বিষয়বস্তুতে চলুন

পূর্ব আরব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পূর্ব আরব
আল-বাহরাইন (ٱلْبَحْرَيْن)
আরবের ঐতিহাসিক অঞ্চল
১৭৪৫ সালে পূর্ব আরব (বাহরাইনের ঐতিহাসিক এলাকা) বেলিনের মানচিত্র
১৭৪৫ সালে পূর্ব আরব (বাহরাইনের ঐতিহাসিক এলাকা) বেলিনের মানচিত্র
দেশসমূহ বাহরাইন
 কাতার
 সৌদি আরব
 সংযুক্ত আরব আমিরাত
 কুয়েত
 ইরাক
 ওমান

পূর্ব আরব হল পারস্য উপসাগরের উপকূল রেখা বরাবর বসরা থেকে খাসাব[] পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অঞ্চল যেটির অন্তর্ভুক্ত বর্তমান সাময়ের বাহরাইন, কুয়েত, ইরাক, সৌদি আরবের পূর্বাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ওমান। পূর্ব আরবের সমগ্র উপকূলীয় খণ্ডটি সহস্রাব্দ ধরে "বাহরাইন" নামে পরিচিত ছিল।[]

খুব সম্প্রতি কাল পর্যন্ত শাতিল আরব থেকে ওমানের পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত পুরো পূর্ব আরব এমন একটি স্থান যেখানকার অধিবাসীরা জাতীয় সীমানা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন না-হয়ে ঘুরে বেড়াত, বসতি স্থাপন করত এবং বিয়ে করত।[] পূর্ব আরবের লোকেরা সমুদ্রের ওপর ভিত্তি করে এমন একটি সংস্কৃতি লালন করে যা সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য হিসেবে দৃষ্ট হয়।[]

পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী আরব রাষ্ট্রগুলোর সবগুলোই এই পূর্ব আরবে অবস্থিত।[][][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন][][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] আধুনিক বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সচরাচর উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে;[][] সাধারণতঃ সৌদি আরবকে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, কারণ দেশটির অধিকাংশ অধিবাসী শুধুমাত্র পূর্ব আরবে নয়, বরং দেশটির অন্যান্য প্রদেশেও বসবাস করে থাকে।

ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

আরবি ভাষায়, বাহরাইন হল বাহর-এর দ্বৈত রূপ (আরবি: بَحْر, অনুবাদ'সাগর'); অর্থ্যাৎ আল-বাহরাইন দ্বারা "দুই সাগর" বুঝানো হয়। যদিও, ঠিক কোন দুটি সমুদ্রকে এখানে নির্দেশ করা হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[] এই শব্দটি কোরআনে পাঁচবার এসেছে, কিন্তু এটি দ্বারা এই আধুনিক দ্বীপটিকে বুঝায় না — যা মূলত আরবদের নিকট "আউয়াল" নামে পরিচিত — বরং আল-কাতিফ এবং হাজজা (আধুনিক আল-আহসা)-র মরূদ্যানকে বুঝিয়ে থাকে।[] যদিও এই শব্দটি দ্বারা কখন থেকে বাহরাইন উপসাগরের দ্বীপপুঞ্জকে একচেটিয়াভাবে উল্লেখ করা শুরু হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়, তবে এটি সম্ভবত ১৫দশ শতকের পর হতে শুরু হয়েছে। বর্তমানে, বাহরাইনের অর্থ বুঝাতে "দুই সাগর" এর পরিবর্তে সাধারণত উপকূলের পূর্ব এবং পশ্চিমের উপসাগর, [7] দ্বীপের উত্তর ও দক্ষিণের সমুদ্র, অথবা মাটির উপরে এবং নীচে উপস্থিত লবণাক্ত এবং স্বাদু পানিকে উল্লেখ করা হয়। কূপগুলি ছাড়াও বাহরাইনের উত্তরের সমুদ্রে এমন স্থান রয়েছে যেখানে নোনা জলের মধ্যস্থলে মিঠা জলের বুদবুদ উঠে - যা সম্পর্কে প্রাচীনকাল থেকে দর্শনার্থীরা উল্লেখ করেছে। আল-হাসা প্রস্তাবিত একটি বিকল্প তত্ত্ব রয়েছে যে, দুটি সাগর হল বৃহত্ সবুজ মহাসাগর এবং মূল ভূখণ্ডের একটি শান্ত হ্রদ; আল-জাওহারী দ্বারা প্রদত্ত ভিন্ন আরেকটি তত্ত্ব হল যে, আনুষ্ঠানিক নাম বাহরি (লিট. "এর অন্তর্গত সমুদ্র") দ্বারা ভুল বোঝাবুঝি হবে এবং তাই এর বিপরীতে এমনটি মনোনীত করা হয়।[]

সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

পূর্ব আরবের উপসাগরীয় উপকূলের বাসিন্দারা একই ধরণের সংস্কৃতি এবং সঙ্গীত শৈলী, যেমন: ফিজিরি, স্বাত এবং লিওয়া উপভোগ করে। পূর্ব আরবের উপসাগরীয় আরবদের সবচেয়ে লক্ষণীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য হল সমুদ্রের প্রতি তাদের অভিমুখীতা এবং মনোনিবেশ।[] ছোট উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলিতে সমুদ্র-কেন্দ্রিক জীবন একটি সমুদ্র-ভিত্তিক সমাজে পরিণত হয়েছে যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে সামুদ্রিক শিল্প-কেন্দ্রীক জীবিকা নির্বাহ করা হয়েছে।[]

পূর্ব আরবের আরবরা উপসাগরীয় আরবি নামে পরিচিত একটি উপভাষায় কথা বলে। আনুমানিক ২ মিলিয়ন সৌদি অধিবাসী (মোট ৩৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে) উপসাগরীয় আরবি ভাষায় কথা বলে।[][১০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Holes, Clive (২০০১)। Dialect, Culture, and Society in Eastern Arabia: GlossaryClive Holes। BRILL। পৃষ্ঠা XIX। আইএসবিএন 9004107630 
  2. Abu-Hakima, Ahmad Mustafa (১৯৬৫)। History of eastern Arabia, 1750-1800: the rise and development of Bahrain and KuwaitAhmad Mustafa Abu-Hakima। Khayats। আইএসবিএন 9780866854733 
  3. Saleh, Hassan Mohammad Abdulla (১৯৯১)। "Labor, Nationalism and Imperialism in Eastern Arabia: Britain, the Shaikhs and the Gulf Oil Workers in Bahrain, Kuwait and Qatar, 1932-1956"Hassan Mohammed Abdulla Saleh 
  4. Abu-Hakima, Ahmad Mustafa (১৯৮৬)। Eastern Arabia Historic Photographs: Kuwait, 1900-1936Ahmad Mustafa Abu-Hakima। Hurtwood Press। আইএসবিএন 9780903696005 
  5. "Eastern Arabian States: Kuwait, Bahrain, Qatar, the United Arab Emirates, and Oman" (পিডিএফ)David E. Long, Bernard Reich। ১৯৮০। 
  6. Encyclopedia of Islam, Vol. I. “Bahrayn”, p. 941. E.J. Brill (Leiden), 1960.
  7. Faroughy, Abbas. The Bahrein Islands (750–1951): A Contribution to the Study of Power Politics in the Persian Gulf. Verry, Fisher & Co. (New York), 1951.
  8. Iranians in Bahrain and the United Arab EmiratesEric Andrew McCoy। পৃষ্ঠা 67–68। আইএসবিএন 9780549935070 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. Frawley, William (২০০৩)। International Encyclopedia of Linguistics, Volume 1William Frawley। Oxford University Press, USA। পৃষ্ঠা 38। আইএসবিএন 9780195139778 
  10. Languages of Saudi Arabia Ethnologue