যুফারুদ্দীন বিহারি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সৈয়দ যুফারুদ্দীন বিহারি
উপাধিমালিকুল উলামা, ফাজিলে বিহার
অন্য নামযুফারুদ্দীন কাদেরী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৪ মুহাররম ১৩০৩ হিজরী
২৩ অক্টোবর ১৮৮৫ সাল
মৃত্যু১৯ জমাদিউস সানি ১৩৮২ হিজরী
১৮ নভেম্বর ১৯৬২ সাল
সমাধিস্থলবিহার
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাভারতীয়
যুগআধুনিক যুগ
অঞ্চলদক্ষিণ এশিয়া
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসমাতুরিদী
আন্দোলনবেরলভী
প্রধান আগ্রহকুরআন, হাদীস, তাফসীর, সময়জ্ঞান, ফিকহ, ইলমে হায়াত, ইলমে রিয়াজি, আকিদা
উল্লেখযোগ্য কাজসহিহুল বিহারি, ফতোয়ায়ে মালিকুল উলামা, হায়াতে আ'লা হযরত
যেখানের শিক্ষার্থীমানজার-এ-ইসলাম
তরিকাকাদেরী, চিশতিয়া, বরকাতী
অন্য নামযুফারুদ্দীন কাদেরী
আত্মীয়ড. সৈয়দ মুখতারুদ্দীন কাদেরী আরজু (সন্তান)
মুসলিম নেতা
এর শিষ্যইমাম আহমদ রেজা খান বেরলভী
শিক্ষার্থী
  • আহসানুল হাদি, ফরিদুল হক এমাদি, মুহাম্মদ নাজম উদ্দিন বিলইয়াভি
যাদের প্রভাবিত করেন
  • ড. সৈয়দ মুখতারুদ্দীন কাদেরী আরজু, ইরশাদ আহমদ রেজভী, মুহাম্মদ নাজম উদ্দিন বিলইয়াভি

মালিকুল উলামা, ফাজিল-এ-বিহার, সৈয়দ মুহাম্মদ যুফারুদ্দীন বিহারি রেজভী (১৮৮৫-১৯৬২) ভারতের একজন খ্যাতনামা ইসলামি পণ্ডিত ও বেরলভীর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত। তিনি ইমাম আহমদ রেজা খান বেরলভীর ছাত্র ও খলিফা। তার পিতার নাম মালিক আবদুর রাজ্জাক আশরাফী। তিনি ১৮৮৫ সালে ভারতের বিহার রাজ্যের উত্তর রাজধানী পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন।[১]

জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

সৈয়দ যুফারুদ্দীন ভারতের বিহার রাজ্যের উত্তর রাজধানী পাটনায় ১৩০৩ হিজরীর ১৪ মুহাররম মোতাবেক ১৮৮৫ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুর রাজ্জাক আশরাফী। তার বংশ তালিকা ছয় প্রজন্মের পূর্বপুরুষের মাধ্যমে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী পর্যন্ত পৌঁছে।[২]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

যুফারুদ্দীন তার পিতা থেকে আরবি ও ফার্সীতে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিভিন্ন আলেম (ইসলামী পণ্ডিত) থেকে কুরআন শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা নেন। ১৮৯৮ সালে তিনি মাদ্রাসা গাউসিয়া হানাফিয়ায় যান, যেখানে তিনি আটজন বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিতের অধীনে অন্যান্য বিভিন্ন ইসলামী বিজ্ঞান অধ্যয়ন ছাড়াও তাফসির আল জালালাইন সমাপ্ত করেন। এরপরে, তিনি মাদ্রাসা হানাফিয়ায় যান এবং বিখ্যাত হাদিস বিশারদ মাওলানা ওয়াসি আহমদ মুহাদ্দিস সুরতির বেশ কয়েকটি হাদিস গ্রন্থসমূহের অধীনে অধ্যয়ন করেন। এরপরে তিনি কানপুরে যান এবং সেখানে তিনটি স্থানীয় মাদারিসে ফিকহ শাস্ত্রে জ্ঞানার্জন করেন, তন্মধ্যে বিখ্যাত দারুল উলুমের আহমদ হাসান কানপুরী থেকে মানতিক ও উবায়দুল্লাহ পাঞ্জাবির কাছ থেকে হিদায়াহ অধ্যয়ন করেন। ১৯০৩ সালে তিনি মুহাদ্দিস সুরতির সাথে বেরেলী যান এবং সেখানে আহমদ রেজা খান বেরলভী'র নিকট আনুগত্যের শপথ নেন ও তার কাছ থেকে ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি গণিত, জ্যামিতি, জীবিবিদ্যা, সময়জ্ঞানের উপর জ্ঞানার্জন করেন। ১৯০৪ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত মানজার-এ-ইসলামে অধ্যয়ন করেন।[১]

বায়াত (আনুগত্যের শপথ)[সম্পাদনা]

তিনি আহমদ রেজা খান বেরলভীর নিকট থেকে কাদেরী বরকাতী তরিকা ও সৈয়দ মুহাম্মদ আশরাফী জিলানী কিছাওয়াচীর নিকট থেকে কাদেরী চিশতিয়া আশরাফিয়া তরিকায় আনুগত্যের শপথ নেন।

কর্ম[সম্পাদনা]

তিনি ১৯১১ সাল পর্যন্ত দারুল উলুম মানজার-এ-ইসলাম বেরেলীতে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১১ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত এলাহাবাদের আরাহের মাদ্রাসা হানাফিয়ায় অধ্যাপনা করেন। তারপরে ১৯১২ সাল থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মাদ্রাসা ইসলামিয়া শামসুল হুদার শাইখ আল ফিকহ এবং পরবর্তীকালে শাইখ আল তাফসির হন, যা পাটনায় ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপরে তিনি সৈয়দ শাহ মালিহউদ্দীনের অনুরোধে সাসারামের মাদ্রাসা খানকা আল কাবিরিয়ায় ১৯১৩ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত পাঠদান করেন। একই বছর (১৯২০ সাল) তিনি পাটনায় মাদ্রাসা ইসলামিয়া শামসুল হুদায় ফিরে আসেন এবং সেখানে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি শামসুল হুদার অধ্যক্ষ (শায়খ আল কুলিয়া) নিযুক্ত হন।

সৈয়দ শাহ শহীদ হোসাইনের অনুরোধে তিনি ১৯৫৩ সালে বিহারের কাথিয়ারে জামিয়া লতিফিয়া বাহর আল উলুমের উদ্বোধন করেন এবং ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি এই জামিয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[১]

লিখনী[সম্পাদনা]

তিনি প্রায় শতাধিক বই রচনা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

হাদীস ও উসূলে হাদীস

(১) আল জামে'ঊর রদ্বভী (الجامع الرضوي): এটি “সহিহুল বিহারী” (صحیح البهاري) নামে বেশী প্রসিদ্ধ। ফিক্বহে হানাফী'র সমর্থনে প্রায় ৯০০০+ হাদীস নিয়ে রচিত ৬ খন্ডবিশিষ্ট কিতাব। এতে তিনি ঐসমস্ত সহীহ হাদীস সংকলন করেছেন, যা হানাফী ফিক্বহের দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিনি তাঁর এই কিতাব ফিক্বহের কিতাবাদির অধ্যায় অনুসারে সাজিয়েছেন।

(২) আল ইফাদ্বাতুর রদ্বভিয়্যাহ (الإفادات الرضویة):

ইমাম আহমদ রেযার লিখিত উসূলে হাদীসের ইলমী ফায়দার সমাহার নিয়ে রচিত এই রিসালা। রচনা- ১৩৪৪ হিজরী।

(৩) নুযূলিস সাকীনাহ বি আসানীদিল ইজাযাতিল মাতীনাহ (نزول السکینة بأسانید الإجازات المتینة): রচনা- ১৩৩২ হিজরী।

ফিকহ

(১) নাফি'ঊল বাশার ফি ফাতাওয়া যুফর (نافع البشر في فتاوي ظفر): এটি ফাতাওয়া মালাকুল ঊলামা (فتاوي ملك العلماء) নামে প্রসিদ্ধ। [৩] লেখক প্রদত্ত বিভিন্ন সময়ের বিবিধ বিষয় সংক্রান্ত ফাতাওয়া মুফতী আরশাদ আহমাদ সাহিল সাহসারামী একত্রিত করে কিতাবী রূপ দিয়েছেন।

(২) তানভীরুল মিসবাহ লিল ক্বিয়ামি ঈনদা হাইয়্যা আলাল ফালাহ (تنویر المصباح للقیام عند حي علی الفلاح):

এটি ইক্বামাতের সময় দাঁড়ানোর সঠিক সময় তথা “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলার সময় দাঁড়ানোর দলীলভিত্তিক আলোচনা নিয়ে রচিত কিতাব। রচনা- ১৩৩০ হিজরী।

(৩) ঈদ কা চাঁন্দ (عید کا چاند): রচনা- ১৩৭০ হিজরী।

(৪) তুহফাতুল আহবাব ফি ফাতহিল কুওয়াতি ওয়াল বাব (تحفة الأحباب في فتح الکوة والباب): রচনা- ১৩৩৬ হিজরী।

(৫) আ'লামুস সাজিদ বি সরফি জুলূদিল উদ্বহিয়্যাতি ফিল মাসাজিদ (اعلام الساجد بصرف جلود الأضحیة في المساجد): রচনা- ১৩২৫ হিজরী।

(৬) নুসরাতুল আসহাব বি আক্বসামি ঈসালিছ ছাওয়াব (نصرة الأصحاب بأقسام ایصال الثواب):  রচনা- ১৩৫৪ হিজরী।

(৭) মাওয়াহিবে আরওয়াহিল কুদস লি কাশফি হুকমিল ঊরস (مواهب ارواح القدس لکشف حکم العرس): রচনা- ১৩২৪ হিজরী।

(৮) আত তা'লীক্ব আলাল কুদূরী (التعلیق علی القدوري):

এটি ফিক্বহে হানাফী'র কিতাব “আল কুদূরী” (القدوري) এর উপর তা'লীক্বাত নিয়ে আরবী ভাষায় রচিত কিতাব। রচনা- ১৩২৫ হিজরী। (অপ্রকাশিত)

(৯) বাসতুর রাহাত ফিল হিযরি ওয়াল ইবাহাত (بسط الراحة في الحظر والإباحة): রচনা- ১৩২৬ হিজরী। (অপ্রকাশিত)

(১০) আল ফায়দ্বুর রদ্বভী ফি তাকমীলুল হামাভী (الفیض الرضوي في تکمیل الحموي): রচনা- ১৩২৬ হিজরী। (অপ্রকাশিত)

(১১) আল ক্বওলুল আযহার ফিল আযানি বাইনা ইয়াদাল মিম্বার (القول الأظهر في الأذان بین یدی المنبر): রচনা- ১৩৩৩ হিজরী। (অপ্রকাশিত)

(১২) নিহায়াতুল মুনতাহা ফি শরহি হিদায়াতুল মুবতাদা (نهایة المنتهی في شرح هدایة المبتدی): রচনা- ১৩৪৩ হিজরী। (অপ্রকাশিত)

(১৩) তাসহীলুল ওয়াসূল ইলা ইলমিল উসূল (تسهیل الوصول إلی علم الأصول): রচনাকাল ১৩৪৮ হিজরী। (অপ্রকাশিত)

(১৪) জামে'ঊল আক্বওয়াল ফি রু'ইয়াতিল হিলাল (جامع الأقوال في رٶیة الهلال):

এটি চাঁদ দেখা বিষয় নানা ইসলামী রীতি-নীতি ও বিবিধ মতপার্থক্য, তারের মাধ্যমে সাক্ষ্যের খন্ডনে পূর্ববর্তী ও তৎকালীন ৩২ আইম্মা'র ফাতাওয়া'র সংকলন। রচনাকাল ১৩৫৭ হিজরী।

(১৫) ইসলাহুল ইদ্বাহ (اصلاح الإیضاح): এই রিসালাটি পাটনা জেলার মাদরাসায়ে আযীযিয়্যাহ বিহার শরীফ এর এক মাওলানা সাহেবের লিখিত “ইদ্বাহ” (ایضاح) কিতাবের খন্ডন ও সেটির ইসলাহ নিয়ে রচিত।

(১৬) আত তাহক্বীকুল মুবীন লি কালিমাতিত তাওয়াবীন (التحقیق المبین لکلمات التوابین): রচনা- ১৩৩০ হিজরী। [৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

যুফারুদ্দীন বিহারি ১৯ জমাদিউস সানি ১৩৮২ হিজরি মোতাবেক ১৮ নভেম্বর ১৯৬২ সালে পাটনায় তার বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন৷ তাকে নিকটবর্তী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Hazrat Allama Zafaruddin Bihari"www.ziaetaiba.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Malik al-Ulama, Hadrat Allamah Sayyid Zafar al-Din Qadri Jilani Razawi Bihari"www.ahlesunnat.net। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০২১  line feed character in |title= at position 51 (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Fatawa Malikul Ulama by Allama Zafaruddin Bihari"www.scribd.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০২১ 
  4. "Fatawa Malikul Ulama by Allama Zafaruddin Bihari"www.scribd.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০২১