পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী ও লৌকিক দেবদেবী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন আদিবাসী ও লৌকিক দেবদেবীর পূজা প্রচলিত। আদিবাসী দেবদেবীর মধ্যে রাজ্যের সাঁওতাল, কোল, লোধা, শবর, মেচ প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে করম, বড়াম, বোঙ্গা, হাগড়ামাড়াই, মারাংবুরু, জাহেরআয়ু, মড়েকতুরুইক, সিনি, সরাইবোঙ্গা, হান্ডিবোঙ্গা, বাঘুত, বুড়াবুড়িপূর্বপুরুষ পূজা প্রচলিত। লৌকিক দেবদেবীদের মধ্যে কেউ কেউ পৌরাণিকতান্ত্রিক দেবদেবীদের আঞ্চলিক রূপ (শিব, চণ্ডী, ষষ্ঠী, মনসা, শীতলা প্রমুখ), আবার কেউ কেউ পুরাণের সঙ্গে কোনওরূপ সম্পর্কবিহীন লোকসমাজে পূজিত দেবতা (ধর্মঠাকুর, দক্ষিণরায়, কালুরায়, মাকালঠাকুর, ভাদু, টুসু প্রমুখ)। লৌকিক দেবদেবীদের কারও কারও পূজা আদিবাসী সমাজেও প্রচলিত। লৌকিক দেবদেবীদের পূজার পাশাপাশি মছলন্দ-পির, বাবনগাজি, ছাবালপির, খোকাপির, মানিকপির, দেওয়ানগাজি, সত্যপির, গোরাচাঁদ পির প্রমুখের ন্যায় কিংবদন্তি পির ও গাজি এবং বনবিবি, ফতেমাবিবি, ওলাবিবি প্রমুখ বিবি মাও গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় কর্তৃক পূজা-হাজত পেয়ে থাকেন।

পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী ও লৌকিক দেবদেবীদের সঙ্গে রাজ্যের লোকসংস্কৃতির যোগ অবিচ্ছেদ্য। এই সব দেবদেবীকে কেন্দ্র করে আয়োজিত লোকউৎসব ও মেলাগুলি গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুষ্ট করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। লৌকিক দেবদেবীদের কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে লোকনাট্য ও লোকসংগীত, সৃষ্টি হয়ে লোকনৃত্য। মধ্যযুগে এই দেবদেবীদের মাহাত্ম্য কীর্তন করে রচিত মঙ্গলকাব্য বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট সাহিত্যধারা।

পশ্চিমবঙ্গে পূজিত আদিবাসী ও লৌকিক দেবদেবীদের একটি বড়ো অংশের পূজা হয় অব্রাহ্মণ পুরোহিতের দ্বারা। কোথাও কোথাও মন্দির ও মূর্তি গড়ে পূজা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লৌকিক দেবতাদের পূজা হয় গাছতলায় বা কুঁড়েঘরে শিলাখণ্ড, মাটির ঢিপি, পোড়ামাটির হাতিঘোড়া অথবা জীয়ন্ত গাছের প্রতীকে। ধনসম্পত্তি লাভ, সন্তান লাভ, আরোগ্য লাভ, শস্য উৎপাদন ও বৃদ্ধি, বৃষ্টি, খরা নিবারণ, পুত্রকন্যার বিবাহ, মামলা-মোকদ্দমায় জয়লাভ, শত্রুনাশ এমনকি হাঁস-মুরগির ডিম পাড়া অথবা গাইয়ের বুকে দুধ আসা – সব ধরনের কামনায় এই সব দেবদেবীর পূজা প্রচলিত। পশ্চিমবঙ্গে পূজিত কয়েকজন দেবদেবীর পূজা কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সীমানার মধ্যেই প্রচলিত, আবার কারও কারও পূজা প্রতিবেশী বাংলাদেশ রাষ্ট্র অথবা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আদিবাসী ও লোকসমাজেও দেখা যায়।

পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতা[সম্পাদনা]

শ্রেণিবিভাগ[সম্পাদনা]

হীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেবতাদের হিতকারী ও অহিতকারী – এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তাঁর মতে, ইতু ও তুলসী, বেল, বট-অশ্বত্থ প্রভৃতি হিতকারী বৃক্ষ পূজিত হয় হিতকারী দেবতার রূপে; অন্যদিকে অলক্ষ্মী, শীতলা, পঞ্চানন্দ, মনসা, ওলাইচণ্ডী প্রভৃতি অশুভ শক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবদেবী ও ভূতপ্রেতাদি অপদেবতার পূজা করা হয় অহিতকারী দেবতা হিসেবে।[১] বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যা আবার রাঢ়ের আদিবাসী ও লৌকিক দেবদেবীদের আঞ্চলিক দেবতা, গ্রামদেবতা ও ব্রতের দেবতা – এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করার পর নির্দিষ্ট স্থানীয় জনজাতির পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত ও পূজিত কিংবদন্তি চরিত্রগুলিকেও দেবতার পর্যায়ভুক্ত করেছেন।[২] দেবব্রত নস্কর পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম্য সমাজে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের দ্বারা পূজিত পির, গাজি ও বিবি মা-দেরও লৌকিক দেবদেবীর তালিকাভুক্ত করেছেন।[৩]

আদিবাসী দেবদেবী[সম্পাদনা]

করম[সম্পাদনা]

ঝাড়গ্রামে করমপূজা

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামবাঁকুড়া জেলার আদিবাসী গ্রামগুলিকে শস্যদেবতা করমের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। ইনি "করমরাজা" ও "করম গোঁসাই" নামেও পরিচিত। ছোটোনাগপুরের বীরহোড়েরা এঁকে "করমভূত" নামেও অভিহিত করে। পূজার দিন রাত্রি প্রথম প্রহরে গ্রামের সমাজপতি সমগ্র গ্রামের হয়ে করম পূজায় বসেন। করম গাছের দু’টি শাখায় লাল সুতো ও গামছা পরিয়ে বেদিতে পোঁতা হয়। পূজার কোনও মন্ত্র নেই; শুধু শস্যবৃদ্ধি ও অপদেবতার হাত থেকে রক্ষার জন্য করমের কাছে প্রার্থনা জানানো হয়। পূজায় অন্নভোগ, "তাহিরে" নামে এক প্রকার বিশেষ খিচুড়িভোগ ও পশুবলির প্রথা রয়েছে। বলির পর একটি ব্রতকথা শোনাতে হয়। তারপর শুরু হয় নাচগান। এই নাচের মধ্যে প্রধান হল করম নাচ বা পাতানাচ। কোথাও কোথাও করম গাছের অভাবে শাল, নিম, গম্ভীরা বা সিজ গাছের ডালকে প্রতীক রূপে পূজা করা হয়। আবার বৃহত্তর মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় উচ্চবর্ণের হিন্দুরাও ব্রাহ্মণ পুরোহিত দিয়ে শাস্ত্রীয়-লৌকিক মিশ্র রীতিতে করম পূজার আয়োজন করে থাকেন।[৪]

লৌকিক দেবদেবী[সম্পাদনা]

চণ্ডী[সম্পাদনা]

চণ্ডী মূলত একজন পৌরাণিক দেবী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে ও শহরের লোকসমাজে বিচিত্র নামে ও প্রতীকে তাঁর পূজা প্রচলিত রয়েছে। যেমন ওলাইচণ্ডী, কুলুইচণ্ডী, ঢেলাইচণ্ডী, রণচণ্ডী, গড়চণ্ডী, নেকড়াই চণ্ডী, হেঁটালচণ্ডী বা ইটালচণ্ডী ইত্যাদি।[৫] শিবেন্দু মান্নার মতে, ভারতে দুই প্রকার দেবপূজা প্রচলিত: শাস্ত্রীয় ও লৌকিক। শাস্ত্রীয় চণ্ডীপূজার ধারকবাহকেরা হলেন ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রতিভূ ব্রাহ্মণ জাতি এবং লৌকিক চণ্ডী দেশের আদিবাসী ও নিম্নবর্ণীয় চণ্ডাল, হাড়ি, ডোম, শবর প্রভৃতির আরাধ্য দেবী।[৬] তিনি আরও মনে করেন, আদিবাসী জনগোষ্ঠী কর্তৃক মাটির ঢিপি বা পাথরের টুকরোর মতো জড় পদার্থকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে গাছকেও প্রচণ্ড শক্তিসম্পন্ন চণ্ডী জ্ঞানে পূজা করার মধ্যে দিয়ে এই জনগোষ্ঠী চণ্ডী ভাবনার মধ্যে সর্বপ্রাণবাদের পরিচয় পাওয়া যায়।[৬] কোনও কোনও ক্ষেত্রে শস্যবৃদ্ধি, সুপ্রজনন অথবা গ্রামরক্ষার উদ্দেশ্যেও চণ্ডীপূজা প্রচলিত। লৌকিক চণ্ডীপূজার স্থান প্রধানত গাছতলা বা কুঁড়েঘরে; তবে পাকা মন্দিরেরও দেখা পাওয়া যায়। অনেক সময় স্থানীয় চণ্ডীমন্দিরগুলিতে শিব, মনসা, শীতলা প্রমুখ দেবতাকে চণ্ডীর সঙ্গে পূজিত হতে দেখা যায়। লৌকিক চণ্ডীর কোনও মূর্তিরূপ নেই বললেই চলে। মাটির ঢিবি, পাথরের টুকরো বা বিশেষ ক্ষেত্রে কোনও পৌরাণিক দেবীর মূর্তিতেই লৌকিক চণ্ডীর পূজা সম্পন্ন হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই দেবীরা গ্রামদেবী। পক্ষান্তরে বাঙালি গৃহবধূরা সাংসারিক কামনাবাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে মঙ্গলচণ্ডী, জয়চণ্ডী, কল্যাণচণ্ডী, রথাইচণ্ডী প্রমুখ দেবীকে তাঁদের মেয়েলি ব্রতের মাধ্যমে পূজার্চনা করেন।[৬]

মাকাল ঠাকুর[সম্পাদনা]

মাকাল ঠাকুর বা মাখাল ঠাকুর হলেন মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবতা। এঁর কোনও মানুষের আকৃতিবিশিষ্ট মূর্তি নেই; মাটির একটি অথবা একসঙ্গে দু’টি ছোটো স্তূপের প্রতীকে এঁর পূজা হয়। যেখানে জোড়া প্রতীকে পূজা হয় সেখানে দু’টি প্রতীকের মধ্যে স্ত্রী দেবতা-পুরুষ দেবতা ভেদ করা হয় না, উপাসকেরা দু’টি প্রতীককেই দেবতার মূর্তি মনে করে। এই প্রতীকটি কতকটা উল্টানো গ্লাস বা টোপরের সদৃশ। মাকাল ঠাকুরের পূজার কোনও নির্দিষ্ট স্থান বা কালও নেই। মৎস্যজীবীরা কোনও জলাশয়ে মাছ ধরতে গেলে সেই জলাশয়ের তীরে এঁর পূজা করেন। সেখানে এক গজ পরিমাণ জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সমতল করে নেওয়া হয়। তার ঠিক মাঝখানে মাটি দিয়ে তিনটি থাকযুক্ত একটি ছোটো বেদি (বা স্থণ্ডিল) তৈরি করা হয়। বেদির ঠিক মাঝখানে প্রতীক স্তূপটি অথবা স্তূপ দু’টি বসানো হয়। বেদির চার কোণে চারটি তিরকাঠি পুতে সেগুলি পরস্পর লাল সুতো দিয়ে সংযুক্ত করে বেদির একটি আবরণ বা বেড়া তৈরি করা হয়। প্রতীকের উপর লাল রঙের চাঁদোয়াও টাঙানো হয়। পূজায় ব্রাহ্মণ পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না; এমনকি পূজার কোনও মন্ত্রও নেই। পূজক মৎস্যজীবীদের দলের সর্দার নিজ ভক্তি ও কল্পনা অনুযায়ী পূজা করেন। অবশ্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেয়াসি শ্রেণির ব্রাহ্মণ পুরোহিত পূজা করে থাকেন। এঁরা পূজার সময় তিনবার "গুরু সত্য" কথাটি উচ্চারণ করেন। প্রতীকের উপরের অংশে সিঁদুর লেপে তার উপর ফুল ও তুলসীপাতা (বা বেলপাতা) রাখা হয়। সামনে একটি ঘট পাতা হয়। পূজার সময় একটি প্রদীপ জ্বালা হয়। পূজার আয়োজনও সামান্য। একটি মাটির থালা বা সানকিতে করে কিছুটা আতপ চাল, একছড়া পাকা কলা ও কয়েকটি বাতাসা মাত্র দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। অপর একটি থালায় শিশুদের চুষিকাঠি, লাট্টু, ঘুনসি, ধান, দূর্বা ও তুলসীপাতা দেওয়া হয়। এছাড়া একটি নতুন কলকে ও কিছুটা গাঁজা দেওয়া হয়। পূজার শেষে "ফুল চাপানো" নামে একটি কৃত্য পালন করা হয়। প্রতীকের উপরের অংশে একটি ফুল রাখা হয়। উপাসকদের বিশ্বাস, ফুলটি যদি আপনা থেকে মাটিতে পড়ে যায়, তাহলে অনেক মাছ জালে উঠবে। এই পূজায় কোনও বাজনা বা বলিদানের প্রথা নেই।[৭]

মাকাল ঠাকুর পূজার নির্দিষ্ট "থান" না থাকলেও কোনও কোনও গ্রামে অন্য কোনও লৌকিক দেবতার সহচররূপে তাঁদের থানে বা মন্দিরে মাকাল ঠাকুরের পূজার্চনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার কাছে বেলেঘাটা খালের পূর্ব পাড়ে নওয়াবাদ-গোলাবাড়ির একটি থানে দক্ষিণরায়, পঞ্চানন্দ প্রমুখের সঙ্গে মাকাল ঠাকুরের প্রতীক স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের দ্বারা পূজিত হয়। সুন্দরবনের কাছে কয়েকটি গ্রামেও অনুরূপ থান দেখতে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের মধ্যে "মাকাল" পদবি দেখা যায়। এছাড়া উত্তরদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় "মাকাল" নামযুক্ত একাধিক গ্রামও রয়েছে, যেমন মাকালপুর, মাকালতলা ইত্যাদি।[৮]

পশ্চিমবঙ্গের কোনও কোনও জেলার (বিশেষত হাওড়া জেলায়) গ্রামাঞ্চলের মৎস্যজীবীরা মাকাল ঠাকুরকে মাকালচণ্ডী নামে অভিহিত করেন। কিন্তু এই পূজাতেও কোনও মন্ত্র ব্যবহার করা হয় না; এমনকি লৌকিক চণ্ডীপূজার কোনও বিধিও পালন করা হয় না।[৯]

মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে রচিত কয়েকটি কাব্যে মাকাল ঠাকুরের উল্লেখ পাওয়া যায়। তারকেশ্বর শিবতত্ত্ব[১০] ও একই সময়ে বলরাম কবিশেশখর রচিত কালিকামঙ্গল গ্রন্থের "দিগ্বন্দনা" অংশে[১১]

গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসুর মতে, কর্ণাটক রাজ্যের মহীশূর অঞ্চলের গ্রাম্যদেবী কানিয়াম্মার সঙ্গে মাকাল ঠাকুরের সাদৃশ্য দেখা যায়। কানিয়াম্মাও মৎস্যজীবীদের উপাস্য, পার্থক্য শুধু মাকাল ঠাকুর পুরুষ দেবতা ও কানিয়াম্মা দেবী।[৮]

আট-মাকাল ও খালকুমারী[সম্পাদনা]

মাকাল ঠাকুরের সহচর হিসেবে কোথাও কোথাও আট-মাকাল নামে আরেক দেবতাকে পূজা করা হয়। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে আট-মাকাল পূজার ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। এই অঞ্চলের লোকেদের ধারণা আট বা আটেশ্বর হলেন অরণ্যরক্ষক দেবতা। তাই বনাঞ্চলে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে মৎস্যজীবীরা তাঁর পূজা করেন। আট-মাকাল পূজায় সাতটি ছোটো ছোটো মাটির স্তূপ প্রাগুক্ত বেদির উপর রাখা হয় এবং আট বা আটেশ্বরের স্তূপটি বড়ো করে তৈরি করা হয়।[৯] সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা বিশালাক্ষীখাল-কুমারী সহ কয়েকজন দেবীরও পূজা করেন। গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসুর মতে, "‘খাল-কুমারী’ থেকে ‘মাখাল’ বা ‘মাকাল’ শব্দ আসতে পারে, কিন্তু সব স্থানের মৎস্যজীবীদের ধারণা – মাকাল পুরুষ দেবতা।"[৮]

পির ও গাজি[সম্পাদনা]

বিবি মা[সম্পাদনা]

লোকদেবতা ও লোকসংস্কৃতি[সম্পাদনা]

লোকউৎসব[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

সূত্রনির্দেশ[সম্পাদনা]

  1. "হিতকারী দেবতা" ও "অহিতকারী দেবতা", হীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, পৃ. ৪৬৩-৪৬৪
  2. "রাঢ়ের লৌকিক দেব-দেবী: শ্রেণিবিভাগ"; রাঢ়ের জনজাতি ও লোকসংস্কৃতি, পৃ. ১৮৮-১৯০
  3. বাংলার লোকসংস্কৃতি ও সমাজসংস্কৃতি, ১৮৩-২১৯, ২২১-২৩৬
  4. "করম", ড. রেবতীমোহন সরকার, বাংলা লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, পৃ. ৪৬৭
  5. হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় পর্ব, পৃ. ২২২
  6. "চণ্ডী", শিবেন্দু মান্না, বাংলা লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, পৃ. ৪৭৯-৪৮০
  7. বাংলার লৌকিক দেবতা, পৃ. ১-২
  8. বাংলার লৌকিক দেবতা, পৃ. ৩
  9. বাংলার লৌকিক দেবতা, পৃ. ২
  10. ক্ষেত্রপাল মহাকাল প্রভৃতি দেবতা।
    যাহার যেরূপ ভক্তি সেরূপ গঠিতা।।
    কোথায় ওলাইচণ্ডী মাখাল জলায়।
    বৃক্ষতলে মহাপ্রভু স্থান দৃশ্যপ্রায়।।
    -বাংলার লৌকিক দেবতা, পৃ. ২
  11. দাধার চণ্ডিকা বন্দোঁ যোড় করি পাণি।
    বালিয়ায় বন্দিলাম জয় সিংহবাহিনী।।
    ঘুরালো মাখাল বন্দোঁ পুরাণের ঘাটু।
    তালপুরে ষষ্ঠী বন্দোঁ হাসনানের বটু।।
    কালিঘাটে বন্দিলাম দেবী ভদ্রাকালী।
    ব্রহ্মা স্থাপিয়া যথা দিল অঙ্গ বলি।।
    -বাংলার লৌকিক দেবতা, পৃ. ৩

উল্লেখপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসু, বাংলার লৌকিক দেবতা, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৯৭৮ সংস্করণ।
  • ড. দুলাল চৌধুরী (সম্পাদিত), বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, আকাদেমি অফ ফোকলোর, কলকাতা, ২০০৪ সংস্করণ।
  • দেবব্রত নস্কর, বাংলার লোকদেবতা ও সমাজসংস্কৃতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০১৮ সংস্করণ।
  • বিনয় ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রথম খণ্ড (বর্ধমান - বীরভূম - বাঁকুড়া - পুরুলিয়া), প্রকাশ ভবন, কলকাতা, ১৯৭৬ সংস্করণ, ২০০৩ মুদ্রণ।
  • বিনয় ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, চতুর্থ খণ্ড, প্রকাশ ভবন, কলকাতা, ২০০৭ সংস্করণ।
  • মিহির চৌধুরী কামিল্যা, রাঢ়ের জনজাতি ও লোকসংস্কৃতি, উচ্চতর বিদ্যাচর্চাকেন্দ্র, বাংলা বিভাগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান, ২০০৬ সংস্করণ
  • ড. হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় পর্ব, ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৮৬ সংস্করণ, ২০০৭ পুনর্মুদ্রণ।