দ্বিতীয় ভাস্কর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিতীয় ভাস্করের মতে পৃথিবীর ব্যাস ১৫৮১ যোজন

ভাস্কর[১] (এছাড়াও ভাস্করাচার্য নামে এবং প্রথম ভাস্কর (১১১৪–১১৮৫)-এর সাথে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য দ্বিতীয় ভাস্কর হিসেবে পরিচিত) ছিলেন একজন ভারতীয় গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি ভারতের বিজাপুরে (বর্তমানে কর্ণাটক) জন্মগ্রহণ করেন।[২]

১৯৮১ সালের ২০ নভেম্বর ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা থেকে দ্বিতীয় ভাস্কর নামে একটি কৃত্তিম উপগ্রহ ছাড়া হয়।

জীবনী[সম্পাদনা]

ভাস্কর তাঁর জন্ম এবং প্রধান কাজের তারিখ সম্পর্কে আর্য মিটারের একটি পঙক্তিতে বর্ণনা করেন:[৩]

রস-গুণ-পূর্ণ-মহীসম
শক-নৃপ সময়েঽভবত মমোত্পত্তিঃ।
রস-গুণ-বর্ষেণ ময়া
সিদ্ধান্ত-শিরোমণী রচিতাঃ॥

এই থেকে ধারণা প্রকাশ পায় যে তিনি ১০৩৬ শকাব্দে (১১১৪ খ্রিস্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৩৬ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত শিরোমণি রচনা করেন।[৩] তিনি ৬৯ বছর বয়সে (১১৮৩ খ্রিস্টাব্দে) করন-কুতূহল নামক অন্য আরেকটি রচনা তৈরি করেন।[৩] তার কাজসমূহে ব্রহ্মগুপ্ত, শ্রীধর, মহাবীর, পদ্মনাভ এবং অন্যান্য পূর্বসুরীদের প্রভাব দেখা যায়।[৩]

ভাস্কর কর্ণাটকের বিজ্জবিড় শহরে বসবাস করতেন। এ শহরের নাম পরিবর্তন করে বিজাপুর রাখা হয়। শহরটি পশ্চিমঘাটে সহ্য পর্বতের কাছাকাছি। তার বাবা দৈবজ্ঞচূড়ামণি মহেশ্বর উপাধ্যায়। এসব তথ্য জানা যায় একটা তামার ফলক থেকে। ফলকটি নাসিক থেকে সত্তর মাইল দূরে চালিস গাঁ নামে এক জায়গায় ভাউদাজি আবিষ্কার করেন। ভস্করের পিতাও ছিলেন একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি।[৪]

অবদান[সম্পাদনা]

সিদ্ধান্তশিরমনি[সম্পাদনা]

ভাস্করের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা 'সিদ্ধান্ত-শিরমণি'(১১৫০)।[৫] ছত্রিশ বছর বয়সে তিনি এই বই লিখেন। 'করণ কুহুতল' ও 'সর্বতোভদ্র' বই দুটিও তার রচনা। 'সিদ্ধান্ত-শিরমণি' বইটিতে রয়েছে চারটি খণ্ড - লীলাবতী, বীজগণিত, গ্রহ গণিতাধ্যায় ও গোলধ্যায়।

লীলাবতী[সম্পাদনা]

সিদ্ধান্ত শিরমনি বইয়ের একটি খণ্ডের নাম লীলাবতী। লীলাবতী খণ্ডটি নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। লীলাবতী ও বীজগণিত হচ্ছে গণিতের বই। লীলাবতী সম্ভবত ভাস্করের কন্যা ছিলেন।ধারণা করা হয় খুব অল্প বয়সে বিধবা হয়ে তিনি বাবার ঘরে চলে আসেন।ভাস্কর তাকে ধীরে ধীরে পাটিগণিত শেখান। তখনই তিনি বইটি লিখেন। মেয়ের নামে নাম দেন। আর এক মতে, ভাস্করের কোন মেয়ে ছিল না। তার স্ত্রীর নাম ছিল লীলাবতী। তার স্মরণে তিনি বইটির নাম দেন। তবে বইয়ের নানা জায়গায় এমন কিছু সম্বোধন আছে যে অনেকে ভাবছেন লীলাবতী এক কাল্পনিক নাম। কোথাও বলেছেন- 'অয়ি বালে লীলাবতী', কোথাও সখে, কান্তে, বৎসে বলে সম্বোধন করেছেন। লীলাবতী লেখার ধরনটা কথপকথন। কথা বলতে বলতে অঙ্ক শেখাচ্ছেন। লীলাবতী শব্দটির অর্থ গুণসম্পন্না।

বীজগণিত[সম্পাদনা]

'লীলাবতী'-তে ব্রহ্মগুপ্ত, শ্রীধর ও পদ্মনাভের নাম উল্লেখ আছে। শ্রীধর দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের যে উপায় বার করেছিলেন। পদ্মনাভের বীজগণিতের কথা আমরা প্রথম ভাস্করের রচনা থেকে জানতে পারি।

  • ভাস্কর যখন বীজগণিতের আলোচনা করেছিলেন কোন রাশিকে শূন্য দিয়ে ভাগ দিলে কী হয় বলেছেন।
  • তিনিই বলেছেন, ঋণাত্মক রাশিকে ঋণাত্মক রাশি দ্বারা গুন করলে ফলটি হবে ধনাত্মক। কিন্তু ঋণাত্মক রাশিকে ধনাত্মক রাশি দ্বারা গুন করলে ফল হবে ঋণাত্মক।
  • এখন অজ্ঞাত রাশি বলতে আমরা 'X' বসানো হয়। ভাস্কর মনেকরতেন দেবনাগরি কোন বর্ণ দ্বারা অজ্ঞাত রাশি চিহ্নিত হোক।
  • নানারকমের দ্বিঘাত সমীকরণকে পাল্টে নিয়ে একটা সাধারণ আকার দিয়ে এরপর সমাধানের উপায় বলেছিলেন তিনি। কিছু বিশেষ ধরনের ত্রিঘাত সমীকরণেরও সমাধান করেন তিনি।[৬]

জ্যামিতি ও পরিমিতি[সম্পাদনা]

জ্যামিতিতে ভাস্করের অবদান উল্লেখযোগ্য।

  • সমকোণী ত্রিভুজ আর সুষম বহুভুজ নিয়ে তিনি 'পাই'-এর মান বের করেছিলেন ৩.১৪১৬৬৬।
  • কোন যন্ত্র ছাড়াই, ৩৮৪ বাহুর এক বহুভুজের কল্পনা করেছিলেন ভাস্কর!
  • তিনি গোলকের তলের পরিমাণ ও আয়তন নির্ণয় করেছিলেন। করতে গিয়ে গোলকটিকে ছোট ছোট করে ভাগ করে নিয়েছেন ও পরে যোগ করেছেন। বিষয়টা নিউটনের আবিষ্কৃত ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসের মতোই অনেকটা।[৭] তবে নিউটন এসেছিলেন আরও পাঁচশো বছর পর।[৮]

জ্যোতির্বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

  • ভাস্কর গ্রহের গতি পরিমাপ করেছিলেন ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের মূলনীতিকে ব্যবহার করে।
  • গ্রহের তাৎক্ষণিক গতিও মেপেছিলেন।
  • সময়কে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পরিমাণে ভাগ করেছিলেন।
  • তিনি রোলের উপপাদ্যের একটি আদি রুপ ব্যবহার করেন-

যদি f(a)=f(b)=0 তাহলে, f’(x)=0 যখন a is less than x SPamp x is less than b একে অন্তরকলন বলা হয়!।

  • এক সেকেন্ড সময়কে তিনি ৩৪০০০ ভাগে ভাগ করেছিলেন নাম দিয়েছিলেন 'ত্রুটি'।

ত্রিকোণমিতি[সম্পাদনা]

'ত্রিকোণমিতি'-তে সাইন, কোসাইন এসবের নানা ডিগ্রি কোণের প্রতিটির একটি নির্দিষ্ট মান থাকেে। এ সকল মানের জন্য একটি সারণি আছে।

এই সারনি তৈরির কাজটি করেছিলেন ভাস্কর। ভাস্কর ১ ডিগ্রি অন্তর অন্তর কোণের সাইন কোসাইন বের করেছিলেন।

পদার্থ বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

তরলের পৃষ্ঠটান ধর্মে সম্পর্কে ভাস্কর আলোচনা করেছেন।

টীকা[সম্পাদনা]

  1. Pingree 1970, পৃ. 299।
  2. Mathematical Achievements of Pre-modern Indian Mathematicians by T.K Puttaswamy p.331
  3. S. Balachandra Rao (জুলাই ১৩, ২০১৪), "ನವ ಜನ್ಮಶತಾಬ್ದಿಯ ಗಣಿತರ್ಷಿ ಭಾಸ್ಕರಾಚಾರ್ಯ ‍", Vijayavani, পৃষ্ঠা 17, এপ্রিল ১০, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১০, ২০১৪ 
  4. S. Balachandra Rao (July 13, 2014), "ನವ ಜನ್ಮಶತಾಬ್ದಿಯ ಗಣಿತರ್ಷಿ ಭಾಸ್ಕರಾಚಾರ್ಯ ‍", Vijayavani: 17
  5. Plofker 2009, p. 71.
  6. Mathematical Achievements of Pre-modern Indian Mathematicians von T.K Puttaswamy
  7. Goonatilake 1999, p. 134.
  8. Seal 1915, p. 80
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "sbrao2" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • Sarkār, Benoy Kumar (১৯১৮), Hindu achievements in exact science: a study in the history of scientific development, Longmans, Green and co. 
  • Seal, Sir Brajendranath (১৯১৫), The positive sciences of the ancient Hindus, Longmans, Green and co. 
  • Colebrooke, Henry T. (১৮১৭), Arithmetic and mensuration of Brahmegupta and Bhaskara 
  • White, Lynn Townsend (১৯৭৮), "Tibet, India, and Malaya as Sources of Western Medieval Technology", Medieval religion and technology: collected essays, University of California Press, আইএসবিএন 978-0-520-03566-9 
  • Selin, Helaine, সম্পাদক (২০০৮), "Astronomical Instruments in India", Encyclopaedia of the History of Science, Technology, and Medicine in Non-Western Cultures (2nd edition), Springer Verlag Ny, আইএসবিএন 978-1-4020-4559-2 
  • Shukla, Kripa Shankar (১৯৮৪), "Use of Calculus in Hindu Mathematics", Indian Journal of History of Science, 19: 95–104 
  • Pingree, David Edwin (১৯৭০), Census of the Exact Sciences in Sanskrit, Volume 146, American Philosophical Society, আইএসবিএন 9780871691460 
  • Plofker, Kim (২০০৯), Mathematics in India, Princeton University Press, আইএসবিএন 9780691120676 
  • Cooke, Roger (১৯৯৭), "The Mathematics of the Hindus", The History of Mathematics: A Brief Course, Wiley-Interscience, পৃষ্ঠা 213–215, আইএসবিএন 0-471-18082-3 
  • Poulose, K. G. (১৯৯১), K. G. Poulose, সম্পাদক, Scientific heritage of India, mathematics, Volume 22 of Ravivarma Samskr̥ta granthāvali, Govt. Sanskrit College (Tripunithura, India) 
  • Chopra, Pran Nath (১৯৮২), Religions and communities of India, Vision Books, আইএসবিএন 978-0-85692-081-3 
  • Goonatilake, Susantha (১৯৯৯), Toward a global science: mining civilizational knowledge, Indiana University Press, আইএসবিএন 978-0-253-21182-8 
  • Selin, Helaine; D'Ambrosio, Ubiratan, সম্পাদকগণ (২০০১), Mathematics across cultures: the history of non-western mathematics, Volume 2 of Science across cultures, Springer, আইএসবিএন 978-1-4020-0260-1 
  • Stillwell, John (২০০২), Mathematics and its history, Undergraduate texts in mathematics, Springer, আইএসবিএন 978-0-387-95336-6 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]