বিষয়বস্তুতে চলুন

গতিবেগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বেগ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
বেগ
বাঁকানো ট্র্যাক দিয়ে যাওয়ায় সময় রেসিং কারগুলোর দিকের পরিবর্তন ঘটে, ফলে এদের বেগ ধ্রুব নয়।

গতিবেগ বা বেগ (Velocity) হল সময়ের সাপেক্ষে কোন বস্তুর সরণের পরিবর্তনের হার। নির্দিষ্ট দিকে বস্তুর দ্রুতিকেই তার গতিবেগ বলা হয়। অর্থাৎ বেগ হল প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের হার এবং সেই সাথে সময়ের একটি ফাংশন। বেগ একটি সদিক রাশি, আর দ্রুতি হল অদিক রাশিচিরায়ত বলবিদ্যায় গতিবিদ্যার মৌলিক ধারণাগুলোর মধ্যে বেগ একটি। যেমন 10 m/s‍ উত্তর দিকে হল কোন বস্তুর বেগে। গতিবেগকে সাধারণত v, v, দ্বারা সূচিত করা হয়।

বেগ এমন একটি ভৌত (দিক রাশি বা ভেক্টর) রাশি যা মান ও দিক উভয়ই প্রকাশ করে, পক্ষান্তরে বেগের মানকে দ্রুতি বলে যার শুধু মান রয়েছে কিন্তু দিক নেই। একারণে বেগ ঋণাত্নক হলেও দ্রুতি কখনও ঋণাত্নক হতে পারে না।

মাত্রা

[সম্পাদনা]

বেগের মাত্রা হবে দুরত্ব/সময় এর মাত্রা অর্থাৎ L T - 1। অতএব [v] = L T -1

পরিমাপের M.K.S. পদ্ধতি বা এস. আই. একক বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে বেগের একক হল মিটার/সেকেন্ড (/ বা −1)। অন্যান্য এককসমূহের মধ্যে C.G.S. পদ্ধতি ও F.P.S. পদ্ধতিতে বেগের একক হল যথাক্রমে সেন্টিমিটার/সেকেন্ড (/ বা −1) ও ফুট/সেকেন্ড (/ বা −1)। এছাড়াও বড় একক হিসেবে কিলোমিটার/ঘণ্টা () বা মাইল/ঘণ্টা () ব্যবহার করা হয়।

ধ্রুব বেগ বনাম ত্বরণ

[সম্পাদনা]

কোন বস্তু কেবলমাত্র ধ্রুব দ্রুতিতে ধ্রুব (নির্দিষ্ট) কোন দিকে চললে এর গতিকে ধ্রুব বেগ বলা যাবে। অর্থাৎ ধ্রুব দ্রুতিতে একটি সরল রেখা বরাবর বস্তুর গতিই ধ্রুব বেগ।

যেমন, একটি গাড়ি প্রতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার ধ্রুব হারে কোন বৃত্তাকার পথে গতিশীল থাকলে গাড়িটির গতিকে ধ্রুব দ্রুতি বলা যাবে, তবে কখনই ধ্রুব বেগ বলা যাবেনা; যেহেতু বৃত্তাকার পথে গতির ফলে প্রতিমুহূর্তে গাড়িটির গতির দিকের পরিবর্তন হচ্ছে অর্থাৎ বেগেরও পরিবর্তন ঘটছে। ত্বরণের সংজ্ঞা থেকে আমরা জনি যে, ত্বরণ হল সময়ের সাথে বেগের পরিবর্তনের হার। অতএব বলা যায়, এখানে গাড়িটির ত্বরণ ঘটছে।

দ্রুতি ও বেগের মধ্যে পার্থক্য

[সম্পাদনা]
পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণায়মান কৃত্রিম উপগ্রহ সমদ্রুতিতে চললেও, সমবেগে চলতে পারবে না। কারণ প্রতিনিয়তই এটির দিক পরিবর্তিত হয়।
পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণায়মান কৃত্রিম উপগ্রহ সমদ্রুতিতে চললেও, সমবেগে চলতে পারবে না। কারণ প্রতিনিয়তই এটির দিক পরিবর্তিত হয়।

কোন বস্তুর বেগের মানকেই দ্রুতি বলে যা শুধু বস্তুটি কত দ্রুত গতিশীল তা নির্দেশ করে, বস্তুটির গতির দিক নির্দেশ করে না। অপরদিকে, বেগের মান প্রকাশে অবশ্যই দিকের কথা বিবেচনা করতে হয়।

বৃত্তাকার পথের চলমান বস্তুর ক্ষেত্রে, বস্তুটি সমদ্রুতিতে চলতে পারলেও সমবেগে চলতে পারবে না। কারণ সময়ের ব্যবধানে বস্তুটির গতির দিক পরিবর্তন হবে এবং কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বস্তুর গতি দিক বৃত্তাকার পথটির স্পর্শকের দিকে হবে।

গতির সমীকরণ

[সম্পাদনা]

গড় বেগ

[সম্পাদনা]

কোনো বস্তুর আদিবেগ ও শেষবেগ এর গড়কে বস্তুটির গড় বেগ বলে।

তাৎক্ষণিক বেগ বা বেগ

[সম্পাদনা]
সময় বনাম বেগ লেখচিত্র। x-অক্ষে সময় t, y-অক্ষে বেগ v, বক্ররেখাটির বিভিন্ন বিন্দুতে সবুজ স্পর্শক দ্বারা ত্বরণের মান a ও বক্ররেখার নিচের হলুদ বর্ণের ক্ষেত্রটি দ্বারা সরণ s নির্দেশ করা হয়েছে।

গতিশীল বস্তুর কোন মুহূর্তের বেগকে তাৎক্ষণিক বেগ বা instantaneous velocity বলে। বস্তুর গতি বিবেচনায় তাৎক্ষণিক বেগকে শুধু বেগ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। সময় ব্যবধান শূন্যের সমীপবর্তী হলে গড়ে বেগের সীমান্তিক মানেই তাৎক্ষণিক বেগ বলে। সুতরাং x- অক্ষ বরাবর গতির জন্য তাৎক্ষণিক বেগের মান,

এখানে এর অর্থ limit বা সীমা এবং ( tends to zero) দ্বারা সময় ব্যবধান শূন্যের সমীপবর্তী বুঝানো হয়েছে। তাৎক্ষণিক বেগের দিক হবে, গতিপথের যে বিন্দুতে তাৎক্ষণিক বেগ বিবেচনা করা হবে, সে বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক বরাবর গতির দিকে।

সমবেগ বা সুষম বেগ

[সম্পাদনা]

সমহার গতি সম্পন্ন বস্তুর বেগকে সমবেগ বা uniform velocity বলে। সময়ের সাথে কোন বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের হার অপরিবর্তিত থাকলে এর বেগকে সমবেগ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বস্তুর গতি কালে তার বেগের মান ও দিক উভয়ই অপরিবর্তিত থাকলেই তা সমবেগ হবে। বস্তু সমবেগে চললে নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে এর সরণের মান ও দিক অপরিবর্তিত থাকবে; অর্থাৎ বস্তু যদি প্রথম অতিক্রম করে পূর্বদিকে যায়, তবে পরবর্তী সময়েও অতিক্রম করে পূর্বদিকে যাবে।

শব্দের বেগ ও আলোর বেগ সমবেগের প্রকৃষ্ট প্রাকৃতিক উদাহরণ।

অসম বেগ

[সম্পাদনা]

কোন বস্তুর গতিকালে যদি তার বেগের মান বা দিক বা উভয়ই পরিবর্তিত হয় তাহলে সেই বেগকে অসম বেগ বলে। আমরা সচরাচর যেসকল গতিশীল বস্তু দেখি তাদের বেগ অসম।

মধ্য বেগ

[সম্পাদনা]

কোন একটি গতিশীল বস্তুর আদিবেগ ও শেষ বেগের অভিমূখ একই হলে তাদের গড়কে মধ্যবেগ বা mean velocity বলে।

ধরা যাক, কোন নির্দিষ্ট দিকে একটি বস্তুর আদিবেগ এবং শেষ বেগ । অতএব মধ্যবেগ =

প্রকৃত বেগ

[সম্পাদনা]

অতি অল্প সময়ে কোন একটি গতিশীল বস্তুর সরণ এবং ব্যয়িত সময়ের ভাগফলকে প্রকৃত বেগ বা actual velocity বলে।

আপেক্ষিক বেগ

[সম্পাদনা]

কোন বস্ত স্থির না সচল তা বুঝবার জন্য আমরা কোন স্থির বস্তুর সাথে তুলনা করে থাকি। যেহেতু এই মহাবিশ্বে পরম স্থিতিশীল কোন বস্তু পাওয়া যায় না তাই আমাদেরকে কোন বস্তুর গতি অপর কোন গতিশীল বস্তুর গতির সাথে তুলনা করে বুঝতে হয়। তাই বলা যায়, এই মহাবিশ্বের সকল গতিই আপেক্ষিক। পাশাপাশি থেমে থাকা দুটি ট্রেনের একটি চলতে শুরু করলে গতিশীল ট্রেনের যাত্রীর কাছে মনে হবে যেন পাশের ট্রেনটি উল্টোদিকে চলতে শুরু করেছে। আসলে ট্রেন দুটির মধ্যবর্তী পারস্পরিক গতির জন্য এরূপ মনে হয়। চলমান যাত্রীর সাপেক্ষে থেমে থাকা গাড়ির বেগ হচ্ছে আপেক্ষিক বেগ।

ধরা যাক, বেগে একটি নৌকা স্রোতের অনুকূলে চলছে। স্রোতের বেগ হলে, তীরে অবস্থিত কোন স্থির পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে নৌকার আপেক্ষিক বেগ হবে ( + )। যদি নৌকাটি স্রোতের প্রতিকূলে চলে, তবে এক্ষেত্রে আপেক্ষিক বেগ হবে ( - )।

অন্যান্য

[সম্পাদনা]

নিম্নের সূত্রের মাধ্যমে সময়ে দূরত্ব অতিক্রমকারী কোনো বস্তুর গড় বেগ হিসাব করা যায়,

কোন বস্তুর সময়ে অবস্থান () এবং সময়ে অবস্থান হলে গতিবেগকে নিম্নে বর্ণিত সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা যায়।

অর্থাৎ, এক মাত্রায় কোন বস্তুর গতিবেগ ঐ বস্তুর সময়ের সাপেক্ষে অবস্থানের নতিকে বোঝানো হয়।

কোন বস্তু প্রারম্ভিক গতিবেগ থেকে গতিপ্রাপ্ত হয়ে সময়ে সমত্বরণের মাধ্যমে অন্তিম গতিবেগ লাভ করলে,

সমত্বরণে গতিশীল বস্তুর গড় গতিবেগ হওয়ায় সময়ে বস্তুর অবস্থান হয় :, যেখানে

শুধুমাত্র বস্তুর প্রারম্ভিক গতিবেগ জানা থাকলে সময়ে বস্তুর অবস্থান হয় :, যেখানে

এই সমীকরণগুলিকে তোরিচেল্লির সমীকরণের মাধ্যমে একত্র করলে নিম্নলিখিত সূত্র পাওয়া যায়,

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

মূলসূত্র

[সম্পাদনা]

দুরত্ব/সময়

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]