আল্লামা লুৎফর রহমান
আল্লামা লুৎফর রহমান | |
|---|---|
 আল্লামা লুৎফর রহমান | |
| উপাধি | শায়েখ, আল্লামা |
| ব্যক্তিগত তথ্য | |
| জন্ম | মুহাম্মদ লুৎফর রহমান ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ |
| মৃত্যু | ৩ মার্চ ২০২৪ (বয়স ৮৪) |
| সমাধিস্থল | বদরপুর, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর |
| ধর্ম | ইসলাম |
| জাতীয়তা |
|
| সন্তান | দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে |
| পিতামাতা |
|
| রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী |
| যেখানের শিক্ষার্থী |
|
| অন্য নাম | মাওলানা লুৎফুর রহমান |
আল্লামা লুৎফর রহমান (২ ফেব্রুয়ারী ১৯৪০ - ৩ মার্চ ২০২৪) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলেম, জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা, গবেষক ও বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।[২] তিনি ২০২৪ সালের ৩ মার্চ রোজ রবিবার দুপুর ২টা ৫৪ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছিলেন।[১] তিনি বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওয়াজ মাহফিলে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুসলমানদের সচেতন করতেন।
প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]
আল্লামা লুৎফর রহমান ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লামা লুৎফর রহমানের পিতা মাওলানা আব্দুস সামাদ (রহ:) পেশায় একজন আলেম এবং সমাজসেবী ছিলেন এবং মাতা মরহুমা বেগম মাকসুদা খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র ও পাঁচ কন্যা সন্তান রয়েছে।
শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
আল্লামা লুৎফর রহমানের পিতা মাওলানা আব্দুস সামাদ অত্যন্ত বুজুর্গ আলেম ছিলেন। পিতার হাতেই তিনি ইসলামী শিক্ষার সূচনা করেন। এছাড়া তিনি ১৯৬১ সালে কালাইয়া রব্বানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, ১৯৬৩ সালে রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম, ১৯৬৫ সালে ফাজিল এবং ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে কামিল পাশ করেন।
ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি তিনি নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্র জীবনের সকল পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস এবং স্কলারশিপ প্রাপ্ত একজন মেধাবী মুখ হিসেবে পরিচিত।
তিনি বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি এবং সংস্কৃতি ভাষা সহ বহু ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।[৩]
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
আল্লামা লুৎফর রহমান কর্মজীবনে রাজখালী আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ধর্মীয় আলোচনা শুরু করেন ইমামগঞ্জ (নাগেরহাট) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমামের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যে দিয়ে। কর্মজীবনের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন অগ্রগতিতে সর্বদা নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। নিজ উদ্যোগে তিনি অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ইসলামী পাঠাগার দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠা করেন। একজন স্বনামধন্য বক্তা হিসেবে দেশে-বিদেশে বহুল পরিচিত আল্লামা লুৎফর রহমান।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ইসলামের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, কোরিয়া, জাপানসহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অসংখ্য দেশে ভ্রমণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই মুফাসসিরে কোরআন। তাঁর ওয়াজ শুনে অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কোরআন প্রচারের পাশাপাশি তিনি অনেক দুর্লভ গ্রন্থ রচনা করে দেশবিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।[৩]
রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]
তিনি ছাত্র জীবন থেকেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে কাজ করেছেন। অতঃপর বৃহত্তর সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর 'রুকন' হয়ে আজীবন ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। এবং ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন।
ছাত্র রাজনীতি[সম্পাদনা]
ছাত্র জীবনে তিনি রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিলে অধ্যয়নকালে তাঁর শিক্ষক মাওলানা নুরুর রহমানের অনুপ্রেরণায় তিনি জিএস পদে নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে কামিলে অধ্যয়নকালে ভিপি নির্বাচিত হন। পাশাপাশি একই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর পর-ই বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলি[সম্পাদনা]
- চার ইমামের জীবনী[৪]
- আল কোরআনের বিষয়ভিত্তিক অভিধান[৫]
- আসান ফেকাহ্ (১ম ও ২য় খণ্ড একত্রে)[৬]
- তাম্বিহুল গাফেলিন[৭]
- মুসলিম জাহানের - চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা.[৮]
- ইসলামের ফরজ বিধান পর্দা (সাদা)[৯]
- মুসলিম জাহানের চার খলিফার জীবনী[১০]
- মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রা.[১১]
- ইসলামে চারিত্রিক পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার বিধান[১২]
মৃত্যু[সম্পাদনা]
আল্লামা লুৎফর রহমান ২০২৪ সালের ৩ মার্চ রোজ রবিবার দুপুর ২ টা ৫৪ মিনিটে রাজধানী ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুর আগে তাকে ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাতে ব্রেনের অপারেশন করা হয়। তারপর থেকে আর জ্ঞান ফিরেনি তাঁর। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি সকাল পৌনে ১০টায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার নিজ বাড়িতে ব্রেনস্ট্রোক করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির লোকজন তাকে লক্ষ্মীপুর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান তিনি ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়।[১৩]
তাঁর ইন্তেকালে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনসহ বিশিষ্টজনেরা শোক প্রকাশ করেছেন।[১]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ "প্রখ্যাত আলেম মাওলানা লুৎফর রহমান মারা গেছেন"। www.dhakatimes24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৩।
- ↑ "বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মারা গেছেন"। www.dhakanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৪।
- ↑ ক খ "জনপ্রিয় বক্তা মাওলানা লুৎফর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবন"। www.kalbela.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৩।
- ↑ "চার ইমামের জীবনী"। রকমারি। ১৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "আল কোরআনের বিষয়ভিত্তিক অভিধান"। রকমারি। ৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "আসান ফেকাহ্ (১ম ও ২য় খণ্ড একত্রে)"। রকমারি। ৯ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "তাম্বিহুল গাফেলিন"। রকমারি। ২৮ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "মুসলিম জাহানের - চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা."। রকমারি। ১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "ইসলামের ফরজ বিধান পর্দা (সাদা)"। রকমারি। ২৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "মুসলিম জাহানের চার খলিফার জীবনী"। রকমারি। ১৩ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক রা."। রকমারি। ২৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "ইসলামে চারিত্রিক পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার বিধান"। রকমারি। ৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
- ↑ "মাওলানা লুৎফর রহমান আর নেই"। mzamin.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০৫।