বাংলাদেশের রেলপথ
নিচে বাংলাদেশের রেল পরিবহনের প্রচলিত রেলপথের একটি তালিকা রয়েছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে প্রথম রেলপথ ১৮৬২ সালে ব্রিটিশ রাজ দ্বারা স্থাপিত হয়। তখন বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব ছিল না ও এর ভূমি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীনে ছিল। একই বছরের ১৫ নভেম্বরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বসূরি ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে জগতি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত প্রথম রেলপথ চালু করে। ১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আরেকটি রেলপথ নির্মাণ করা হয়।[১] ১৮৯৫ সালে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হয়। এ সময় কুমিল্লার লাকশাম থেকে চাঁদপুর রেলপথ স্থাপন হয় এবং নোয়াখালী থেকে লাকশামে রেলপথ সংযুক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন সময়ে ১৮৯৬ সালে আখাউড়া-কুলাউড়া-শাহবাজপুর-করিমগঞ্জ রেলপথ সম্প্রসারিত হলে ১৯১২ সালে কুলাউড়া-সিলেট রেলপথ চালু হয়। ১৯১৪ সালে আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মিত হয়। নির্মাণের তিন বছর পর, ১৯১৫ সালে রেলপথটি খোলা হয়। পরবর্তীতে আখাউড়া-কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জকে হবিগঞ্জের সাথে রেলপথ সংযুক্ত করে। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে বাল্লা পর্যন্ত আরেকটি রেলপথ বিভাগ ১৯২৯ সালে খোলা হয়। ভারত বিভাগের আগে পূর্ববঙ্গে অনেক রেললাইন নির্মিত হয়, যেমন ফেনী-বিলুনিয়া রেলপথ, চট্টগ্রাম–দোহাজারী, ময়মনসিংহ অঞ্চলে আঞ্চলিক রেলপথ ইত্যাদি। ১৯৪৭ সালের পর পূর্ববঙ্গ ২৬০৬.৫৯ কিলোমিটার রেলপথ পায়, ১৯৫৪ সালে সিলেট-ছাতক রেলপথ স্থাপিত হয়। ছাতকে বাংলাদেশের একমাত্র রজ্জু রেলপথও ঐ সময়ে স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের রেলপথ পাকিস্তান পূর্ব রেলওয়ের অধীনে ছিল।[২]
বাংলাদেশের রেলপথের তালিকা
[সম্পাদনা]পূর্বাঞ্চল
[সম্পাদনা]- চট্টগ্রাম চক্ররেল
- কুলাউড়া–শাহবাজপুর রেলপথ
- হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ
- আখাউড়া–কুলাউড়া–ছাতক রেলপথ
- টঙ্গী–ভৈরব–আখাউড়া রেলপথ
- আখাউড়া–লাকসাম–চট্টগ্রাম রেলপথ
- লাকসাম–চাঁদপুর রেলপথ
- লাকসাম–নোয়াখালী রেলপথ
- ফেনী–বিলোনিয়া রেলপথ
- চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথ
- নারায়ণগঞ্জ–বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলপথ
- ময়মনসিংহ–গৌরীপুর-ভৈরব রেলপথ
- ঢাকা–যশোর রেলপথ (আংশিক চালু)
পশ্চিমাঞ্চল
[সম্পাদনা]- পাচুরিয়া–ভাঙ্গা লাইন
- চিলাহাটি–পার্বতীপুর–সান্তাহার–দর্শনা লাইন
- দর্শনা–যশোর–খুলনা লাইন
- ঈশ্বরদী–সিরাজগঞ্জ লাইন
- জামতৈল–জয়দেবপুর লাইন
- যশোর–ঝিনাইদহ রেলওয়ে
- খুলনা–বাগেরহাট রেলপথ
- বুড়িমারী–লালমনিরহাট–পার্বতীপুর রেলপথ
- চিলাহাটি–পার্বতীপুর–সান্তাহার–দর্শনা লাইন
- আব্দুলপুর–পুরোনো মালদহ লাইন
- ঈশ্বরদী–সিরাজগঞ্জ লাইন
- সান্তাহার–কাউনিয়া রেলপথ
- খুলনা–মোংলা বন্দর রেলপথ
- পার্বতীপুর–পঞ্চগড় রেলপথ
- কালুখালী–গোবরা লাইন
বাংলাদেশের রেলপথ অঞ্চল
[সম্পাদনা]বর্তমানে নদীমাতৃক বাংলাদেশের আধুনিক রেলপথ অঞ্চলকে ৪ (চার) ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর (যমুনা নদী, পদ্মা নদী এবং মেঘনা নদী) বয়ে চলার বিস্তার গুলোই মূলত দেশের রেলপথ অঞ্চলকে ভৌগলিক ভাবে চার খন্ডে বিস্তৃত করে দিয়েছে। ১.পূর্বাঞ্চল, ২.কেন্দ্রীয়ঞ্চল, ৩.উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং ৪.দক্ষিণাঞ্চল।
পূর্বাঞ্চল
[সম্পাদনা]সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান। মোট ১৫ টি জেলা নিয়ে ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল গঠিত। তন্মধ্যে : লক্ষীপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান এই ৪ টি জেলায় রেলপথ ট্রেক নেটওয়ার্ক সেবার আওতায় আনা এখনো সম্ভব হয়নি, তবে প্রচেষ্টা প্রক্রিয়াধীন।
কেন্দ্রীয়ঞ্চল
[সম্পাদনা]শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদি, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ এবং ঢাকা। মোট ১২ টি জেলা নিয়ে ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কেন্দ্রীয়ঞ্চল গঠিত। তন্মধ্যে : শেরপুর, মনিকগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জ ৩ টি জেলায় রেলপথ ট্রেক নেটওয়ার্ক সেবার আওতায় আনা এখনো সম্ভব হয়নি, তবে প্রচেষ্টা প্রক্রিয়াধীন।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল
[সম্পাদনা]পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ এবং নাটোর। মোট ১৬ টি জেলা নিয়ে ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল গঠিত।
দক্ষিণাঞ্চল
[সম্পাদনা]মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোহর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং ভোলা। মোট ২১ টি জেলা নিয়ে ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশে রেলওয়ে দক্ষিণাঞ্চল গঠিত। তন্মধ্যে : মেহেরপুর, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং ভোলা ১২ টি জেলায় রেলপথ ট্রেক নেটওয়ার্ক সেবার আওতায় আনা এখনো সম্ভব হয়নি, তবে (এখানে রেলপথ সংযোগ একাধিক প্রকল্প চলমান) প্রচেষ্টা প্রক্রিয়াধীন।
আন্তঃসীমান্ত রেলপথ
[সম্পাদনা]- শাহবাজপুর–মহিষাশন রেলপথ
- আখাউড়া–আগরতলা রেলপথ
- ফেনী–বিলুনিয়া রেলপথ
- বুড়িমাড়ী–চংড়াবান্ধা রেলপথ
- মোগলহাট–গীতালদহ রেলপথ
- চিলাহাটি–হালিবাড়ি
- বিরল–রাধিকাপুর
- রোহনপুর–সিংবাদ
- দর্শনা–গেদে
- বেনাপোল–পেট্রাপোল[৩]
নির্মাণাধীন
[সম্পাদনা]অনুমোদিত/প্রস্তাবিত
[সম্পাদনা]- টঙ্গী–মানিকগঞ্জ–পাটুরিয়া ঘাট রেলপথ
- জানালিহাট–কাপ্তাই রেলপথ
- নারায়ণগঞ্জ–লাকসাম কর্ড রেলপথ
- বগুড়া–সিরাজগঞ্জ রেলপথ
- নাভারণ–মুন্সিগঞ্জ রেলপথ
- দর্শনা–মুজিবনগর–মেহেরপুর রেলপথ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ মন্ডল, লাবনী (১৯ আগস্ট ২০২২)। "আমাদের রেলপথের ইতিহাস"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ "বাংলাদেশে প্রথম রেলপথের শুরুর গল্প"। সময় টিভি। ৯ জুন ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ সরকার, হামিদ (১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "ভারত-বাংলাদেশ নতুন রেল রুট"। নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২২।