তাজবিদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(তাজভিদ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মুসহাফ আল-তাজউইদ, তাজবিদ অনুসারে পড়ার সুবিধার জন্য রঙিন হরফযুক্ত কুরআন

তাজবিদের আভিধানিক অর্থ সৌন্দর্য মণ্ডিত করা বা যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করা। যে বিষয়টিতে কুরআন মাজিদ সঠিক উচ্চারণে তিলাওয়াতের নিয়মাবলী উল্লেখ করা হয় তাকে তাজবিদ বলে৷ সঠিক উচ্চারণ মাখরাজ ও সিফাত অনুসারে উচ্চারণের উপর অধিক নির্ভর করে৷ তাজবিদ অনুসারে কুরআন তিলাওয়াত করা ওয়াজিব (আবশ্যক)৷ তাজবিদ অনুসারে উচ্চারণ না করলে সাধারণত অর্থ বিকৃত হয়ে যায়৷ তাজবিদের উদ্দেশ্য হলো কুরআন মাজিদের প্রত্যেকটি হরফকে যথাযথ ভাবে পাঠ করা, কুরআন মাজিদের শব্দ ও হরফগুলো পাশাপাশি আসার ফলে যে সকল কায়দার (গুন্না, পুর, বারিক, মাদ, ইত্তেকাউস সাকিনাইন, ওয়াকফ) সৃষ্টি হয় তা সঠিকভাবে পাঠ করা, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করার সময় অতিরিক্ত কোনোকিছু যাতে যুক্ত না হয়, প্রয়োজনীয় কিছু যাতে বাদ না পড়ে, কুরআন মাজিদের বিশেষ  আয়াতুস সাজদা, সাকতা, ইমালা, তাসহিল)  সম্পর্কে আলোচনা  সর্বোপরি কুরআন মাজিদকে সঠিকভাবে তিলাওয়াতের  জন্য সম্ভাব্য সকল আলোচনা।

তাজবিদের প্রয়োজনীয়তা[সম্পাদনা]

وَرَتِّلِ اَلْقُرْاٰنَ تَرْتِيْلَا

(কুরআনটি তেলাওয়াত কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে।) --আল-কুরআন, সুরা:মুজাম্মিল,আয়াত:৪

কুরআনকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে পড়া মুসলিমদের জন্য ফরয (আবশ্যিক) কারণ আল্লাহ্ তাআলা স্বয়ং নির্দেশ দিয়েছেন। স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে পড়তে হলে কীভাবে  পড়তে হয় তা আগে জানতে হবে এবং তা তাজবিদেই বর্ণনা করা হয়। তাই তাজবিদ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, না হলে কুরআন মাজিদ পড়ার সময় অনেক ভুল হবে এবং অনেক সময় কুরআনের আয়াতের অর্থের বিপরীত অর্থ হয়ে যাবে  ফলস্বরূপ কুরআন মাজিদ পড়ার  মূল উদ্দেশ্যই বিফল হবে। তাছাড়া শ্রবণকারী ভুল উচ্চারণ শোনে কুরআন মাজিদ সম্পর্কে ভুল ধারণা জন্মাতে পারে যা অনেক সময় বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়।

আরবি বর্ণমালা[সম্পাদনা]

আরবি ভাষায় মোট ২৮ টি[১] হরফ আছে৷ তবে ء'কে হরফ হিসাবে যদি ধরা হয়, তাহলে ২৯টি হয়।

[১]ا ب ت ث ج ح خ د ذ ر ز س ش ص ض ط ظ ع غ ف ق ك ل م ن و ہ ي

মাখরাজ[সম্পাদনা]

মাখরাজ (আরবি: مخرج)-এর অর্থ বের হওয়ার স্থান৷ আরবি ভাষায় হরফসমূহ উচ্চারণের স্থানকে মাখরাজ বলে৷ হরফসমূহ মোট ১৭ টি স্থান থেকে উচ্চারিত হয়৷ এই ১৭ টি মাখরাজ আবার ৫ টি মাকাম (ঘর, এখানে মাকাম বলতে বৃহৎ অর্থে উচ্চারণের স্থান বোঝান হয়েছে) এর অন্তর্ভুক্ত। ৫ টি মাকামের নাম[২] :

  1. جوف - জওফ (মুখের ভিতরের খালি জায়গা)
  2. حلق - হলক (কণ্ঠনালী)
  3. لسن - লিসান (জিহ্বা)
  4. شفتان - শাফাতান (দুই ঠোঁট)
  5. خيشوم - খাইশুম (নাসিকামূল)
আরবি ২৯ টি হরফের মাখরাজ (উচ্চারণের স্থান)
মাকাম (উচ্চারনের স্থান) মাখরাজ (উচ্চারণের উপস্থান) সংখ্যা মাখরাজ (উচ্চারণের উপস্থান) হরফ সংখ্যা হরফ
জওফ ১ টি মুখের ভিতরের খালি জায়গা ৩ টি (শর্ত সাপেক্ষে) و ، ا ، ي
হলক ৩ টি আদনায়ে হলক ৬ টি خ ، غ
অসতে হলক ع ،ح
আকসায়ে হলক ء ،ه
লিসান ১০ টি আকসায়ে লিসান (আলজিব) ও তালু ১৮ টি ق
আকসায়ে লিসান ও তালু থেকে (সামান্য মুখের দিকে সরে) ك
ওছতে লিসান (জিহ্বার মধ্যস্থল) ও তালু ج ، ش ، ى
জিহ্বার ডান/বাম কিনারা ও আদরাসে উলিয়া (পিষণ দাঁত) এর মাড়ি ض
জিহ্বার সামনের কিনারা ও উপরের দাঁতের মাড়ি ও তালুর কিছু অংশ ل
উপরের মাখরাজ থেকে সামান্য মুখের দিকে সরে ن
জিহ্বার সামনের অংশের পিঠ ও সানায়া উলিয়া (উপরের মধ্যভাগের দুই দাঁত) এর মাড়ি ر
জিহ্বার অগ্রভাগ ও সানায়া উলিয়ার মাড়ি ও তালুর কিছু অংশ ت ، د ، ط
জিহ্বার অগ্রভাগ এবং সানায়া উলিয়া ও সানায়া সুফলা (নিচের মধ্যভাগের দুই দাঁত) এর মধ্যভাগ ز ، س ، ص
জিহ্বার অগ্রভাগ ও সানায়া উলিয়া এর অগ্রভাগ ث ، ذ ، ظ
শাফাতান ২ টি সানায়া উলিয়ার অগ্রভাগ ও নিচের ঠোটের ভিতরের অংশ ৪ টি ف
উভয় ঠোটকে মিলিয়ে ب ، م ، و
খাইশুম ১টি নাকের মূল ২ টি (শর্ত সাপেক্ষে) ن ، م

সিফাত[সম্পাদনা]

সিফাত অর্থ উচ্চারণের বিশেষ অবস্থা বা গুণ

কোনো কোনো আরবি হরফ মোট স্বরে উচ্চারণ করা হয়৷ কোনো হরফকে আবার শক্ত করে উচ্চারণ করতে হয়। আবার কোনো হরফ উচ্চারণ করতে হয় চূড়ই পাখির মতো আওয়াজ করে।

বুঝার সুবিধার জন্য উপরে হরফ উচ্চারণের ৩ টি সিফাত (গুন) এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ ধরনের ১৭ টি সিফাত রয়েছে। সিফাত প্রথমত ২ প্রকার:

  1. লাজিমাহ (স্থায়ি)
  2. আ’রীদি (অস্থায়ি)।[৩]
সিফাতের শ্রেণিবিভাগ
বিভাগ উপবিভাগ সিফাত সংখ্যা সিফাত সিফাতের বৈশিষ্ট্য (উচ্চারণের সময়) হরফ সংখ্যা হরফ
লাজিমাহ (স্থায়ী) মুতাদ্বাদ্দাহ ( পরস্পর বিরোধি) ১০ টি জাহর সবল, শ্বাস বন্ধ ১৯ টি ا ، ب ، ج ، د ، ذ ، ر ، ز ، ض ، ط ، ظ ، ع ، غ ، ق ، ل ، م ، ن ، و ، ء ، ى
হামস (পাতলা আওয়াজ) শ্বাস জারি ১০ ح ، ث ، ه ، ش ، خ ، ص ، ف ، س ، ك ، ت
শিদ্দাঁত (সবলতা) আওয়াজ বন্ধ ا ، ج ، د ، ق ، ط ، ب ، ك ، ت
রিখাওয়াত(নরম) + তাওয়াস্সু্ত(মধ্যম) আওয়াজ জারি + আওয়াজ বন্ধও নয় জারিও নয়(মধ্যম) ১৬+৫ ا ، ث ، ح ، خ ، ذ ، ز ، س ، ش ، ص ، ض ، ظ ، غ ، ف ، و ، ه ، ى + ل ، ن ، ع ، م ، ر
ইস্তেয়া’লা (উন্নতি) পুর (বলিষ্ঠ) করে উচ্চারণ, জিহ্বা তালুর সাথে মিলানো خ ، ص ، ض ، غ ، ط ، ق ، ظ
ইস্তেফাল (পতিত) বলিষ্ঠ নয়, জিহ্বা তালু থেকে আলাদা রাখা ২২ ث ، ب ، ت ، ع ، ز ، م ، ن ، ى ، ج ، و ، د ، ح ، ر ، ف ، ه ، ء ، ذ ، س ، ل ، ش ، ك ، ا
ইতবাক্ব (যুক্ত করা) অত্যধিক পুর (বলিষ্ঠ) করে উচ্চারণ,জিহ্বা তালুর সাথে যুক্ত করা ص ، ض ، ط. ظ
ইনফিতাহ (আলাদা) জিহ্বা তালু থেকে আলাদা রাখা ২৫ م ، ن ، ء ، خ ، ذ ، و ، ج ، د ، س ، ع ، ت ، ف ، ز ، ك ، ا ، ح ، ق ، ل ، ه ، ش ، ر ، ب ، غ ، ى ، ث
ইজলাক্ব (কিনারা) জিহ্বা/ঠোটের কিনারার উপর নির্ভার করা ف ، ر ، م ، ن ، ل ، ب
ইস্মাত (নিষেধ) জিহ্বা/ঠোটের কিনারার উপর নির্ভার করা নিষেধ ২৩ ج ، ز ، غ ، ش ، س ، ا ، خ ، ط ، ص ، د ، ث ، ق ، ت ، ء ، ذ ، و ، ع ، ظ ، ه ، ى ، ح ، ض ، ك
গ্বাইরে মুতাদ্বাদ্দাহ। (পরস্পর বিরোধি সিফাত নেই) ৭ টি সফির(চূড়ই পাখির আওয়াজ) জিহ্বার অগ্রভাগ সানায়া দাঁতের অগ্রভাগের সাথে মিলবে ز ، س ، ص
গুন্নাহ হরফকে উচ্চারণের সময় নাকের মূল থেকে আওয়াজ নির্গত করা ن ، م
লীন (নরম) হরফকে অনায়াসে তার উচ্চারণের স্থান হতে উচ্চারন করা ২ টি (শর্তসাপেক্ষে)

শর্ত নং. ১/ و/ى সাকিন তার পূর্বে জবর ২/ ওয়াকফ (থামা) এর অবস্থায়

و ، ى
ইনহিরাফ (ঝুকে পড়া) জিহ্বার কিনারা উপরের দিকে ঝুঁকানো ر ، ل
তাকরীর (পুনরাবৃত্তি) উচ্চারণের সময় জিহ্বা কম্পিত করা ر
তাফাশশী (ছড়াইয়া দেওয়া) হরফ উচ্চারণের সময় মুখের ভিতর হাওয়া ছড়াইয়া দেওয়া ش
ইস্তেত্বালাত (বিস্তৃত) জিহ্বার প্রারম্ভ থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত করে পড়া ض
আরীদ্বি (অস্থায়ী) নাই ১ টি ক্বালক্বালাহ (কম্পিত হওয়া) হরফকে সাকিন অবস্থায় উচ্চারণের সময় অতিরিক্ত আওয়াজ তৈরি করা। বাংলা বর্ণে হস চিহ্ন(্) না থাকলে যেরুপ হয় ৫ টি (শর্তসাপেক্ষে: অবশ্যই সাকিন হতে হবে অন্যথায় ক্বালক্বালাহ হবে না ) ق ، ط ، ب ، ج ، د

লাজিমাহ (স্থায়ি)[সম্পাদনা]

সিফাতুল লাজিমাহে হরফের শুধুমাত্র ঐ সিফাত গুলো অন্তর্ভুক্ত যা হরফে সর্বাবস্থায় প্রয়োগ করতে হয়। যেমন: ب একটি হরফ, কুরআন মাজীদ এর যেকোনো জায়গায় এই হরফটি আসুক না কেন

  1. এটি উচ্চারণের শেষ পর্যায়ে হাওয়ার উপর নির্ভরশীল হবে না।
  2. একে শক্ত করে উচ্চারণ করতে হবে।
  3. একে পুর করে পড়া যাবে না।
  4. একে উচ্চারণের সময় জিহ্বা তালুর সাথে লাগবে না।
  5. একে উচ্চারণের সময় ঠোটের কিনারার উপর নির্ভার করতে হবে।

উপরের ৫ টি সিফাত সিফাতে লাজিমাহ এর অন্তর্ভুক্ত অন্যদিকে ب এর ১ টি সিফাত রয়েছে যা সিফাতে লাজিমার অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন: ب শাকিন হলে ب এর সাথে অতিরিক্ত এক ধরনের উচ্চারণ (ক্বাল্ক্বালাহ) হয়। যেমন: لَهَبْ (লাহাব না পড়ে লাহা"ব" পড়তে হবে) কিন্তু এটি সুধুমাত্র ب সাকিন হলে প্রযোজ্য হবে, এর সাথে জবর/জের/পেশ/তানউইন থাকলে প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ এটি স্থায়ী সিফাত নয়, অস্থায়ী সিফাত আ’রীদি এর অন্তর্ভুক্ত।

সিফাতুল লাজিমাহ আবার ১৭ প্রকার। এই ১৭ প্রকার সিফতকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। [৩]

  1. মুতাদ্বাদ্দাহ ( পরস্পর বিরোধি)
  2. গ্বাইরে মুতাদ্বাদ্দাহ। (পরস্পর বিরোধি সিফাত নেই)

মুতাদ্বাদ্দাহ (পরস্পর বিরোধি)[সম্পাদনা]

মুতাদ্বাদ্দাহ এর অন্তর্ভুক্ত ৫ জোড়া পরস্পর বিরোধি ১০ টি সিফাত রয়েছে। প্রত্যেক জোড়ার ১ টি সিফাত ঐ জোড়ার অন্য সিফাতটির বিপরীত। যেমন: ১ টি সিফাত সবল হলে অন্যটি দূর্বল।  প্রত্যেক জোড়া পরস্পর বিরোধি সিফাতের অন্তর্ভুক্ত হরফগুলো ভিন্ন এবং প্রত্যেক জোড়া সিফাতে আরবি ২৯ টিই হরফ রয়েছে। যেমন: পরস্পর বিরোধি ১ টি সিফাতে  ২০ টি হরফ থাকলে অপরটিতে অবশ্যই ৯ টি হরফ থাকবে কারণ উভয় সিফাত মিলে আরবি ২৯ টি হরফ অন্তর্ভুক্ত হতে হবে (২০+৯ = ২৯)। অন্যভাবে বললে আরবি ২৯ টি হরফের মধ্যে ২০ টি হরফ সবল হলে ৯ টি হরফ সবল হবে।

  1. জাহর:জাহর শব্দের অর্থ জাহির করা বা খুলাখুলি বর্ণনা করা। ا ، ب ، ج ، د ، ذ ، ر ، ز ، ض ، ط ، ظ ، ع ، غ ، ق ، ل ، م ، ن ، و ، ء ، ى জাহরের অন্তর্গত এই ১৯ টি হরফকে উচ্চারণের সময় মাখরাজের উপর সবল নির্ভর থাকে ও শ্বাস বন্ধ হয়ে জায়।
  2. হামস (পাতলা আওয়াজ বা ক্ষিণ ধ্বনি): ح ، ث ، ه ، ش ، خ ، ص ، ف ، س ، ك ، ت এই ১০ হরফেকে জোড় দিয়ে  উচ্চারণ না করার কারণে উচ্চারণের সময় শ্বাস জারি থাকে।
  1. শিদ্দাঁত (সবলতা):ا ، ج ، د ، ق ، ط ، ب ، ك ، ت এই ৮ টি হরফকে জোড় দিয়ে  উচ্চারণ করার কারার কারণে উচ্চারণের সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।
  2. রিখাওয়াত (নরম) + তাওয়াস্সু্ত(মধ্যম): তাওয়াস্সু্ত ও রিখাওয়াত ২ টি ভিন্ন সিফাত। তবে অধিকাংশ তাজউইদে তাওয়াস্সু্তকে শিদ্দাঁত এর অন্তর্ভুক্ত না করে রিখাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় কারণ তাওয়াস্সু্ত সিফাত বিশিষ্ট হরফকে উচ্চারণের সময় শ্বাস বন্ধ হওয়ার থেকে জারি থাকে বেশি।  ا ، ث ، ح ، خ ، ذ ، ز ، س ، ش ، ص ، ض ، ظ ، غ ، ف ، و ، ه ، ى + ل ، ن ، ع ، م ، ر এই ১৬+৫ টি হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে: মাখরাজের উপর হরফের নির্ভর দুর্বল থাকার কারণে আওয়াজ জারি থাকবে + আওয়াজ বন্ধও নয় জারিও নয় মধ্যম (তাওয়াস্সু্ত এর ক্ষেত্রে)
  1. ইস্তেয়া’লা (উন্নতি):হরফ সংখ্যা: ৭ টিخ ، ص ، ض ، غ ، ط ، ق ، ظ এই হরফ গুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বা তালুর সাথে মিলাতে হবে যাতে আওয়াজ বলিষ্ঠ হয়।

তবে এর অর্থ এই নয় যে উক্ত হরফগুলোতে ফাতহা (যবর) থাকলে বাংলা আ-কার ছাড়া অক্ষরের মত করে পড়তে হবে৷ যেমন কেহ কেহ قال (ক্বালা) কে ক্বলা পড়ে থাকেন৷ এ হরফগুলোকে ফাতহাযুক্ত অবস্থায় মোটা আওয়াজে বাংলা আ-কারের মত করে পড়তে হবে৷ তদ্রূপ তাকরীর সিফাতের ر হরফটিকে ফাতহাযুক্ত অবস্থায় 'র' উচ্চারণ না করে মোটা করে "রা" (ড়া) এর মত করে পড়তে হবে৷

  1. ইস্তেফাল(পতিত): হরফ সংখ্যা:২২ث ، ب ، ت ، ع ، ز ، م ، ن ، ى ، ج ، و ، د ، ح ، ر ، ف ، ه ، ء ، ذ ، س ، ل ، ش ، ك ، ا হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে: বলিষ্ঠ নয়, জিহ্বা তালু থেকে আলাদা রাখা
  1. ইতবাক্ব (যুক্ত করা):হরফ সংখ্যা: ৪ص ، ض ، ط. ظ এই হরফ গুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বা তালুর সাথে মিলাতে হবে যাতে আওয়াজ অত্যধিক বলিষ্ঠ হয়।
  2. ইনফিতাহ(আলাদা):হরফ সংখ্যা: ২৫م ، ن ، ء ، خ ، ذ ، و ، ج ، د ، س ، ع ، ت ، ف ، ز ، ك ، ا ، ح ، ق ، ل ، ه ، ش ، ر ، ب ، غ ، ى ، ث হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে: জিহ্বা তালু থেকে আলাদা রাখা
  1. ইজলাক্ব (কিনারা): হরফ সংখ্যা:৬ف ، ر ، م ، ن ، ل ، ب হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:জিহ্বা/ঠোটের কিনারার উপর নির্ভার করা
  2. ইস্মাত(নিষেধ): হরফ সংখ্যা:২৩ج ، ز ، غ ، ش ، س ، ا ، خ ، ط ، ص ، د ، ث ، ق ، ت ، ء ، ذ ، و ، ع ، ظ ، ه ، ى ، ح ، ض ،  হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:জিহ্বা/ঠোটের কিনারার উপর নির্ভার করা নিষেধ

গ্বাইরে মুতাদ্বাদ্দাহ (পরস্পর বিরোধি সিফাত নেই)[সম্পাদনা]

  1. সফির(চূড়ই পাখির আওয়াজ):হরফ সংখ্যা:৩ز ، س ، ص হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:জিহ্বার অগ্রভাগ সানায়া দাঁতের অগ্রভাগের সাথে মিলবে
  2. গুন্নাহ:হরফ সংখ্যা:২ن ، م হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:হরফকে উচ্চারণের সময় নাকের মূল থেকে আওয়াজ নির্গত করা
  3. লীন(নরম):হরফ সংখ্যা:২ টি و ، ى (শর্তসাপেক্ষে) শর্তগুলো  হলো:  و/ى সাকিন তার পূর্বে জবর এবং ওয়াকফ (থামা) এর অবস্থায়। হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:হরফকে অনায়াসে তার উচ্চারণের স্থান হতে উচ্চারন করা।
  4. ইনহিরাফ(ঝুকে পড়া):হরফ সংখ্যা:২ر ، ل হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:জিহ্বার কিনারা উপরের দিকে ঝুঁকানো
  5. তাকরীর (পুনরাবৃত্তি):হরফ সংখ্যা:১ر হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:উচ্চারণের সময় জিহ্বা কম্পিত করা
  6. তাফাশশী (ছড়াইয়া দেওয়া)হরফ সংখ্যা::১ش হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:হরফ উচ্চারণের সময় মুখের ভিতর হাওয়া ছড়াইয়া দেওয়া
  7. ইস্তেত্বালাত (বিস্তৃত):হরফ সংখ্যা:১ض হরফের যে সকল গুন উচ্চারণের সময় প্রয়োগ করতে হবে:জিহ্বার প্রারম্ভ থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত করে পড়া

আ’রীদি (অস্থায়ী)[সম্পাদনা]

সিফাতে আ’রীদি এ হরফের শুধুমাত্র ঐ সিফাত গুলো অন্তর্ভুক্ত যা হরফে সর্বাবস্থায় প্রয়োগ করতে হয় না । যেমন: ب একটি হরফ, কুরআন মাজীদ এর বিভিন্ন জায়গায় এই হরফটি এসেছে। এই হরফটি উচ্চারণের সময় সবসময় অতিরিক্ত আওয়াজ( ক্বাল্ক্বালাহ) করতে হয় না। শুধুমাত্র ب সাকিন হলে এরকম করতে হয়। যেমন: لَهَبْ (লাহাব না পড়ে লাহা"ব" পড়তে হবে) এটি সুধুমাত্র ب সাকিন হলে প্রযোজ্য হবে, এর সাথে জবর/জের/পেশ/তানউইন থাকলে প্রযোজ্য হবে না। তাই এই সিফাতটি আ’রীদি এর অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে ب এর ৫ টি সিফাত রয়েছে যা সিফাতে আ’রীদির অন্তর্ভুক্ত নয় যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

সিফাতে আ’রীদির অন্তর্গত ১টি মাত্র সিফাত রয়েছে তা হলো:

ক্বালক্বালাহ (কম্পিত হওয়া)[সম্পাদনা]

ক্বালক্বালাহ শব্দের অর্থ কম্পিত হওয়া বা নাড়া দেওয়া। ق ، ط ، ب ، ج  ، د এই ৫ টি হরফকে সাকিন অবস্থায়  একধরনের অতিরিক্ত আওয়াজ করে উচ্চারণ করতে হয়(বংলা এ/ও এর মতো)

যেমন: لَهَبْ (লাহাব না পড়ে লাহা"ব" পড়তে হবে) বি দ্র: এটি শুধুমাত্র ب সাকিন হলে প্রযোজ্য হবে, এর সাথে জবর/জের/পেশ/তানউইন থাকলে প্রযোজ্য হবে না।

ক্বালক্বালাহ ২ প্রকার:

  1. ক্বালক্বালাহ ক্বুবরা (বড় ক্বালক্বালাহ): ق ، ط ، ب ، ج  ، د এই হরফ গুলোতে থামলে ক্বালক্বালাহ ক্বুবরা (বড় ক্বালক্বালাহ) করতে হয় (বেশি স্পষ্ট করে বাংলা এ/ও এর মতো উচ্চারণ  করতে হয়। তবে যত বেশি স্পষ্ট করেই এ/ও এর মতো উচ্চারণ করা হোক না কেন পুরোপুরি এ/ও এর মতো উচ্চারণ করা যাবে না। অবশ্যই যোগ্য শীক্ষক কীভাবে পড়েন তা লক্ষ করতে হবে) উদাহরণ : لَهَبْ (লাহা"ব" পড়তে হবে,মুটামুটি ৭০%)
  2. ক্বালক্বালাহ সুগরাহ (ছোট ক্বালক্বালাহ):  ق ، ط ، ب ، ج  ، د এই হরফ গুলোতে না থামলে ক্বালক্বালাহ সুগরা (ছোট ক্বালক্বালাহ) করতে হয় (কম স্পষ্ট করে বাংলা এ/ও এর মতো উচ্চারণ  করতে হবে) উদাহরণ :  (আ"ব"রার পড়তে হবে, ৪০%) أَبْرَارْ

বি দ্র: ق ، ط এই ২ টি ইসতে'য়ালার হরফকে উচ্চারণের সময় অতিরিক্ত উচ্চারণ বাংলা ও এর মতো হয় এবং ب ، ج ، د এই ৩ টি ইসতেফালের হরফকে উচ্চারণের সময় অতিরিক্ত উচ্চারণ বাংলা এ এর মতো হয়।

নুন সাকিন ও তানবিন[সম্পাদনা]

নুন সাকিন (نْ) ও তানবিনের ( ً / ٍ  / ٌ ) অবস্থা ৫ টি। এগুলো জানা প্রয়োজন কারণ, কোরআন মাজিদ এ কিছুক্ষণ পরপরই এই অবস্থাগুলো আসে। এগুলো না জানলে উচ্চারণ শুদ্ধ হবে না। নিচে এগুলো বর্ণনা করা হয়েছে :

ইজহার-ই-হাকিকী[সম্পাদনা]

ইজহার অর্থ প্রকাশ করা। এখানে নুন সাকিন ও তানউইনের উচ্চারণকে স্পষ্ট করে পড়া বুঝান হচ্ছে যখন এদের পর ء ، ه ، ح ، خ ، ع ، غ এই ৬ টি হরফ থেকে যেকোনো হরফ আসে।

উদাহরণ انعمت. والنحر

ইখফা-ই-হাকিকী[সম্পাদনা]

ইখফা অর্থ গোপন করা। এর হরফ ১৫ টি।এখানে নুন সাকিন ও তানউইনের পর যেকোনো একটি হরফ আসলে তাকে নাসিকাযোগে গোপন করে এক আলিফ পরিমাণ দীর্ঘ করে পড়াকে ইখফা বলে। ت ، ث ، ج، د ، ذ ، ز ، س ، ش ، ص ، ض ، ط ، ظ ، ف ، ق ، ك হলো ইখফা এর ১৫ টি হরফ।

উদাহরণ : مَنْ تَابٍ ، مَنْ جَاءَ

ইদগামে মা’ল গুন্নাহ অথবা বা গুন্নাহ[সম্পাদনা]

ইদগাম শব্দের অর্থ মিলিয়ে দেওয়া এবং মা’ল গুন্নাহ অর্থ গুন্নাহ(নাক থেকে উচ্চারণ;বাংলা চন্দ্রবিন্দু উচ্চারণের মতো) এর সহিত উচ্চারণ।

এখানে নুন সাকিন ও তানউইনকে পরের হরফের সাথে মিলিয়ে গুন্নার সহিত উচ্চারণ করে পড়া বুঝান হচ্ছে যখন এদের পর ى ، ن ، م ، و এই ৪ টি হরফ থেকে যেকোনো হরফ আসে। 

উদাহরণ : مَنْ يَّعْمَلْ

ইদগামে বেলা গুন্নাহ[সম্পাদনা]

বেলা গুন্নাহ অর্থ গুন্নাহ ছাড়া উচ্চারণ করা। এখানে নুন সাকিন ও তানউইনকে পরের হরফের সাথে মিলিয়ে পড়া বুঝান হচ্ছে যখন এদের পর ر ، ل এই ২ টি হরফ থেকে যেকোনো হরফ আসে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই গুন্নাহ ছাড়া উচ্চারণ করতে হবে।

উদাহরণ : مِنْ رَبِّهِمْ ، غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

ইক্বলাব[সম্পাদনা]

ইক্বলাব অর্থ পরিবর্তন করা। এখানে নুন সাকিন ও তানউইনের উচ্চারণকে م এর মতো করে পড়া বুঝান হচ্ছে যখন এদের পর ب এই ১ টি হরফ আসে।

উদাহরণ :عَلِيْمٌ بِمَا

মিম সাকিন[সম্পাদনা]

মিম সাকিনের (مْ) অবস্থা ৩ টি। এগুলো জানা প্রয়োজন কারণ, কোরআন মাজিদ এ কিছুদূর পরই এই অবস্থাগুলো আসে। এগুলো না জানলে উচ্চারণ শুদ্ধ হবে না। নিচে এগুলো বর্ণনা করা হয়েছে :

ইজহারে শফওয়ী[সম্পাদনা]

ইজহার অর্থ স্পষ্ট করা। শফওয়ী মূলত ঠোটের সাথে সম্পর্কিত (এখানে মিম সাকিনের পর বিশেষভাবে و ، ف এই দুটি হরফকে স্পস্ট করে পড়ায় গুরুত্বারুপ করার জন্য ব্যবহিত হয়েছে, কারণ এ ধরনের অবস্থায় প্রায়শই ভুল উচ্চারণ হয়)   এখানে বুঝান হয়েছে মিম সাকিনের পর ب ، م ছাড়া আরবি যেকোনো হরফ আসলে মিম সাকিনকে স্পষ্ট করে পড়তে হবে

উদাহরণ :اَمْ جَعَلُ ، تَمْتَرُوْنَ

ইখফায়ে শফওয়ী[সম্পাদনা]

ইখফা অর্থ অস্পষ্ট করা। এখানে বুঝান হয়েছে মিম সাকিনের পর ب হরফ আসলে মিম সাকিনকে গুন্নার সহিত করে পড়তে হবে

উদাহরণ :هُمْ بِالْاَ خِرَة

ইদগামে মিসলাইন সগির[সম্পাদনা]

ইদগাম অর্থ মিলান আর মিসলাইন অর্থ একই জাতিয় এবং সগির দ্বারা এক্ষেত্রে প্রথম হফ সাকিন দ্বিতীয় হরফ হারকাত ( َ ، ِ ، ُ) যুক্ত বুঝান হয়েছে। তাহলে একত্রে অর্থ দ্বারায়: প্রথম হফ সাকিন দ্বিতীয় হরফ হারকাত ( َ ، ِ ، ُ) যুক্ত একই জাতিয় হরফকে মিলান। তাই মিম সাকিনের পর মিম আসলে ইদগামে মিসলাইন সগির হয়।

উদাহরণ : لَكُمْ مَّاكَسَبْتُمْ

তবে শুধু মিম সাকিনের পর মিম নয়, বা সাকিনের পর বা, তা সাকিনের পর তা ইত্যাদি যেকোনো সাকিন হরফের পর ঐ হরফ আবার আসলে(হারকাত যুক্ত হয়ে) ইদগামে মিসলাইন সগির হয়।

উদাহরণ :اِذْهَبْ بِكِتَابِىْ

হরকত[সম্পাদনা]

জের( ِ ), যবর( َ ), পেশ( ُ ) এগুলোকে হরকত বলা হয়।

১ হরকত বা ২ হরকত আসলে কী? ১ হরকত বলতে একটি হরকত যুক্ত হরফকে উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে তা বুঝায়। যেমন: بَ ، تَ ، تِ ، كُ এগুলার যেকোনো ১টি উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে।

এরুপ ২ হরকত বলতে দুইটি হরকত যুক্ত হরফকে উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে তা বুঝায়। এ বিষয়ে জানা প্রয়োজন কারণ মাদ্দ ও গুন্নাহ্ কতটুকু লম্বা করতে হবে তা বুঝা যাবে না এ বিষয়ে না জানলে।

মাদ্দ্[সম্পাদনা]

মাদ্দ অর্থ বর্ধিত করা, দীর্ঘ করা। হরকতের উচ্চারণ দীর্ঘ করে পড়াকে মাদ্দ বলে। মাদ্দের হরফ ৩টি : و ، ا ، ى তবে শর্ত হলো :

  1. ওয়াও و সাকিন( ْ ) হতে হবে ও আগের হরফে (ডানে) পেশ( ُ ) হতে হবে।
  1. আলিফ ا হরকতবিহীন আগের হরফে জবর ( َ ) হতে হবে।
  1. ইয়া ى সাকিন( ْ ) হতে হবে ও আগের হরফে (ডানে) জের( ِ ) হতে হবে।

উদাহরণ : نُوْ حِيْ هَا

মাদ্দের শ্রেণিবিন্যাস
বিভাগ উপবিভাগ মাদ্দ
مد اصلى আসলি
-
مد اصلى আসলি
مد فرعى ফার’য়ি হামজার উপর নির্ভরশীল মাদ্দ مد متصل মাদ্দে মুত্তাসিল
مد منفصل মাদ্দে মুনফা مد لازم মাদ্দে সত্য মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ধ্বংস করে” এটি প্রমাণিত সত্য। মিথ্যাবাদীকে কেউ ভালোবাসেনা। এজন্য ইসলাম মিথ্যার কুফল বর্ণনা করে তার অনুসারীদেরকে উক্ত খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছে। যেমন, আল্লাহর বাণী

بسم الله الرحمن الرحيم

قلے إذا جاءك المنافقون قالوا نشهد إنك لرسول الله والله يعلم إنك لرسوله، والله يشهد إنّ المتفقين لكذبون

মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলে: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসুল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসুল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সুরা মুনাফিকুন -1)

١٠ ـ ويل يو ميذ للمكذبين

اا- الذين يكذبون بيوم الدين

١٢ ـ وما يكتب به الاكل معتد اليم

١٣ ـ إذا تتلى عليه ايثنا قال أساطير الأولين

۱۴ ـ گلا “ بل ران على قلوبهم ما كانوا يكسبون

۱۵ ـ كلا إنهم عن ربهم يومين لمخجوبون

١٢ـ ثم إنهم لصالوا الجحيم

17- ثم يقال هذا الذي كنتم به تكذبون

(১০) সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের,

(১১) যারা প্রতিফল দিবসকে মিথ্যারোপ করে।

(১২) প্রত্যেক সীমালংঘনকারী পাপিষ্টই

কেবল একে মিথ্যারোপ করে।

(১৩) তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, পুরাকালের উপকথা।
(১৪) কখনও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।

(১৫) কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে।

(১৬) অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

(১৭) এরপর বলা হবে, একেই তো তোমরা মিথ্যারোপ করতে। (সুরা মুতাফফিফিন)

مد عارض للسكون মা

মাদ্দ এর প্রকারভেদ : মাদ্দ প্রধানত ২ প্রকার:

  1. মাদ্দে আসলি
  2. মাদ্দে ফার’য়ি

مد اصلى মাদ্দে আসলি[সম্পাদনা]

যে মাদ্দ কোনো কারণের উপর নির্ভর্শীল নয়(যেমন: হামজা (ء) বা সাকিনের ( ْ ) কারণে মাদ্দ হয় নাই) তাকে মাদ্দে আসলি বলে।  একে মাদ্দে ত্বাব’য়ি (مد طبعى) ও মাদ্দে ক্বাস্বার (مد قصر) ও বলা হয়।

مد فرعى মাদ্দে ফার’য়ি[সম্পাদনা]

যে মাদ্দ হয় হামজা (ء) বা সাকিনের ( ْ ) কারণে তাকে মাদ্দে ফার’য়ি বলা হয়। মাদ্দে ফার’য়ি আবার বিভিন্ন প্রকার।

مد متصل মাদ্দে মুত্তাসিল[সম্পাদনা]

মদ্দে মুত্তাসিলের বিবরণ
সঙ্গা মাদ্দ এর হরফের পর একই শব্দে হামজাহ (ء) আসলে মাদ্দে মুত্তাসিল হয়
মাদ্দ ৪ হারকাত বা ৫ হারকাত লম্বা হবে । ওয়াকফের সময় মাদ্দে অ'রিদ্ব লিসসুকুন এর নিয়মে লম্বা হবে।
উদাহরণ مَنْ يَشَاء ، سَوَاء
উদাহরণের ব্যাখ্যা হারকাত বিহীন আলিফ এর আগের হরফ (শীন,ওয়াও) এর উপরে জবর রয়েছে তাই আলিফ গুলো মাদ্দ এর হরফে পরিণত হয়েছে। এরপর একই শব্দে হামজাহ এসেছে। এজন্য এগুলো মাদ্দে মুত্তাসিলের উদাহরণ

مد منفصل মাদ্দে মুনফাসিল[সম্পাদনা]

মদ্দে মুনফাসিলের বিবরণ
সঙ্গা মাদ্দ এর হরফের পর পৃথক শব্দে লম্বা হামজাহ্ আসলে মাদ্দে মুনফাসিলের হয়
মাদ্দ ৪ হারকাত বা ৫ হারকাত লম্বা হবে । হদরের সময় (দ্রুত পাঠ করার সময়) ২ হারকাত লম্বা করলেও হবে
উদাহরণ فِىْ اَنْفُسِهِمْ ، لَا أُقْسِمُ
উদাহরণের ব্যাখ্যা হারকাত বিহীন আলিফ এর আগের হরফ লাম এর উপরে জবর, ইয়া সাকিন ডানে জের রয়েছে তাই আলিফ ও ইয়া মাদ্দ এর হরফে পরিণত হয়েছে। এরপর পৃথক শব্দে হামজাহ এসেছে। এজন্য এগুলো মাদ্দে মুনফাসিলের উদাহরণ

مد بدل মাদ্দে বাদাল[সম্পাদনা]

মাদ্দে বাদালের বিবরণ
সঙ্গা হারকাত যুক্ত হামজার পর সাকিন হামজাহ আসলে ঐ সাকিন হামজাকে হারকাত যুক্ত হামজার হারকাত অনুযায়ী হরফ দ্বারা পরিবর্তন করাকে মাদ্দে বাদাল বলা হয়।
উল্লেখ্য হারকাত যুক্ত হামজায় : জবর থাকলে সাকিন হামজাহ আলিফ হয়ে যাবে, জের থাকলে ইয়া হয়ে যাবে এবং পেশ থাকলে ওয়াও হয়ে যাবে।
মাদ্দ দীর্ঘ হবে ২ হারকাত বা ১ আলিফ লম্বা হবে ।
উদাহরণ أَأْمَنُوْا থেকে اٰمَنُوْا

إِأْمَانًا থেকে إِيْمَانًا
أُأْتُوْا থেকে أُوْتُوْا

উদাহরণের ব্যাখ্যা হারকাত যুক্ত হামজায় যথাক্রমে জবর,জের,পেশ থাকার কারণে সাকিন হামজাহ যথাক্রমে আলিফ,ইয়া,ওয়াও এ রুপান্তরিত হয়েছে।

مد لازم মাদ্দে লাজিম[সম্পাদনা]

মাদ্দে লাজিমের বিবরণ
অর্থ অত্যাবশ্যকীয় মাদ্দ
সঙ্গা যে মাদ্দ ইদগাম,সাকিন ও শাদ্দাহ এর উপর নির্ভরশীল তা মাদ্দে লাজিম 
মাদ্দ লম্বা হবে অবশ্যই ৬ হারকাত বা ৩ আলিফ লম্বা করে পড়তে হবে।
বিভাগ বিবরণ  উপবিভাগ বিবরণ উদাহরণ
কালমি কালিমা বা শব্দের মধ্যে কিন্তু হরফের মধ্যে কায়দা না হলে। কালমি মুসাক্কাল মদের হরফের পর মুশাদ্দাদ হরফ আসলে কালমি মুসাক্কাল হয় حَاخَّكَ
কালমি মুখাফফাফ মদের হরফের পর সাকিন হরফ আসলে কালমি মুখাফফাফ হয় اٰلْءٰنَ
হরফি হরফের মধ্যে কায়দা হলে। হরফি মুসাক্কাল মদের হরফের পর ইদগাম হইলে হরফি মুসাক্কাল হয় الم এর ل  এবং طسم এর س
হরফি মুখাফফাফ মদের হরফের পর সাকিন হরফ আসলে হরফি মুখাফফাফ হয় الم এর م ও طسم এর م

مد عارض للسكون মাদ্দে আ’রিদ্ব লিসসুকুন[সম্পাদনা]

মাদ্দে আ’রিদ্ব লিসসুকুন এর বিবরণ
বিবরণ যে মাদ্দ অস্থায়ী সাকিনের জন্য হয় তা মাদ্দে আ’রিদ্ব লিসসুকুন
অস্থায়ী সাকিনের কী যেকোনা শব্দের শেষ হরফে হারকাত থাকলে ওয়াকফের অবস্থায় তা সাকিন হয়ে যায়। ঐ সাকিনকে অস্থায়ী সাকিন বলা হয়।

যেমন: تَمَ কে ওয়াকফের অবস্থায়(থামার সময়) تَمْ পড়তে হয়।

روم রাউম কী উপরের অস্থায়ী সাকিনের পরিবর্তে আসলে যে হারকাত ছিলো (এক্ষেত্রে জবর বাদে) তা এতটুকু আস্তে উচ্চারণ করতে হবে জাতে দূর থেকে কেউ শুনতে না পায় বা ⅓ হারকাত (১ হারকাতের ৩ ভাগের ১ ভাগ) উচ্চারণ করতে হবে যাতে দর্শক বুঝতে পারে ঐ জায়গায় আসলে জের বা পেশ ছিল।

যা দর্শকদের অর্থ বুঝতে সহায়তা করবে।

ইশমাম কী উপরের অস্থায়ী সাকিনের পরিবর্তে আসলে যে হারকাত ছিলো (এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পেশ) তা উচ্চারণ না করে শুধুমাত্র ঠোট গোল করতে হবে যাতে দর্শক বুঝতে পারে ঐ জায়গায় আসলে পেশ ছিল।

যা দর্শকদের অর্থ বুঝতে সহায়তা করবে।

পুরা কুরআন শরীফে ইশমাম এক জায়গা আছে। (সূরা ইউসুফ, আয়াত নাম্বার ১১)

প্রকার কখন হয় কতভাবে পড়া যায় উদাহরণ
منصوب মানস্বুব জখন জবরের পরিবর্তে অস্থায়ী সাকিন হয় ৩ ভাবে পড়া যায়:

قصر ক্বাসার: ২ হারকাত
توسط তাওয়াসসুত: ৪ হারকাত
طول তুল: ৬ হারকাত লম্বা করে

عَالَمِيْنَ
مَجْرُوْر মাজরুর জখন জেরের পরিবর্তে অস্থায়ী সাকিন হয় ৪ ভাবে পড়া যায়:

قصر ক্বাসার: ২ হারকাত
توسط তাওয়াসসুত: ৪ হারকাত
طول তুল: ৬ হারকাত লম্বা করে
روم مع القصر রাউম মা’য়াল ক্বাসার: রাউম এর সহিত ১ আলিফ লম্বা করে

دِيْنِ
مرفوع মারফু’ জখন জের বা পেশের পরিবর্তে অস্থায়ী সাকিন হয় ৭ ভাবে পড়া যায়:

قصر ক্বাসার: ২ হারকাত
توسط তাওয়াসসুত: ৪ হারকাত বা ২ আলিফ
طول তুল: ৬ হারকাত লম্বা করে
قصر مع الاشمام ক্বাসার মা’য়াল ইশমাম: ইশ্মামের সহিত ২ হারকাত
توسط مع الاشماك তাওয়াসসুত মা’য়াল ইশমাম: ইশ্মামের সহিত ৪ হারকাত
طول مع الاشمام তুল মা’য়াল ইশমাম: ইশ্মামের সহিত ৬ হারকাত বা ৩ আলিফ
روم مع القصر রাউম মা’য়াল ক্বাসার: রাউম এর সহিত ১ আলিফ লম্বা করে

نَسْتَعِيْنُ

গুন্নাহ্[সম্পাদনা]

নাকের মূল হতে নির্গত আওয়াজকে গুন্নাহ্ বলা হয়। অনেকটা বাংলা চন্দ্রবিন্দু উচ্চারণের মতো গুন্নাহ্ উচ্চারিত হয়।কোন কোন অবস্থায় গুন্নাহের সহিত পড়তে হয় নিচে তার সম্পূর্ণ তালিকা দেওয়া হয়েছে :

যেসব গুন্নাহ্ ১ হরকত (সাভাবিক একটি হরফ উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে) বা ½ আলিফ পরিমাণ  লম্বা করে পড়তে হবে :

  1. নুন সাকিন (نْ)
  2. মিম সাকিন(مْ)

যেসব গুন্নাহ্ ২ হরকত বা ১ আলিফ পরিমাণ লম্বা করে পড়তে হবে :

বি দ্র. এই শ্রেণীর গুন্নাহ্ কে হদরের সহিত অর্থাৎ দ্রুত গতিতে পড়ার সময় দেড় হরকত পরিমানও লম্বা করা যাবে।
  1. ইখফা
  2. ইদগামে মা’ল গুন্নাহ
  3. ইকলাব
  4. ইখফায়ে শফওয়ী
  5. ইদগামে মিসলাইন সগির

যেসব গুন্নাহ্ ৩ হরকত বা দেড় আলিফ পরিমাণ লম্বা করে পড়া যাবে :

বি দ্র. এই শ্রেণীর গুন্নাহ্ কে ২ হরকত বা ১ আলিফ পরিমানও লম্বা করা যাবে।
  1. নুন মুশাদ্দাদ (نّ)
  2. মিম মুশাদ্দাদ (مّ)সত্য মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ধ্বংস করে” এটি প্রমাণিত সত্য। মিথ্যাবাদীকে কেউ ভালোবাসেনা। এজন্য ইসলাম মিথ্যার কুফল বর্ণনা করে তার অনুসারীদেরকে উক্ত খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছে। যেমন, আল্লাহর বাণী

بسم الله الرحمن الرحيم

قلے إذا جاءك المنافقون قالوا نشهد إنك لرسول الله والله يعلم إنك لرسوله، والله يشهد إنّ المتفقين لكذبون

মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলে: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসুল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসুল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সুরা মুনাফিকুন -1)

١٠ ـ ويل يو ميذ للمكذبين

اا- الذين يكذبون بيوم الدين

١٢ ـ وما يكتب به الاكل معتد اليم

١٣ ـ إذا تتلى عليه ايثنا قال أساطير الأولين

۱۴ ـ گلا “ بل ران على قلوبهم ما كانوا يكسبون

۱۵ ـ كلا إنهم عن ربهم يومين لمخجوبون

١٢ـ ثم إنهم لصالوا الجحيم

17- ثم يقال هذا الذي كنتم به تكذبون

(১০) সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের,

(১১) যারা প্রতিফল দিবসকে মিথ্যারোপ করে।

(১২) প্রত্যেক সীমালংঘনকারী পাপিষ্টই

কেবল একে মিথ্যারোপ করে।

(১৩) তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, পুরাকালের উপকথা।
(১৪) কখনও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।

(১৫) কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে।

(১৬) অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

(১৭) এরপর বলা হবে, একেই তো তোমরা মিথ্যারোপ করতে। (সুরা মুতাফফিফিন)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র [সম্পাদনা]

  1. "Arabic"www.arabic-keyboard.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০৮ 
  2. "points of articulation – Tajweed Me"tajweed.me (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০৮ 
  3. "sifaat al-huruf – Tajweed Me"tajweed.me (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০৮