আপেক্ষিক বেগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আপেক্ষিক বেগ বা আপেক্ষিক গতি বলতে পরস্পরের সাপেক্ষে দুটি বস্তুর বেগ বা অবস্থানের পরিবর্তনকে নির্দেশ করে।

মহাবিশ্বের কোনো বস্তুই স্থির নয়। অর্থাৎ, পরম স্থিতি বিদ্যমান নয়। কোনো বস্তুকে আমরা যখন স্থির বলে বিবেচনা করি, তখন আসলে আমরা ঐ বস্তুর গতি বা অবস্থানকে অন্য একটি বস্তুর গতি বা অবস্থানের সাথে তুলনা করি৷ এই তুলনাকেই সহজ ভাবে আপেক্ষিক গতি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাস্তার পার্শ্বে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির সাপেক্ষে একটি চলমান গাড়ি গতিশীল, ব্যক্তিটিই স্থির। কিন্তু, ঐ গাড়ির যাত্রীদের কাছে মনে হবে যেন, তারা স্থির এবং পথচারী ব্যক্তিটি গতিশীল। তাদের পরস্পরের সাপেক্ষে বেগের এই ভিন্নতাই আপেক্ষিক গতি।

গাণিতিকভাবে বলা যায়, If X object has A velocity and another object Y has B velocity, then the relative motion in perspective of Y object will be, (Velocity of X - Velocity of Y). The reverse, Relative velocity in perspective of X object will be ( Velocity of Y - Velocity of X)

(বাংলায় অর্থ : যদি X বস্তুর A বেগ থাকে এবং আরেকটি বস্তু Y এর B বেগ থাকে, তাহলে Y বস্তুর দৃষ্টিকোণে আপেক্ষিক গতি হবে, (X এর বেগ - Y এর বেগ)। বিপরীত, X বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে আপেক্ষিক বেগ হবে ( Y-এর বেগ - X-এর বেগ)

ধ্রুপদী বলবিজ্ঞান[সম্পাদনা]

একমাত্রিক ক্ষেত্রে (অনপেক্ষিক)[সম্পাদনা]

ধ্রুপদী বলবিজ্ঞান যা অনপেক্ষিক ও নিউটনের মতবাদের উপর নির্ভরশীল সেখানে সমস্ত গতিশীল পদার্থে‌র গতিবেগ আলোর গতিবেগ -এর (৩১০ মি/সে) থেকে অনেক কম। এই সীমা গ্যালিলিয়ান রূপান্তরের সাথে জড়িত। নিম্নে একটি চিত্রের মাধ্যমে একটি ট্রেন এবং একজন মানুষের আপেক্ষিক গতিবেগ দেখানো হয়েছে।

গতিশীল ট্রেনের শীর্ষে চলমান ব্যক্তির আপেক্ষিক বেগ।

চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে একটি ট্রেনের পিছনের প্রান্তে একজন ব্যক্তি ট্রেনের শীর্ষে দাড়িয়ে আছে। ঠিক দুপুর একটার সময় সেই ব্যক্তি ঘণ্টায় ১০ কিমি গতিবেগে ট্রেনের ছাদের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করল। ট্রেনটি ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। চিত্রটিতে সেই ব্যক্তি এবং ট্রেনের অবস্থান দুটি ভিন্ন সময়ে দেখানো হয়েছে; প্রথমবার যখন ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেছে এবং দ্বিতীয়বার দুপুর ২ টোর সময়। চিত্র অনুযায়ী দুপুর ২ টোয় ট্রেনের উপরে চলমান ব্যক্তি তার প্রাথমিক অবস্থান থেকে ৫০ কি.মি. দুরত্বে অবস্থান করছে। কিন্তু ব্যক্তির নিজস্ব গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ কিমি এবং সেই অনুযায়ী দুপুর একটার সময় যাত্রা শুরু করলে দুপুর ২ টোর সময় প্রাথমিক অবস্থান থেকে ১০ কিমি দুরত্বে থাকা উচিত ছিল কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যে চলন্ত ট্রেনের গতিবেগ (ঘন্টায় ৪০ কিমি) ব্যক্তির নিজস্ব গতিবেগের সাথে যুক্ত হয়েছে। যার ফলে ব্যক্তির গতিবেগ আপেক্ষিক ভাবে ঘন্টায় ১০ কি মি এর পরিবর্তে ঘণ্টায় ৫০ কি মি হয়েছে। অর্থাৎ ট্রেনের আপেক্ষিক গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কি মি।

চিত্রটিতে স্কেল এবং ঘড়ির মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির ও ট্রেনের অবস্থান পরিবর্তন বোঝানো হয়েছে। ব্যক্তির আপেক্ষিক গতিবেগ নিম্নলিখিত সূত্রের মাধ্যমে বোঝান হয়,

যেখানে,

হল পৃথিবীর সাপেক্ষে ব্যক্তির আপেক্ষিক গতিবেগ।

হল ট্রেনের সাপেক্ষে ব্যক্তির আপেক্ষিক গতিবেগ।

হল পৃথিবীর সাপেক্ষে ট্রেনের আপেক্ষিক গতিবেগ।

অর্থাৎ একমাত্রিক ক্ষেত্রে কোন বস্তু B -এর সাপেক্ষে A -এর গতিবেগ পারিপার্শ্বিক সংযুক্ত চলমান বস্তু ও অন্যান্য আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল। আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিশেষ সূত্রের লঙ্ঘন দেখা যায় কারণ আপেক্ষিক গতিবেগ নির্ণয়ের এই ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত যে আলোর গতি পর্যবেক্ষণ করার সময় বিভিন্ন পর্যবেক্ষক বিভিন্ন গতি পরিমাপ করবে।[note ১]

দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রে (অনপেক্ষিক)[সম্পাদনা]

ধ্রুপদী বলবিজ্ঞানে দুটি চলমান বস্তু A এবং B-এর মধ্যে আপেক্ষিক বেগ।

উপরের চিত্রে দুটি বস্তু A এবং B যা দুটি স্থির গতিতে চলমান। তাদের আপেক্ষিক গতিবেগের সমীকরণ দেখানো হয়েছে,

এখানে সাবস্ক্রিপ্ট i -এর মাধ্যমে বস্তুদুটির প্রাথমিক স্থানচ্যুতিকরন (t সময়ে যা শূন্যের সমান) বোঝান হয়েছে। দুটি বস্তুর স্থানচ্যুতি ভেক্টরের মধ্যে পার্থক্য যা A বস্তুর অবস্থানের সাপেক্ষে B বস্তুর অবস্থান চিহ্নিত করে।

সুতরাং:

দুটি গতিবেগ নির্দেশকারী ভেক্টর এবং -এর মধ্যে বিয়োগের পর আমরা পাই:

 

গ্যালিলিয়ান রূপান্তর(অনপেক্ষিক)[সম্পাদনা]

গ্যালিলিয়ান রূপান্তরের জন্য সমন্বয় সিস্টেমের স্ট্যান্ডার্ড কনফিগারেশন

বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সাথে আপেক্ষিক গতির সামঞ্জস্য রাখার জন্য আমাদের একটি বিশেষ ধারনার প্রচলন করতে হয়। আপেক্ষিক গতির অনপেক্ষিক নিউটিনীয় ধারনার সাথে একমাত্রিক ক্ষেত্রে গ্যালিলিয় রুপান্তর-এর ধারনাও প্রচলিত হয়েছেঃ[note ২]

এখানে x' -এর মাধ্যমে একটি প্রসঙ্গ কাঠামো, যা (x) দ্বারা চিহ্নিত একটি অপর "অনিয়ন্ত্রিত(আনপ্রাইমড্‌)" প্রসঙ্গ কাঠামো-তে v বেগে চলমান, তার সাপেক্ষে অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।[note ৩] উপরের দুটি সমীকরণের অন্তরজ নির্ণয় করে আমরা পাই প্রথম সমীকরণ, এবং ২য় সমীকরণ, [note ৪] ,

এবার অন্তরকলজের পর প্রথম সমীকরণ থেকে ২য় সমীকরণের বিভাজন করলে,

আপেক্ষিক গতিবেগের সমীকরণকে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা ধরে নিচ্ছি যে A বস্তুকনা একটি অনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর উপর dx/dt চিহ্নিত পথ অনুসরন করে (dx′/dt′ নিয়ন্ত্রিত কাঠামোতে চলমান)। এইরূপে, যেখানে এবং -এর মাধ্যমে যথাক্রমে একটি অনিয়ন্ত্রিত ও নিয়ন্ত্রিত কাঠামোতে অবস্থানকারী কোন পরিদর্শ‌কের সাপেক্ষে A বস্তুকনার অবস্থানকে চিহ্নিত করা হয়। এইরূপে আমরা পাই, , এবং

যেখানে পরবর্তী রূপটি সহজ প্রতিসাম্য রয়েছে।

বিশেষ আপেক্ষিকতা[সম্পাদনা]

ধ্রুপদী বলবিজ্ঞানে, বিশেষ আপেক্ষিকতায় আপেক্ষিক গতিবেগ হল পরিদর্শ‌ক A -এর সাপেক্ষে B -এর গতিবেগ। তবে বিশেষ আপেক্ষিকতার ক্ষেত্রে আপেক্ষিক বেগ -এই সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়না।

এই সমতার অভাব বিজ্ঞানী থমাস -এর একটি প্রস্তাবনা থমাস প্রীসিসন্‌ এবং দুই সফল লরেঞ্জ রুপান্তর যা স্থানাঙ্ককে আবর্তিত করে। এই আবর্তনে গতিবেগ প্রদর্শনকারী ভেক্টরের মানের কোন পরিবর্তন হয়না এবং এর ফলে আপেক্ষিক গতির প্রতিসাম্যতা বজায় থাকে।

সমান্তরাল গতিবেগ[সম্পাদনা]

দুটি বস্তুকনা পরস্পর একে অপরের সমান্তরালে চলমান হলে তাদের আপেক্ষিক গতিবেগের সুত্র,

আপেক্ষিক গতির সুত্রটি নিম্নরূপ,

উলম্ব গতিবেগ[সম্পাদনা]

দুটি বস্তুকনা পরস্পর একে অপরের থেকে ৯০ ডিগ্রি কোনে চলমান হলে তাদের আপেক্ষিক বেগ -এর সুত্রটি হল,

যেখানে,

আপেক্ষিক গতির সুত্রটি হল,

সাধারণ ক্ষেত্রে[সম্পাদনা]

কোন এক বিশেষ স্থানে উপস্থিত বস্তু A -এর সাপেক্ষে সেই একই স্থানে অবস্থিত বস্তু B -এর আপেক্ষিক গতিবেগ -এর সুত্রটি হল,[১]

যেখানে,

এক্ষেত্রে, আপেক্ষিক গতির সুত্রটি হল,


টীকা[সম্পাদনা]

  1. উদাহরণস্বরূপ ব্যক্তির পরিবর্তে আলোর গতিতে ভ্রমণকারী ফোটন কনাকে বিবেচনা করুন।
  2. সমস্ত গতি এক্স অক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে এই ফলাফলটি বৈধ, তবে প্রথম সমীকরণের পরিবর্তে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে
  3. v -এর আগে ঋণাত্মক চিহ্ন মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে অথবা v প্রধান বা অপ্রধান প্রসঙ্গ কাঠামোর মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত কিনা সে ব্যাপারেও বিভ্রান্তি হতে পারে। এর মাধ্যমে এই বিষয়টি বোঝা যায় যে যদি x = vt' হয় তাহলে x′ = 0 অর্থাৎ কোন বস্তুকনা যদি x = vt দ্বারা চিহ্নিত পথ অনুসরন করে তাহলে সেটি প্রধান কাঠামোতে স্থিতাবস্থায় আছে।
  4. এইটা মনে রাখা উচিত যে সময় অবকাশ dt = dt′ তখনই বৈধ যখন এইটা ধরে নেওয়া হয় যে চলমান বস্তুর গতিবেগ আলোর গতিবেগের থেকে অনেক কম।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Fock 1964 The theory of Space Time and Gravitation, retrieved from https://archive.org/details/TheTheoryOfSpaceTimeGravitation