লক্ষ্মণ দাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

লক্ষ্মণ দাস (ইংরেজি: Laxman Das) একজন কুস্তিগীর, ভার উত্তোলক, সার্কাস অভিনেতা এবং রয়েল পাকিস্তান সার্কাসের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।[১] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করে।[২]

প্রাথমিক ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

লক্ষ্মণ দাসের জন্ম বৃহত্তর বরিশাল জেলার উত্তর পারলদী গ্রামে, বর্তমানে এটি বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলায় । পেশা জীবনের শুরুর দিকে দাস ছিলেন খ্যাতনামা কুস্তীগির এবং ভারোত্তোলনকারী। তিনি কিছুটা জাদু দেখাতেও জানতেন। তিনি স্কুল-কলেজে বিনা পারিশ্রমিতে কৌতুক করতেন। তার মামা তাকে লায়ন সার্কাসে ভর্তি করান।[২] লায়ন সার্কাসে লক্ষ্মণ দাস দাঁত ব্যবহার করে লোহার রড কাটা, ঘাড় ব্যবহার করে লোহার রড বাঁকানো, ভারোত্তোলন, জ্যাভেলিন নিক্ষেপ করা এবং ডেগার বোর্ডের মতো বিরল অভিনয় করেছিলেন।[২] ১৯৪৮ সালে লক্ষ্মণ দাস রয়্যাল পাকিস্তান সার্কাস নামে পরিচিত একটি নিজস্ব সার্কাস গঠন করেছিলেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাসের বাড়ির সংলগ্ন গৌরনদী কলেজে একটি সামরিক শিবির স্থাপন করেছিল। তার সহযোগীরা অভিযোগ করেছিলেন তিনি সার্কাসের আড়ালে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন।  সামরিক অভিযানের ভয়ে দাস তার পরিবার নিয়ে বরিশাল জেলার বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলায় কোডালধোয়ায় পালিয়ে যান এবং সার্কাসের সরঞ্জামাদি এবং হাতি, বাঘ, ভালুক এবং হরিণ সহ প্রশিক্ষিত প্রাণী রেখে যান। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তার স্রকল ঞ্জাম লুট করে মধুবালা নামে হাতি সহ রয়েল পাকিস্তান সার্কাসের তারকা অভিনেতা সহ সমস্ত প্রাণীকে হত্যা করে।

দাস পরিবার কোডালধোয়া গ্রামের কাছে কেতনার বিলে নৌকায় থাকতে শুরু করেন।  জুনে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী কোডালধোয়া আক্রমণ করেছিল। সৈন্যরা যখন নৌকায় দাস পরিবারের পিছনে আক্রমণ করে, তখন তারা পালানোর জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দাসের দুই পুত্র সাঁতার কেটে আত্ম সুরক্ষা করতে পারলেও লক্ষ্মণ দাস ও তার স্ত্রীকে সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করেছিল।[৩] সৈন্যরা সোনা সহ তার সকল গহনা লুট করে নিয়েছিল।[২]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে লক্ষ্মণ দাসের ছেলে অরুণ এবং বীরেন একসাথে এসে আবার সার্কাস গঠন করেন। তাদের বাবার স্মরণে সার্কাসটির নাম দেওয়া হয়েছিল লক্ষ্মণ দাশ সার্কাস।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সাইমন জাকারিয়া (২০১২)। "সার্কাস"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. Maroof, Taufique। "লক্ষ্মণ দাসের পুনর্জন্ম"Kaler Kantho (Bengali ভাষায়)। Dhaka। ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৩ 
  3. "আজো উপেক্ষিত কেতনার বিলের বধ্যভূমি"capitalnews24.com (Bengali ভাষায়)। ২১ ডিসেম্বর ২০১২। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]