বব ক্যাটারল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বব ক্যাটারল
সংগৃহীত স্থিরচিত্রে বব ক্যাটারল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামরবার্ট হেক্টর ক্যাটারল
জন্ম(১৯০০-০৭-১০)১০ জুলাই ১৯০০
পোর্ট এলিজাবেথ, কেপ প্রদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা
মৃত্যু৩ জানুয়ারি ১৯৬১(1961-01-03) (বয়স ৬০)
কেম্পটন পার্ক, গটেং, দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১০৩)
২৩ ডিসেম্বর ১৯২২ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৪ ১২৪
রানের সংখ্যা ১৫৫৫ ৫৮৪৯
ব্যাটিং গড় ৩৭.৯২ ২৯.৯৯
১০০/৫০ ৩/১১ ৯/৩১
সর্বোচ্চ রান ১২০ ১৪৭
বল করেছে ৩৪২ ৩৬১৮
উইকেট ৫৩
বোলিং গড় ২৩.১৪ ৩০.৭৩
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৩/১৫ ৪/২২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১২/- ৫২/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৩ জুলাই ২০১৯

রবার্ট হেক্টর বব ক্যাটারল (ইংরেজি: Bob Catterall; জন্ম: ১০ জুলাই, ১৯০০ - মৃত্যু: ৩ জানুয়ারি, ১৯৬১) কেপ প্রদেশের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২২ থেকে ১৯৩১ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে রোডেশিয়া, নাটাল, অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট ও ট্রান্সভাল দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন রবার্ট ক্যাটারল নামে পরিচিত বব ক্যাটারল

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

জোহেন্সবার্গভিত্তিক জেপ বয়েজ হাইস্কুলে পড়াশুনো করেছেন বব ক্যাটারল। এখানে থাকাবস্থায় গ্লুচেস্টারশায়ারের সাবেক ক্রিকেটার ও লর্ডসের কোচ আলফ্রেড অ্যাটফিল্ডের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন তিনি।[১] এছাড়াও, এ. এইচ. চাইল্ডসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন ২০০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯২০-২১ মৌসুম থেকে ১৯৩৩-৩৪ মৌসুম পর্যন্ত বব ক্যাটারলের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯২০-২১ মৌসুমে ট্রান্সভালের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। দুই খেলায় অংশ নিয়ে খুব কমই সফলতা পান। কিন্তু, পরবর্তী মৌসুমে তিনি নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ লাভ করেন ও ধারাবাহিকভাবে রান তুলতে থাকেন। কেবলমাত্র দুইবারই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন। ৪২ ঊর্ধ্ব গড়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেন ৭৫।[২]

১৯২২-২৩ মৌসুমে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকায় আগমন ঘটে। এমসিসি দল টেস্টবিহীন খেলায় অংশ নিয়েছিল। ইংল্যান্ড দল টেস্টে খেলায় অংশ নেয়। টেস্ট সিরিজে অংশ নেয়ার পূর্বে ট্রান্সভালের বিপক্ষে ইংরেজ দল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অবতীর্ণ হয়। ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ১৯৫ মিনিটে ক্রিজে অবস্থান করে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১২৮ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দেন তিনি।[৩] ফলশ্রুতিতে, তার এ ইনিংসের পরিপ্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ পর অনুষ্ঠেয় সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলার জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৪ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন বব ক্যাটারল।[৪] ২৩ ডিসেম্বর, ১৯২২ তারিখে জোহেন্সবার্গে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ তারিখে একই মাঠে ও একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টে গড়া এ সিরিজে নিজস্ব প্রথম টেস্টে দুইবারই ব্যাটিং উদ্বোধন করেছিলেন বব ক্যাটারল। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দল মাত্র ১৪৮ রানের গুটিয়ে যায়। ৩৯ রান তুলে দলের শীর্ষস্থানীয় রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। তবে, হার্বি টেলরের নিখাঁদ ১৭৬ রানের ইনিংসের কল্যাণে ৩৮৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে জয় তুলে নেয়ার কৃতিত্ব দেখায়।[৫]

দ্বিতীয় টেস্টটি নিচুমূখী রানের খেলা ছিল। ইংল্যান্ড দল স্বল্প ব্যবধানে এক উইকেটে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে একটিমাত্র পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসের জুটি হয়। দ্বিতীয় উইকেটে ক্যাটারল ও টেলর ১৫৫ রানের জুটি গড়েন। তন্মধ্যে, বব ক্যাটারলের সংগৃহীত ৭৬ রান খেলায় সর্বোচ্চ ছিল।[৬] এর বিপরীতে সিরিজের তৃতীয় খেলাটি দ্রুতলয়ে রান তোলার উপযোগী হলেও বৃষ্টির কারণে একদিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[৭]

তৃতীয় ও চতুর্থ টেস্টের মাঝখানে বব ক্যাটারল ট্রান্সভালের সদস্যরূপে সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন।[৮] চতুর্থ টেস্টে ৩১ ও ৮ রান তুলে কম সফলতা পান। চূড়ান্ত খেলায় জিতে ইংল্যান্ড দল সিরিজ জয় করে। এ খেলাতেও তিনি মাঝারিমানের সফলতা পেয়েছিলেন। দুই ইনিংসে ১৭ ও ২২ রান করেন।[৯][১০] সামগ্রিকভাবে ৩০.২২ রান গড়ে ২৭২ রান সংগ্রহ করেছিলেন বব ক্যাটারল। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের মধ্যে রান সংগ্রহের দিক দিয়ে তৃতীয় ও গড়ের দিক দিয়ে চতুর্থ স্থান দখল করেন তিনি।[১১]

ইংল্যান্ড গমন, ১৯২৪[সম্পাদনা]

১৯২২-২৩ মৌসুমের শেষদিকে থেকে শুরু করে ১৯২৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ইংল্যান্ড গমনের পূর্ব-পর্যন্ত কোন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার সাথে যুক্ত ছিলেন না বব ক্যাটারল। তাসত্ত্বেও, ইংল্যান্ড গমনে তাকে মনোনীত করা হয়েছিল। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকে তার এ সফরের অবদানে বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটায়। পুরো সফরে বব ক্যাটারল মাঝারিমানের রেকর্ডকে পাস কাটিয়ে ২৭ গড়ে ১৩৮৯ রান তুলতে সমর্থ হন।[১২]

পাঁচ বছর পর ১৯২৪ সালে পুনরায় ইংল্যান্ড সফরে যান। এবার তিনি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তবে, খেলায় ধ্রুপদী ছন্দে পতন ঘটে। আবারও তিনি টেস্ট খেলাগুলোয় বেশ ভালো করেন ও সর্বাধিক সফল হন। এজবাস্টন টেস্টে ৬৭ ও ৯৮ রান তুলেন। এ পর্যায়ে বি. মিচেলের সাথে প্রথম উইকেট জুটিতে ১১৯ ও ১৭১ রান তুলেন। বার্মিংহামে ১২০, লর্ডসে ১২০ ও ওভালে ৯৫ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ওভাল টেস্টে শতরানের দোড়গোড়ায় অবস্থান করে মাত্র পাঁচ রান বাকী থাকা অবস্থায় রয় কিলনারের বলকে কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এককথায় দলটিতে অসাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেন। ফলশ্রুতিতে, উইজডেন কর্তৃক ১৯২৫ সালের সংস্করণে অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় তাকে ভূষিত করা হয়।[১]

টেস্ট সিরিজের শুরুতেই বেশ বাজেভাবে যাত্রা করে সফরকারীরা। এর জবাবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল ৪৩৮ রান তুলে। আর্থার জিলিগানমরিস টেটের বোলিংয়ে তোপে ৪৫ মিনিটে ১২.৩ ওভারে মাত্র ৩০ রান তুলতে সমর্থ হয়। উভয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে কোন রান সংগ্রহ বাদেই তাকে বিদেয় নিতে হয়েছিল।[১৩] এটিই ইংল্যান্ডের মাটিতে অদ্যাবধি সর্বনিম্ন টেস্টে রান ও টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানের সমান হয়।[১৪] দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস বেশ ভিন্নভাবে শুরু হয়। ৪০৮ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামে সফরকারী দল। ইংল্যান্ডকে পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামানোর জন্যে দলটির ১৮ রান প্রয়োজন ছিল।[১৫] মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বব ক্যাটারল ১২০ রান তুলেন ও দক্ষিণ আফ্রিকা দল ৩৯০ রানে অল-আউট হয়। তিনি সকলের শেষে আউট হন।

দ্বিতীয় টেস্টেই সিরিজের ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যায়। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে বব ক্যাটারল প্রথম ইনিংসে ১২০ রান তুলে স্বীয় অবদানের পুণরাবৃত্তি ঘটান।[১৬] পাঁচ রানের মাথায় উইকেট-রক্ষক জর্জ উড ও ৩০ রানের মাথায় স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান ফ্রাঙ্ক ওলি ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি। প্রথম ঘটনায় উইজডেন মন্তব্য করে যে, উইকেট-রক্ষক দণ্ডায়মান অবস্থায় থেকেও এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেননি।[১৭] এ খেলায় উইকেট লাভের ব্যর্থতায় দক্ষিণ আফ্রিকা পরাজয়বরণ করে। কেবলমাত্র দুই উইকেট খুঁইয়ে ৫৩১ রান তুলে। দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যাটারলের ৪৫ রান কেবলমাত্র সময় পার করার সামিল ছিল।

ইংল্যান্ড দল তৃতীয় টেস্টে জয় পায়। এ খেলায় কেবলমাত্র বব ক্যাটারল ও অধিনায়ক হার্বি টেলর প্রথম ইনিংসে রান তুলেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রত্যেকেই ৫৬ রান তুলে যৌথভাবে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। কিন্তু, ভুলবশতঃ ক্যাটারল তার অধিনায়ককে রান আউটে বিদায় করেন।[১৮][১৯] চতুর্থ টেস্ট বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়। প্রথম দিন তিনি মাত্র মাঠে নামেন ও বৃষ্টি আঘাত হানে। এরপর আর খেলা হয়নি।[২০]

পঞ্চম ও সর্বশেষ টেস্টে আবারও বৃষ্টি নামে। তবে, ব্যাটসম্যানদের উপযোগী ওভালের পিচে উভয় দলই বড় অঙ্কের রানের দিকে ধাবিত হয়। ক্যাটারল মাত্র ১২৫ মিনিটে ৯৫ রান তুলেন। এটি দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল।[২১] এ ইনিংসের কল্যাণে সিরিজে ৪৭১ রান পান ও গড় দাঁড়ায় ৬৭.২৮। রান সংগ্রহ ও গড়ের দিক দিয়ে পরবর্তী সেরা দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ফ্রেড সাসকিন্ডের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এগিয়েছিলেন।[২২]

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্যাবর্তন[সম্পাদনা]

১৯২৪-২৫ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলার সংখ্যা সীমিত পর্যায়ের ছিল। অনানুষ্ঠানিকভাবে ১৫-সদস্যের ইংরেজ ক্রিকেটারের অধিকাংশই টেস্ট অভিজ্ঞতালব্ধ খেলোয়াড়ের দল দক্ষিণ আফ্রিকায় আগমন ঘটে। তারা ১৯২৪-২৫ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ড দলের সফর করা থেকে বঞ্চিত ছিল। সফরকারী দলটি এস. বি. জোয়েল একাদশ নামে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসে। সলোমন জোয়েল অর্থলগ্নী করলেও ঐ সময়ে দলীয় অধিনায়ক সম্মানীয় এল. এইচ. টেনিসনের দল নামে পরিচিতি পায়।[২৩] সফরকারী দলটি ১৪টি প্রথম খেলায় অংশ নেয়। তন্মধ্যে, পাঁচটি খেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্বকারী দলের বিপক্ষে খেলে। ঐ পাঁচটি খেলার প্রত্যেকটিতেই তার অংশগ্রহণ ছিল। শুরুরদিকে খেলায় ইনিংস উদ্বোধনে নেমে খুব কমই সফলতা পান। তবে, মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৬ রানের কল্যাণে চূড়ান্ত খেলায় দলকে সিরিজে সমতায় নিয়ে আসতে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।[২৪]

পরবর্তী ১৯২৫-২৬ মৌসুমে পুরোটা সময় জুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘরোয়া আসর বসে। বব ক্যাটারল ট্রান্সভাল থেকে নাটালে চলে যান। মাত্র পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের বিপক্ষে ১৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। এটিই পরবর্তীকালে তার প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড় জীবনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস হিসেবে রয়ে যায়।[২৫] একইভাবে ১৯২৬-২৭ মৌসুমও ঘরোয়া ক্রিকেটের আসর বসে। সেঞ্চুরিবিহীন অবস্থায় মাঝারিমানের খেলা উপহার দেন। তবে, পূর্বের তুলনায় অধিক ওভার বোলিং করেছিলেন।

১৯২৭-২৮ মৌসুমে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্বকারী এমসিসি দলের আগমনে ঘরোয়া প্রতিযোগিতা স্থগিত হয়ে যায়। এ সফরে পাঁচটি টেস্টের আয়োজন করা হয়। ইংল্যান্ড দলটি পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর ছিল না। শীর্ষস্থানীয় অনেক খেলোয়াড় সফরে আসতে অপারগতা প্রকাশ করে। এমসিসি ও আর্মিতে অধিকাংশ খেলায় অংশগ্রহণকারী আর. টি. স্ট্যানিফোর্থ ইংরেজ দলকে নেতৃত্ব দেন। তাসত্ত্বেও, আশা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, এ দলটিই দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে পরাজিত করতে যথেষ্ট।[২৬] এ প্রত্যাশা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ড জয় পায়। তৃতীয় খেলাটি ড্র হয় ও সিরিজের শেষ দুই খেলায় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা জয়লাভ করে সিরিজে সমতা আনে।

দক্ষিণ আফ্রিকানদের উত্থানে কার্যকরী বোলারদের সহযোগিতাসহ ক্যাটারলের ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা অনেকাংশেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথম টেস্টে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে ৮৬ রান তুলে শীর্ষ রান সংগ্রাহক হন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের পতনের ফলে ইংল্যান্ড খুব সহজেই জয় তুলে নেয়।[২৭] দ্বিতীয় টেস্টে তিনি সফলতার পরিচয় দিতে পারেননি। কিন্তু, তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৬ রান তুলেন। এ পর্যায়ে পাঁচজন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ৬০ থেকে ৮০ রানের ইনিংস খেলে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।[২৮][২৯] চতুর্থ টেস্টে তিনি ৩৯ ও ২৩ রান তুলেন। তাসত্ত্বেও, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে প্রথম জয়ের সন্ধান পায়। চূড়ান্ত খেলায় প্রথম ইনিংসে তার সংগৃহীত ১১৯ রান দলের ভিত্তি এনে দেয়।[৩০][৩১] ৪২.১১ গড়ে সংগৃহীত রানের অধিকারী বব ক্যাটারল দক্ষিণ আফ্রিকা দলের শীর্ষস্থানীয় নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। তবে, দুই খেলায় অংশ নিয়ে শান্টার কোয়েন দুইবার অপরাজিত থেকে তার চেয়ে ভালো গড়ের অধিকারী হন।[২৬]

ইংল্যান্ড গমন, ১৯২৯[সম্পাদনা]

১৯২৮-২৯ মৌসুমে ইংল্যান্ড গমনের জন্য দলের সদস্যদের যাচাই-বাছাই করা হয়। কারি কাপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের পক্ষে তিন খেলায় অংশ নেন। তেমন সফলতা পাননি। তবে, টেস্টের অতীতের রেকর্ডের কারণ এ সফরে তাকে রাখা হয়। ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ডে গমনকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্যদের মধ্যে কেবলমাত্র বব ক্যাটারল, হার্বি টেলর ও অধিনায়ক নামি ডিন ১৯২৯ সালের সফরে ছিলেন।

খেলার ধরন[সম্পাদনা]

উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি মোটেই সুবিধের ছিলেন না। তাসত্ত্বেও, মুক্তভাবে দর্শনীয় ব্যাটিংশৈলী উপহার দিতেন। সুন্দর ড্রাইভ ও লেগের দিকে শক্তিশালী মারে দলের রান সংগ্রহে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। হার্বি টেলরের সাথে শুরুরদিকে অন্যতম খ্যাতনামা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারের মর্যাদা পান। খেলা চলাকালীন তিনি সর্বদাই খেলাকে উপভোগ করতেন। ক্রিকেটকে খেলা হিসেবে দেখতেন, ব্যবসা হিসেবে নয়।

ডানহাতি ব্যাটসম্যান বব ক্যাটারল সচরাচর মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করতেন। তবে, শুরুরদিকের কিছুটা সময় ব্যাটিং উদ্বোধনে নামতেন। এছাড়াও ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন মাঝে-মধ্যে উইকেটে টিকে থাকা জুটি ভাঙ্গতে। কিন্তু, শেষ টেস্ট সিরিজের পূর্ব-পর্যন্ত কোন উইকেটের সন্ধান পাননি।

৩ জানুয়ারি, ১৯৬১ তারিখে ৬১ বছর বয়সে গটেংয়ের কেম্পটন পার্ক এলাকায় বব ক্যাটারলের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Five Cricketers of the Year"। Wisden Cricketers' Almanack। Part I (1925 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 292। 
  2. "First-class batting and fielding in each season by Bob Catterall"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১২ 
  3. "Scorecard: Transvaal v MCC"। www.cricketarchive.com। ১৬ ডিসেম্বর ১৯২২। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১২ 
  4. "Bob Catterall"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১২ 
  5. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ২৩ ডিসেম্বর ১৯২২। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২ 
  6. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ১ জানুয়ারি ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১২ 
  7. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ১৮ জানুয়ারি ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১২ 
  8. "Scorecard: Transvaal v MCC"। www.cricketarchive.com। ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১২ 
  9. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১২ 
  10. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১২ 
  11. "M. C. C. Team in South Africa"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1924 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 616। 
  12. "Five Cricketers of the Year"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1925 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 3। 
  13. "Scorecard: England v South Africa"। www.cricketarchive.com। ১৪ জুন ১৯২৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  14. "Records: Test Lowest Team Totals"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  15. "South Africans in England"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1925 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 19। 
  16. "Scorecard: England v South Africa"। www.cricketarchive.com। ২৮ জুন ১৯২৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  17. "South Africans in England"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1925 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 24। 
  18. "South Africans in England"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1925 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 30। 
  19. "Scorecard: England v South Africa"। www.cricketarchive.com। ১২ জুলাই ১৯২৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  20. "Scorecard: England v South Africa"। www.cricketarchive.com। ২৬ জুলাই ১৯২৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  21. "Scorecard: England v South Africa"। www.cricketarchive.com। ১৬ আগস্ট ১৯২৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  22. "Test Batting and Fielding for South Africa"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  23. "Hon. L. H. Tennyson's Team in South Africa"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1926 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 627–649। 
  24. "Scorecard: South Africa v S. B. Joel's XI"। www.cricketarchive.com। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৪ 
  25. "Scorecard: Griqualand West v Natal"। www.cricketarchive.com। ১৯ মার্চ ১৯২৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৫ 
  26. "M. C. C. Team in South Africa"। Wisden Cricketers' Almanack। Part II (1929 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 638–663। 
  27. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ২৪ ডিসেম্বর ১৯২৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৫ 
  28. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ৩১ ডিসেম্বর ১৯২৭। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫ 
  29. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ২১ জানুয়ারি ১৯২৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫ 
  30. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ২৮ জানুয়ারি ১৯২৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫ 
  31. "Scorecard: South Africa v England"। www.cricketarchive.com। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]