাঁর ছিল। তিনি তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার সময় অনেক লোক "মাস্ত" হয়ে যেতেন। গাজালী-ই-জামান সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাযেমী শাহ নিজেকে তার সামনে অশিক্ষিত মনে করতেন। হাযারভি মুহাদ্দিসে আজম পাকিস্তান মাওলানা সরদার আহমদ কাদরির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল; উভয়েই হামিদ রাজা খানের অধীনে পড়াশোনা করেছিল।[৮] হাযারভি জমিয়ত উলামায়ে পাকিস্তান (জেইউপি), আঞ্জুমান-ই-তালাবা-ই-ইসলাম (এটিআই), মজলিস-এ তাহাফফুজ-ই-খতমে নবুওয়াত এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-মিল্লাতের সাথে জড়িত ছিলেন যা পরবর্তীকালে ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগে একীভূত হয়। [৮][৯]

মুসলিম লীগ ও স্বদেশপ্রেম[সম্পাদনা]

গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন[সম্পাদনা]

কর্ম[সম্পাদনা]

হাযারভী বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখেছেন ও অনুবাদ করেছেন, ইসলামি আইনশাস্ত্রের উপর তাঁর সংকলন মানাকিব আল জালিলা[১০]

অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে:

  • তাহকিক-উল-হক ফি কালিমা-তুল-হক (কালিমা-তুল-হক সম্পর্কে তত্ত্ব)
  • শামসুল হিদায়াহ
  • ই'লা কালিমাতিল্লাহ ফি বায়ান-এ-ওয়া মা উহিল্লা বিহি লেঘারিল্লাহ
  • আলফাতুহাত-উস-সামাদিয়্যাহ (Divine Bounties)
  • তাসফিয়াহ মাবাইন সুন্নি ওয়া শিয়া
  • মাজমুয়া ফাতাওয়া

ভাবাদর্শ[সম্পাদনা]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

হাযারভি ১৯৭০ সালের ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ২ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তান রেখে যান। তার বড় পুত্র মুফতি আবদুল শাকুর হাযারভি ও দ্বিতীয় পুত্র মুহাম্মদ তারিক হাযারভি। [১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Zebiri, Kate. Review of Maududi and the making of Islamic fundamentalism. Bulletin of the School of Oriental and African Studies, University of London, Vol. 61, No. 1.(1998), pp. 167–168.
  2. "Alliance with PML-Q triggers rift in Sunni Ittehad"। Dawn (newspaper)। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৮ 
  3. Adams, p.100-101
  4. He was the elder of his four brothers and sisters
  5. Tazkira-e-Qari Muslehuddin – Page 4 – Professor Jalaluddin Ahmad Noori (Karachi University)
  6. Mahmood, Sohail (১৯৯৫)। Islamic Fundamentalism in Pakistan, Egypt and Iran। Vanguard। 
  7. Irfan-e-Manzil – Darul Kutub Hanfia Kharadar Karachi – 1984
  8. "Preachers of hate on British TV: what they said that broke the broadcasting rules"The Daily Telegraph (newspaper)। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৮ 
  9. "7th National Assembly" (পিডিএফ)। National Assembly of Pakistan। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৮ 
  10. A‘lahazrat as a Translator of Holy Qur‘an ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে. wimnet.org[যাচাই প্রয়োজন]
  11. "Ofcom Broadcast Bulletin Issue number 205, 8 May 2012" (পিডিএফ)। Ofcom। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]