হানজাদে সুলতান (শাহজাদা ওমর ফারুকের কন্যা)
হানজাদে সুলতান | |||||
---|---|---|---|---|---|
জন্ম | ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ দোলমাবাহজে প্রাসাদ, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক | ||||
মৃত্যু | ১৯ মার্চ ১৯৯৮ প্যারিস, ফ্রান্স | (বয়স ৭৪)||||
সমাধি | |||||
দাম্পত্য সঙ্গী | যুবরাজ মুহাম্মদ আলী ইব্রাহিম পাশা (বি. ১৯৪০; মৃ. ১৯৭৭) | ||||
বংশধর |
| ||||
| |||||
রাজবংশ | উসমানীয় (জন্মসূত্রে) মুহাম্মদ আলি রাজবংশ (বিবাহের মাধ্যমে) | ||||
পিতা | শাহজাদা ওমর ফারুক | ||||
মাতা | সাবিহা সুলতান | ||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
জেহরা হানজাদে সুলতান (উসমানীয় তুর্কি: زهرة هان زاده سلطان; ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ – ১৯ মার্চ ১৯৯৮) ছিলেন একজন উসমানীয় শাহজাদী। তার বাবা ছিলেন শাহজাদা ওমর ফারুক, যিনি দ্বিতীয় আবদুল মজিদ এবং শেহসুভার হানিমের পুত্র। তার মা ছিলেন সাবিহা সুলতান, যিনি সুলতান ষষ্ঠ মেহমেদ এবং নাজিকেদা কাদিন এর কন্যা।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]জেহরা হানজাদে সুলতান ১৯২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উসমানীয় সাম্রাজ্য বিলুপ্তির প্রায় এক বছর পর দোলমাবাহজে প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন।[১][২][৩] তার পিতার নাম শাহজাদা ওমর ফারুক এবং মাতার নাম সাবিহা সুলতান।[২] নেসলিশাহ সুলতান নামে তার এক বড় বোন ছিল। যিনি তার চেয়ে দুই বছরের বড়। এবং নেকলা সুলতান নামে তার এক ছোট বোন ছিল। যিনি তার চেয়ে চার বছরের ছোট। দ্বিতীয় আবদুল মজিদ এবং শেহসুভার হানিম তার দাদা-দাদি ছিলেন। সুলতান ষষ্ঠ মেহমেদ এবং নাজিকেদা কাদিন তার নানা-নানি ছিলেন।[১] তাকে তার প্রজন্মের সবচেয়ে সুন্দরী শাহজাদী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তার জন্মের এক মাস পর ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্ক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৯২৪ সালের মার্চ মাসে রাজকীয় পরিবারের নির্বাসনের সময়, হানজাদেসহ তার মা এবং বোন তুরস্ক ছেড়ে চলে যান। তারা তিনজন ১১ মার্চ রুমেলিহিসারি প্রাসাদ ত্যাগ করেন এবং সুইজারল্যান্ডে তার বাবা ও দাদার সাথে একত্রিত হতে ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে যান।[৪] পরবর্তীতে তার বাবা-মা এবং বোনেরা ফ্রান্সের নিসে চলে যান। সেখানে তিনি তার শৈশব অতিবাহিত করেন। ১৯৩৮ সালের শরৎকালে তিনি তার বোন ও বাবার সঙ্গে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় আসেন।[৫] তাদের দাদা আবদুল মজিদ বিশেষ উপলক্ষে তাকে এবং তার বোন নেসলিশাহকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে যেতেন।[৬]
বিবাহ
[সম্পাদনা]মুহাম্মদ আবদেল মোনিম নেসলিশাহ সুলতানকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক ছিলেন বিধায় ১৯৪০ সালে নেসলিশাহ সুলতানকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু নেসলিশাহ রাজি হননি। যার ফলে তার এবং তার বাবার মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়ে যায়। অতঃপর তিনি রাজি হন।[৭] হানজাদের দাদা আবদুল মজিদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদের পরিবারের জন্য অর্থ পাঠাতে অক্ষম ছিলেন বিধায় তাদের পরিবার দরিদ্র হয়ে পড়েছিল।[৮] এই কারণে তিনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এবং অবিলম্বে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। তবে তার বাবা দ্বিমত পোষণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন "বড়রা প্রথমে বিয়ে করে, তারপরে ছোটরা, নেসলিশাহকে ছেড়ে দাও তারপরে আমরা হানজাদে সম্পর্কে চিন্তা করব"।[৯]
পরে তার বাবা ফারুক তার মত পরিবর্তন করে যুবরাজ মুহাম্মদ আলী ইব্রাহিমকে হানজাদের জন্য স্বামী হিসেবে বেছে নেন।[৯] বিবাহটি কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারা আল-কুব্বায় আজিজা হানিমের বাড়িতে থাকত। যুবরাজ মুহাম্মদ আলী গেজিরায় একটি বড় বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। যেখানে তার একটি বইয়ের গ্রন্থাগারও ছিল। বৃহস্পতিবার মিশরে বিয়ের জন্য একটি আনন্দময় দিন হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় তাদের বিয়ে ১৯৪০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়।[৯] পরের সপ্তাহে, ১৯৪০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তার বড় বোন নেসলিশাহ সুলতান এর সাথে মুহাম্মদ আবদেল মোনিমের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[১০]
হানজাদের প্রথম সন্তান ফাজিলে হানিমসুলতান ১৯৪১ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় সন্তান সুলতানজাদে আহমেদ রিফাত বে ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।[২] ১৯৫৮ সালে ইরাকের বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সাল ফাজিলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাবটি তার বাবা-মায়ের জন্য একটি বিস্ময় ছিল। কারণ ফাজিলের বয়স ছিল মাত্র ষোল বছর ছিল এবং তিনি স্কুলে পড়াশোনা করছিল। তবে একই বছর ১৪ জুলাই বিপ্লবে রাজা নিহত হওয়ায় এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি।[১১][১২] পরে ফাজিলে ১৯৬৫ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে সুয়াত হায়রি উরগুপলুর পুত্র হায়রি উরগুপলুকে বিয়ে করেছিলেন। সুয়াত হায়রি উরগুপলু সাত মাস তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[১৩] হানজাদে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত মিশরে বসবাস করেছিলেন। ১৯৫২ সালের মিশরীয় বিপ্লব ১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই সংঘটিত হয়েছিল এবং মিশরকে প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। যার ফলে হানজাদে এবং তার পরিবারকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। তখন তারা ফ্রান্সের প্যারিসে ছিল। সেখানে তারা কয়েক বছর বাস করেছিল এবং তারা সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং হানজাদের মা সাবিহাকে কয়েক মাসের জন্য আপ্যায়ন করেছিল।[১৪]
হানজাদের বাবা ওমর ফারুক তার চাচাতো বোন মিহরিশাহ সুলতানের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলেন। যিনি শাহজাদা ইউসুফ ইজ্জেদ্দিনের মেয়ে ছিলেন। যার ফলে ফারুক ও তার মা সাবিহার মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না, সেটাও সবার জানা ছিল।[১৫] তিনি এবং তার বোনেরা তাদের মায়ের পক্ষ নিয়েছিলেন। ফারুক অভিযোগ করেন, সাবিহা তাদের মেয়েদের তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তিনি ইতিমধ্যে মিহরিশাহের প্রেমে পড়েছিলেন।[১৬] ১৯৪৮ সালে ফারুক সাবিহাকে তালাক দেয় এবং মিহরিশাহকে বিয়ে করে। হানজাদে কখনোই তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে নেয়নি।[১৭][১৮]
১৯৭৭ সালে যুবরাজ মুহাম্মদ আলীর মৃত্যু হলে হানজাদে বিধবা হন।[২][১৯]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]হানজাদে সুলতান ১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ চুয়াত্তর বছর বয়সে ফ্রান্সের প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।[১][২][১৪] তার মরদেহ ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৬ মার্চ আশিয়ান আসরি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[২]
বংশধর
[সম্পাদনা]যুবরাজ মুহাম্মদ আলী ইব্রাহিম পাশা ও হানজাদে সুলতানের বিবাহের মাধ্যমে তাদের একজন কন্যা এবং একজন পুত্র ছিল:[২০]
- ফাজিলে হানিমসুলতান (জন্ম: ৮ আগস্ট ১৯৪১)। ইরাকের দ্বিতীয় ফয়সাল তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে তিনি বিদ্রোহে মারা যান। পরে তিনি হায়রি উরগুপলুকে বিয়ে করেন এবং তার দুই পুত্র সন্তান হয়।
- সুলতানজাদে আহমেদ রিফাত ইব্রাহিম বে (জন্ম: ৩১ আগস্ট ১৯৪২)। তার জন্ম কায়রোতে। ১৯৬৯ সালের ২৬ জুন তিনি এমিন উশাকলিগিলকে বিয়ে করেন।
পূর্বপুরুষ
[সম্পাদনা]হানজাদে সুলতান (শাহজাদা ওমর ফারুকের কন্যা)-এর পূর্বপুরুষ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]গ্রন্থসূত্র
[সম্পাদনা]- Bardakçı, Murat (২০১৭)। Neslishah: The Last Ottoman Princess [নেসলিশাহ: উসমানীয় সাম্রাজ্যের শেষ শাহজাদী]। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-9-774-16837-6।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Bardakçı 2017, পৃ. xiv।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Adra, Jamil (২০০৫)। Genealogy of the Imperial Ottoman Family 2005 [উসমানীয় পরিবারের বংশতালিকা ২০০৫]। পৃষ্ঠা 36–37।
- ↑ "SON MISIR MELİKESİNE VEDA"। Ekrem Buğra Ekinci। ৪ এপ্রিল ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০২০।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 70।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 124।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 111।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 167।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 166।
- ↑ ক খ গ Bardakçı 2017, পৃ. 168।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 128।
- ↑ "MAADI'S OTTOMANS"। egy.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০২০।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 238।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 301–302।
- ↑ ক খ "Hanedanın en güzel sultanı artık yok" [রাজবংশের সবচেয়ে সুন্দরী সুলতানা এখন আর নেই]। Hürriyet। ২২ মার্চ ১৯৯৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০২০।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 205।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 208।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 171।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. 266।
- ↑ Bardakçı 2017, পৃ. xii।
- ↑ Jamil ADRA (২০০৫)। Genealogy of the Imperial Ottoman Family 2005 [উসমানীয় পরিবারের বংশতালিকা ২০০৫] (English ভাষায়)। পৃষ্ঠা 36।