হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
স্থিতিনিষ্ক্রিয়
মালিকবাংলাদেশ রেলওয়ে
অঞ্চলপূর্বাঞ্চল রেলওয়ে, বাংলাদেশ
বিরতিস্থল
স্টেশন১ সক্রিয়, ১১ নিষ্ক্রিয়, মোট ১২
পরিষেবা
পরিচালকবাংলাদেশ রেলওয়ে
ইতিহাস
চালু
  • ১৯২৮–২৯: হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা
কারিগরি তথ্য
ট্র্যাক গেজ১,০০০ মিলিমিটার (৩ ফুট   ইঞ্চি) মিটার-গেজ রেলপথ
যাত্রাপথের মানচিত্র

Up arrow
কুলাউড়া-সিলেট
-ছাতক লাইন
বারকোটা
শাকির মোহাম্মদ
সুতাং বাজার
চুনারুঘাট
আমু রোড
আসামপারা
বাল্লা
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন
হবিগঞ্জ বাজার
হবিগঞ্জ কোর্ট
ধুলিয়াখাল
পাইকপাড়া
Down arrow
আখাউড়া-লাকসাম-
চট্টগ্রাম রেলপথ
সূত্র: বাংলাদেশ রেলওয়ে মানচিত্র

হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল অধীনস্থ বাংলাদেশের একটি মিটার-গেজ রেলপথ যা হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ বাজার থেকে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ টি মূলত শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ বাজার রেলপথ সেকশনে হবিগঞ্জ বাজার সর্বশেষ রেলওয়ে স্টেশন এবং এই রেলওয়ে স্টেশন থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ সেকশনে বাল্লা সর্বশেষ রেলওয়ে স্টেশন।[১] ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন [২] ১৯০৩ সালে চালু হয়।[৩] পরবর্তীতে ১৯২৮-১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন স্টেশনে পরিণত হয় মূলত হবিগঞ্জ বাজারশায়েস্তাগঞ্জ জংশনবাল্লা সংযোগ ফাঁড়ি অর্থাৎ লিংঙ্ক ফাংশন রেলপথ চালু করার মাধ্যমে।[৩]

রেলপথ[সম্পাদনা]

হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা

উপনবেশিক বৃটিশ শাসন আমলে তৎকালীন (অবিভক্ত বৃটিশ-ভারতের) আসাম প্রভেন্সির সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহুকুমায় রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বৃটিশ সরকার ১৯২৮-২৯ সালে হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ নির্মাণ করে গড়ে তুলে অবকাঠামো। রেলপথটি ১৯২৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক [৪] হবিগঞ্জ জেলা সদর শহর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫[৫] অথবা ৫২ কিলোমিটার[১] দীর্ঘ রেলপথ চালু করে।[৫][৬] এর মধ্যে ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ (১৫[৫] অথবা ১৬ কিমি[১]) এবং ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা (৩০[১] অথবা ৩৬ কিমি[৫]) রেলপথ উদ্বোধন করা হয়। শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ লাইনের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে হবিগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয় এবং শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা লাইনের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে বাল্লা রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।

সে সময় হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা পাতা রপ্তানি ও বাগানের রেশনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথে মোট ৪টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: হবিগঞ্জ বাজার, হবিগঞ্জ কোর্ট, ধুলিয়াখাল এবং পাইকপাড়া। শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে মোট ৭টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: বারকোটা, শাকির মোহাম্মদ, সুতাং বাজার, চুনারুঘাট, আমু রোড, আসামপারা এবং বাল্লা

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের প্রথম দিকে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি সর্বপ্রথম বন্ধ হয়, তবে পরে আবার চালু হয়। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে অনুরূপ বন্ধ হয় এবং ২০০০ সালে রেলপথটি উন্নত সংস্কার করে ট্রেন চলাচল চালু হয়েও সর্বশেষ ২০০৩ সালে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়।[১] ২০০৫ সালের দিকে সড়ক করার অজুহাতে হবিগঞ্জ বাজার থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেলপথ তুলে ফেলা হয়।[৫] পরে আবার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়।[১] আগে এ লাইনে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করতো।

২০০৩ সালে এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এ রেলপথটি।[৫] এরপর থেকে কোটি কোটি টাকার রেল সম্পদ লুটপাট হতে থাকে।[৫] এরই মধ্যে পথটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও স্টেশন ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট হয়ে গেছে।[৫] এখন চলছে রেলপথের জমি দখল।[৫] একশ্রেণির মানুষ এসব জমি দখল করে ইমারত নির্মাণ করছে।[৫] চাষ করছে নানা ফসল।[৫] পরিত্যক্ত রেলপথটির সাথে জড়িয়ে আছে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের নাম।[১] জশংনের ঐতিহ্য রক্ষায় দ্রুত এ রেলপথে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবি স্থানীয়দের।[১]

রেল ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এর রেলপথ। এই রেলপথে একটি প্রধান রেলওয়ে জংশন স্টেশন এবং জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় রেলওয়ে স্টেশন সহ মোট ১২টি রেল স্টেশন (১টি সক্রিয়, ১১টি নিষ্ক্রিয়) রয়েছে। যেমন:

শায়েস্তাগঞ্জ জংশন রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের একটি জংশন রেলওয়ে স্টেশন যা হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে পাঁচটি জংশন ছিল, তার মধ্যে অন্যতম এটি।[২] ১৯০৩ সালে এটি চালু হয়।[৩] পরবর্তীতে ১৯২৮–২৯ সালে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ চালু হলে স্টেশনটি জংশন স্টেশনে রুপান্তরিত হয়।[৩] শায়েস্তাগঞ্জ জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। এই স্টেশন থেকে চারটি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: পূর্ব-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–কুলাউড়া রেলপথ, পশ্চিম-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ–আখাউড়া রেলপথ, এবং পশ্চিম-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ বাজার[১] রেলপথ, পূর্ব-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ।

হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ টি মূলত শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত।

হবিগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ বাজার রেলপথ সেকশনের সর্বশেষ স্টেশন। এই স্টেশন থেকে দুই টি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: উত্তর-পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথ এর শেষ সীমানা (রেলপথ সমাপ্তি), এবং পশ্চিম-দক্ষিনে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ[১] রেলপথ, (হবিগঞ্জ থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে) পূর্ব-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা[১] রেলপথ।

বাল্লা রেলওয়ে স্টেশন শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ সেকশনের সর্বশেষ স্টেশন। এই স্টেশন থেকে দুই টি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: দক্ষিন-পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ এর শেষ সীমানা (রেলপথ সমাপ্তি), এবং উত্তর-পশ্চিমে বাল্লা–শায়েস্তাগঞ্জ[১] রেলপথ, (বাল্লা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে) পশ্চিম-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ বাজার[১] রেলপথ।

পরিষেবা[সম্পাদনা]

হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথে ২০০৩ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ বাজার থেকে বল্লা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চলাচল করতো। যা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে।[২] এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সাল থেকে পূর্ববর্তী বিগত বছর গুলোতে হবিগঞ্জশায়েস্তাগঞ্জবাল্লা রেলপথে নিয়মিত লোকাল ট্রেন চলাচল করতো, ২০০৩ সালে অঘোষিত ভাবে হবিগঞ্জশায়েস্তাগঞ্জবাল্লা রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সেই লোকাল ট্রেন এখন সিলেট-আখাউড়া রুটে চলে।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট : ১৬ বছর ধরে বন্ধ হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ বাল্লা রেলপথ"dailyjalalabad.com। ৩১ জানুয়ারি ২০২০। ২০২১-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৮ 
  2. "শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে টিকিট যেন সোনার হরিণ"রাইজিংবিডি.কম। ২০১৬-০৭-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২২ 
  3. "বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের প্লাটফর্ম"দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ। ২০২০-০৭-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২২ 
  4. "রেলওয়ে - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৮ 
  5. "১৪ বছরেও চালু হয়নি শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ"samakal.com। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। ২০২০-১১-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৮ 
  6. "সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"railway.gov.bd। Archived from the original on ২০১১-১২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-০৮