বিষয়বস্তুতে চলুন

অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
জন্ম (1933-10-06) ৬ অক্টোবর ১৯৩৩ (বয়স ৯০)
কলকাতা
মৃত্যু১৭ নভেম্বর ২০২০(2020-11-17) (বয়স ৮৭)
হির্শবার্গ জার্মানি
পেশাঅধ্যাপক
ভাষাবাংলা ভাষা
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাশান্তিনিকেতন, সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ, কলকাতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয়মূলত বাংলা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগ্যেটে পুরস্কার
আনন্দ পুরস্কার
রবীন্দ্র পুরস্কার
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীট্রুডবার্টা (মৃ.২০০৫)


বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের প্রতিনিধিস্থানীয় বাঙালি কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।১

অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও তাঁর কবিপ্রতিভা

কবিপরিচয়:

পঞ্চাশের কবিকুলের অন্যতম  কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ।কবি শঙ্খ ঘোষের কথায়,"বাংলা কবিতার যুবরাজ তখন অলোক।'সেই থেকে এই একুশ শতকেও তিনি ছিলেন  সমান প্রাণবন্ত। তাঁর লেখনী এই সেইদিনও ছিল সৃষ্টির আবেগে অপরিক্লান্ত।২০২০সালের ১৭ই নভেম্বর সেই লেখনী চিরতরে থামল।বাংলা সাহিত্য জগৎ এক ইন্দ্রপতনের সাক্ষী থাকল।


  অলোকরঞ্জনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর, শুক্রবার বেলা এগারোটায়, কলকাতায়। ডাকনাম বাবলু ।দাশগুপ্ত পরিবারের তিনিই ছিলেন প্রথম সন্তান। সংগতকারণেই তাঁর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারে আনন্দের ঢেউ খেলে গিয়েছিল। তাঁকে নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারটির সকলেই হয়ে উঠেছিল আনন্দে উচ্ছ্বসিত ।তাঁর পিতা বিভূতিরঞ্জন দাশগুপ্ত  । মায়ের নাম নীহারিকা দাশগুপ্ত। পেশায়  শিক্ষিকা। কলকাতার বেলতলার একটি স্কুলে তিনি গান শেখাতেন। এরপূর্বে অবশ্য আরও দুটি স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন।  তখন ৫৫ নং বকুলবাগানের একটি বাসা বাড়িই ছিল তাঁদের  ঠিকানা। অলোকরঞ্চনের প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় দেওঘরের কাছে রিখিয়াতে। তাঁর দাদু  সেখানে বাড়ি করে ছিলেন। এ বিষয়ে নীহারিকা দাশগুপ্ত স্বয়ং জানিয়েছেন:

"তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি দেওঘর থেকে পাঁচ মাইল দূরে রিখিয়ার একটি গ্রামে বাড়ি করে থাকতেন। দুটি বাড়ি। ইচ্ছেমতো বদলে বদলে থাকা যায়। শ্বশুরমশাই দিনাজপুর হাইস্কুলে হেডমাস্টার ছিলেন। অবসর নেবার পর সাঁওতাল পরগ নির্জন স্থানে খুব খুশি হয়ে থাকতেন। ওখানেই নতুন করে ভিটে পতন হল"।

   রিখিয়াতেই কবির বাল্যশিক্ষার হাতেখড়ি । স্বয়ং মায়ের কথায়, " অলোকের বই কেনা হল। বর্ণপরিচয় ,ফার্স্ট বুক অফ রিডিং আর অঙ্কের জন্য ধারাপাত।"এরপর সেন্ট জেভিয়ার্স  কলেজে।সেখান থেকে চলে আসেন প্রেসিডেন্সি কলেজে।এই কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও  সাহিত্যে  স্নাতক হন । এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাশ  করেন।


কবিপ্রতিভা:

    ক)বিষয় ও জীবন দর্শন:

অলোকরঞ্জনের কবিপ্রতিভার প্রধান দিক ঈশ্বরচেতনা। এই ঈশ্বরচেতনা তাঁর জীবনের সঙ্গে ছিল  স্বতঃস্ফূর্ততায় লগ্ন। এবিষয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন ।সেগুলো এরকম:

১। "আমি তো ভারতীয়। এই কবীর, রজক, ক্ষিতিমোহন সেন—এসবের মধ্যে বড়ো হতে হতে ঈশ্বর আমার একটি স্বতঃসিদ্ধ ক্যাটিগোরি। আমার ঈশ্বর বিশ্বাস একটা কনস্ট্রাক্ট, তারপর আমার নিজস্ব কনস্ট্রাক্ট আমি করতে চেয়েছি। অর্থাৎ কতটুকু কোন্ ঈশ্বর, কীভাবে ঈশ্বর এই প্রশ্ন আমার মনে ধ্রুবপদের মতো হয়ে রয়েছে।"

২। "ঈশ্বর আমাদের একটা মনোগত নির্মিতি, ওরকম একটা ধারণা ছাড়া আমাদের চলে না। আমি এখন আর বলতে পারব না, "তাই তোমার আনন্দ আমার পবন'। তিনি আমাদের অনেকরকমভাবে খেলান, মানে নাকানিচোবানি খাওয়ান, যদি তিনি নার থাকেন তাকে জিইয়ে রাখার একটা দায়িত্ব আমাদের মধ্যে কাজ করে। এই যে অধরা মাত্রা ,একে ছাড়াও তো কবিতার চলে না।"

  প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'যৌবনবাউল' (১৯৫৯) থেকেই এই ঈশ্বরচেতনা নানা বাঁকে প্রসারিত। 'যৌবনবাউল' কাব্যগ্রন্থে কবির ঈশ্বরচেতনা বাংলার গ্রামদেশ ও প্রান্তবাসী মানুষকে আশ্রয় করে ঘন হয়ে উঠেছে। চল্লিশের দশক বা তার কিছু পূর্ব থেকে বাংলা কবিতা পুরোমাত্রায় নাগরিকতার সাধনায় নিবিষ্ট হয়। পঞ্চাশের দশকে এসে প্রবণতা তুঙ্গস্পর্শী। এই সময়ের লগ্নতাকে অস্বীকার করেও অলোকরঞ্জন একদিকে নিরীখরতাকে নস্যাৎ করেছেন, অন্যদিকে তরুছায়ামাখা গ্রামপ্রদেশকে ধরেছেন আঁকড়ে। প্রতিজ্ঞার সরব ঘোষণায় নন্দিত করেছেন কবিতাবিশ্ব :

"একটি মাত্র রাখাল যাক      এ মাঠ একলা পড়ে থাক

                নীরবে, আমি এ মাঠ ছাড়ব না।"

 এই সংকল্পের নিবিড়তা থেকেই তাঁর কবিতার প্রাণবিন্দু হয়ে যায় ঈশ্বর। তাঁর বোধিতে প্রতিভাত হয় অন্তিমশয্যার আবরণীতে থাকা দেহ আসল মৃতদেহ নয়, মৃতদেহ আসলে শববাহকের দল যারা অনীশ্বরতায় জ্যান্ত :

"স্পষ্ট আমি বলতে পারি ওই

অন্তিম শয্যার শাদা আবরণী তুলে ফেলে কেউ

ভিতরে তাকাও যদি, দেখবে কোনো মৃতদেহ নেই।

তবে যে একদল কান্না কীৰ্তনীয়া জলজ্যান্ত লোক

ঈশ্বরের ডাকনাম কাদায় লুটিয়ে চলে যায়।

আমি বলে দিতে পারি ওরাই ছয়টি মৃতদেহ।"

       (একটি শবযাত্রা/যৌবনবাউল)

'যৌবনবাউল' কাব্যগ্রন্থে কবির ঈশ্বরপ্রিয়তার সঙ্গে অনায়াস সরলতায় জড়িয়ে আছে গ্রামের মানুষ ও প্রকৃতি। উদাহরণ 'দেবযান' কবিতা। এই কবিতার মহিম গ্রামের  মেলায় যাবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল। তারিণীকাকুর প্রতি রাগ তাকে ঠেলে প্রায় আত্মকেন্দ্রিকতার ক্ষুদ্রায়তনে। তারপর ঘুম নামে। ঘুমের মধ্যে সে পৌঁছে যায় কঙ্কালিতলার চড়কের মেলায়;

"মাকে রেখে একা ও যে কঙ্কালিতলায় অন্ধকার

পার হল হাতে নিয়ে চাঁদের হলুদ হ্যারিকেন;

আশ্চর্য দোকানী এক মাঝরাতে দোকান পসার

খুলে ওর দুই হাতে সব খেলনা সাজিয়েদিলেন।"

   কবির এই ঈশ্বরচেতনা 'নিষিদ্ধ কোজাগরী', 'রক্তাক্ত ঝরোখা' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থেও উৎকীর্ণ হয়েছে। তবে তার প্রকৃতির বদল ঘটেছে। এখানে ঈশ্বরকে বস্তুবিশ্বমুখী করার  অভীপ্সায় কবি প্রকৃতি, প্রেম ও ঈশ্বরের সমীকরণে প্রয়াসী। যেমন "নিষিদ্ধ কোজাগরী' কাব্যগ্রন্থের 'রক্তজবা আচমকা আমাকে'কবিতা ::

"এই শোনো, হাত ছাড়ো, মা আছেন পাশের ঘরেই, পূজার ঘরেই

পূজা করতে ডাকছেন আমাকে।

ঈশ্বর উপর থেকে দেখতে পাচ্ছেন,

হাত ছাড়ো;

সমস্ত নিসর্গ আজ মুখরিত সাজ্জাদ হোসেন শানাই বাজিয়ে সব বলে দিচ্ছেন, বিধাতাকে

শোনো, হাত ছাড়ো, প্রেম কোরো না আমাকে; দূরে বোসো বুদ্ধদেব বসু

শুনলে যে বলবেন প্রকৃতির দুলাল তোমাকে-

ঢি ঢি পড়ে যাবে, ত্রিজগৎ বলবে "বিগত পরশু।।।"

প্রেম ও ঈশ্বরকে অন্যত্রও একসূত্রে বাঁধা হয়েছে। যেমন :

"ঈশ্বরের অন্তর্বাস খুলে

তারা দেখব তারা দেখব আমি

মানবনা আর প্রথার সপ্তশতী

সুবচনীর ব্রত অনেক হল

কোপার্নিকাস যা-ই বলুন না কেন

ঈশ্বরের অন্তর্বাস ছিঁড়ে

তিনশো রকম সূর্য দেখব আমি

বলতে গিয়ে দেখি হঠাৎ তুমি

আমার নগ্ন, আমার পুণ্যলতা

হেঁটে যাচ্ছো ভিড়ের মধ্য দিয়ে

(দ্ব্যর্থ আলো/গিলোটিনে আলপনা)

 তবে অলোকরঞ্জনের কবিতার বড় বাঁক বদল হয়েছে গালফ যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া। বদল শুধু আঙ্গিকে নয়। ভাবনায়। ঈশ্বরচেতনায় তো অবশ্যই। এপ্রসঙ্গে কবি একটি সাক্ষাৎকারে অকপটে নিজের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গিকে চিহ্নিত করেছেন :

"গালফ যুদ্ধের পর থেকে আমার বিশেষভাবে মনে হয়েছে ঈশ্বর যদি থেকে থাকেনও, তাঁর যে অসহায়তা, তাঁর কাছে আমি চাইতে যাবো কেন, তাঁর কাছে আমি কিছুই চাইতে যাবো না। আমার পারমিতা হবে যে আমি তাঁর সহযোদ্ধা একজন, হয়তো তাঁর সতীর্থ একজন। যদিও আমার যে পরিমাত্রা, আমার যে পরিবিশ্ব, তার পরিসর হয়তো খুবই কম, তবু বলছি আমার নতুন যে বইটা বেরোচ্ছে তার উপাত্ত্য কবিতাটি আমি পড়ছি; এতে তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে”।

কবিতাটি এরকম:

"একটু একটু অনীশ্বর হয়েছি। এখন

প্রেত পিশাচের দল ডম্বরু বাজায় শর্বরীতে,

তথাপি যেহেতু কবে 'যৌবনবাউল' লিখেছিলাম

ঈশ্বরের কথা বলি, ভাবমূর্তিটুকু রেখে দিতে।"

  (ভাবমূর্তি / সমস্ত হৃদয় শুধু ভূকম্পপ্রবণ হয়ে

আছে)

গালফ যুদ্ধ থেকে কসোভা সর্বত্রই কবি দেখেছেন সাম্রাজ্যবাদের নিষ্ঠুর বোমা বর্ষণ। মানুষের দেহ ছিন্নভিন্ন, দেশে দেশে নামে অদ্ভুত অন্ধকার। তবু অনির্বচনীয় ঈশ্বর অপরিদৃশ্যমান। ফলে ঈশ্বরবাদী কবির হৃদয়ে লাগে বেদনার তাপ। হৃদয় ছুঁয়ে যায় তাঁর বেদনাঘন স্বগত সংলাপ

"সিংহকেশরের ঐ চামর গচ্ছিত আছে মেঘে

কোনো পুরোহিত নেই যে ঐ চামর হাতে নিতে

যোগ্য আজ, মানবিক একজন দেবতাও নেই -

সিতাম্বরে আজ শুধু একটি চামর আছে জেগে।'

(সিতাম্বরে আজ /তুষার জুড়ে ত্রিশূল চিহ্ন)

গালফ যুদ্ধের ধ্বংসলীলা দেখেও ঈশ্বর নীরব। মানবতাবাদী কবি তাই মুখর হয়ে ওঠেন। প্রশ্নাতুর মানসিকতায় বেঁধেন তাঁকে:

"গালফ  যুদ্ধের শেষে সদ্য শহিদের যত্নে মেতেছে মিশর

প্রত্নতাত্ত্বিকদের সহায়তা নিয়ে

একটি নওল কিশোরের

তরুণ মামির সমীক্ষণ

করতে গিয়ে দেখি সে হঠাৎ

বেঁচে উঠল; যেন-বা ঈশ্বর

অন্য ঈশ্বর ঠিক নন।"

     (অথচ ঈশ্বর/ ওষ্ঠে ভাসে প্রহত চুম্বন)

    আন্তর্জাতিকতা অলোকরঞ্জনের কবিতার মূল সুর ।'যৌবনবাউল' কবিতা সংকলনের মায়ের জন্মদিনে' কবিতায় এই মানসিকতার আশ্লেষ প্রথম সংকেতিত:

"আমারি জীবনমন্ত্রে জীবন্মৃত এই যে প্রান্তর

সুজলা সুফলা

শস্য শ্যামলার ফুল্ল সুষমায়

কাল যদি ভরে ওঠে, তবে তার নিহিত ভাস্বর

যে-অমৃত সে তো তুমি

আজো যার অপার ক্ষমায়

পৃথিবীকে বুকে টানি।"

এই কাব্যগ্রন্থের ‘এক জানলা রাত্রি আমার' কবিতাতেও এই বিশ্ববোধ  উদ্ভাসিত:

"এক জানালা রাত্রি আমার কাটল কেমন করে

বৃষ্টি থামল, সাঁকোর তলায় এই পৃথিবী ক্রোড়ে

মা জননী বসে আছেন।"

এই বিশ্ববোধই এরপর পাপড়ি মেলেছে কাব্যের পর কাব্যে, এখনও সেই প্রসারণ

অব্যাহত। অলোকরঞ্জন আসলে মানসিকতায় আন্তর্জাতিক। এই বিশ্ববোধ কোনো তত্ত্বজাত নয়। এই বোধ নিসর্গের মতোই স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাভাবিক।

 স্বভাবে আন্তর্জাতিক হওয়ায় বর্হিবিশ্বের যেকোনও ঘটনাই কবিকে স্পর্শ করেছে। উপসাগরীয় যুদ্ধ, কসোভার হত্যাকান্ড, যুগোশ্লাভিয়ায় ন্যাটোর আক্রমণ সবই তাঁর সংবেদনশীল মনকে আন্দোলিত করেছে। এই আন্দোলনের ছায়াপাত তাঁর কবিতাবিশ্বকে নতুন পরিসরে মুক্তি দিয়েছে। এসবের পশ্চাতে একপ্রকার প্রতিবাদী মানসিকতা ক্রিয়াশীল হলে মনে হয়।এই প্রতিবাদই কাব্যভাত হয়েছে 'ধুলোমাখা ইথারের জামা' কবিতা সংকলনের 'বুদ্ধপূর্ণিমার রাত্রে' (দ্বিতীয় পর্যায়) কবিতায়। যুদ্ধ আর সন্ত্রাসগ্রস্ত বৈশ্বিক আবহাওয়া তাঁকে বিষণ্ন করেছে। জাতীয়তাবাদের চরমস্ফুরণ পারমাণবিক বোমার বিস্ফার যেমন তাঁর সংবেদনশীল হৃদয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়, তেমনি এমন নারকীয়তার স্নিগ্ধ নামকরণ 'বুদ্ধ হেসেছিল' তাঁর প্রতিবাদকে ভাষা দেয়। সংস্কৃত আর্তনাদ হয়ে ওঠে তাঁর প্রতিবাদের ভাষা :

"আমারই বিরোধাভাস বেড়ে যায়। স্বজাতীয়তার

নাম নিয়ে পারমাণবিক বিস্ফোরণ

সেরে এসে ওরা যেই বলে উঠল, 'সিদ্ধার্থের মুখে

সুস্মিতি ফুটে উঠেছে তুমি তো করোনি তিরস্কার" ।

কবিতার অন্তিমে কবিকণ্ঠ গাঢ়স্পর্শী :

"আমাকে নিয়ে কবি সম্মেলনে কোনোদিন

ওই কবিতাটা আর পড়াবে না কথা দাও। রাষ্ট্রীয়

সুকবি জনতার

শেফালি বেছানো মঞ্চে পোখরানের নামটা পোখরাজ

রাখবার প্রস্তাব দিলে আমি পড়ব লেখাটির একটি লাইন;

সুগত, এ জন্মে আমি কেউ না তোমার।"

এই আন্তর্জাতিকতাবোধ এবং সময়চেতনা তাঁর গোধূলি পর্বের কবিতাগুলিতে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে:

১)শান্তি নেমে এসেছে ফের কসোভা-অঞ্চলে

সৈনিকেরা সোনালি ভবিষ্যতের কথা বলে

মফস্বলের পত্রিকায় বায়না নিয়ে এসে

ভাবছিলাম যুদ্ধ বুঝি হয়নি এই দেশে ...।

(উদ্বাস্তুর ফেরা /এখনো নামেনি, বন্ধু, নিউক্লিয়ার শীতের গোধুলি)

(২) বইমেলার উদ্বোধনে এলেন যখন জাক দেরিদা

ফরাসী দেশে সাম্য-মৈত্রী স্বাধীনতার জ্বলছে চিতা

       (আগুন আমার ভাই/মুণ্ডেশ্বরী ফেরিঘাট পার হতে গিয়ে)

(৩) আমরা যারা বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী নই

শোক মিছিলে এ ওকে বললাম:

'আমরা এখন জর্জ বুশ হলে

যুদ্ধ শুরু করার আগে ডেকে উঠতাম

ঈশ্বরের নাম।

     ( যুদ্ধ বিষয়ে কয়েকটি ভগ্নাংশ-৫/ আয়না যখন নি:শ্বাস নেয়)

     এইভাবে দেখি পঞ্চাশের দশকের প্রকৃতি লগ্ন,ঈশ্বর বিশ্বাসী অলোকরঞ্জন জীবন দর্শনের দিক থেকে গোধূলি লগ্নে  এসে পুরোপুরি  বদলে গেছেন ।কবিতার বিষয়েও এসেছে তাই অনেক পরিবর্তন ।একুশ শতকের অলোকরঞ্জন পরিবেশলগ্নতার কথা বলেন ।পুঁজিবাদী উন্নয়নের আগ্রাসী থাবায় বিপন্ন প্রকৃতি। আমাজনের বনভূমিও ধ্বংস হয় লগ্নিপুঁজির গোপন সক্রিয়তায় !এইভাবে আমাদের অস্তিত্ব ,আমাদের যাপিত জীবনের অলিগলিতে ঘটে চলেছে সবুজের নারকীয় হত্যালীলা।'ঝাউ-শিরীষের শীর্ষসম্মেলনে' কাব‍্যগ্রন্থের বিভাব কবিতায়  এই সকরুণ বাস্তবতা প্রাণস্পর্শী হয়ে উঠেছে ।এখানে সূচনাতেই সবুজবিহীন একটি চূর্ণ পরিসরের ছবি  উঠে এসেছে: :

‌"ঝাউশিরীষের শীর্ষসম্মেলনে

‌আমারও যোগ দেবার কথা ছিল

‌গিয়ে দেখলাম একটিও গাছ নেই"।

‌'নেই'-এই নেতিবাচক পদটির সৌজন্যে সবুজ সংহারের জন‍্য কবির অসহায় হাহাকার যে এখানে দুকূলপ্লাবী হয়ে উঠেছে তা  নিশ্চয়  অনুভূতিশীল  পাঠক উপলব্ধি করতে পারবেন!

তবে হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকা অলোকরঞ্জনের স্বভাব নয় ।বরং হতাশার মহা শ্মশানে বসে নতুন সম্ভাবনার নান্দীপাঠের দিকেই তাঁর সহজাত প্রবণতা ।এখানেও সেই প্রবণতা অব‍্যাহত!হতাশা ভুলে কথক বিকল্প এক কবি সম্মেলনে যোগ দেন ।সেখান তিনি 'সভ‍্যতার

গর্হিত পাপ' নিয়ে একটি কথাও বলেন না ।সেখানে তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখেন 'অমূর্ত গোলাপের  উদ্বোধন :

"এক হাজার কবিতার স্পন্দনে

আচম্বিতে লক্ষ করা গেল

চোখের সামনে অমূর্ত গোলাপ" ।

পূর্ববর্তী  'তোমরা কী চাও শিউলি না টিউলিপ''শীর্ষক কাব‍্যগ্রন্থের  বিভাব কবিতাতেও কবির আশাদীপ্ত নিসর্গপ্রীতি উৎকীর্ণ ।সেখানে দেখি 'বসতবাড়ির শেষবারকার পুজোয়'শেফালিকার শুভ্র আগুনটাকে চয়ন করে কথক প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে বেরিয়ে পড়েছেন ।এখানে বিরোধাভাসের দিকটি লক্ষণীয় ।কথক যখন বেরিয়ে পড়ছেন তার পরেই আসবে প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা ।'প্রতিমা নিরঞ্জন' এখানে  নেতিবাচকতার চিহ্ণায়ক  ।কথক জীবনের এই নেতিবাচকতা হেলায় নস‍্যাৎ করেন ।'শেফালিকার শুভ্র আগুন 'এখানে ইতিবাচক বা সদর্থক জীবনভাবনার চিহ্ণায়ক ,সেই জীবনভাবনাকে বরণ করেই কথক বেরিয়ে পড়েন ভিনদেশের উদ্দেশে ।ভিনদেশের গাঁয়ে গিয়ে কথক লক্ষ করেন অজস্র টিউলিপের সমারোহ :

"সেখানে দেখি অজস্র টিউলিপ

যা শুধু লাগে নশ্বরের কাজে

শরণার্থীর ছাউনি প্রসাধনে

বাঁধনছাড়া সৃষ্টির মেজাজে ।"

এইভাবে টিউলিপ ফুলও হয়ে উঠেছে ইতিবাচক জীবনের প্রতীক যা  শরণার্থীর ছাঊনির প্রসাধনে কাজে লাগে ।বাঁধনছাড়া সৃষ্টির মেজাজে চলে সেই সৃষ্টির পালা ।

কবিতার সমাপ্তিতে দেখি কথককে ঘিরে তার গুণমুগ্ধ,ছাত্র-বন্ধুদের মধ‍্যে ঘটে গেছে আমেরু বিভাজন ।সেই বিভাজনেও সঙ্গ দিয়েছিল  শিউলি ও টিউলিপ :

"মীরা এখনও শিউলি নিয়ে বিভোর

টিউলিপেই বিহ্বল সুদীপ" ।

কথক-কবি অন্ধকারের পৃথিবীতে চান আলোর উদ্বোধন ।শিউলি  এবং টিউলিপ এই শুভঙ্কর চেতনার প্রতীক । বক্রবাচনের সরসতায়  তাই উঠে আসে শিউলি কিংবা টিউলিপ বেছে নেওয়ার কথা :"তোমরা কী চাও ,শিউলি না টিউলিপ ?"

  অলোকরঞ্জনের গোধূলিলগ্নের  কবিতায় ছেয়ে আছে নতুন বিশ্বের অভূতপূর্ব বিপন্নতা ।এখন মানুষ যেন অনুভূতিহীন যন্ত্র।তাদের সংলাপে নেই গভীর বোধির স্নিগ্ধ ইশারা ।তাদের মুখ থেকে শুধু ঝরতে থাকে ফাঁপা শব্দের অজস্র খই ।এই সাম্প্রতিক বাস্তবতাই উঠে এসেছে অলোকরঞ্জনের 'হাঁ -করা মুখ' কবিতায় :

"হাঁ-করা মুখ শুনছে সব কথা---

এতদিন  তো নিজেই অনর্গল

শব্দের খই ছড়িয়ে হেঁটে গেছে,"

এসব দেখে কবি বোঝেন ," কিন্তু আর-এক সময় এসে গেল "।আজকের লগ্নিপুঁজির ক্লিন্ন থাবা সৃষ্টিশীলতাকে গিলে ফেলতে চায় ।লেখক থেকে গায়ক সকলকেই ঠিক করে দেওয়া হয় কী লিখতে হবে,কী বলতে হবে ,কী গাইতে হবে ।কেউ তবুও স্বতন্ত্রতার সাহস দেখালে জোটে নির্বোধ প্রতিক্রিয়া ।যেমনটি ঘটেছে অলোকরঞ্জনের কবিতার এক সাহসী কিশোরের ভাগ‍্যে :

"ওরা বলল সংস্থা বলে দেবে

যা-কিছু কথা রয়েছে বলবার

একটি কিশোর বাগেশ্রী গাইতেই

ওরা বলল মিঁয়া কী মল্লার !"

তবুও কিশোরটি শব্দ নিয়ে বাঁচার সাহস দেখালে নেমে আসে ড্যামোক্লেসের খড়্গ :

'হোয়‍্যাটসআপ শমন জারি করে

ভাষায় কথা বলার মানে নেই !'

এমন অন্ধ সময়ে দাঁড়িয়ে একজন সৃষ্টিশীল মানুষের বিষাদখিন্ন  হওয়াটাই নির্মম নিয়তি :

হা-উৎকর্ণ ময়ূর হয়ে যেই

"মেঘের দিকে মুখ  বাড়াল।,আকাশ

নোনা জল ঝরাল দু-তিন ফোঁটা—"

‌আজকের দিনে বিভিন্ন দেশের ফ‍্যাসিস্ট সরকার যখন মানবতা,মানবাধিকারের আদর্শ ভুলে প্রান্তিক মানুষকে পুনরায় দেশহীন করতে উদ‍্যত,যখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ‍্যাসিস্ট কায়দায় মেক্সিকো -আমেরিকার সীমান্তে পাঁচিল তুলে শরণার্থীদের আটকাতে দৃঢ়সংকল্প  তখন  শরণার্থী নিয়ে মানবিক অবস্থান  অলোকরঞ্জনকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয় ।স্মরণ করা যাক' 'শরণার্থী' কবিতাটির কথা !কবিতাটির সূচনা সরস বাচনে :

‌"পার্ক স্ট্রিট পার হওয়ার মুখে

‌কোত্থেকে এক তুন্দ্রাহরিণ

‌আমার বুকেই খুবলে দিল

‌তীক্ষ্ণ শিংয়ের মেগাবাইট

‌সে,নাকি আমি  অপরাধী "।

‌কথক কোনো উদ্ধতস্বভাব  রাষ্ট্রনায়ক নন।তাই তাকে মার্জনা করে তার আপাত হিংস্রতার নিহিত কারণ খুঁজতে থাকেন স্তব্ধ বিস্ময়ে :

‌"ভাবতে গিয়ে বুঝতে পারি

‌শীতের দাপট এড়িয়ে গিয়ে

‌কলকাতার এই ফারেনহাইটই

‌তার পছন্দ ,তাই কি অমন

‌সেজে উঠল নরঘাতী ?"

‌মানবিক কথক এক নারীকে দেন সেই হরিণের ভার :

‌"নারী ,তোমার বনের প্রান্তে

‌আছে অনেক শরণার্থী,

‌ওকে দিলাম তোমাকে ,

‌আর তারপর! নিজে চলেন হরিণটির ভিসা আনতে "। কবিতার সমাপ্তি নামে এক চমৎকার খোঁচায় :"বলব ও নয় মৌলবাদী" !এই খোঁচার লক্ষ্য কে নয় ! ট্রাম্প থেকে হাঙ্গেরির মৌলবাদী রাষ্ট্রপ্রধান  সকলেই কবির এই তীক্ষ্ণ বাক‍্য শরে বিদ্ধ !

 তবে কী কোথাও নেই কোনো আলো কান্তিময় আলো এই অন্ধকার বেলায়! আছে ।অন্তত অলোকরঞ্জনের কাছে ।তাই ,বারংবার তাঁর কবিতায় দেখি অন্ধকাররের পাতাল ফুঁড়ে আলোর ইশারা ।যেমন 'সিস্টিনে চ‍্যাপেলে শেষবার' কবিতার সূচনায় জমাট অন্ধকারের বিস্তারে :

"এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অন‍্য এক বধ‍্যভূমি ছুঁয়ে

যেতে যেতে ভেবে মরি মানুষ কি এতই পিশাচ

বনে গেছে? এক মৌলবাদ থেকে জিঘাংসু আর-এক

স্বৈরতান্ত্রিতার দিকে যেতে যেতে ভেবেছি তাহলে

এবার মানবজন্ম ব‍্যর্থ হল?"

এই অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার আশায় কথক একদা যান মিকেলেঞ্জেলোর কাছে ।তিনি কথককে নিয়ে যান সিস্টিন চ‍্যাপেলে ।সেখানে কথক দেখেন  ফ্রেস্কোর অলোকসামান‍্য কারুকাজ ।সেখানে একটি কিনারে বিরাজমান ঈশ্বর স্বয়ং । কথক দেখলেন তিনি কীরকম অনায়াসে আদি মানবের দিকে সস্নেহ চ‍্যালেঞ্জে হাত বাড়িয়ে দিলেন ।আর আদিমানব আদমও প্রত‍্যুত্তরে তখন শৌর্যের লাবণ্যে প্রসারিত করলেন  তাঁর সুদক্ষিণ  করাঙ্গুলি ।এই স্বর্গীয় দৃশ্য অবলোকন করে নিরাশাছন্নতার কালো মুহূর্তে সরে যায় ।জেগে ওঠে আশার নতুন চর ।আশাদীপ্ত কথক ভাবেন :

"তাহলে তো এই জায়গাটা থেকে নতুন বিশ্বের

অভিষেক হতে পারে,সেটা হলে কীরকম হয় —"

তবে সেই সঙ্গে বিঁধিয়ে দেন ঈশ্বরের আদমের হাত না ছোঁয়ার জন্য  মৃদু অভিযোগের  তীক্ষ্ণ শলাকা :

"সন্তর্পণে আরও -একটা কথা ভাবি,ঈশ্বর আরেকটু

এগিয়ে গিয়েই যদি আদমের হাত ছুঁয়ে দিতেন

তবে তাঁর জাত যেত ? মানুষ উচ্ছনে গেছে বলে

তাঁর সেই শৈথিল্যকে আমি আজ দায়বিদ্ধ করি।



শিক্ষা

[সম্পাদনা]

দাশগুপ্ত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করেছেন, ও তারপরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েন এবং অবশেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভারতীয় কবিতায় গীতি নিয়ে তার পড়াশুনার জন্য পিএইচডিপ্রাপ্ত হন।[১] তিনি লিটল ম্যাগাজিনসমূহের সাথে ভীষণভাবে যুক্ত হয়ে মূল জার্মান কাজগুলিকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে থাকেন।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

তার পিএইচডি শেষ করার পরে, দাশগুপ্ত ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে (বুদ্ধদেব বসু প্রতিষ্ঠিত) তুলনামূলক সাহিত্য ও বাংলা পড়িয়েছিলেন। এরপরে তিনি হাম্বোলড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপে জার্মানি যান। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনসিটিটিউট অনুষদে শিক্ষকতা করছেন। তিনি ভারত ও জার্মানির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ প্রচারের জন্য প্রধান একটি প্রতিষ্ঠান, ডয়চে-ইন্দিসচে গেসেলশ্যাফ্টের (ডিআইজি) সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন।[২]

দাশগুপ্ত এমন একজন কবি, যিনি তার সহকর্মী এবং ভক্তদের দ্বারা অনেক প্রশংসিত, তার কবিতা মূলভাব এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত। জার্মান সরকার তাঁকে গ্যোটে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে দুটি ভিন্ন সংস্কৃতিকে একত্রিত করার কাজে তার অবদানের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তার ছন্দনৈপুণ্য ভাষার কারুকার্য যেমন কাব্য-অবয়বকে একটি স্বকীয়তা দিয়েছে তেমনই বৈদগ্ধ্য বিপ্লবমনস্কতা এবং ঐতিহ্যের পুনরাবিষ্কারের ক্ষমতা তার কাব্য জগতকে দিয়েছে বিশালতা এবং নান্দনিক সৌন্দর্য। এরপর তিনি যে প্রবন্ধ রচনা করেছেন ও জার্মান ভাষা থেকে অনুবাদ করেছেন সেখানে তার ভাষান্তর কুশলতা বাংলা সাহিত্যে বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। তার নিজস্ব গদ্যরীতি বর্ণাঢ়্য, প্রতিমাবহুল এবং শব্দের নবায়নে চিহ্নিত।


কবিপ্রতিভা:


গ্রন্থপঞ্জী

[সম্পাদনা]

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল:[৩][৪]

  • যৌবনবাউল (১৯৫৯)
  • নিষিদ্ধ কোজাগরী
  • রক্তাক্ত ঝরোখা (১৯৬৯)
  • ছৌ-কাবুকির মুখোশ (১৯৭৩)
  • গিলোটিনে আলপনা (১৯৭৭)
  • দেবীকে স্নানের ঘরে নগ্ন দেখে (১৯৮৩)
  • মরমী করাত (১৯৯০)
  • আলো আরো আলো (২০০৯)
  • সে কি খুঁজে পেল ঈশ্বরকণা (২০১২)
  • নিরীশ্বর পাখীদের উপাসনালয়ে (২০১৩)
  • এখন নভোনীল আমার তহবিল (২০১৪)
  • পাহাড়তলীর বাস্তুহারা
প্রবন্ধগ্রন্থ
  • শিল্পিত সমাজ (১৯৬৯)
  • স্থির বিষয়ের দিকে (১৯৭৬)
অনুবাদ ও সংকলন গ্রন্থসমূহ
  • সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত
  • প্রাচী-প্রতীচীর মিলনমেলার পুঁথি
  • প্রেমে পরবাসে (১৯৮৩)
  • হাইনের কবিতা
  • অঙ্গীকারের কবিতা (১৯৭৭)

তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলির মধ্যে আছে শরণার্থীর ঋতু ও শিল্প ভাবনা , আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৩। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-১৫৯-৪, ভ্রমনে নয় ভুবনে , আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন ৮১-৭০৬৬-১৪৫-৫, ছায়াপথেরা সান্দ্র সমলাপিকা , আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-২৭৭-৯, এখনো নামেনি, বন্ধু, নিউক্লিয়ারা শীতের গোধূলি , আনন্দ পাবলিশার্স। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-৯৯৬-X, জ্বরের ঘোরে তরাজু কেঁপে আয়, সমবায়ী শিল্পেরা গরজে, তুষার জুড়ে ত্রিশূলচিহ্ন, দক্ষিণ এশীয় ভাষাগুলি থেকে অনুবাদে সমস্যা , (ইউনিভার্সিটিট হাইডেলবার্গ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত দ্বারা), ভারতীয় কবিতায় লিরিক (১৯৬২), দ্য মিস্টিক্যাল স অ্যান্ড আদার পোয়েমস (রোল্যান্ড হিন্দ্মার্শ, সাহিত্য আকাদেমি, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত দ্বারা) (১৯৯৬)

পুরস্কার

[সম্পাদনা]

দাশগুপ্ত অনেক পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছেন। তার মধ্যে আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুধা বসু পুরস্কার (১৯৮৩), জার্মানিতে গ্যয়ঠে পুরস্কার (১৯৮৫), আনন্দ পুরস্কার (১৯৮৫), প্রবাসী ভারতীয় সম্মান (১৯৮৫), রবীন্দ্র পুরস্কার (২০০৪), তার কবিতার বই মরমী করাত (অনুবাদ করেছেন দ্য মিস্টিক্যাল স অ্যান্ড আদার পোয়েমস) এর জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯২)[১] এবং প্রবাসী ভারতীয় সম্মান (২০০৫)।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. কবিতার অলোকরঞ্জন : ভুবনডাঙার বাউল : সঞ্জীব দাস,পারুল বই,2017
  2. "Hindustan Times"। ৩০ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৯ 
  3. শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৭ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
  4. "'দেশে ফেরা হল না কবি অলোকরঞ্জনের"। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৯