আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী
আলোচ্য বিষয়ের সাথে এ নিবন্ধের মূল অবদানকারীর গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। (মে ২০২৩) |
মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী[১][২][৩] (১৯১৪-১৯৬৫) ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অভিজ্ঞ ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পরবর্তীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ বাঙালি সেনাকর্মকর্তা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ড সুপ্রীম কমান্ডার্স হেডকোয়ার্টার্স দিল্লীতে কর্মরত থাকাকালীন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখেন এবং ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সদ্যজাত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রশিক্ষণ সংস্থা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক/কমান্ড্যান্ট[৪] ছিলেন তিনি সর্বপ্রথম ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কে গঠন ও কমান্ড করেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নে উত্থাপন করেন। তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তিনি "সিনিয়র টাইগার" নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।
সিনিয়র টাইগার মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম নাম | আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী |
ডাকনাম | এ ডব্লিউ চৌধুরী |
জন্ম | দরিয়াপুর,হবিগঞ্জ ,সিলেট | ১ ফেব্রুয়ারি ১৯১৪
মৃত্যু | ১৪ জানুয়ারি ১৯৬৫ ঢাকা | (বয়স ৫০)
সমাধি | মরিয়ম সালেহা মসজিদ কবরস্থান,বাবুপুরা,ঢাকা। |
আনুগত্য | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৪৭ সাল পরবর্তী) |
সেবা/ | পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী |
কার্যকাল |
|
পদমর্যাদা |
|
সার্ভিস নম্বর | আইইসি-৫২৭ |
ইউনিট | ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার |
নেতৃত্বসমূহ | |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | |
পুরস্কার |
প্রাথমিক পরিচয়
[সম্পাদনা]মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী ১৯১৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার দরিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা খান সাহেব আবদুর রব চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী সর্বমহলে মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন।[৫]
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী ১৯৩১ সালে ঢাকার নবকুমার ইনস্টিিউট থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৩৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৫ সালে অর্থনীতি বিষয়ে বি.এ অনার্স এবং ১৯৩৭ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।[৫]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী পড়াশোনা শেষ করে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের দেরাদুন মিলিটারি একাডেমি থেকে অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৪১ সালের ১৫ মে ভারতবর্ষের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রেজিমেন্ট চতুর্থ মাদ্রাজ রেজিমেন্টে জরুরি যুদ্ধ কমিশনড অফিসার হিসেবে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জেনারেল স্যার এডওয়ার্ড কুইনিনের অধীনে ব্রিটিশ দশম আর্মি গঠিত হলে তিনি সহ তাঁর রেজিমেন্ট ইরাকের বসরায় অবস্থিত ব্রিটিশ দশম আর্মির সাব এরিয়া হেডকোয়ার্টারে নিযুক্ত হন। ব্রিটিশ দশম আর্মি বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি যুদ্ধরত বার্মা কেম্পেইনের সেলোন (শ্রীলঙ্কা) সাব এরিয়া হেড কোয়ার্টারে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১ম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কর্মকর্তা হিসেবে মুলতান ঝোহাব ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ কিয়ানার অধীনে ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশবিভাগের সময়
তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীপ্রতিষ্ঠার র জন্য কাজ করেন দিল্লিতে অবস্থিত সুপ্রিম আর্মি হেডকোয়ার্টারের পাকিস্তাসেলন ইনফেন্ট্রি ডিরেক্টরীয়েটে যোদেনগ এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে উদ্যোগ গ্রহন করেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর রাওয়ালপিণ্ডীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ডকট্রেনে তাঁকে বদলি করা হয়। ১৯৪৭-১৯৪৮ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ কালীন সময়ে মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনের দায়িত্ব লাভ করেনন । তিনি অনেক প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা সত্বেও সিনিয়র টাইগার্সের ভিত্তি রচনা করেন।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠায় অবদান
[সম্পাদনা]১৯৪৭ সালের নভেম্বরে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনের অনুমোদন লাভ করে পাকিস্তান ও ভারত উভয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ড সুপ্রীম কমান্ডারস হেডকোয়ার্টার পাকিস্তান সেল দিল্লীতে ইনফেন্ট্রী ডিরেকটরিয়েটে চাকুরিকালিন মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধু্রী সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল ক্লাদে আচিনলেক কে পূর্ব বাংলায় একটি বাঙালী প্রধান রেজিমেন্ট গঠনের সামরিক গুরুত্বের বিষয়টি উত্থাপন করলে তিনি সেনাপ্রধানকে তা বোঝাতে সক্ষম হন এবং সেনাপ্রধান ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনের অনুমোদন প্রদান করেন। পরবরতীতে মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধু্রী প্রথম বাঙালী অধিনায়ক হিসেবে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠণ ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব লাভ করেন এবং প্রথম প্রশিক্ষন রেজিমেন্টকে কমান্ড করেন ও ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে উত্থাপন করেন।
পুরস্কার
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় বিস্বযুদ্ধে বীরত্বের জন্যে বার্মা স্টার ও ওয়ার মেডেল লাভ করেন ।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]এই নির্ভীক বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ১৯৬৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডস্থ নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৫১ বছর। তাঁকে ঢাকার নীলক্ষেত এলাকার বাবুপুরা শাহ সাহেব বাড়িতে "মরিয়ম ছালেহা মসজিদ" প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ আব্দুল হক, কর্ণেল মোহাম্মদ (আগস্ট ২০২২)। সামরিক ইতিহাসের ছয় তারকা। ১০৯,ঋষিকেশ রোড ,ঢাকা ১১০০: খোশরোজ কিতাব মহল লিমিটেড। পৃষ্ঠা ২৫৮–২৮০। আইএসবিএন 984-438-250-5।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "লড়াকু বাঙালি মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৭।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ভাষা আন্দোলন"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৭।
- ↑ "Commandant | military rank | Britannica"। www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৯।
- ↑ ক খ গ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "লড়াকু বাঙালি মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৬।