সমরেন্দ্রনাথ রায়
সমরেন্দ্রনাথ রায় | |
---|---|
সমরেন্দ্রনাথ রায় | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৩ জুলাই ১৯৬৪ | (বয়স ৫৭)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | মার্কিন |
মাতৃশিক্ষায়তন | রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) |
পরিচিতির কারণ | মাল্টিভেরিয়েট পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | গণিতজ্ঞ এবং পরিসংখ্যানবিদ |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা অ্যাট চ্যাপেল হিল |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ নিখিলরঞ্জন সেন |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | ইনগ্রাম ওলকিন |
সমরেন্দ্রনাথ রায় (১১ ডিসেম্বর ১৯০৬ - ২৩ জুলাই ১৯৬৪) ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান গণিতবিদ ও ফলিত পরিসংখ্যানবিদ।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]সমরেন্দ্রনাথ রায়ের জন্ম ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর। স্বাধীনতা সংগ্রামী কালীনাথ রায় ও সুনীতিবালা রায়ের তিন সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন তিনি। [১] তার পিতা লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘দ্য ট্রিবিউন’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। [২] ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেবছর ৬ এপ্রিলে "জামে মসজিদে প্রার্থনা" শিরোনামে এক সংবাদ প্রকাশ করে বৃটিশ শাসকের চোখে অপরাধী হন এবং সাজা হিসাবে দুই বৎসরের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা হয়। [৩] [৪] [৫][৬]
সমরেন্দ্রনাথ রায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক [৬] এবং দৌলতপুর হিন্দু একাডেমী থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। [৬] এরপর কলকাতায় চলে আসেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে অনার্সসহ বিএসসি এবং ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিশ্র গণিতে (পরবর্তীতে ফলিত গণিত) এমএসসি পাশ করেন। এই সময় রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে পড়বার সময় আপেক্ষিকবাদ তত্ত্ব তার ঐচ্ছিক বিষয় ছিল। [১]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]এমএসসি পাশের পর সমরেন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার সায়েন্স কলেজেই ফলিত গণিত বিভাগে গবেষণা সহযোগী হিসাবে যোগ দেন। প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের কম্পিউটিং সুবিধা ব্যবহার করেন।, [৬] সমরেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে জে.এম. সেনগুপ্ত, এইচ.সি. সিনহা, রাজচন্দ্র বসু, কে. আর. নায়ার, কে. কিষেন এবং সি আর রাও সহ বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান তরুণ মহলানবীশের অধীনে পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করেন। তবে সমরেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন তার প্রথম দিকের ছাত্রদের মধ্যে একজন এবং পরিসংখ্যানের কিছু প্রাথমিক কাজ করেছিলেন। [৭] তিনি মাল্টিভেরিয়েট পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে তার অবদান অগ্রগণ্য। তার বিশ্লেষণে প্রধানত বিবিধ সঠিক বন্টন, আয়তক্ষেত্রাকার স্থানাঙ্ক এবং বার্টলেট ডিকমপজিশনের জ্যাকোবিয়ানের জটিল রূপান্তর বিবেচিত হয়। [৮] তবে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে তিনি মহলানবীশের অধীনে সহকারীর কাজ করেছিলেন।
অধ্যাপক রাজচন্দ্র বসুই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে যান এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। অধ্যাপক সমরেন্দ্রনাথ রায়ও রাজচন্দ্র বসুর মত ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিষয়ে ভিজিটিং প্রফেসর পদে যোগ দেন ও তারপরে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে চ্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজচন্দ্র বসুর সঙ্গে যোগ দেন। তবে এর মধ্যেই সমরেন্দ্রনাথ রায় ভারতে ফিরে আসেন এবং ১৯৪৯ - ৫০ শিক্ষাবর্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান হন। [৬] পরে অধ্যাপক রায়, চ্যাপেল হিলের উত্তর ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক বসুর পরিসংখ্যান বিভাগে পরিসংখ্যান বিষয়ের পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে অধ্যাপক রায়ের পনেরো জন গবেষক ছাত্র ছিলেন। [৯]
জীবনাবসান
[সম্পাদনা]খ্যাতিমান গণিতজ্ঞ ও পরিসংখ্যানবিদ অধ্যাপক সমরেন্দ্রনাথ রায় ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই কানাডার অ্যালবার্টার জ্যাসপারে প্রয়াত হন। ওই সময় তিনি ছুটি কাটাতে কানাডায় গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী বাণী রায়। তাদের চার সন্তানের তিন পুত্র প্রবীর, সুবীর, তপন এবং এক কন্যা হলেন সুনন্দা।
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]অধ্যাপক সমরেন্দ্রনাথ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী স্মরণে কলকাতায় "মাল্টিভেরিয়েট স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেথডস ইন টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি: দ্য লিগেসি অফ প্রফেসর এসএন রায়" শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর। [১০] ''দ্য জার্নাল অফ স্ট্যাটিস্টিক্যাল প্ল্যানিং অ্যান্ড ইনফারেন্স'' অধ্যাপক সমরেন্দ্রনাথ রায়ের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। [৭]
নির্বাচিত প্রকাশনা
[সম্পাদনা]- পথহফ, রিচার্ড এফ অ্যান্ড রায়, এসএন (১৯৬৪) - "এ জেনেরালাইজড মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালিশিস অফ ভ্যারিয়েন্স মডেল ইউজফুল স্পেশালি ফর গ্রোথ কার্ড প্রবলেমস", বায়োমেট্রিকা, ভলিউম। ৫১, পৃ. ৩১৩-৩২৬।
- রায়, এসএন (১৯৫৭) - “সাম অ্যাসপেক্টস অফ মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালিশিস”, নিউ ইয়র্ক: Wiley.
- রায়, এসএন অ্যান্ড সারহান, এ ই (১৯৫৬),- "অন ইনভার্টিং এ ক্লাস অফ প্যাটার্নড ম্যাট্রিক্সেস", বায়োমেট্রিকা, ৪৩, ২২৭-২৩১।
অধ্যাপক রায়ের নির্দেশনায় গবেষণামূলক নির্বাচিত প্রবন্ধ
[সম্পাদনা]- ওলকিন, ইনগ্রাম (১৯৫১) - " অন ডিস্ট্রিবিউশন প্রবলেমস ইন মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালিশিস "।
- প্যাচারেস, জেমস (১৯৫৩) - "অন দ্যা ডিস্ট্রিবিউশন অফ কোয়াড্রাটিক ফর্মস্"। * পিল্লাই, কেসি শ্রীধরন (১৯৫৪) - "অন সাম ডিস্ট্রিবিউশন প্রবলেমস ইন মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালিশিস"।
- মিত্র, সুজিত কুমার (১৯৫৬) - "কন্ট্রিবিউশনস টু দ্য স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালিশিস অফ ক্যাটেগরিক্যাল ডেটা"।
- জ্ঞানদেশিকন, রামানাথন (১৯৫৭) - "কন্ট্রিবিউশনস টু দ্য মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালিশিস ইনক্লুডিং ইউনিভেরিয়েট অ্যান্ড মাল্টিভেরিয়েট ভ্যারিয়েন্স কম্পোনেন্ট অ্যানালিশিস অ্যান্ড ফ্যাক্টর অ্যানালিশিস"।
- পথহফ, রিচার্ড এফ (১৯৫৮) - "মাল্টি-ডাইমেনশনাল ইনকমপ্লিট ব্লক ডিজাইনস্"।
- ডায়মন্ড, আর্ল এল. (১৯৫৮) - "অ্যাসিম্পোটিক পাওয়ার অ্যান্ড ইনডিপেন্ডেন্স অফ সার্টেন ক্লাশেস্ অফ টেস্টস্ অন ক্যাটেগরিক্যাল ডেটা"।
- বারগম্যান, রল্ফ (১৯৫৮) - "এ স্টাডি অফ ইনডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড ডিপেন্ডেন্স ইন মাল্টিভেরিয়েট নরম্যাল অ্যানালিশিস"।
- কোব, হুইটফিল্ড (১৯৫৯) - "স্টাডিজ ইন ইউনিভেরিয়েট এবং মাল্টিভারিয়েট ভ্যারিয়েন্স কম্পোনেন্টস্ অ্যানালিশিস কানেক্টেড উইথ স্যাম্পলিং ফ্রম এ ফাইনাইট পপুলেশন"।
- ভাপকর, বসন্ত পি. (১৯৫৯) - "কন্ট্রিবিউশনস টু দ্য স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালিশিস অফ এক্সপেরিমেন্টস্ উইথ ওয়ান অর মোর রেসপনসেস"।
- Sathe, Yashawande S. (১৯৬২) - "স্টাডিজ ইন সার্টেন টাইপস্ অফ ননপ্যারামেট্রিক ইনফারেন্সেস্"।
- দাস গুপ্ত, সোমেশ (১৯৬৩) - "সাম প্রবলেমস ইন ক্ল্যাসিফিকেশন"।
- মুধোলকর, গোবিন্দ এস. (১৯৬৩) - "সাম কন্ট্রিবিউশনস টু দ্য থিয়োরি অফ ইউনিভেরিয়েট অ্যান্ড মাল্টিভেরিয়েট স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালিশিস"।
স্বীকৃতি
[সম্পাদনা]- ইনস্টিটিউট অব ম্যাথামেটিক্যাল স্ট্যাটিস্টিক্স-এর ফেলো
- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ইন্টারন্যাশনাল স্টাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের ফেলো।
- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি হন।
- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেস,(বর্তমানে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী নামে পরিচিত) এর ফেলো (FNASc) নির্বাচিত হন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Bose, R. C. (১৯৬৪)। "Samarendra Nath Roy, December 11, 1906-July 23, 1964": 26–27। জেস্টোর 2682467। ডিওআই:10.1080/00031305.1964.10482640।
- ↑ "Tribuneindia...119 Years of Trust"। The Tribune। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Varinder Walia; Neeraj Bagga (১৩ এপ্রিল ২০০৬)। "Jallianwala Bagh revisited"। The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Gobind Thukral। "EDITORIAL PAGE; LOOKING BACK; How 1919 Punjab rebellion was suppressed"। The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ Viscount Cave, J.। "Kali Nath Roy vs The King-Emperor on 9 December, 1920"। Indian Kanoon – Search engine for Indian Law। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ J J O'Connor; E F Robertson। "Roy Biography"। MacTutor History of Mathematics archive। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ ক খ গ Govind S. Mudholkar; Alan D. Hutsonb (২০০৭)। "Life and legacy of Samarendra Nath Roy 1906–1964": 3208–3212। ডিওআই:10.1016/j.jspi.2007.03.003।
- ↑ V. Mardia, Kanti (২৩ জানুয়ারি ২০০৮)। "On S.N. Roy's Legacy to Multivariate Analysis" (পিডিএফ)। Presented as a plenary talk to S. N. Roy Multivariate Conference, Kolkata (December 2006)। ২৯ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "PhDs Awarded"। Department of Statistics and Operations Research, University of North Carolina at Chapel Hill। ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "Multivariate Statistical Methods in the 21st Century: The Legacy of Prof. S.N. Roy"। Indian Statistical Institute। ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "PhDs awarded"। The Department of Statistics and Operations Research at UNC। ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০২২।