বেলুচিস্তান (পাকিস্তান)
বেলুচিস্তান بلوچستان | |
---|---|
প্রদেশ | |
![]() | |
![]() বেলুচিস্তানের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩০°০৭′ উত্তর ৬৭°০১′ পূর্ব / ৩০.১২° উত্তর ৬৭.০১° পূর্বস্থানাঙ্ক: ৩০°০৭′ উত্তর ৬৭°০১′ পূর্ব / ৩০.১২° উত্তর ৬৭.০১° পূর্ব | |
দেশ | পাকিস্তান |
প্রতিষ্ঠিত | ১লা জুলাই, ১৯৭০ |
প্রাদেশিক রাজধানী | কুয়েটা |
বৃহত্তম শহর | Quetta |
সরকার | |
• ধরন | প্রদেশ |
• শাসক | প্রাদেশিক পরিষদ |
• গভর্নর | মুহাম্মদ খান আচাকজাই |
• মুখ্যমন্ত্রী | আসলাম রাইসানি (পিপিপি) |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৪৭,১৯০ বর্গকিমি (১,৩৪,০৫০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৭৯,১৪,০০০ |
• জনঘনত্ব | ২৩/বর্গকিমি (৫৯/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | পিকেটি (ইউটিসি+৫) |
প্রধান ভাষাসমূহ | উর্দু (জাতীয়), বেলুচি (প্রাদেশিক), পশতু |
প্রাদেশিক পরিষদ আসন | ৬৫ |
জেলা | ৩০ |
ইউনিয়ন পরিষদ | ৮৬ |
ওয়েবসাইট | http://www.balochistan.gov.pk |
বেলুচিস্তান (বেলুচি ও উর্দু ভাষায়: بلوچستان) দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের বৃহত্তম এই প্রদেশটির আয়তন ৩,৪৭,১৯০ বর্গকিলোমিটার এবং এটি পাকিস্তানের মোট আয়তনের প্রায় ৪৮% গঠন করেছে। বেলুচি জাতির লোকদের নামে অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে। এর পশ্চিমে ইরান (ইরানি বেলুচিস্তান), উত্তরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল, পূর্বে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশ এবং দক্ষিণে আরব সাগর।
বেলুচিস্তান অঞ্চলটি মূলত বৃহত্তর ইরানীয় মালভূমির পূর্ব প্রান্ত। এর প্রায় পুরোটাই পর্বতময়। কিছু কিছু পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৬০০০ ফুটেরও বেশি। বেলুচিস্তানের ভূমিরূপ ঊষর ও রুক্ষ। বনজঙ্গলের পরিমাণ খুবই কম এবং গাছপালার আকৃতি খর্ব। বেলুচিস্তানের ৯৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল থাকলেও পোতাশ্রয়ের সংখ্যা খুব কম। দক্ষিণের উপকূলীয় মাকরান এলাকা বাদে বেলুচিস্তানের সর্বত্র উপক্রান্তীয় মহাদেশীয় জলবায়ু বিরাজ করে। শীত ও গ্রীষ্মে তাপমাত্রা চরমে পৌঁছে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম। বাৎসরিক গড়ে মাত্র ২০০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়।
বেলুচিস্তানের হাতে গোনা কিছু উর্বর উপত্যকায় যব, বার্লি, গম, ধান, আলফালফা এবং বিভিন্ন ফলফলাদি বড় পরিমাণে উৎপাদন করা হয়। ভেড়া, ছাগল, উট, গরু বাছুর, গাধা এবং ঘোড়াও পালন করা হয়।
মাকরান উপকূলে অবস্থিত গোয়াদার শহরটি বেলুচিস্তানে অঞ্চলের জন্য সমুদ্র বন্দর হিসেবে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে পাকিস্তান সরকার গোয়াদারে চীনা সহায়তায় একটি বড় বন্দর ও নৌঘাঁটি নির্মাণে রত।[১]
বেলুচিস্তানকে খনিজ সম্পদের দিকে থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। সিন্ধ প্রদেশের পরে এই প্রদেশ থেকেই পাকিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাসের ২য় সর্বোচ্চ যোগান আসে। সম্প্রতি বেলুচিস্তানের চাগাই জেলার রেকো-দিক শহরের কাছে বিশ্বের বৃহত্তম সোনা ও তামার মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে।
বেলুচিস্তানের উত্তর-পূর্ব কোণায় অবস্থিত কুয়েতা শহর প্রদেশটির রাজধানী; এটি বেলুচিস্তানের বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনবহুল শহর। বেলুচিস্তানে প্রায় ১ কোটি লোকের বাস। এখানকার লোকেরা মূলত বেলুচি, ব্রাহুই, সিন্ধি, উর্দু এবং ফার্সি ভাষাতে কথা বলে। প্রদেশের বেশির ভাগ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী। অবকাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দিক থেকে প্রদেশটি পাকিস্তানের বাকী প্রদেশগুলির তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির লোক ভ্রমণ, বাণিজ্য ও যুদ্ধবিজয়ের সূত্রে বেলুচিস্তানের সংস্পর্শে এসেছে। অঞ্চলের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যেগুলির বেশির ভাগই এখনও ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। কোয়েতা শহরের কাছে অবস্থিত পিশিন উপত্যকাটির কথা জরথুষ্ট্রীয় ধর্মের ধর্মগ্রন্থ অবেস্তাতে লেখা আছে। গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোদোতুস এবং গ্রিক ভূগোলবিদ স্ত্রাবো তাদের লেখাতে বেলুচিস্তানের উল্লেখ করেছেন; তারা অঞ্চলটিকে গেদ্রোসিয়া হিসেবে জানতেন। বেলুচিস্তানে এখনও অনেক প্রাচীন ইতিহাস লোকমুখে প্রচলিত। লোক ইতিহাস অনুসারে আসিরিয়ার রাণী সেমিরামিস এবং পারস্যের রাজা সিরুসের সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে হারিয়ে যায়।
ম্যাসেডোনিয়ার রাজা মহাবীর আলেকজান্ডার ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অঞ্চলটি বিজয় করেন। এর পরবর্তী শতকগুলিতে অঞ্চলটি পারস্য কিংবা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন শাসকের অধীন ছিল। ৭ম শতকে আরবেরা বেলুচিস্তান দখল করে। এরপর গাজনাভিদ, গোরি এবং মঙ্গোলেরা পরপর অঞ্চলটি শাসন করে। ১৭শ শতকে কিছু সময়ের জন্য এলাকাটি মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। পরে আবার এটি পারস্যের অধীনে আসে।
১৯শ শতকের শুরুর দিকে বেলুচিস্তান ব্রিটিশ রাজনৈতিক প্রভাবের অধীন হয়। সেসময় গোত্রপ্রধানেরা অঞ্চলটি শাসন করতেন। ১৮৩৮-১৮৪২ সালের প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে ব্রিটিশরা অঞ্চলটি দখলে নিয়ে নেয়। ১৮৪১ সালে তারা সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ১৮৫৪ ও ১৮৭৬ সালে চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের সাথে বেলুচিস্তানের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। ১৮৭৭ সালে পাঁচটি জেলা নিয়ে ব্রিটিশ ভারতের বেলুচিস্তান প্রদেশ গঠন করা হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে সম্মত হয়। ১৯৫২ সালে বেলুচিস্তান ছিল পাঁচটি জেলা ও চারটি প্রাক্তন রাজ্যের সমষ্টি। জেলাগুলি হল কুয়েতা-পিশিন, সিবি, জোব, লোরালাই, এবং চাগাই। আর প্রাক্তন রাজ্যগুলি হল কালাত, লাস-বেলা, খারান এবং মাকরান। ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে বাকী প্রদেশ ও রাজ্যগুলির সাথে বেলুচিস্তানকে যুক্ত করে পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশ গঠন করা হয়। ১৯৫৮ সালে কালাত রাজ্যের শাসক বা খান এই সংযোজন প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করেন, কিন্তু তার এই বিদ্রোহ শিঘ্রই দমন করা হয়।
১৯৬১ সালে পাকিস্তানের রাজধানী করাচি থেকে সরিয়ে অন্তর্বর্তী রাজধানী রাওয়ালপিন্ডিতে নেওয়া হয়। এ সময় লাস-বেলা রাজ্যকে করাচির সাথে যুক্ত করা হয়। বেলুচিস্তানের বাকী অংশকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। একটি হল কুয়েতা, যা মূলত প্রাক্তন ব্রিটিশ বেলুচিস্তান। এবং অন্য অংশটি হল কালাত, যা কালাত, মাকরান ও খারান রাজ্যগুলি নিয়ে গঠিত। ১৯৬২ সালে কালাতের খান পুনরায় শাসনক্ষমতা ফিরে পান, কিন্তু ১৯৭০-এর দশকে মাঝামাঝি পর্যন্ত সরকারি সেনা এবং গোত্র গেরিলা দলগুলির মধ্যে যুদ্ধ-সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানকে নতুন করে চারটি প্রদেশে ভাগ করা হয়, এবং তখন থেকে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের একটি প্রদেশ।