গণভবন
এই নিবন্ধের সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর নিবন্ধটি একীভূত করার প্রস্তাব করা হলো। (আলোচনা করুন) প্রস্তাবের তারিখ: সেপ্টেম্বর ২০২৪। |
গণভবন | |
---|---|
সাধারণ তথ্যাবলী | |
ঠিকানা | শেরে বাংলা নগর |
শহর | ঢাকা |
দেশ | বাংলাদেশ |
নির্মাণ শুরু | ১৯৭৩ |
সম্পূর্ণ | ১৯৭৪ |
গণভবন ছিল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন, যা ঢাকার শেরে বাংলা নগরে জাতীয় সংসদের উত্তর কোণে অবস্থিত।[১] এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী এ বাসভবনে থাকেননি।[২]
অবস্থান
[সম্পাদনা]এটি মিরপুর সড়কের পূর্ব পাশে ও লেকসড়কের ক্রসিং-এ অবস্থিত এবং জাতীয় সংসদ ভবন থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি ঢাকার সবচেয়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদের দূরত্ব সামান্য।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিন্টো রোডে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট ভবনে অফিস করতেন। প্রেসিডেন্ট ভবন তখন গণভবন নামে পরিচিত ছিল। প্রেসিডেন্ট ভবন এখন সুগন্ধা ভবন নামে পরিচিত যা ফরেন সার্ভিস একাডেমী অফিস। প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু অনেক কষ্ট করে অফিস করতেন। সেখানে তার সকল স্টাফদের জন্য স্থান সংকুলান হত না। সেই অফিস ভবন ছোট হবার কারণেই তিনি ১৯৭৩ সালে শেরে বাংলা নগরে সংসদ ভবনের পাশে তাঁর বাসভবন ও সচিবালয় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন।[৩] ১৯৭৪ সালে গণভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে বঙ্গবন্ধু সেখানে অফিস শুরু করেন। তবে তিনি বাস করতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামরিক শাসন জারি হলে গণভবনকে সামরিক আদালতে পরিণত করা হয়।[২] পরবর্তীতে এটি একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের দপ্তর হিসেবেও বরাদ্দ ছিল। ১৯৮৫ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ভবনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সংস্কার শেষে ১৯৮৬ সালে এটিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পরিণত করা হয়, যার নাম রাখা হয়েছিল করতোয়া ভবন। ১৯৮৮ সালে ভবনটি দ্বিতীয় দফা সংস্কার করার জন্য কনকর্ড গ্রুপকে নিযুক্ত করা হয় এবং সংস্কার শেষ হলে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিণত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় বৈঠকের মাধ্যমে মাত্র ১ টাকায় ভবনটির ইজারা নিয়ে নেন। সিদ্ধান্তটি গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলে শেখ হাসিনা বিরক্তি প্রকাশ করে গণভবন ত্যাগ করেন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান সেই ইজারা বাতিল ঘোষণা করেন। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা আমলে ভবনটির নাম প্রধানমন্ত্রী ভবন রাখা হয়, যদিও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটি ব্যবহার করতেন না।[৩]
শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৩ই অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর সরাসরি উত্তরাধিকারীদের জন্য জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ সংসদে পাশ হয়। আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে গণভবনটি প্রদান করা হয়।[৪] তখন ভবনটিকে আবার সংস্কার করা হয়। সংস্কার শেষে ৫ মার্চ ২০১০ সাল থেকে এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন হিসেবে থাকতে শুরু করেন।[১] ২৮ জুলাই ২০২৪ সালে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেন যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগে ১৯ জুলাই রাতে ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কা বিক্ষোভ আন্দোলনের আদলে গণভবন আক্রমণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।[৫] ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে নিরাপত্তাহীনতার সুযোগ নিয়ে বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে বিশৃঙ্খল জনতা গণভবনে প্রবেশ করে এর ক্ষতিসাধন করে ও সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। তবে লুট হওয়া বেশিরভাগ জিনিসপত্র পরে ফেরত আসে।[৬] ৬ আগস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভবনটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়।[২] পদত্যাগ-পরবর্তী গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের পঞ্চম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।[৭]
কাজ
[সম্পাদনা]গণভবনটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন প্রদান, গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালনা, এনজিও, প্রোটোকল এবং অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করে থাকতেন।[৮]
গণভবনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলীয় নেতা, কর্মী, পেশাজীবী, সিনিয়র নাগরিক, সামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকসহ অন্যান্যদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।[৯] প্রতি ঈদে গণভবনের গেট সকাল ৯ টায় দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হত। ঈদের নামাজের পর দেশি-বিদেশি সকল নাগরিক সারিবদ্ধভাবে তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার সুযোগ পেত।[১০]
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে গণভবনে আয়োজিত নির্বাচনী মেলায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যোগ দেন।[১১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "প্রধানমন্ত্রীর ঠিকানা এখন গণভবন"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৪ মার্চ ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ ক খ গ "গণভবনে বাস করা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি"। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ ক খ আখতারুজ্জামান, মুহাম্মাদ (১২ মে ২০১৯)। "চমৎকার স্থাপত্যশৈলীতে সাজানো প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন 'গণভবন'"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯"। ৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "'শ্রীলঙ্কান স্টাইলে' গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিল"। কুমিল্লার কাগজ। ২৯ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "গণভবনের লুণ্ঠিত মালপত্র ফেরত আসছে"। খবরের কাগজ। ২০২৪-০৮-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-১৩।
- ↑ "গণভবন হবে 'জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর'"। জাগোনিউজ। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "PM moves to Gono Bhaban"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। মার্চ ৬, ২০১০। জানুয়ারি ১৩, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৩, ২০১৭।
- ↑ "ঈদের দিন সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী"। বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস: গণভবনে জনপ্রতিনিধিরা"। একাত্তর টিভি। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- উইকিমিডিয়া কমন্সে গণভবন সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।