ওরে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া
"ওরে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া" | ||
---|---|---|
![]() | ||
সারেং বৌ অ্যালবাম থেকে | ||
আব্দুল জব্বার কর্তৃক সঙ্গীত | ||
ভাষা | বাংলা | |
মুক্তিপ্রাপ্ত | ১৬ জুন, ১৯৭৮ | |
স্টুডিও | ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিও | |
স্থান | কাকরাইল, ঢাকা, বাংলাদেশ | |
ধারা | চলচ্চিত্র সংগীত | |
গান লেখক | মুকুল চৌধুরী | |
সুরকার | আলম খান | |
প্রযোজক | আলম খান | |
সঙ্গীত ভিডিও | ||
ইউটিউবে "ওরে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া" |
“ওরে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া” বাংলা ভাষায় রচিত চলচ্চিত্রের একটি সঙ্গীত। এই সঙ্গীত বা গানটি ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র সারেং বৌ-এর অন্তর্গত।[১] এই গানের গীতিকার ছিলেন মুকুল চৌধুরী। আলম খানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় এই গানে কন্ঠ দেন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী আব্দুল জব্বার।[২][৩][৪] ঢাকার ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিও-তে ধারণকৃত গানটির সঙ্গীতায়জনে নিরীক্ষামূলক রাগ সঙ্গীতের সাথে গ্রামীণ সুরের মিশ্রণ আছে। চলচ্চিত্রে 'সারেং বউয়ের স্বামী বাড়ি ফিরে আসছেন' এমন একটি স্বপ্নে এই গানের ব্যবহার করা হয়েছে। ফারুক এই গানের দৃশ্যায়নে ঠোঁট মিলান, যিনি এই ছবিতে সারেং-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। জনপ্রিয়তার নিরিখে গানটির কয়েকবার পুনরুৎপাদন হয়েছে। গানটি আরটিভি কর্তৃক স্বর্ণযুগের সেরা বাংলা নাগরিক গান হিসেবে স্বীকৃত।
পটভূমি[সম্পাদনা]
আব্দুল্লাহ আল মামুন ১৯৭৪-৭৫ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত সারেং বৌ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। চলচ্চিত্রে সারেং নিজের বাড়ি ফিরছে-এমন একটি দৃশ্যপটে তিনি সংগীত আয়োজনের জন্য সুরকার আলম খানকে তার পরিকল্পনার কথা জানান। আলম খান ১৯৬৯ সালে একটি অস্থায়ী সুর তৈরি করে রেখেছিলেন, যা তিনি কোন গানে ব্যবহার করেননি। আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিকল্পনা শুনে তিনি এই গানের সঙ্গীত আয়োজনের জন্য ঐ অস্থায়ী সুরটি মনোনীত করেন।[৫] গানের গীতিকার মুকুল চৌধুরী ঐ অস্থায়ী সুর অনুযায়ী প্রথমে গানের মুখরা এবং পরবর্তীতে ছায়াছবির গল্প ও গানের দৃশ্যায়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্তরা সহ সম্পূর্ণ গীতি রচনা করেন।[২][৩] আব্দুল্লাহ আল মামুন এই গানে কন্ঠ দেওয়ার জন্য আব্দুল জব্বারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। সুরকার আলম খান আব্দুল জব্বারের কথা মাথায় রেখে গানের সুর করেছিলেন।[৬][৭][৮]
সঙ্গীত আয়োজন[সম্পাদনা]
সুরারোপ[সম্পাদনা]
আলম খান এই গানের জন্য দুই ধাপে সুরারোপ করেন। গানের মুখরার জন্য ১৯৬৯ সালে তৈরি করা সুর ব্যবহার করেন। গীতিকার মুকুল চৌধুরী এই গানের অন্তরা লেখার পর, অন্তরার কথা অনুযায়ী পরবর্তী সুর আরোপ করেন। নিরীক্ষাধর্মী এই গানের সুরে ভূপালি ও বিলাবল রাগের সাথে বাংলাদেশের গ্রামীণ সুরের মিশ্রণ করা হয়।[৯] সঙ্গীত আয়োজনে তবলা, ঢোল, বেহালা, বাঁশি, কী-বোর্ড, জাইলোফোন, একোর্ডিয়ান ব্যবহার করা হয়েছিল। দৃশ্যায়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গানে রেলগাড়ি চলার শব্দ, সাম্পান, বৈঠা, পানির ছপছপ শব্দ এবং শেষে একতারার শব্দ সংযোজন করা হয়েছিল।[৩]
সঙ্গীত ধারণ[সম্পাদনা]
গানটি কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে একক সঙ্গীত আয়োজনে ধারণ করা হয়েছিল।[২][৬] সম্পূর্ণ সঙ্গীত ধারণ করার জন্য শব্দ প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ তিনটি মাইক্রোফোন ব্যবহার করেছিলেন। একটি মাইক্রোফোনে আব্দুল জব্বারের কন্ঠ ধারণ; দ্বিতীয় মাইক্রোফোনে ১২ জন রিদম প্লেয়ারের ইফেক্ট ধারণ এবং তৃতীয় মাইক্রোফোনে ১০ জন বাদ্যযন্ত্রশিল্পীর বাজনা ধারণ করা হয়েছিল।[৩]
চলচ্চিত্রায়ন[সম্পাদনা]
চলচ্চিত্রে 'সারেং বউয়ের স্বামী বাড়ি ফিরে আসছেন' এমন একটি স্বপ্নে এই গানের ব্যবহার করা হয়েছে। ফারুক এই গানের দৃশ্যায়নে ঠোঁট মিলান, যিনি এই ছবিতে সারেং-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছায়াছবির পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এই গানের প্রথম অন্তরা রেলগাড়িতে, দ্বিতীয় অন্তরা সাম্পানে এবং সবশেষে মেঠোপথে চলচ্চিত্রায়ণ করেন।[৫][৭]
জনপ্রিয়তা ও স্বীকৃতি[সম্পাদনা]
ওরে নীল দরিয়া, বাংলা চলচ্চিত্র সংগীতের চিরসবুজ গানগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত।[১০] বাংলাদেশের বাইরেও এই গান জনপ্রিয়। সুইডিশ গায়িকা জয়ি প্র্যাঙ্কস এই গান গেয়েছেন।[১১][১২] ২০১৮ সালে আরটিভির একটি জরিপে দর্শকদের সর্বোচ্চ ভোটে এই গানটি স্বর্ণযুগের সেরা বাংলা নাগরিক গান-এর স্বীকৃতি পায়।[১৩][১৪] চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই গানটি টেলিভিশনের চলচ্চিত্র সংগীতানুষ্ঠান, কনসার্ট ও আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বহুবার পরিবেশন করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যান্ড দল এই গানটি নতুন করে পরিবেশনের উদাহরণ রয়েছে।[১৫] টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন তাদের একটি বিজ্ঞাপনে এই গান ব্যবহার করেছে।[৬][১৬]
পুনরুৎপাদন[সম্পাদনা]
- ২০০৩ সালে প্রকাশিত 'চুমকি-১'- এ্যালবামে ওরে নীল দরিয়ার রিমিক্স সংস্করণ প্রকাশিত হয়। রিমিক্স সংস্করণে পান্থ কানাই কন্ঠ দেন।[১৭]
- গান বাংলা নামক বাংলাদেশী সম্প্রচার টেলিভিশন নেটওয়ার্কের “উইন্ড অব চেঞ্জ” নামক সংগীতানুষ্ঠানের জন্য এই গানের মূলসুর ও গীতি ঠিক রেখে সংগীত পরিচালক কৈশিক হোসেন তাপস নতুন করে সংগীত পরিচালনা করেন। এই সংস্করণে পাপন কণ্ঠ দেন। এই সংস্করণটি ৫ জুন, ২০১৯ তারিখে ভিডিও আদান প্রদান সেবা প্রদানকারী প্লাটফর্ম ইউটিউবে উন্মুক্ত করা হয়।[১৮]
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "সোনালী দিনের সেইসব গান"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৫-০৭-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৮।
- ↑ ক খ গ "আবদুল জব্বারের জনপ্রিয় তিন গানের গল্প"। প্রথম আলো। ২০১৭-০৮-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।
- ↑ ক খ গ ঘ ""ওরে নীল দরিয়া" কালজয়ী এই গানটির জন্মকথা"। কৃষ্টি কথা। ২০১৭-০৮-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।
- ↑ "আবদুল জব্বারের জনপ্রিয় তিন গানের গল্প"। দেশে বিদেশে। ২০১৭-০৮-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "আলম খানের গান ও গল্প"। প্রথম আলো। ২০১৫-১০-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৩।
- ↑ ক খ গ "গানের নেপথ্য নায়ক"। প্রথম আলো। ২০০৯-১০-২৯। ২০১০-০৭-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।
- ↑ ক খ "জব্বারকে জোর করায় 'ওরে নীল দরিয়া' গেয়েছিল: আলম খান"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৭-০৮-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।
- ↑ "নিজের সেরা গানসমূহ নিয়ে যা বলেছিলেন জব্বার"। টাইমস২৪.নেট। ২০১৭-০৮-৩০। ২০১৯-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩।
- ↑ "যেখানেই গান আমি পাগল হাজির"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২০১৬-০৪-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৫।
- ↑ "'সারেং বউ': নারীর অন্তহীন সংগ্রামের বয়ান"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৬-০৩-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।
- ↑ "সুইডিশ তরুণীর কণ্ঠে 'ওরে নীল দরিয়া'"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৬-০১-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩।
- ↑ "Swedish Girl Singing Bangla Song with Sweet Voice - Ore Neel Doriya"। বাংলা স্টুডিও। ২০১৫-০৪-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে।
- ↑ "'ওরে নীল দরিয়া' দর্শক জরিপে স্বর্ণযুগের সেরা বাংলা নাগরিক গান"। আরটিভি অনলাইন। ২০১৮-১১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।
- ↑ "'ওরে নীল দরিয়া' 'দর্শক জরিপে' স্বর্ণযুগের সেরা নাগরিক গান"। প্রিয়.কম। ২০১৮-০৯-০৯। ২০১৯-০৯-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২।
- ↑ "Nil Doriya (নীল দরিয়া) | Bohubrihi (বহুব্রীহি) the Band | Cover song"। বহুব্রীহি সঙ্গীত দল। ২০১৯-০২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০২ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Grameenphone Neel Doriya"। গ্রামীণফোন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৩ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে।
- ↑ "বেদখল!"। প্রথম আলো। ২০১১-০১-২০। ২০১১-০১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৭।
- ↑ "OREY NEEL DORIYA - TAPOSH FEAT. PAPON : OMZ WIND OF CHANGE [ S:05 ]"। গান বাংলা। ২০১৯-০৬-০৫ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- ওরে নীল দরিয়া গানের পূর্ণ গীতি
- ইউটিউবে 'ওরে নীল দরিয়া' গান নিয়ে সুরকার আলম খানের সাক্ষাতকার