বিষয়বস্তুতে চলুন

আসামের গামছা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(গামোচা থেকে পুনর্নির্দেশিত)
একটি পূৰ্ণাঙ্গ রূপের আসামের গামছা।

আসামের গামছা (অসমীয়া: গামোচা, প্রতিবর্ণী গামুসা) হচ্ছে আসামের সমাজ জীবনের অতি আদরের বস্ত্ৰ৷ আসামের গামছা সাধারণত চারিদিকে রঙিন সূতায় (বিভিন্ন রঙ থাকে) বোনা একটি সাদা দীর্ঘ কাপড়৷ রেশম সূতা থেকে বিশেষভাবে গামছা তৈরি করা হয় যদিও পাট ইত্যাদির সূতা থেকেও এটা তৈরি করা হয়৷ গামছা অসমীয়ার বাইরেও বাঙ্গালি, বিহারী এবং উড়িষ্যার মানুষেরাও ব্যবহার করে, অবশ্য অসমীয়া গামছার সাথে তাদের গামছার বহু পাৰ্থক্য রয়েছে। তাছাড়া অসমীয়া মানুষেরা গামছাটিকে এক সাংস্কৃতিক তথা সম্মানের প্ৰতীক হিসাবে ব্যবহার করে কিন্তু অন্য জায়গায় একে শুধুমাত্র নিত্য ব্যবহাৰ্য সামগ্ৰী হিসেবেই ব্যবহার হতে দেখা যায়। আসামে গামছা কে ‘”গামছা’” "গাম্‍চা", "মুক্‍চা" ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।

নামের উৎস

[সম্পাদনা]

গামছার নাম এবং উৎপত্তি সম্পৰ্কে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ সাহিত্যিকভাবে এর অৰ্থ হচ্ছে কোনো বস্ত্ৰ দিয়ে শরীর মোছার কাৰ্য (গা-শরীর + মচ্)৷ ফলে অসমীয়া সংস্কৃতিতে গা-মচা বস্ত্ৰটিকে গামছা হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে৷ এটা নিশ্চিত যে ভারতের অন্য কোন জায়গা থেকে আসামে গামছা আসেনি বা ভারতের অন্য জায়গায় গামছার ব্যবহার হতে দেখা যায় না৷ বৰ্তমান থাইল্যান্ডে গামছার মতো একটি বস্ত্ৰ ব্যবহার করার কথা জানা যায়৷ আসামের ইতিহাসে গামছা সম্পৰ্কে দুই এটি কথা লিখা আছে৷ ইতিহাসবিদ ড. লীলা গগৈর মতে আহোম সাম্রাজ্যর থেকেই আসামে গামছার প্ৰচলন হয়৷ এমনকি মহাপুরুষ শঙ্করদেব এর সময়ে গামছার প্ৰচলন হওয়ার কথা জানা যায়৷ এডওয়াৰ্ড গেইটর 'A History Assam' গ্ৰন্থটিতে গামছার কথা উল্লেখ করেছেন৷ গ্ৰন্থটি অনুযায়ী ১৭৩৯ সালে একটি গামছার দাম ছিল ৬ পয়সা৷[]

ব্যবহার

[সম্পাদনা]
আসামের গামছা
তাঁতের ফুলের চানেকী
আসামের একটি বস্ত্ৰ বিপনীতে গামছা পরিহিত একজন বিক্ৰেতা
তাঁতশালয় একজন বধূ

অসমীয়া সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্ৰে গামছার ব্যবহার হতে দেখা যায়৷ এক কথায় অসমীয়া সমাজ-সংস্কৃতি, রীতি-নীতি সকল ক্ষেত্ৰে গামছার বিশেষ অবদান আছে৷[]

  • গামছাকে দৈনিক কাজে গা-ধোয়ার পর শরীর মোছার জন্যে ব্যবহার করা হয়৷
  • নামঘরে ধর্মীয় কোনো শাস্ত্ৰ ডেকে রাখার জন্যে এটি ব্যবহার করা হয়৷
  • কৃষকেরা এটি কোমরে বেঁধে(টাঙালি) বা কোমরে পরার কাপড় হিসেবে ব্যবহার করে৷
  • নামঘরে প্ৰাৰ্থনা করার সময় এটি কাঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়৷
  • কোনো সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মান জানানোর জন্যে গামছায় সম্মান জানানো হয়৷

প্ৰকার

[সম্পাদনা]

অসমীয়া সমাজে গামছার ব্যবহারের ওপর নিৰ্ভর করে একে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন:-

  1. পানী-গামছা
  1. তামোল-গামছা
  1. বিহুয়ান ইত্যাদি নামে নামকরণ করা হয়৷

আনাকাটা

[সম্পাদনা]

আসামে প্ৰচলিত গামছার অন্য একটা রূপ হল আনাকাটা গামছা। আনাকাটা মানে হচ্ছে যখন গামছা কাটি ছাড়া তৈরি হয়।এটি সাধারণত বিয়ে শাদিতে ব্যবহার করা হয়।

সাংস্কৃতিক বিশেষত্ব

[সম্পাদনা]
গামছায় থাকা ফুলের পাপরি
গামছা এবং জাপি

অসমীয়া সংস্কৃতিতে গামছা বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে৷ বিহু, বিবাহ অনুষ্ঠান বা অন্যান্য যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গামছাকে সম্মানের প্ৰতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ আসামের সকল শ্ৰেণীর জাতি গামছা ব্যবহার করে৷ আসামের বিহু উৎসবের সাথে গামছার বিশেষ সম্পৰ্ক আছে৷ বিহু নৃত্যের সময়ে যুবকরা গামছাকে মাথায় বেঁধে বিহু নৃত্যে অংশ গ্ৰহণ করে৷ এজন্যে গামছাকে বিহুয়ান বলা হয়৷ অন্যদিকে বিবাহ অনুষ্ঠানে সকল ক্ষেত্ৰে গামছাকে উপহার দেয়ার সাথে সম্মান জানানোর জন্যেও গামছা ব্যবহার করা হয়৷[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. মৰমৰ দীঘ আৰু চেনেহৰ নাণি দি বোৱা বিহুৱানখন, লেখিকা: দীপশিখা গগৈ, অসমীয়া প্ৰতিদিন, বুধবাৰ, ১১ এপ্ৰিল, ২০১২
  2. http://onlinesivasagar.com/lifestyle/gamosa.html

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]