জর্জ বিসেট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জর্জ বিসেট
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজর্জ ফিনলে বিসেট
জন্ম(১৯০৫-১১-০৫)৫ নভেম্বর ১৯০৫
কিম্বার্লি, কেপ প্রদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা
মৃত্যু১৪ নভেম্বর ১৯৬৫(1965-11-14) (বয়স ৬০)
বোথাস হিল, নাটাল, দক্ষিণ আফ্রিকা
উচ্চতা৫ ফুট ১০.৫ ইঞ্চি (১.৭৯ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১১৯)
৩১ ডিসেম্বর ১৯২৭ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২২–১৯২৪গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট
১৯২৮ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স
১৯২৯ট্রান্সভাল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২১
রানের সংখ্যা ৩৮ ২৯৪
ব্যাটিং গড় ১৯.০০ ১৫.৪৭
১০০/৫০ ০/০ ০/০
সর্বোচ্চ রান ২৩ ৩৩
বল করেছে ৯৮৯ ৩,৩১৭
উইকেট ২৫ ৬৭
বোলিং গড় ১৮.৭৬ ২৭.১০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/২৯ ৭/২৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/– ৮/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৮ মার্চ ২০১৯

জর্জ ফিনলে বিসেট (ইংরেজি: George Bissett; জন্ম: ৫ নভেম্বর, ১৯০৫ - মৃত্যু: ১৪ নভেম্বর, ১৯৬৫) উত্তর কেপের কিম্বার্লিতে জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২৭ থেকে ১৯২৮ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১]

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স ও ট্রান্সভাল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন জর্জ বিসেট

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

কিম্বার্লির সেন্ট প্যাট্রিকস ক্রিস্টিয়ান ব্রাদার্স কলেজে অধ্যয়ন করেছেন তিনি। পাঁচ ফুট সাড়ে দশ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন জর্জ বিসেট।[২] ডানহাতে নিচেরসারির মারমুখী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তিনি। দক্ষ ফিল্ডার হিসেবেও সুনাম ছিল তার। ঐ সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের মর্যাদা লাভ করেছিলেন তিনি।[২] আকস্মিকভাবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করলেও আট বছরের অধিককাল অতিবাহিত করেছিলেন তিনি। তিনবার নিজদেশে ও একবার ইংল্যান্ড সফরে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। সবমিলিয়ে মাত্র ২১টি খেলায় অংশগ্রহণ ছিল তার।[৩]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯২২-২৩ মৌসুমে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের সদস্যরূপে অভিষেক ঘটে জর্জ বিসেটের। অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তন্মধ্যে দ্বিতীয় খেলাটির প্রথম ইনিংসে ১০ ওভারে ৩৮ রান খরচায় পাঁচ-উইকেট দখল করেছিলেন তিনি।[৪] পরের বছর বর্ডারের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬/৮৭ পেয়ে নিজের বোলিং পরিসংখ্যানের আরও উত্তরণ ঘটান।[৫] ফলশ্রুতিতে, ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ড গমনে দক্ষিণ আফ্রিকান দলের অন্যতম সদস্যরূপে দলে অন্তর্ভুক্তি ঘটে তার। তবে, ব্যক্তিগতভাবে সফলতা লাভে সক্ষম হননি তিনি। শুরুরদিকের খেলাগুলোয় বোলিংয়ে বেশ মিতব্যয়ী ছিলেন। জুনের শেষদিক পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রাখেন। হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০২ রান খরচায় পাঁচ-উইকেট পান।[৬] কিন্তু দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে খেলা চলাকালীন পায়ে আঘাত পান ও এরপর আর খেলতে পারেননি তিনি।[৭] এরপর প্রায় সাড়ে তিন বছর প্রথম-শ্রেণীর খেলার বাইরে ছিলেন।

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে চারটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেছিলেন তিনি। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯২৭ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে জর্জ বিসেটের। ১৯২৭-২৮ মৌসুমেই ঐ টেস্টগুলো খেলেছিলেন।

বিস্ময়করভাবে ১৯২৭-২৮ মৌসুমে নিজদেশে ইংরেজ দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড দল খুব সহজেই ১০ উইকেটে জয় তুলে নেয়। তখন জর্জ বিসেট কেপটাউনে দ্বিতীয় বিভাগের লীগ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করছিলেন।[৮] দলের বোলিং বিভাগে শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে তাকে টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাৎক্ষণিক সাফল্য এনে দেন দলকে। প্রথম পাঁচ-উইকেটই তিনি দখল করেন ও বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৫/৩৭। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও তিন উইকেট পান। তাসত্ত্বেও দল পরাজিত হয়েছিল।[৯]

জর্জ বিসেটের দলে অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে দ্য টাইমসে খেলার প্রথম দিন সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত সপ্তাহে বড়দের ক্লাবের এক খেলায় ২৮ রান দিয়ে ৭ উইকেট পেয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে হার্বি টেলরের নেতৃত্বাধীন দলের সাথে ইংল্যান্ড গমনের পর এটিই তার সেরা ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত ছিল। সেখানে অবশ্য তিনি বেশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন।[১০] বিসেটের এ সফলতা প্রাপ্তি অবশ্য ইংল্যান্ডের জয়রথকে আটকাতে পারেনি। তবে তা পূর্ববর্তী খেলার তুলনায় স্বল্প ব্যবধানের ছিল।

পরের খেলাতেই টেস্ট সিরিজের ভারসাম্য স্থানান্তরিত হয়ে পড়ে। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও জর্জ বিসেট কোন উইকেট লাভে ব্যর্থ হয়েছিলেন।[১১] এমনকি সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ফলাফল আরও পরিবর্তিত হয়ে পড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা চার উইকেটে বিজয়ী হয়। বামহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং জুটি আল্ফ হলকে নিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে সমূদয় উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। জর্জ বিসেট ৪/৪৩ ও আল্ফ হল ৬/১০০ পান।[১২] দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৪/৭০ ও আল্ফ হল তিন উইকেট লাভ করেছিলেন। চূড়ান্ত টেস্টে আট উইকেটে জয় পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দল সিরিজে সমতা আনে। উভয় দলই দুইটি করে জয় পায়। আবারও জর্জ বিসেট খেলায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে তিনি দুইটি উইকেট পান। বুস্টার নুপেন পান ৫/৮৩। কিন্তু, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে জর্জ বিসেট সিরিজের সেরা বোলিংসহ খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। তিনি ৭/২৯ লাভ করেন।[১৩]

দ্য টাইমসে জর্জ বিসেট সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, বাতাসের সুবিধা নিয়ে বলকে বেশ উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ও কিছু সেরা ফাস্ট বোলিং করে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের নিরাশ করেন।[১৪] ইনিংস শেষে বিসেটকে প্যাভিলিয়ন থেকে চলে আসা দর্শকেরা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে বলটি তাকে প্রদান করা হয়।[১৪] খেলা শেষে জর্জ বিসেটসহ বুস্টার নুপেন, বব ক্যাটারলআর্নেস্ট টিল্ডসলেকে কিংসমিড ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সীমানায় চারা গাছ রোপণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।[১৪]

অবসর[সম্পাদনা]

খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে ক্রিকেটার হিসেবে জর্জ বিসেট বেশ নেতিবাচক অবস্থানে ছিলেন। ইংল্যান্ড দল দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করার পূর্বে তিনি কেবলমাত্র একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের সদস্যরূপে এমসিসি’র বিপক্ষে খেলে কোন উইকেট পাননি।[১৫]

১৯২৯ সালে জর্জ বিসেটকে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সাথে ইংল্যান্ড গমনের উপযোগী মনে করা হয়নি।[১৬] এরপর তিনি আর একটিমাত্র প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ট্রান্সভালের সদস্যরূপে নাটালের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলার প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট পান। এরপর ৯৭.৩ ওভার স্থায়ী দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি বোলিংই করেননি।[১৭] পরের বছর প্রথম-শ্রেণীবিহীন একটি খেলায় উত্তর রোডেশিয়ার পক্ষে খেলেন। ১৯৩০-৩১ মৌসুমে সফরকারী ইংরেজ দলের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি দুই উইকেট লাভ করেছিলেন।[১৮]

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ডারবানের হাইবারি প্রিপারেটরি স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় মনোনিবেশ ঘটান। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ের ক্রীড়া দলকে প্রশিক্ষণ দিতেন।[২] ১৪ নভেম্বর, ১৯৬৫ তারিখে ৬০ বছর বয়সে নাটালের বোথাস হিল এলাকায় জর্জ বিসেটের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "George Bissett"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-১২ 
  2. Irving Rosenwater, "George Finlay Bissett", The Cricketer, December 1965, p. 27.
  3. "First-Class Matches played by George Bissett"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৮ 
  4. "Scorecard: Griqualand West v Orange Free State"। www.cricketarchive.com। ১৯২৩-০২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৮ 
  5. "Scorecard: Border v Griqualand West"। www.cricketarchive.com। ১৯২৩-১২-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৮ 
  6. "Scorecard: Hampshire v South Africans"। www.cricketarchive.com। ১৯২৪-০৬-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৮ 
  7. "Scorecard: Yorkshire v South Africans"। www.cricketarchive.com। ১৯২৪-০৭-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৮ 
  8. Frindall, Bill (২০০০)। The Wisden Book Of Test Cricket: Volume 1 1877-1970। London: Headline Book Publishing। পৃষ্ঠা 171। আইএসবিএন 0747272735 
  9. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ১৯২৭-১২-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৮ 
  10. "Cricket: The Second Test Match"। The Times (44779)। London। ২ জানুয়ারি ১৯২৮। পৃষ্ঠা 5। 
  11. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ১৯২৮-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৮ 
  12. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ১৯২৮-০১-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৯ 
  13. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ১৯২৮-০২-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৯ 
  14. "Cricket: The Last Day's Play: Bissett's Fast Bowling"। The Times (44812)। London। ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮। পৃষ্ঠা 6। 
  15. "Scorecard: Western Province v MCC"। www.cricketarchive.com। ১৯২৮-০২-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৯ 
  16. "Cricket: Prospects of the Season: The South Africans"। The Times (45163)। London। ২৮ মার্চ ১৯২৯। পৃষ্ঠা 5। 
  17. "Scorecard: Natal v Transvaal"। www.cricketarchive.com। ১৯২৯-১২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৯ 
  18. "Scorecard: Northern Rhodesia v MCC"। www.cricketarchive.com। ১৯৩০-১২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২৯ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]