বিষয়বস্তুতে চলুন

ডেনিস লিন্ডসে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডেনিস লিন্ডসে
১৯৬৫ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে ডেনিস লিন্ডসে
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ডেনিস থমসন লিন্ডসে
জন্ম(১৯৩৯-০৯-০৪)৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯
বেনোনি, ট্রান্সভাল, দক্ষিণ আফ্রিকা
মৃত্যু৩০ নভেম্বর ২০০৫(2005-11-30) (বয়স ৬৬)
জোহেন্সবার্গ, গটেং, দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান
সম্পর্কজনি লিন্ডসে (পিতা)
নেভিল লিন্ডসে (প্রপিতামহ)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২১৫)
৬ ডিসেম্বর ১৯৬৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৫ মার্চ ১৯৭০ বনাম অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১৯ ১২৪
রানের সংখ্যা ১১৩০ ৭০৭৪ ১৬০
ব্যাটিং গড় ৩৭.৬৬ ৩৫.৫৪ ৪০.০০
১০০/৫০ ৩/৫ ১২/২৯ -/২
সর্বোচ্চ রান ১৮২ ২১৬ ৫৭
বল করেছে - ১৭ -
উইকেট - - -
বোলিং গড় - - -
ইনিংসে ৫ উইকেট - - -
ম্যাচে ১০ উইকেট - - -
সেরা বোলিং - - -
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৫৭/২ ২৯২/৪১ ৩/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ডেনিস থমসন লিন্ডসে (ইংরেজি: Denis Lindsay; জন্ম: ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ - মৃত্যু: ৩০ নভেম্বর, ২০০৫) ট্রান্সভালের বেনোনিতে জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নর্দার্নসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ে সবিশেষ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন ডেনিস লিন্ডসে

১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছেন। সাত ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি সহযোগে ৬০৬ রান তুলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি উইকেট-রক্ষক হিসেবে ২৪ ক্যাচ তালুবন্দী করেন ও কেবলমাত্র ছয়টি বাই রান দিয়েছিলেন।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দশ বা ততোধিক টেস্টে অংশগ্রহণকারী উইকেট-রক্ষকদের মধ্যে টেস্টপ্রতি বাই রান প্রদানের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছেন ডেনিস লিন্ডসে। উইকেটের পিছনে অবস্থান করে ১৫ টেস্টে তিনি মাত্র ২০টি বাই রান দিয়েছেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষক হিসেবে প্রতি টেস্টে গড়ে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪টি বাই রান দিয়েছেন।[]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রেফারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ডেনিস লিন্ডসে। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে লিন্ডসেকে ভুলবশতঃ তার পিতা জনি লিন্ডসের ন্যায় জে.ডি. লিন্ডসে নামে পরিচিতি ঘটানো হয়েছে। তার বাবা জনি লিন্ডসে ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে তিন টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

১৯ বছর বয়সে ডেনিস লিন্ডসের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে কারি কাপের বি সেকশনে নর্থ-ইস্টার্ন ট্রান্সভালের পক্ষে প্রথম খেলেন। বেনোনিতে অনুষ্ঠিত অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩ রান করেন যা দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল। এছাড়াও উইকেট-রক্ষণেরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তবে নিম্নমূখী রানের খেলাটিতে তার দল পরাজিত হয়েছিল।[] এর পরপরই প্রাদেশিক দলটির নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান তিনি। পরের মৌসুমেই অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম সেঞ্চুরি করেন ডেনিস লিন্ডসে।

১৯৬১ সালে রয় ম্যাকলিনের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকান ফেজেলা একাদশের ১২জন উদীয়মান তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। তিনটি প্রথম-শ্রেণীর খেলার প্রথমটিতে এসেক্সের বিপক্ষে লেগ স্পিনার বিল গ্রীন স্মিথের উপর্যুপরি পাঁচ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেন।[]

নর্থ-ইস্টার্ন ট্রান্সভালের সদস্যরূপে ব্যাট ও স্ট্যাম্পের পিছনে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ডেনিস লিন্ডসেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য মনোনীত করা হয়। তন্মধ্যে, সফরের শুরুরদিকের খেলাগুলোর একটিতে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০৪ রান তুলেন। এ সময়ে কেলি সেম্যুরের সাথে জুটি গড়ে ৭৫ মিনিটে ১০৮ রান তুলেন ও দলীয় সংগ্রহকে ১৯২/৭ থেকে ৩৭৫ রানে নিয়ে যান। তিনি সবার শেষে আউট হন।[]

টেস্ট ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

চার সপ্তাহ পর প্রথম টেস্ট খেলেন। ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচ নম্বরে নামেন। নিয়মিত উইকেট-রক্ষক হিসেবে জন ওয়েট দায়িত্ব পালন করেন। একমাত্র ইনিংসটিতে তিনি করেন ১৭ রান।[] পরবর্তী দুই টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি তার। তবে, অ্যাডিলেডে চতুর্থ টেস্টে পুনরায় ফিরে আসেন। ঐ টেস্টে প্রথমবারের মতো উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা একমাত্র টেস্টে জয় পায়। একমাত্র ইনিংসে ৪১ রানসহ চারটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেন ও কেবলমাত্র একটি বাই রান দিয়েছিলেন তিনি। ব্যারি শেফার্ডের ক্যাচ তালুবন্দী করা সম্পর্কে ওয়ালি গ্রাউট মন্তব্য করেন যে, উইকেট-রক্ষক হিসেবে তার দেখা অন্যতম সেরা ক্যাচ লুফেছেন তিনি। লিন্ডসে কমপক্ষে ২০ গজ দৌড়ে বাউন্ডারি সীমানা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করেছিলেন।[] পঞ্চম টেস্ট খেলার জন্য জন ওয়েটকে দলে ফিরিয়ে আনা হলেও লিন্ডসেকে দলে রাখা হয়। ৬৫ রান করেন ও কলিন ব্ল্যান্ডকে সাথে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১১৮ রান তুলেন।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তিন টেস্টের প্রত্যেকটিতেই অংশগ্রহণ ছিল তার। তবে মাত্র ১৭.২০ গড়ে ৮৬ রান তুলেছিলেন।[]

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকান দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন ও সফরকারী ইংরেজ দলের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক খেলায় বহিঃএকাদশের বিপক্ষে খেলেন। ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে অপরাজিত ১০৭ রান করেন। এ পর্যায়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ব্ল্যান্ডের সাথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ২৬৭ রান তুলেন।[]

প্রথম তিন টেস্টে উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলার জন্য তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৮ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড দল ৫৩১ রান তুললেও তিনি কোন বাই রান দেননি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্রুত রানের প্রয়োজন পড়লেও তিনি তা করতে পারেননি। তৃতীয় টেস্টের পর ওয়েটকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাকে বাদ দেয়া হয়।

ইংল্যান্ড গমন

[সম্পাদনা]

১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। তিন টেস্টের সবকটিতেই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল তার। ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিন ঘণ্টায় ১০৫ রান তুলে দলের প্রথম সেঞ্চুরি করেন।[]

প্রথম টেস্টেও একই অবস্থানে থেকে মাঠে নামেন। ৪০ ও ২২ রান করেন তিনি। তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করাসহ মাত্র একটি বাই রান দেন। দ্বিতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পায়। ঐ টেস্টে চার ক্যাচসহ একটি স্ট্যাম্পিং করেন এবং একটি বাই রান দেন। তবে ব্যাট হাতে ও ৯ রান করেছিলেন। তৃতীয় টেস্টে এডি বার্লো’র সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামলেও মাত্র ৪ ও ১৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। সামগ্রিকভাবে সিরিজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে উইজডেন মন্তব্য করে যে, স্ট্যাম্পের পিছনেই তিনি অধিকতর উজ্জ্বল ছিলেন।[১০]

১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে ৪৭.২২ গড়ে তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৪২৫ রান তুলেন। এরফলে কারি কাপের খ বিভাগ থেকে নর্থ-ইস্টার্ন ট্রান্সভালের জয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন।

অস্ট্রেলিয়ার আগমন, ১৯৬৬-৬৭

[সম্পাদনা]

১৯০২-০৩ মৌসুম থেকে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দল টেস্ট সিরিজ খেলতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করে ২১ টেস্টে অংশ নেয় ও কোন টেস্টেই পরাজিত হয়নি। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকানরা ভাবতে শুরু করে যে, এবার হয়তোবা প্রথম সফলতা লাভের সূবর্ণ সুযোগ এসেছে।

শুরুতে লিন্ডসেকে খেলার জন্য বিবেচনায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। ১৯৬৫ সালে ডেনিস গ্যামসি ইংল্যান্ড গমন করলেও কোন টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। তবে নাটালের পক্ষে স্ট্যাম্পের পিছনে চমৎকার খেলেছিলেন। ঐ মুহুর্তে লিন্ডসের টেস্ট ব্যাটিং গড় মাঝারিমানের ছিল। ১২ টেস্টে ২১.৮৪ গড়ে ৪১৫ রান তুলেছিলেন। কিন্তু ঘরোয়া মৌসুমের প্রথম খেলায় ট্রান্সভাল বি দলের বিপক্ষে ২১৬ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংসের কল্যাণে প্রথম টেস্ট শুরুর তিন সপ্তাহ পূর্বে চারদিনের খেলায় অংশগ্রহণের জন্য সফরকারী অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ঐ খেলায় ৩০ ও ৬৮ রান তুলে স্বাগতিক দলকে সহজ জয় এনে দেন ও টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার অগ্রযাত্রায় আত্মবিশ্বাস এনে দেন।[১১]

জোহেন্সবার্গে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে পিটার ভ্যান ডার মারউই টসে জয়লাভ করে দলকে ব্যাটিংয়ে নামান। কিন্তু লিন্ডসে মাঠে নামার পূর্বেই দক্ষিণ আফ্রিকা দল খুব দ্রুত ৪১/৫ সংগ্রহ করে। ১০১ বলে ৬৯ রান করেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে টাইগার ল্যান্সের সাথে জুটি গড়ে ১১০ রান যুক্ত করেন। তাস্বত্ত্বেও, দক্ষিণ আফ্রিকা দল ১৯৯ রানে অল-আউট হয়েছিল। এরপর অস্ট্রেলিয়া দল ৩২৫ রান তুলে। ডেনিস লিন্ডসে ছয়টি ক্যাচ নিয়ে টেস্ট রেকর্ডের ভাগীদার হন। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা দল আরও সফলতার মুখ দেখে। ২৬৮/৫ থাকাবস্থায় স্বাগতিক দল মাত্র ১৪২ রানে এগিয়েছিল। এ অবস্থায় লিন্ডসে ল্যান্সের সাথে ৮১ রান ও ফন দার মারউইর সাথে ২২১ রানের জুটি গড়েন। অগণিত ক্যাচ না নেয়ার খেসারত গুণতে হয় অস্ট্রেলিয়া দলকে। ২২৭ বল মোকাবেলা করে ২৫ চার ও ৫ ছক্কা সহযোগে ১৮২ রান তুলেন তিনি। অবশেষে ৬২০ রানের দলগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। এরপর লিন্ডসে আরও দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করে অস্ট্রেলিয়াকে ২৬১ রানে গুটিয়ে দিতে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন ও ২৩৩ রানে জয় পায় স্বাগতিক দল।[১২] এ খেলায় একটিও বাই রান দেননি ডেনিস লিন্ডসে। প্রথম উইকেট-রক্ষক হিসেবে এক ইনিংসে সেঞ্চুরির পাশাপাশি একই টেস্টে পাঁচটি ডিসমিসালের রেকর্ড গড়েন।[১৩][১৪]

এর পরপরই কেপটাউনে দ্বিতীয় টেস্টের আয়োজন করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সংগৃহীত ৫৪২ রানের বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫৩ রান তুলে। লিন্ডসে মাত্র ৫ রান করতে পেরেছিলেন। ডেভিড রেনেবার্গের বলটি ব্যাট স্পর্শ করে ডেনিস লিন্ডসের কপালে লেগে বোলারের হাতে চলে যায়। তাকে আহত অবস্থায় মাঠের বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছিল। ফলো-অনের কবলে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬০/৪ করে। মাথায় ব্যান্ডেজ পরিহিত অবস্থায় খেলতে নেমে ১৩৪ বলে ৮১ রান তুলেন। ল্যান্সের সাথে মূল্যবান ১১৯ রান যুক্ত করেছিলেন তিনি। এরফলে দল ৩৬৭ রান তুলতে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া ১৬০/৪ তুলে ছয় উইকেটে জয় পেয়ে সিরিজে সমতা নিয়ে আসে। খেলায় লিন্ডসে তিনটি ক্যাচ নেন ও কেবলমাত্র দুইটি বাই রান দেন।[১৫][১৬]

তিন সপ্তাহ পর ডারবানের তৃতীয় টেস্টে আবারও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। লিন্ডসে মাঠে নামার পূর্বেই দলের সংগ্রহ ৯৪/৬ হয়। লিন্ডসে করেন ১৩৭ রান। সপ্তম উইকেটে ভ্যান ডার মারউইকে সাথে নিয়ে ১০৩ ও ডেভিড পিদি’র সাথে অষ্টম উইকেটে ৮৯ রানের জুটি বেঁধে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩০০ রানের সংগ্রহ এনে দেন। উভয় ইনিংসে তিনটি করে ক্যাচ নেন। অস্ট্রেলিয়া ১৪৭ ও ৩৩৪ রান তুললে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। অন্য কোন ব্যাটসম্যানই খেলায় সেঞ্চুরি পাননি।[১৭][১৮]

জোহেন্সবার্গের চতুর্থ টেস্টেও একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। তবে বৃষ্টির কারণে অস্ট্রেলিয়া দল নিশ্চিত পরাজয় থেকে পরিত্রাণ পায়। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়া দল ১৪৩ রানে গুটিয়ে যায়। ১২০/৪ থাকাবস্থায় লিন্ডসে মাঠে নেমে ৪৮ মিনিটে অর্ধ-শতক ও এক ঘণ্টা পর শতক তুলে নেন। উইজডেনের ভাষ্য মোতাবেক জানা যায়, তিনি সকল বোলারকে হুক ও ডাইভে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন। খেলায় অন্য কেউ ছক্কা হাঁকাতে না পারলেও লিন্ডসে একাই চারটি ছক্কা হাঁকান। তন্মধ্যে, ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সংগৃহীত জুটিতে ১৭৯ রানের মধ্যে তিনিই করেন ১৩১ রান। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ট্রেভর গডার্ড। ৩২২/৯ তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ঘোষণা করে ও অস্ট্রেলিয়াকে ১৪৮/৮-এ পরিণত করে। তখনো দলটি ৩১ রানে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু মুষলধারায় বৃষ্টি পরলে খেলা শেষ হয়ে যায়। এ খেলায় লিন্ডসে তিনটি ক্যাচ নেন ও কোন বাই রান দেননি।[১৯][২০]

সিরিজ সমান থাকা অবস্থায় পোর্ট এলিজাবেথে পঞ্চম টেস্টে মাঠে নামে উভয় দল। ফন দার মারউই টসে জয়ী হয়ে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৭৩ রানে অল-আউট হয় অস্ট্রেলিয়া দল। লিন্ডসে দুইটি ক্যাচ নেন। জবাবে ২৭৬ রানে অল-আউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনি করেন মাত্র ১ রান। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ২৭৮ রান তুললে তিনি আরও দুই ক্যাচ নিয়ে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে ব্যাটিং করতে হয়নি। এরপূর্বেই স্বাগতিকরা ১৭৯/৩ তুলে খেলায় জয়লাভের পাশাপাশি সিরিজ জয় করে নেয়। ঐ খেলায় আরও একবার বাই রান প্রদান না করার অবস্থায় ছিলেন।[২১][২২]

অর্জনসমূহ

[সম্পাদনা]

সিরিজে উইকেট-রক্ষক হিসেবে ৬০৬ রান তুলে রেকর্ডটিকে অদ্যাবধি নিজের করে রেখেছেন। সামগ্রিকভাবে রান রেটের প্রকৃত পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও আর.এস. হুইটিংটনের মতে, চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত সিরিজে ৮১৬ রান মোকাবেলা করে ৫৮৫ রান তুলেছিলেন ও প্রতি ১০০ বলে ৭১ রান করেছেন।[২৩] সিরিজে ২৪টি ডিসমিসাল ঘটিয়ে জন ওয়েটের ২৬ ডিসমিসালের পর ডেরেক মারের সাথে যৌথভাবে তৎকালীন দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করেন। সিরিজে সবচেয়ে কম বাই রান করার কীর্তিগাঁথা গড়েন। পাঁচ টেস্টের সিরিজে মাত্র ছয়টি বাই প্রদান করার মাধ্যমে রেকর্ড গড়েছেন ডেনিস লিন্ডসে।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে তিন খেলার সিরিজে কেবলমাত্র চারটি বাই রান দিয়েছেন। ১৯৬৫ সালে তিন টেস্টে মাত্র দুইটি বাই রান দেন। এছাড়াও ১৯৬৯-৭০ মৌসুমের দুই টেস্টে কোন বাই রান দেননি। শেষ তেরো টেস্টে ৬৩টি বাই দিলেও শেষ চার টেস্টে কোন বাই রান দেননি।[২৪]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "The unsung heroes behind the stumps"
  2. North Eastern Transvaal v Orange Free State 1958-59
  3. Wisden 1962, p. 727.
  4. Wisden 1965, p. 825.
  5. Australia v South Africa, Brisbane 1963-64
  6. Wally Grout, My Country's Keeper, Pelham, London, 1965, p. 123.
  7. Denis Lindsay Test batting by season
  8. South Africa v The Rest 1964-65
  9. Wisden 1966, p. 304.
  10. Wisden 1966, p. 299.
  11. Wisden 1968, p. 838.
  12. "1st Test: South Africa v Australia at Johannesburg, Dec 23-28, 1966 | Cricket Scorecard | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  13. "Records | Test matches | All-round records | A hundred and five dismissals in an innings | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  14. "South Africa v Australia-1st test"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  15. "2nd Test: South Africa v Australia at Cape Town, Dec 31, 1966 - Jan 5, 1967 | Cricket Scorecard | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  16. "South Africa v Australia-2nd test"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  17. "3rd Test: South Africa v Australia at Durban, Jan 20-25, 1967 | Cricket Scorecard | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  18. "South Africa v Australia-3rd test"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  19. "4th Test: South Africa v Australia at Johannesburg, Feb 3-8, 1967 | Cricket Scorecard | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  20. "South Africa v Australia-4th test"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  21. "5th Test: South Africa v Australia at Port Elizabeth, Feb 24-28, 1967 | Cricket Scorecard | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  22. "South Africa v Australia-5th test"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-২৭ 
  23. R.S. Whitington, Simpson's Safari, Heinemann, 1967, p.179.
  24. All the above statistics are derived from scorecards and statistical tables in Wisden Cricketers' Almanack (various editions) and www.espncricinfo.com.

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]