উসামা ইবনে যায়িদের অভিযান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উসামা বিন যায়িদের অভিযান
মূল যুদ্ধ: আরব-বাইজেন্টাইন যুদ্ধ
তারিখজুন ৬৩২
অবস্থান
বলকা, বর্তমান সময়ে জর্ডান
ফলাফল
  • অভিযান সফল
বিবাদমান পক্ষ
খিলাফতে রাশিদা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
হিরাক্লিয়াস
শক্তি
প্রায় ৩,০০০ যোদ্ধা অজ্ঞাত
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজ্ঞাত অজ্ঞাত

উসামা বিন যায়িদের অভিযানটি ছিল উসামা ইবনে যায়িদের নেতৃত্বে প্রাথমিক মুসলিম খিলাফতের একটি সামরিক অভিযান যা ৬৩২ সালের জুন মাসে সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে মুসলিম বাহিনী বাইজেন্টাইন সিরিয়া আক্রমণ করেছিল।[১][২] অভিযানটি মুতার যুদ্ধের তিন বছর পর হয়েছিল।

বিদায় হজ্জের পরে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ উসামা ইবনে যায়িদকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বলকা অঞ্চলে আক্রমণ করার জন্য একটি অভিযাত্রী বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করেছিলেন। মুতার যুদ্ধের মুসলিম শহীদদের প্রতিশোধ নিতে মুহাম্মাদ উসামাকে সিরিয়ায় পাঠান, যেখানে উসামার পিতা ও মুহাম্মাদের দত্তক পুত্র যায়িদ ইবনে হারেসা নিহত হয়েছিলেন।[৩]

উসামার অভিযান সফল হয়েছিল এবং তার সেনাবাহিনীই ছিল প্রথম মুসলিম বাহিনী যারা সফলভাবে বাইজেন্টাইন অঞ্চলে আক্রমণ ও অভিযান চালায়, এইভাবে পরবর্তী মুসলিমদের পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় বিজয় এবং মিশরের মুসলিম বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে, উভয়টিই উসামার জীবদ্দশায় হয়েছিল।

পটভূমি[সম্পাদনা]

মুতার যুদ্ধ ৬২৯ সালের সেপ্টেম্বরে মুতা গ্রামের কাছে, জর্ডান নদীর পূর্বে এবং কারাকের কাছে, মুহাম্মাদের বাহিনী এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বাহিনী এবং তাদের আরব খ্রিস্টান গাসানিদের বাহিনীগুলির মধ্যে লড়াই হয়েছিল। ইসলামি ঐতিহাসিক সূত্রে, যুদ্ধটিকে সাধারণত মুসলিমদের গাসানীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। কারণ, একজন গাসানীয় শাসক মুহাম্মাদের দূতকে হত্যা করেছিলেন যিনি বুসরার পথে ছিলেন।[৪] যুদ্ধের সময় মুসলিম বাহিনী পিছু হটে।[৫] তিনজন মুসলিম নেতা (উসামার পিতা যায়িদ ইবনে হারেসাসহ) শহিদ হওয়ার পর খালিদ বিন ওয়ালিদকে নেতৃত্ব দেওয়া হয় এবং তিনি বাকি বাহিনীকে বাঁচাতে সফল হন।[৫] বেঁচে থাকা মুসলিম বাহিনী মদিনায় পশ্চাদপসরণ করে।

৬৩২ সালে বিদায়ী হজ্জের পর মুহাম্মাদ উসামা ইবনে যায়িদকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বলকা অঞ্চলে আক্রমণ করার জন্য একটি অভিযাত্রী বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করেছিলেন। এই অভিযানের উল্লিখিত লক্ষ্য ছিল মুতার যুদ্ধে মুসলমানদের ক্ষতির প্রতিশোধ নেওয়া, যেখানে উসামার পিতা এবং মুহাম্মাদের দত্তক পুত্র যায়িদ ইবনে হারেসা নিহত হয়েছিলেন।[৬][৭] উসামা আনুমানিক ৩০০০ লোকের একটি বাহিনী সংগ্রহ করেছিলেন, যার মধ্যে ১০০০জন অশ্বারোহী সৈন্য ছিল এবং আবু বকর অভিযানে উসামার সাথে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা করেছিলেন। উসামা তার আগে গুপ্তচরও পাঠিয়েছিলেন, যেখান থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন যে শত্রুরা তার সেনাবাহিনীর আসন্ন পন্থা সম্পর্কে এখনও অবগত নয়।[৮]

যাইহোক, ৮ জুন মুহাম্মাদের মৃত্যুর কারণে অভিযান বিলম্বিত হয় এবং আবু বকর মদিনায় খলিফা নির্বাচিত হন।[৯] মুহাম্মাদের মৃত্যুর সাথে সাথে, কিছু মুসলিম নেতা এবং লোক উসামার নেতৃত্বে যাওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন কারণ তারা মনে করেছিল যে, বিশ বছর বয়সী উসামা সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য খুব কম বয়সী।[১০] মুহাম্মাদ এসব উদ্বেগকে মূল্যায়ন করেননি।[১১][১২] এই ঘটনাটি সহীহ বুখারীতেও উল্লেখ আছে।[টীকা ১] মুহাম্মাদের কিছু সাথী মুহাম্মাদের স্থলাভিষিক্ত ইসলামি সম্প্রদায়ের নবনির্বাচিত নেতা আবু বকরকে উসামার কম বয়সের কারণে উসামার পরিবর্তে উমর ইবনুল খাত্তাবকে সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসাবে নির্বাচিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

আরব জুড়ে ক্রমবর্ধমান বিদ্রোহ ও ধর্মত্যাগের কারণে আবু বকর এই অভিযানের জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন, কিন্তু তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।[১৩] মুহাম্মাদের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন এবং উসামার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করেন।[১৪]

অভিযান[সম্পাদনা]

তাবারির মতে, সিরিয়ার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর আগে আবু বকর উসামাকে যুদ্ধের দশটি নিয়ম অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[১৫] আবু বকরের দশটি নিয়মের বর্ণনা মুওয়াত্তার সুন্নি হাদিস সংগ্রহেও উল্লেখ করা হয়েছে।[১৬][১৭][টীকা ২]

তাবারি বলেছেন যে অভিযানটি সফল হয়েছিল এবং উসামা সিরিয়ায় পৌঁছেছিলেন এবং বাইজেন্টাইন অঞ্চলে সফলভাবে আক্রমণকারী প্রথম মুসলিম বাহিনী হয়ে ওঠেন, এইভাবে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য থেকে সিরিয়া এবং মিশরে পরবর্তী মুসলিম বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে।[টীকা ৩]

এই অভিযানটি ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে কারণ কীভাবে মাত্র আঠারো বছর বয়সী উসামাকে নেতৃস্থানীয় প্রবীণ এবং নবির উচ্চ পদস্থ সাহাবি যেমন উমর, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, সাঈদ ইবনে যায়িদ, আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ এবং কাতাদা ইবনুল নু’মান প্রভৃতির উপরে সামগ্রিক সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল।[টীকা ৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. The Prophet appointed Usama as the commander of the troops (to be sent to Syria). The Muslims spoke about Usama (unfavorably). The Prophet said, "I have been informed that you spoke about Usama. (Let it be known that) he is the most beloved of all people to me" সহীহ বুখারী, ৫:৫৯:৭৪৪ (ইংরেজি)
  2. Then (Abu Bakr) said, "Oh army, stop and I will order you [to do] ten [things]; learn them from me by heart. You shall not engage in treachery; you shall not act unfaithfully; you shall not engage in deception; you shall not indulge in mutilation; you shall kill neither a young child nor an old man nor a woman; you shall not fell palm trees or burn them, you shall not cut down [any] fruit-bearing tree; you shall not slaughter a sheep or a cow or a camel except for food. You will pass people who occupy themselves in monks' cells; leave them alone, and leave alone what they busy themselves with. You will come to a people who will bring you vessels in which are varieties of food; if you eat anything from [those dishes], mention the name of God over them. You will meet a people who have shaven the middle of their head and have left around it [a ring of hair] like turbans; tap them lightly with the sword. Go ahead, in God's name!"[১৫]
  3. Tabari:"advanced quickly to Dhu al-Marwah and the valley and ended up doing what the Prophet had ordered him to do, dispersing horsemen among the Quda'a tribes (who were Ghassanid vassals) and raiding Abil. He took captives and booty, and his completion of the mission was within forty days, excepting the time of his return."[১৫]
  4. Recorded by Ibn al-Jawzi his Talqīḥ fuhūm ahl al-athar fī ʻuyūn al-tārīkh wa-al-siyar and Nur ad-Din al-Halabi in his Al sirah al halabiyah Juz 2 : The biography of al-'amin al-ma'mun.[১৮][১৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Abu Khalil, Shawqi (১ মার্চ ২০০৪)। Atlas of the Prophet's biography: places, nations, landmarks। Dar-us-Salam। পৃষ্ঠা 249। আইএসবিএন 978-9960897714 
  2. Gil, A history of Palestine, 634-1099, p. 31.
  3. Razwy, Sayed Ali Asgher। A Restatement of the History of Islam & Muslims। পৃষ্ঠা 283। 
  4. El Hareir ও M'Baye 2011, পৃ. 142।
  5. Buhl 1993, পৃ. 756-757।
  6. Razwy, Sayed Ali Asgher। A Restatement of the History of Islam & Muslims। পৃষ্ঠা 283। 
  7. "online"। ৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. Gil, A history of Palestine, 634-1099, p. 32.
  9. Al-Farooq a book by Shubli No'mani
  10. "19 - The Life of Imam Ali: Prophet's (pbuh) Death - Dr. Sayed Ammar Nakshwani - Ramadhan 1435"YouTube। YouTube। 
  11. Gil, A history of Palestine, 634-1099, p. 31.
  12. Mubarakpuri, The Sealed Nectar (Free Version), p. 303
  13. "Abu Bakr | Biography & Facts"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৬He suppressed the tribal political and religious uprisings known as the riddah (“political rebellion,” sometimes translated as “apostasy”), thereby bringing central Arabia under Muslim control. 
  14. Gil, A history of Palestine, 634-1099, pp. 31-32.
  15. Tabari, Al (১৯৯৩), The conquest of Arabia, State University of New York Press, পৃষ্ঠা 16, আইএসবিএন 978-0791410714 
  16. Al-Muwatta; Book 21, Number 21.3.10.
  17. Aboul-Enein, H. Yousuf and Zuhur, Sherifa, Islamic Rulings on Warfare, p. 22, Strategic Studies Institute, US Army War College, Diane Publishing Co., Darby PA, আইএসবিএন ১-৪২৮৯-১০৩৯-৫
  18. b. ʿAlī b. Muḥammad Abu 'l-Faras̲h̲ b. al-Jawzī, ʿAbd al-Raḥmān (২০১৬)। تلقيح فهوم اهل الاثر في عيون التاريخ و السير (Talqīḥ fuhūm ahl al-athar fī ʻuyūn al-tārīkh wa-al-siyar) (Arabic ভাষায়)। دار الارقم بن ابي الارقم - بيروت / لبنان। পৃষ্ঠা 57। আইএসবিএন 9789953442112। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০২১ Nur ad-Din al-Halabi, Ali (৬৩২)। "سرية أسامة بن زيد بن حارثة رضي الله تعالى عنه إلى أبنى"। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইউটিউবে Sirah Nabawiyah #91- Nabi-Nabi Palsu Di Zaman Nabi ﷺ - Ust. Dr. Firanda Andirja M.A; 8 December 2021
  19. bin Burhan Al-Din Al-Halabi, Ali। "سرية أسامة بن زيد بن حارثة رضي الله تعالى عنه إلى أبنى"Wikisource (Arabic ভাষায়)। Wikisource। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০২১ al-Jumayli, Said (১৯৯৫)। كتاب غزوات النبي صلى الله عليه وآله وسلم। Beirut: Dar al-Hilal। পৃষ্ঠা 142। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০২১ 

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]