খেলাঘর আসর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খেলাঘর
খেলাঘর আসর
নীতিবাক্যলাল সবুজের বাংলাদেশে, শিশুর জীবন উঠুক হেসে
গঠিত২ মে ১৯৫২; ৭১ বছর আগে (2 May 1952)[১]
প্রতিষ্ঠাতাকবি হাবীবুর রহমান
ধরনশিশু-কিশোর সংগঠন
অবস্থান
  • ১০/৩ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা
সভাপতি
মাহফুজা খানম
সাধারণ সম্পাদক
রেজাউল কবীর
মূল ব্যক্তিত্ব
বজলুর রহমান

খেলাঘর বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন।[২] দেশের বিখ্যাত সাংবাদিক, কবি এবং শিশুসাহিত্যিক হাবীবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৫২ সালের ২ মে ঢাকায় “খেলাঘর” প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েক বৎসরের মধ্যে সারা দেশব্যাপী সংগঠনের শাখা সৃষ্টি হয়। যার সমগ্র বাংলাদেশে ছয়শ’র অধিক শাখা আছে। এর প্রথম কমিটির সভাপতি ছিলেন সাংবাদিক সৈয়দ নূরউদ্দিন।[১]

পটভূমি[সম্পাদনা]

দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় শিশু-কিশোর লেখকরে জন্য “খেলাঘর” নামে একটি সাহিত্যপাতা বিভাগ ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানের শিশু-কিশোর-যুবক, তরুণ ও উদীয়মান লেখকরা এই বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। খেলাঘর পাতার পরিচালককে (সম্পাদক) বলা হতো খেলাঘরের ‘ভাইয়া’।[৩] তখন সংবাদের খেলাঘর পাতার পরিচালক ছিলেন কবি হাবীবুর রহমান। ‘সত্য, জ্ঞান, ঐক্য, কল্যাণ ও আনন্দ’- এই মূলমন্ত্র নিয়ে নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে দৈনিক সংবাদের শিশু-কিশোরদের বিভাগ খেলাঘরকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়।[৪] ঢাকার বিভিন্ন স্থানে শাখা খেলাঘর আসর গড়ে ওঠে। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডে (জেলখানা রোড) দীন মোহাম্মদ নবীর নেতৃত্বে ‘আমাদের খেলাঘর’ নামে প্রথম শাখা আসর গঠিত হয়। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুলাই পুরান ঢাকার ২৬৩ নম্বর বংশালে দৈনিক সংবাদের অফিসে প্রথম সভায় কেন্দ্রীয় খেলাঘর পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংবাদিক সৈয়দ নূরউদ্দিন সভাপতি ও লেখক আল-কামাল আবদুল ওহাব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সময় খেলাঘরের পরিচালক সাংগঠনিকভাবে 'ভাইয়া' নামে স্বীকৃতি পায় এবং খেলাঘরের প্রথম ভাইয়া হয়েছিলেন আল-কালাম আবদুল ওয়াহাব।[৪] ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে মুহম্মদ সফিউল্লাহ সভাপতি ও আল-কালাম আবদুল ওয়াহাব পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।[১] ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আনোয়ার জাহিদকে খেলাঘরের দ্বিতীয় ভাইয়া মনোনীত করা হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মনজুর আহমেদ-এর তত্ত্বাবধানে সংগঠনের চতুর্থ অধিবেশনে খেলাঘরের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের দ্বারা ভাইয়া নির্বাচিত হন গোলামুর রহমান

১৯৫২-৬৪ সময়কালে সাহিত্যচর্চা ছিল খেলাঘরের প্রধান কাজ। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বজলুর রহমান সভাপতি ও জিয়াউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বজলুর রহমান খেলাঘরের ভাইয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর খেলাঘর সমাজভিত্তিক শিশু সংগঠনের রূপ নেয়। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংগঠনের প্রথম প্রাদেশিক সম্মেলনে 'খেলাঘর'-এর ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর শিশু-কিশোরদের রচনা নিয়ে চালু করে 'সাহিত্য বাসর'।[৪] ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে খেলাঘর সাংগঠনিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। খেলাঘরের বেশির ভাগ সদস্যই প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে খেলাঘরের কয়েকজন সদস্য শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের ঝিলিমিলি খেলাঘর আসরের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোদনাইল উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শহীদুল্লাহ সাউদ কুমিল্লার বেতিয়ারা গ্রামে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।[৩]

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন বাংলাদেশে ‘এসো গড়ি খেলাঘর, এসো গড়ি বাংলাদেশ’ শ্লোগানে নতুনরুপে কার্যক্রম শুরু হয়। এই সময় বাংলাদেশ থেকে একটি কিশোর প্রতিনিধি দল হিসেবে খেলাঘর আসর সোভিয়েত ইউনিয়নে সফর করে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে খেলাঘরের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে শিশু অধিকার ও বিজ্ঞান আন্দোলনের সূচনা হয এবং ঐ বছর ১৬ই ডিসেম্বর সংগঠনটি 'আন্তর্জাতিক শিশু কল্যাণ সংস্থা’র সদস্য পদ লাভ করে। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় সম্মেলন পর সারাদেশে বিপুলসংখ্যক শাখা আসর ও বিভিন্ন জেলায় জেলাকমিটি গঠিত হতে থাকে। এরপর ১৯৮২, ১৯৮৬ ও ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে খেলাঘরের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে ফেব্রুয়ারি সভায় চলমান কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিলুপ্ত করে অধ্যাপিকা পান্না কায়সার-কে আহ্বায়ক করে একটি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ডা. মাখদুমা নর্গিস রত্না, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী ও ড. প্রদীপ রায়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের পর সংগঠনটির সভাপতি ড. আলী আসগর ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবদুল আজিজের নেতৃত্বে খেলাঘর বেশ গতিশীল হয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে খেলাঘরের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন ভাইয়া বজলুর রহমান। ২০০৯-এর সম্মেলনে সংগঠন, শিক্ষা, শিশুর আইনি অধিকার, শিশুর স্বাস্থ্য (শারীরিক ও মানসিক), বিজ্ঞান ও পরিবেশ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ যুগ-পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।[৪]

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ০৬ অক্টোবর বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে প্রফেসর মাহফুজা খানম সভাপতি ও রেজাউল কবীর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খেলাঘরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৫] জেলা কমিটিগুলি শাখা আসরের পরিচর্যা করে এবং কেন্দ্রীয় কমিটি সংগঠনের মূল দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে সারা দেশে খেলাঘরের প্রায় ছয় শতাধিক শাখা আসর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।[৩][৬]

রংমশাল খেলাঘর আসর, ব্যঞ্জনা খেলাঘর আসর, উত্তরণ খেলাঘর আসর, ফুলকি খেলাঘর আসর, কপোতমালা খেলাঘর আসর, চম্পাকুঁড়ি খেলাঘর আসর, নিলাদ্রী খেলাঘর আসর, সুরমালা খেলাঘর আসর, কুড়ুম খেলাঘর আসর, বৌলাই খেলাঘর আসর, মুক্তাঙ্গন খেলাঘর আসর, পূর্বাশা খেলাঘর আসর, সোপান খেলাঘর আসর, জলছবি খেলাঘর আসর, দেশপ্রিয় খেলাঘর আসর, প্রীতিলতা খেলাঘর আসর, দিশারী খেলাঘর আসর, সংকেত খেলাঘর আসর, দ্বীপশিখা খেলাঘর আসর, মেঘমল্লার খেলাঘর আসর, রঙ্গন খেলাঘর আসর, সুরাঙ্গন খেলাঘর আসর, বিহঙ্গ খেলাঘর আসর, সীমান্ত খেলাঘর আসর, কনকচাঁপা খেলাঘর আসর, কলতান খেলাঘর আসর, সুরমা খেলাঘর আসর, পাতাবাহার খেলাঘর আসর, জয়ন্তিকা খেলাঘর আসর, বাতিঘর খেলাঘর আসর, ঝিনুকমালা খেলাঘর আসর, সৈকত খেলাঘর আসর, ঝাউবিথি খেলাঘর আসর, বেলাভূমি খেলাঘর আসর প্রভৃতি।[৭][৮][৯][১০][১১][১২][১৩]

খেলাঘরের বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের ফল হিসেবে পাওয়া গেছে একঝাক প্রগতিশীল আদর্শ এবং পেশাগত দক্ষ মানুষ যারা স্বাধীনতার পর থেকে মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির জায়গায় অগ্রগণ্য মানুষ হিসেবে দায়িত্ব এখনো পালন করছেন। তাদের অনেকেই দেশের বিশিষ্টজন। ডা. লেলিন চৌধুরী, অধ্যাপক প্রণয় সাহা, সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক-রাজনীতিক সত্যেন সেন, রনেশ দাস গুপ্ত, কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার, শহীদ জহির রায়হান, শহীদ আলতাফ মাহমুদ সহ অসংখ্য গুণীজন এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নানাভাবে।[২]

শিশু-কিশোর আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য ‘খেলাঘর’-কে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পক্ষ থেকে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ প্রদান করা হয়।[১৪]

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে শিশু-কিশোরদের গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে খেলাঘর। সংগঠনটি শিশু-কিশোরদের সুস্থ দেহ ও মন গঠন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিভার বিকাশ এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির চর্চা এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষার প্রসারে আগ্রহী এবং প্রীতি, ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে। এই সংগঠনটি পৃথিবীর সকল শান্তি, স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী মানুষের সাথে একাত্মতার উপর ভিত্তি করে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে।[১][১৫][১৬]

কার্যক্রম[সম্পাদনা]

শিশু-কিশোরদের মনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন রকমের শিল্প-সাহিত্য-কলার মাধ্যমে খেলাঘর কাজ করে যাচ্ছে।[১৭] প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের শিশুদের নান্দনিক বোধের বিকাশে খেলাঘর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এছাড়া শিশুদের অধিকার আদায়েও সংগঠনটি সদাসক্রিয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০-২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে দুইদিন ব্যাপী সংগঠনের ৪০ বর্ষ পূর্তি উৎসবের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। এই উৎসবে কবি সুফিয়া কামালকে দেওয়া হয় শহিদ শহীদউল্লাহ কায়সার স্মৃতিপদক। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭-২৯ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসিতে খেলাঘরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, এতে উদ্বোধন করেছিলেন কবি শামসুর রাহমান। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে খেলাঘর আসর আয়োজন করে 'শান্তিময় বিশ্ব চাই' শীর্ষক মৈত্রী মেলা। মেলায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের শিশু-কিশোররা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে সারাদেশের খেলাঘরের শাখা ও জেলা পর্যায়ে এবং সবশেষে, ঢাকার নয়াপল্টনস্থ এফপিএবি  মিলনায়তনে জাতীয় পর্যায়ের শিশু পার্লামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যিক সাংবাদিক সত্যেন সেন জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী প্রতিযোগিতা, সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে শিশু খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধ এবং লালন ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করে খেলাঘর। ১৭ই ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও শিল্পী অজিত রায়কে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৭-৯ জানুয়ারি খেলাঘর শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব, সাহিত্য সংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, গুণীজন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, প্রধান অতিথি ছিলেন আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। এরপর ২৫-২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় শরীরচর্চা কেন্দ্রের মাঠে চারদিন ব্যাপী খেলাঘর জাতীয় শিশু-কিশোর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্পে ভারতের ৩টি সংগঠনের ২৯ জন প্রতিনিধি যোগ দেয়। ২ মে খেলাঘরে ৫৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মিলন মেলা অনুষ্ঠানে শিল্পী কায়য়ুম চৌধুরী, ডা. সারোয়ার আলী, শিল্পী মিতা হক, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, চিত্তরঞ্জন শীল প্রমুখ ব্যক্তিবর্গকে বজলুর রহমান স্মৃতিপদক প্রদান করা হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে খেলাঘরের ৫৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুস্তফা নূর-উল-ইসলাম এবং সাংবাদিক এ বি এম মুসা, এডভোকেট সুলতানা কামাল ও খেলাঘর সংগঠক তবিবুর রহমানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।[৪] ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি খেলাঘরের জাতীয় সম্মেলনে শহীদুল্লাহ কায়সার স্মৃতি পদক দেওয়া হয় খ্যাতিমান শিল্পী মর্তুজা বশিরকে।[১৮] ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘প্যালেস্টাইনে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ কর-গাজায় নির্বিচারে শিশু হত্যা বন্ধের দাবিতে’ মানববন্ধন করে খেলঘর।[১৯] এ ছাড়া খেলাঘর প্রায় সাত দশক ধরে নিয়মিত সারা দেশে শিশু-কিশোর উপযোগী সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করে আসছে, অনেক স্থানে সংস্কৃতি শিক্ষার স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব প্রশিক্ষণ ও প্রতিষ্ঠানে সংগীত, যন্ত্রসংগীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন থেকে শুরু করে সংস্কৃতির সব শাখায় শিশু-কিশোরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। খেলাধুলা নিয়েও বিভিন্ন সময় আয়োজন করা হয় প্রশিক্ষণ শিবির। বিভিন্ন দেশের আমন্ত্রণে শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিদেশ ভ্রমণও করা হচ্ছে। প্রায় সারে পাঁচ দশক ধরে খেলাঘর শিশু-কিশোর সাহিত্য সভা 'সাহিত্য বাসর' আয়োজন করে, প্রতি ১৫ দিন পর আয়োজন করা হয় সাহিত্য বাসর। সাহিত্য সভার পাশাপাশি ‘পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার গড়ে তোল’ স্লোগানে খেলাঘরই প্রথম শুরু করে পাঠাগার আন্দোলন।[৩][৬][২০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মাহফুজা খানম (২০১২)। "খেলাঘর"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. নিজস্ব প্রতিবেদক (২০২১-০৫-০২)। "খেলাঘরের আজ ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী"রাইজিংবিডি.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৭ 
  3. "খেলাঘর ও মুক্তিযুদ্ধ"দৈনিক দেশ রূপান্তর। ২০২০-০১-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  4. "খেলাঘর"অনুশীলন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৭ 
  5. "মাহফুজা চেয়ারপার্সন রেজাউল সা. সম্পাদক - একতা"সাপ্তাহিক একতা। ২০২৩-১০-০৮। পৃষ্ঠা ১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  6. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৫-১২-২৪)। "খেলাঘরের জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  7. "খেলাধুলা ও বিনোদন ‌| কক্সবাজার শহরের শিশু কিশোর সংগঠন"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  8. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৫-০৪-০২)। "কপোতমালা খেলাঘর আসরের সম্মেলন"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  9. "সুরমা খেলাঘর আসর সিলেটের সম্মেলন"মানবজমিন। ২০২৩-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  10. "চম্পাকুঁড়ি খেলাঘর আসর এর ৩৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী"পাহাড়বার্তা। ২০২২-১০-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  11. "সাগর সৈকত খেলাঘর আসর এর পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত"সময় ট্রিবিউন। ২০২৩-১২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  12. প্রতিনিধি, শেরপুর (২০২২-১২-৩০)। "শেরপুরে পাতাবাহার খেলাঘরের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  13. "বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো ফুলকি-খেলাঘর ডিজিটাল শিশুশিক্ষা মেলা"সমকাল। ২০২০-০১-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  14. "খেলাঘর 'শিশু উৎসব' : অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়ার প্রত্যয়"ভোরের কাগজ। ২০২৪-০৩-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  15. "শিশুমনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগিয়ে তুলতে কাজ করছে খেলাঘর আসর"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২০২১-০৫-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  16. মাহমুদ, রাসেল (২০১৭-০৩-২৮)। "শুরু হচ্ছে শিশু-কিশোরদের বড় উৎসব"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  17. "শিশুদের মনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগিয়ে তোলার কাজ করছে খেলাঘর"ইত্তেফাক। ২০২১-০৫-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৭ 
  18. "শিশু-কিশোর সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা দরকার"বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৫-০১-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  19. "গাজায় শিশু হত্যা বন্ধে বিশ্বনেতাদের ভূমিকা চায় খেলাঘর"দৈনিক যুগান্তর। ২০২৩-১১-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  20. "খেলাঘর শিশু সংগঠন। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিশু চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলা শিল্পকলা একাডেমী বরিশাল"শিক্ষক বাতায়ন। ২০২৩-০৪-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮