কায়কোবাদ
কায়কোবাদ | |
---|---|
![]() কবি কায়কোবাদ, ১৯৩২ | |
জন্ম | কাজেম আল কোরায়শী |
পেশা | কবি |
কায়কোবাদ, মহাকবি কায়কোবাদ বা মুন্সী কায়কোবাদ (১৮৫৭ - ২১ জুলাই, ১৯৫১[১][২]) বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি যাকে মহাকবিও বলা হয়। তার প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। “মীর মশাররফ, কায়কোবাদ, মোজাম্মেল হকের মধ্যে কায়কোবাদই হচ্ছেন সর্বতোভাবে একজন কবি। কাব্যের আদর্শ ও প্রেরণা তাঁর মধ্যেই লীলাময় হয়ে ওঠে। সেজন্য একথা বেশ জোরের সঙ্গে বলা যায় যে কবি কায়কোবাদই হচ্ছেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি”[৩]
তিনি বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালে (বর্তমানে বাংলাদেশের) ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার অধীনে আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী শাহামাতুল্লাহ আল কোরেশীর পুত্র। কায়কোবাদ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পিতার অকালমৃত্যুর পর তিনি ঢাকা মাদ্রাসাতে (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) ভর্তি হন যেখানে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলেন। উপরন্তু, তিনি পরীক্ষা দেননি, বদলে তিনি পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে তার স্থানীয় গ্রামে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন। ১৯৩২ সালে, তিনি কলকাতাতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলন-এর প্রধান অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।[৪]
কাব্যগ্রন্থ[সম্পাদনা]
- বিরহ বিলাপ (১৮৭০) (এটি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ)[৫]
- কুসুম কানন (১৮৭৩)
- অশ্রুমালা (১৮৯৬);
- মহাশ্মশান (১৯০৪), এটি তার রচিত মহাকাব্য
- শিব-মন্দির বা জীবন্ত সমাধি (১৯২১),
- অমিয় ধারা (১৯২৩),
- শ্মশানভষ্ম (১৯২৪)[৬]
- মহররম শরীফ (১৯৩৩), ‘মহররম শরীফ' কবির মহাকাব্যোচিত বিপুল আয়তনের একটি কাহিনী কাব্য।[২]
- শ্মশান ভসন (১৯৩৮)[৫]।
- প্রেমের বাণী (১৯৭০)
- প্রেম পারিজাত (১৯৭০)[৭]
মহাশ্মশান[সম্পাদনা]
মুসলমান কবি রচিত জাতীয় আখ্যান কাব্যগুলোর মধ্যে সুপরিচিত মহাকবি কায়কোবাদ রচিত ‘মহাশ্মশান’ কাব্যটি। কায়কোবাদের মহাকবি নামের খ্যাতি এই মহাশ্মশান কাব্যের জন্যই। কাব্যটি তিন খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে ঊনত্রিশ সর্গ,দ্বিতীয় খণ্ডে চব্বিশ সর্গ, এবং তৃতীয় খণ্ডে সাত সর্গ। মোট ষাট সর্গে প্রায় নয়শ' পৃষ্ঠার এই কাব্য বাংলা ১৩৩১, ইংরেজি ১৯০৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়; যদিও গ্রন্থাকারে প্রকাশ হতে আরো ক'বছর দেরি হয়েছিল। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধযজ্ঞকে রূপায়িত করতে গিয়ে কবি বিশাল কাহিনী,ভয়াবহ সংঘর্ষ, গগনস্পর্শী দম্ভ,এবং মর্মভেদী বেদনাকে নানাভাবে চিত্রিত করেছেন। বিশালতার যে মহিমা রয়েছে তাকেই রূপ দিতে চেয়েছিলেন এই কাব্যে।
“... সেদিন কায়কোবাদ এক নির্জিত সমাজের প্রতিনিধি-প্রতিভূ কিংবা মুখপাত্র হিসেবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ...তাঁর স্বসমাজের লোক পেয়েছিল প্রাণের প্রেরণা ও পথের দিশা। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছিলেন বলেই আমরা এই মুহূর্তেও শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি মহাশ্মশানের কবিকে।” [৮]
পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]
বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে মহাকবি কায়কোবাদ মুসলিমদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনী নিয়ে ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করে যে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় আসনে স্থান করে দিয়েছে[৯]। সেই গৌরবের প্রকাশে ১৯৩২ সালে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের মূল অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কবি কায়কোবাদ। তিনি আধুনিক বাংলাসাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি। বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেন।[৪]
মৃত্যু[সম্পাদনা]
১৯৫১ সালের ২১ জুলাই কায়কোবাদ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৫ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ ক খ "কঠিনের সহজ প্রকাশ"। www.dhakatimes24.com। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১০।
- ↑ রফিক আহমদ। একুশের দিনলিপি। আইএসবিএন 978-984-90215-8-2। ওসিএলসি 946610983।
- ↑ ক খ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (২০২০-১১-২৫)। "ফররুখ আহমদ-এর 'মৃত-বসুধা' ও সেলিনা হোসেন-এর 'বৈশাখী গান': নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতা"। বাংলাদেশ জার্নাল অফ ইন্টিগ্রেটেড থটস। ১২ (১৭)। আইএসএসএন 2788-5925। ডিওআই:10.52805/bjit.v12i17.160।
- ↑ ক খ "কঠিনের সহজ প্রকাশ"। www.dhakatimes24.com। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১০।
- ↑ নুরুল আমিন রোকন, কায়কোবাদ: ইতিহাস সচেতন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কবি, সাপ্তাহিক মানচিত্র[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ রফিক আহমদ। একুশের দিনলিপি। আইএসবিএন 978-984-90215-8-2। ওসিএলসি 946610983।
- ↑ ইউ., আহমেদ, মইন (২০০৯)। শান্তির স্বপ্নে : সময়ের স্মৃতিচারণ। এশিয়া পাবলিকেশন্স। আইএসবিএন 978-984-8723-01-2। ওসিএলসি 317068473।
- ↑ নুরুল আমিন রোকন, সাপ্তাহিক মানচিত্র[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]