পরৈকোড়া গণহত্যা

স্থানাঙ্ক: ২২°১৪′ উত্তর ৯১°৫৬′ পূর্ব / ২২.২৩৩° উত্তর ৯১.৯৩৩° পূর্ব / 22.233; 91.933
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরৈকোড়া গণহত্যা
পরৈকোড়া গণহত্যা বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
পরৈকোড়া গণহত্যা
স্থানআনোয়ারা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
স্থানাংক২২°১৪′ উত্তর ৯১°৫৬′ পূর্ব / ২২.২৩৩° উত্তর ৯১.৯৩৩° পূর্ব / 22.233; 91.933
তারিখ২১ মে ১৯৭১ (ইউটিসি+৬:০০)
লক্ষ্যবাঙ্গালী হিন্দু
হামলার ধরনগণহত্যা
ব্যবহৃত অস্ত্ররাইফেল
নিহত১৭৬ জন পুরুষ সহ মোট ২৭৬ জন
হামলাকারী দলপাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার

পরৈকোড়া গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের পরৈকোড়া, বাথুয়াপাড়া ও পূর্বকন্যারা গ্রামে স্থানীয় চিহ্নিত রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী দ্বারা  বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বাঙ্গালী হিন্দুদের উপর সংগঠিত হত্যাকান্ডকে বোঝায়।[১] হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত উক্ত তিন গ্রামে ২২টি জমিদার পরিবার বসবাস করত। ১৯৭১ সালের ২১ মে সকাল ১০টা হতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সামরিক বহর সহ ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনা হত্যালীলা চালায়। ১৭৬ জন পুরুষ সহ মোট ২৭৬ হত্যাকাণ্ডে মারা যান।[২][৩]

পটভূমি[সম্পাদনা]

পরৈকোড়া, বাথুয়াপাড়া ও পূর্বকন্যারা গ্রাম হিন্দু অধ্যুষিত সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল। ১৯৭১ সালে, যখন পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে এবং হিন্দুদের উপর গণহত্যা শুরু করে, তখন হাজার হাজার হিন্দু ভারত পালিয়ে যেতে শুরু করে।[৪] চট্টগ্রাম শহরের অনেক হিন্দু ব্যবসায়ী একাত্তরের মার্চে তাঁদের পরিবার–পরিজন নিয়ে পড়ইকোরায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। গ্রামের বাসিন্দা ও শহর থেকে আসা লোকজনের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা পাহারার সশস্ত্র ব্যবস্থা করেন। রাজাকার খায়ের আহমদ চৌধুরী ওরফে খয়রাতি মিয়া চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে পাকিস্তািন বাহিনীকে এই তথ্য দেয়। ২১ মে পাকিস্তানি বাহিনী পড়ইকোরা ঘেরাও করলে সে তাদের স্বাগত জানায়।[৩]

ঘটনাবলী[সম্পাদনা]

২১ মে সকাল ৯ টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে পাকিস্তানি সৈন্য ৩৭ টি সৈন্যবোঝাই ট্রাক ও অন্যান্য গাড়ি পড়ৈকোড়া, বাথুয়াপাড়া ও পূর্বকন্যারা গ্রামে প্রবেশ করে।[১] এলাকার কুখ্যাত রাজাকার ও মুসলীম লীগ নেতা খয়রাতি মিয়া (খায়ের আহমদ চৌধুরী) ও তার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে গ্রামে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।[২] পাকবাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে পরৈকোড়া হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলাশুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারাও প্রতিরোধ শুরু করে এবং তাদের প্রতিরোধের মুখে কমপক্ষে ৩ জন রাজাকার মারা যায়। অতর্কিত প্রতিরোধের ফলে পাকবাহিনী প্রথমে প্রায় ঘণ্টাদুয়েক আক্রমণ বন্ধ রেখে পরে আরো সৈন্য ও রাজাকারদের নিয়ে তীব্রভাবে আক্রমণ চালায়। নির্বিচারে গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গুলি ও ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে কুপিয়ে পুরুষদের হত্যা করা হয়। হিন্দু নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। হিন্দু বাড়ি থেকে হরণ করে নেওয়া গবাদি পশু দিয়ে রাজাকার খয়রাতি মিঞা পাকিস্তান বাহিনীর জন্য ভোজের আয়োজন করে।[৫]

বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রতিবছর ২১মে পরৈকোড়া গণহত্যা দিবস হিসাবে স্মরণ করা হয়।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "পড়ৈকোড়া গণহত্যা দিবস আজ : শহীদের নামে স্মৃতিস্তম্ভ নেই, আছে রাজাকারের নামে সড়ক"web.archive.org। ২০২০-১১-০৪। Archived from the original on ২০২০-১১-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৪ 
  2. "চট্টগ্রামে আনোয়ারায় পরৈকোড়া গণহত্যা দিবসে এক মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের সন্তানের ক্ষোভ: মুক্তিযোদ্ধা-শহীদদের নামে সড়ক হয়না কিন্তু ঘাতক রাজাকারের নামে সড়ক স্বাধীন বাংলাদেশে !"web.archive.org। ২০২০-১১-০৪। Archived from the original on ২০২০-১১-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৪ 
  3. জামাল উদ্দীন। আনোয়ারায় একাত্তর, গণহত্যা ও মুক্তিযোদ্ধা। ৪০ মোমিন রোড, কদম মোবারক মাকের্ট, চট্টগ্রাম: বলাকা প্রকাশন। 
  4. শর্মিলা বোস Anatomy of Violence: Analysis of Civil War in East Pakistan in 1971: Military Action: Operation Searchlight ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ মার্চ ২০০৭ তারিখে ইকোনমিক এন্ড পলিটিক্যাল উইকলি বিশেষ নিবন্ধ, অক্টোবর ৮, ২০০৫
  5. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রতিরোধ ও গণহত্যা"প্রথম আলো। ২০২০-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-০৪