হানাফী (মাযহাব)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(হানাফি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হানাফি বা আহনাফ বা হানাফি মাযহাব বা ফিকহে হানাফি, এই মাযহাবকে তাবেয়ী ইমাম আবু হানিফার (৮০হি. - ১৫০হি.) সাথে সম্পর্কিত করা হয়। ইহা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্যান্য মাযহাবের মধ্যে সর্বপ্রাচীন সংঘবদ্ধ মাযহাব।[১][২][৩]

হানাফী মাযহাবকে অন্যতম প্রচলিত ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এবং মুসলিম সম্প্রদায়ে সবচেয়ে বেশি গ্রহণকৃত মাযহাব এটি। একে বিচারকদের মাযহাবও বলা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রসারিত মাযহাব এবং চার মাযহাব এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। এই মাযহাবের গুরুত্ব এই যে, এটি শুধু ইমাম আবু হানিফার একক বক্তব্য নয়, বরং তাঁর বক্তব্যের চেয়েও সাহাবীদের বক্তব্য বেশি গ্রহন করে থাকে। হানাফী মাযহাবের চিন্তাধারাকে এমন একটি মতবাদ হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা ইসলামী আইনশাস্ত্র এর সমস্যাগুলি সম্পাদন এবং সেগুলিকে অধ্যায়গুলিতে বিন্যস্তকরণ করে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে। ইমাম আবু হানিফাই সর্বপ্রথম ইলমুশ শরিয়াকে শাস্ত্রবদ্ধ করেন এবং অধ্যায়ে অধ্যায়ে বিন্যস্ত করেন; তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইমাম মালিক বিন আনাস তার প্রসিদ্ধ আল-মুয়াত্তা কিতাব তারতিব করেন। আবু হানিফার পূর্বে এ কাজে কেউ ব্রত হন নি, কারণ সাহাবীতাবেয়ীনগণ শরিয়া বিজ্ঞানে শ্রেণীবদ্ধ অধ্যায় প্রতিষ্ঠা করে বা পুস্তক সম্পাদনা করে যান নি, বরং শরিয়তকে মুখস্থ করার শক্তির উপর নির্ভর করতেন। যখন আবু হানিফা দেখলেন ইসলামী সভ্যতায় জ্ঞানের দিগ্বিদিক প্রসারিত হচ্ছে, তখন তিনি পরবর্তী উত্তরসূরিরা ইসলামী শরিয়তকে বানোয়াট করে মন্দ লিপ্ত হবার ভয় থেকে এ শাস্ত্রকে তড়িৎ দাঁড় করান এবং শ্রেণীবদ্ধ অধ্যায় সংবলিত এক্ সংঘটিত পুস্তক তৈরিতে মনোনিবেশ করেন। তিনি প্রথমে তিনি শুরু করেন তাহারাত দিয়ে, তারপর নামাজ, তারপরে অন্যান্য ইবাদত, তারপরে লেনদেন, তারপর উত্তরাধিকার দিয়ে বই শেষ করেন, এই বিন্যাস পরবর্তী ফকীহগণ গ্রহণ করেন।[৪][৫]

আবহমান কাল ধরে হানাফি মতবাদের অনুসারী সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ইরাক, সিরিয়া, সুদান, মিশর, জর্দান, তুরস্ক, আজারবাইজান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তুর্কিস্তান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা[৬][৭][৮] বাকি অন্যান্য আরব ও অনারব দেশে প্রচুর হানাফি মাযহাবের অনুসারী রয়েছেন তবে তা অন্যান্য সকল মাযহাবের সংখ্যার বিবেচনায় কম।

উৎপত্তি ও প্রতিষ্ঠা পর্যায়[সম্পাদনা]

সময়কাল[সম্পাদনা]

এই পর্যায়ের সূচনা ইমাম আবু হানিফার যুগ থেকে শুরু হয়ে তারই সিনিয়র শিষ্য হাসান বিন যিয়াদ আল-লুঅলুইর মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়।

কর্মগুলি[সম্পাদনা]

এই পর্যায় মূলত: মাযহাবের ভিত্তিস্থাপন ও প্রতিষ্ঠাকাল, মাযহাবের উসুল নির্ধারণ ও এর নীতিমালা নোঙ্গরকাল; যেই ভিত্তির উপর নির্ভর করে হুকুম আহকাম নির্ণয়ের কাজ সম্পাদিত হয়, শাখাপ্রশাখা মাসআলাসমূহের উপপাদনকালের সামষ্টিক রূপ। প্রক্রিয়া এসব কর্মের অধিকাংশই ইমামের নিজ হাতে এবং তারই নির্দেশনায় সম্পাদিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দির বিখ্যাত আইনতাত্ত্বিক শাইখ মুহাম্মদ আবু যুহরাহ এ কথাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবং ইমামের সাথে তার সিনিয়র শিষ্যদের অংশগ্রহণও ছিল। যেমন, সে যুগে দরস ও পাঠদানের ক্ষেত্রে একমাত্র ইমাম আবু হানিফার ছিল অনন্য একটি পদ্ধতি; একে সংলাপ ও বিতর্ক পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে, আইনশাস্ত্রিক কোন সমস্যার (মাসাইল) ব্যাপারে পারস্পরিক সংলাপ (মুহাওয়ারা) অতপর বহুপক্ষীয় বিতর্ক (মুনাযারা) করা হত যতক্ষণ না কোন মত হুকুম হিসেবে স্থিত না হয়, আর তা হয়ে গেলে তিনি আবু ইউসুফকে তা রেকর্ড রাখার আদেশ দিতেন।

ইমাম আবু হানিফার শিষ্যদের পাঠদানের পদ্ধতির ব্যাপারে স্পষ্ট করে চতুর্দশ শতাব্দির আইনবিদ ও সাহিত্যিক মুয়াফ্ফিক আল-মাক্কি বলেন: আবু হানিফা তার মাযহাবকে পারস্পরিক শূরার (মন্ত্রণাসভা) দ্বারা গঠন করেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে তিনি নিজ থেকে দিনের মধ্যে ইজতিহাদস্বরূপ কোন স্বৈরতান্ত্রিক সমাধান দেন নাই। তিনি ছিলেন আল্লাহ ও তার রসুল এবং মুমিনদের উপদেশ নসীহতের ব্যাপারে অতিপৃক্ত। তিনি একটি একটি করে মাসআলা চয়ন করতেন, পরামর্শসভায় উপস্থাপন করতেন এবং তাদের বক্তব্য শুনতেন ও নিজের বক্তব্য পেশ করতেন। একটি মাসআলার উপরে কখনও একমাস লাগিয়ে দিতেন যতক্ষণ না এ সমস্যায় একটি মতের উপর সমকেন্দ্রীভূত হওয়া যায়। সমাধান হয়ে গেলে বিচারপতি আবু ইউসুফ উসুলের মধ্যে তা শামিল করতেন, এভাবে তিনি সমস্ত উসুল সাব্যস্ত করেন।” এর উপর ভিত্তি করে বলা হয়, আবু হানিফার বিশাল শিষ্যবর্গ এই আইনগত স্থাপনার ভিত্তিস্থাপনে অংশগ্রহণও করেন, কেবলমাত্র একক শ্রোতা হিসেবে বা পেশকৃত বিষয়ের নিছক কবুলকারী হিসেবে কেউ ছিলেন না।এবং আবু ইউসুফই একমাত্র স্থিত মতের নথিভুক্তকারী ছিলেন না, বরং ইমামের পরিষদে দশজন ছিলেন যারা নথিভুক্তির কাজে নিয়োজিত থাকতেন। তাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন চার শীর্ষ মুজতাহিদ: আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ বিন হাসান আশ-শায়বানী, যুফার বিন আল-হুজাইল, হাসান বিন যিয়াদ আল-লুঅলুই।

এইসমস্ত সহপাঠীগণ - বিশেষ করে - দুই বেস্ট ফ্রেন্ড: আবু ইউসুফ ও শায়বানী, ইমামের মৃত্যুর পর মাযহাবের বিকাশ ও পরিমার্জনে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান। তারা সেসব মতামতকে পরিমার্জনে ব্রত হল যেগুলোর উপর তারা ইমামের যুগে নির্ভর করেছিলেন, তারা সেসবে পূণঃনিরিখ করেন, এবং পূনর্যোজিত দলীল-প্রমাণ ও জনজীবনে ঘটা পরিবর্তন ও সমস্যার আলোকে পুনঃমূল্যায়ন করেন। এ কারণে আমরা দেখি আবু ইউসুফ ও শায়বানী ইমামের নির্ভরকৃত প্রচুর মতামত থেকে পশ্চাদপসরণ করেন যখন তারা হেজাযবাসীদের নিকট যা আছে তার ব্যাপারে প্রজ্ঞাপনপ্রাপ্ত হন। এরই প্রভাব মেলে যখন দেখা যায় তারা মৌলিক ও গৌণ মাসআলার একাংশের ব্যাপারে ইমামের বৈপরীত্য করেছেন। তাছাড়া তারা ছিলেন মুজতাহিদ এবং ইমামের সাথে সম্পর্কিত। যেহেতু তারা ইমামের নীতিমালার উপর নির্ভর করতেন, তাই তারা ইজতিহাদের সময় তারই পদ্ধতি অনুসরণ করেই করতেন। এজন্যই তাদের মতামতকেও আবু হানিফার মতামতের সাথে নথিভুক্ত করা হয়, এবং সবগুলোকেই হানাফিদের মাযহাব হিসেবে গণ্য করা হয়। কখনও কখনও ফতওয়া আবু হানিফার রায়ের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়, কখনও সাহেবাইন বা অন্যদের রায়ের উপর ভিত্তি করে।

সম্প্রসারণ, বিকাশ ও প্রসার পর্যায়[সম্পাদনা]

সময়কাল[সম্পাদনা]

এই পর্যায়ের শুরু হয় ইমাম আল-হাসান বিন জিয়াদ আল-লুঅলুঈর ওফাতের (২০৪ হি) পর থেকে এবং শেষ হয় প্রসিদ্ধ পাঠ্য কানযুদ দাকাইকএর রচয়িতা ইমাম আবুল বারাকাত আন-নাসাফি (মৃত্যু ৭১০ হিজরি) এর মৃত্যুর মাধ্যমে। অর্থাৎ এই পর্যায়ের সূচনা তৃতীয় শতাব্দীর শুরু থেকে যা সপ্তম শতাব্দীর শেষে গিয়ে সমাপ্ত হয়।[৯]

কর্মগুলি[সম্পাদনা]

এই পর্যায়টি হানাফী আইনশাস্ত্রের বিস্তার ও প্রসারের দিক থেকে এবং ইজতিহাদকর্মের প্রশস্ততার এবং মতামত বিকাশের দিক থেকে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধতম পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে; এই পর্যায়ের প্রারম্ভে, মাশাইখদের তাবাকাত বা মাযহাবের বড় বড় ওলামাদের আবির্ভাব ঘটে যারা এই মাযহাবকে সম্পাদনা করতে, এর পরিভাষাগুলো সংজ্ঞায়িত করতে এবং তারজিহ ও তাখরিজের নীতিমালা স্পষ্টকরণে দুর্দান্ত চেষ্টা করেন। আর মুহাম্মদ বিন হাসান শাইবানী এর কিতাবসমূহ বা যে পরিভাষায় এগুলো প্রসিদ্ধ - জাহিরুর রিওয়ায়াত - সেগুলো হল মাযহাবের প্রথম মুখপাত্র এবং আবু হানিফার মতামত ও বিবৃতির কথক।[১০]

যেমনিভাবে এই পর্যায়ে রচনাকর্ম এবং নথিভুক্তিকর্ম সক্রিয় ছিল, আইনশাস্ত্রীয় মাসাইল ও ফিকহি দরজায় কড়া নড়েছিল এবং নতুন ধারা ও মোকাদ্দামা বিষয়ক মাযহাবের মতামতের বয়ানের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল, তেমনিভাবে এ পর্যায়েরই আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এতে "মতন" বা "মুখতাসার" ধরণের কিতাব রচনার সূচনা হয়; যেমন মুখতাসার আল-তাহাভী, মুখতাসার আল-কারখী, মুখতাসার আল-কুদুরী, বুরহান আল-দীন আল-মুরগিনানির বিদায়াতুল মুবতাদি, এবং অন্যান্য মুখতাসার কিতাবসমূহ। একইভাবে শরাহ এবং মুতাওয়িলাত ধরণের কিতাব রচনা শুরু হয়; যেমন শামস আল-ইমাম আল- সারাখসির আল-মাবসুত, আলাউদ্দিন আল-কাসানীর বাদাইউস সানাই', ইমাম মুরগিনানির হেদায়া এবং অন্যান্য দীর্ঘ কলেবরের কিতাবসমূহ। এছাড়াও এ পর্যায়ে ফতোয়া ও নাওয়াজিল ধরণের কিতাবও রচনা হয়; যেমন, ফিকাহবিদ আবুল লাইস আল-সামারকান্দির ফতোয়া আল-নাওয়াজিল, হাসান বিন আলী আল-হালওয়ানির আল-ফতোয়া, সদর শহীদের আল-ফতোয়া, ইমাম কাজিখানের আল-ফতোয়া, এবং অন্যান্য অনেক মুসান্নাফ এবং মুদাওয়ানসমূহ যেগুলিকে হানাফি ঐতিহ্যের শাস্ত্রীয় সম্পদ বিবেচনা করা হয়।[১১]

এ পর্যায়ে, বিশেষত চতুর্থ শতাব্দীতে, হানাফী মাযহাবের কর্তৃত্বের উপর অন্যান্য ধরনের পুস্তকেরও আবির্ভাব ঘটে, যেগুলি তা'সিলুল হাদিসি নামে পরিচিত; যেমন ইমাম তাহাবীর হাদিসের মুসান্নাফসমূহ; শরহু মাআনিল আসার, মুশকিলুল আসার।[১২]

এ পর্যায়ে হানাফি মাযহাব থেকে দুটি কেন্দ্রের উত্থান ঘটে, যার প্রত্যেকটিতে এমন কিছু ছিল যা একে অন্যের থেকে বিশেষ করে তুলেছিল, যথা:

  1. মাদরাসাতুল ইরাকিঈন, এর প্রধান ছিলেন আবু আল-হাসান আল-কারখী: বিবেচনা করা হয়ে থাকে যে এই ধী-কেন্দ্র ইমাম আবু হানিফা এবং তার প্রথম দিকের সঙ্গীদের অনুসৃত পদ্ধতির সম্প্রসারণরূপ।
  2. মাদরাসাতু সমরকন্দ, এর প্রধান ছিলেন আবু মনসুর আল-মাতুরিদি: এই ধী-কেন্দ্রের বিশেষত্ব হল, এটি উসুলের বিষয়গুলিকে আকিদার বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত করে; যা অবশ্য ইরাকি ধী-কেন্দ্র থেকে খানিকটা পার্থক্য এবং অনন্যতার দিকে পরিচালিত করে।[১৩]

স্থিতি পর্যায়[সম্পাদনা]

সময়কাল[সম্পাদনা]

এই পর্যায়টি ইমাম নাসাফির মৃত্যুর পর থেকে (৭২০ হিজরী বা হিজরি অষ্টম শতাব্দী) শুরু হয়ে এখনও চলমান।[১৪]

কর্ম[সম্পাদনা]

এই পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, এ পর্যায়ে পূর্ববর্তী পর্যায়গুলোর চেয়ে ফিকহি শিথিলতা ও স্থবিরতার প্রাধান্য বেশী। যেমন এই পর্যায়ের হানাফিরা ব্যাখ্যা, মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়ার পথে না গিয়ে কেবল আইনশাস্ত্রের প্রথম দিককার মতামত ও বক্তব্যের উপর নির্ভর করেই সন্তুষ্ট; তাই এ পর্যায়ের সমস্ত কর্ম পূর্বের কর্মের তাবেদারি করে প্রসূত।

ফলস্বরূপ, এ পর্যায়ে মাযহাব এবং এর শাখাগুলি, গবেষণা, আলোচনা, স্পষ্টীকরণ এবং সমর্থনে পরিপুষ্ট, যদ্বারা মাযহাব বা মাযহাবের ভেতরকার সবচেয়ে সঠিক মতামতটি আরও স্পষ্টচিত্রে প্রকাশ হয়।[১৫] সেই স্থবিরতাকে চিত্রিত করলে এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য দাড়ায়: মুজতাহিদ, যিনি ইজতিহাদের পদমর্যাদা অর্জন করেছেন, তিনি প্রয়োজন ব্যতীত মাযহাবের বক্তব্য থেকে সরে যেতে পারবেন না, যদিও তিনি ইজতিহাদের মাধ্যমে যে মতে উপনীত হয়েছেন তা মাযহাবের অন্যান্য বক্তব্যের চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ হোক না কেন। ইমাম ইবনে আবিদীন শামী ইমাম আবু হানিফার বক্তব্য: «হাদিস যদি সহীহ হয়, তবে তা আমার মাযহাব।» এর ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন: «উচিত হল ইমামের এই শর্তকে "যখন মাযহাবের বক্তব্য হাদিসের সাথে একমত হবে..." বলে সীমাবদ্ধ করা; কেননা মাযহাব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত কোন বিষয়ে ইজতিহাদের অনুমতি নেই; এবং এ ব্যাপারে আমাদের ইমামগণ একমত; কারণ পূর্ববর্তীদের ইজতিহাদ এ যুগের ইজতিহাদের চেয়ে শক্তিশালী»।[১৬]

এর উপর ভিত্তি করে হানাফিরা ইমাম কামাল ইবনুল হুমামের তারজিহাতকে প্রত্যাখ্যান করে, যিনি ছিলেন মুহাক্কিকদের সিলমোহর (যেমনটি ইবনে আবিদীন প্রশংসা করে বলেছেন)। তারা ওনার এহেন বক্তব্যের উপর আমল করেন না। এমনকি তার একজন ছাত্র আল্লামা কাসিম বলেন: "আমাদের শাইখের (ইবনুল হুমাম) সেসব গবেষণার উপর আমল করা যাবে না যেগুলো মাযহাবের সাথে সাংঘর্ষিক।"[১৭]

মাযহাবের মূলনীতি (উসুল)[সম্পাদনা]

হানাফীদের নিকট সমাধান নির্ণয়ের প্রধান মূলনীতি তিনটি:[১৮] কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ এবং উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য)। আর চতুর্থ নীতি হল কিয়াস। [১৮] এমনটাই মাওয়ারাউন নাহরের আইনবিদ ফখরুল ইসলাম আল্লামা বাযদভী এবং ইমাম হুসামুদ্দিন আল-আখসিখিসি নির্ধারণ করেছেন।[১৯]

যদিও ইমাম আবু হানিফা থেকে তার মাযহাব তৈরিতে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তার বিশদ বিবরণ বা তার গবেষণা ও ইজতিহাদে অনুসরণ করা বিশদ নিয়মাবলিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে যান নি, তথাপি তাঁর কাছ থেকে প্রচুর বর্ণনা বর্ণিত আছে, যা তার অনুসৃত বিস্তৃত নিয়মকে পরিষ্কার এবং মতবাদের নিয়ম ও নীতি প্রতিষ্ঠায় তার অবলম্বিত সাধারণ মানহাজকে ব্যাখ্যা করে।[২০] এ সমস্ত বর্ণনার একটি বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল যা ইমাম সাইমারি ও খতিব বাগদাদি ইয়াহইয়া বিন দুরাইস থেকে অনুলেপন করেছেন:

আমি হযরত সুফিয়ান সাউরিকে দেখলাম, এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল: তুমি কেন আবু হানিফার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছ? তিনি বললেন: আপত্তি কিসে? তিনি বলেন: কেননা আমি তাকে বলতে শুনেছি: আমি (আবু হানিফা) আল্লাহর কিতাব দিয়ে সমাধান করি, আর যার সমাধান কিতাবে পাইনা তা রসুলের সুন্নতের মাধ্যমে সমাধান করি। যদি আল্লাহর কিতাব কিংবা রসুলের সুন্নত দিয়ে সমাধান না পাই তাহলে সাহাবাদের বক্তব্য গ্রহণ করি; অতঃপর তাদের মধ্যে যে কারো কথা গ্রহণ করি এবং যে কারো বক্তব্য রেখে দিই। তাদের বক্তব্য বাদ দিয়ে অন্যের বক্তব্যে যাই না। অতঃপর বিষয়টি শেষ হলে হল, নতুবা আমি ইব্রাহিম নাখয়ী, আমের আল-শা'বী, ইবনে সিরিন, হাসান, আতা, সাঈদ বিন আল-মুসায়্যিব, এবং এতসংখ্যক ওলামাদের নিকট আসি, এরপর আসি ইজতিহাদকারী ওলামাদের নিকট, এবং তারা যেভাবে ইজতিহাদ করেছেন আমিও সেরূপ ইজতিহদ করি।

— ইয়াহইয়া বিন দুরাইস, আখবার আবি হানিফা ওয়া আসহাবিহ, পৃ. ২৪; তারিখে বাগদাদ, খ. ১৫, পৃ. ৫০২; ইমাম মিযযি, তাহযিবুল কামাল, ২৯/৪৪৩; আল-ইন্তিকা, পৃ. ১৪২

মুওয়াফ্ফাক আল-মাক্কী তার কিতাব মানাকিবুল ইমাম আবি হানিফাতে তার পিতার সূত্রে, আবদ আল-করিম ইবনে হিলালের থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি আবু হানিফাকে বলতে শুনেছি: “যদি আমি বিষয়টিকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিতাব বা রসূলুল্লাহর সুন্নাতে পাই আমি তা গ্রহণ করি এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই না। আর যখন সাহাবীরাই দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন আমি তাদের বক্তব্য থেকে বেছে গ্রহণ করি। আর যদি সাহাবিদের পরের স্তর থেকে কিছু আসে, আমি নিয়ম মোতাবেক তা গ্রহণ করি এবং প্রয়োজনে বাদ দেই।"[২১] ইবনুল মক্কীও সাহল বিন মুজাহিমের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যিনি বলেন: “আবু হানিফার বক্তব্য করা মানে বিশ্বস্ততাকেই গ্রহন করা, ইহাকদর্যতা থেকে মুক্ত, জনজীবনের কর্ম ও তাদের প্রচলনের উপর খেয়াল রেখে প্রণীত এবং বিষয়াবলির শান্তি প্রতিষ্ঠায় মগ্ন। যা সঠিক করেছে তা দেখে এবং তাদের (তাদের ব্যাপার) উপর শান্তি স্থাপন করে। কিছু বিষয় কিয়াসের মানদণ্ডে নির্ণীত হয়, যদি কিয়াস পরিদুষ্ট হয় তখন বিষয়গুলি ইসতিহসানের উপর দিয়ে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই চলে। যদি ইস্তিহসান দিয়ে অগ্রসর হওয়া না যায়, তবে মুসলমানদের মুআমালাতের দিকে রুজু করতেন। তিনি সর্বসম্মত সুপরিচিত হাদিস প্রচার করতেন, তারপর যতক্ষণ কিয়াস গ্রহণযোগ্য হয় ততক্ষণ এর উপর কিয়াস করতেন, তারপর ইস্তিহসানের দিকে রুজু আসতেন। এতদুভয়ের মধ্যে যেটা বেশী সফল, তিনি তার উপরই রুজু করতেন। হযরত সাহল বললেন: ইহাই আবু হানিফার ইলম বিদ্যার পারদর্শীতা, ইলমে আম।" [২২] হাসান বিন সালিহের কাছ থেকেও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: “আবূ হানীফা রহিতকারী ও রহিত হাদীসগুলিকে কঠোর নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করতেন। তিনি হাদীসের উপর আমল করতেন যদি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীদের কাছ থেকে প্রমাণিত হত। তিনি আহলে কুফাদের মধ্যে হাদিস ও ফিকহ বিষয়ে পরিচিত ছিলেন। তার দেশের লোকেরা যা অনুসরণ করতেন তা কঠোর পালন করতেন।"[২৩]

ইমামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার ইস্তিনবাতের পদ্ধতির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণকারী এই বর্ণনাগুলির পর, হানাফী ইমামরা এই পদ্ধতিটিকে স্ফটিক করেছেন, এর বৈশিষ্ট্যগুলিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এবং এটিকে এর মৌলিক আকারে রেখেছেন এবং ইমামের মতে কর্তনের নীতিগুলি নিম্নরূপ করেছেন:

কিতাব[সম্পাদনা]

ইহা সকল উসুলের উসুল, সকল উৎসের উৎস। এমন কোন উৎস নেই যা সাবেত হবার জন্য এর দিকে রুজু হয় না। ইহা শরীয়তের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।[২৪] ফিকহের মধ্যে উসুল হিসেবে কিতাব বলতে বুঝানো হয়েছে, কিতাবের কিছু আয়াতকে যেগুলো হুকুম-আহকাম, হালাল-হারামের সাথে সংশ্লিষ্ট। এর সংখ্যা - যেমনটি সর্বজনবিদিত - পাঁচশটি আয়াত। কেননা বাকি আয়াতগুলো হল আকিদা, কাসাস, ইবরাত ইত্যাদি সম্পর্কিত।[২৫]

কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত[সম্পাদনা]

  • বিদ্যমান পূর্ববর্তী শরীয়ত, যা আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্যও ঘটনা আকারে বর্ণনা করে হুকুম বজায় রেখেছেন। এ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহও কিতাবুল্লাহ ও উসুল হিসেবে বিবেচিত। যেমন, সুরা মায়েদার ৪৫ নং আয়াত।

সুন্নাহ[সম্পাদনা]

এটি শরিয়া সূত্রের দ্বিতীয় উৎস, যা বইটির ব্যাখ্যা, ব্যাখ্যা এবং ব্যাখ্যা করেছে; আবু হানিফা রাসুল থেকে যা প্রমাণিত তা গ্রহণ করতেন । অবশেষে তাদের নিয়ে গেল। [২৬] এটি ঘন ঘন এবং সুপরিচিত সুন্নাহ এবং সেইসাথে রবিবারের খবরে রয়েছে, যদি না এটি একটি পূর্ববর্তী উপমা থেকে ভিন্ন হয়; - হানাফী মাযহাবের উপর ভিত্তি করে সাদৃশ্য হল সাধারণ নীতি যার সুনির্দিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে, এবং শাখায় এর প্রয়োগটি সুনির্দিষ্ট ছিল - সেক্ষেত্রে উপমাটি উপস্থাপিত হয়েছে, কোনো খাঁটি হাদিস থেকে প্রত্যাখ্যান নয়, বরং এর জন্য আরও সতর্কতা এবং সতর্কতা। একথা সর্বজনবিদিত যে, আবু হানিফা বর্ণনা গ্রহণে কঠোর ছিলেন। নবীর হাদিস সংরক্ষণ, [২৭] অথবা কারণ সেই সংবাদ - রবিবারের খবর - আইনের মূলনীতির একটি সাধারণ নীতির সাথে বিরোধিতা করেছিল, যা নিশ্চিত বলে প্রমাণিত হয়েছিল এবং শাখায় এর প্রয়োগ ছিল সুনির্দিষ্ট; অতঃপর তিনি সেই সংবাদকে দুর্বল করে দেন এবং সাধারণ নিয়মের দ্বারা বিধিবদ্ধ করেন যাতে কোন সন্দেহ নেই। [২৮] আর সাক্ষী আবু হানিফা (রহঃ) এর সূত্রে এই যে, সাদৃশ্যের উপর রবিবারের সংবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হত; যেমন আবু যায়েদ আল-দাবুসি বলেছেন: "আমাদের তিনজন আলেম - অর্থাৎ আবু হানিফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ বিন আল-হাসান আল-শায়বানী - এর উসুল হল নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস রবিবারের মাধ্যমে সঠিক উপমা উপস্থাপন করা হয়।" [২৯]

তবে এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যার জন্য তিনি এই উত্স থেকে সরে যেতে পারেন। যেমন ইবনে আবদ আল-বার বলেছেন: "রবিবার সংবাদ থেকে তার প্রতিক্রিয়া একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যার সাথে ছিল, এবং এর অনেকগুলি অন্যরা তার কাছে উপস্থাপন করেছিলেন এবং যিনি মতামত দিয়েছেন তার মতো তাকে অনুসরণ করেছিলেন। যেমন ইব্রাহীম আল-নাখায়ী, এবং ইবনে মাসউদের সাহাবীগণ। . . » যতক্ষণ না তিনি বলেন: “জাতির কোনো আলেম নবীর কাছ থেকে কোনো হাদিসকে নিশ্চিত করেন না, এবং তারপর এই দাবি না করে প্রত্যাখ্যান করেন যে এটি এমন কোনো প্রভাব দ্বারা, বা ঐক্যমতের দ্বারা বা একটি দ্বারা রহিত হয়েছে। এমন কাজ করুন যার মূলকে মান্য করতে হবে, অথবা এর ট্রান্সমিশন চেইনকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। কেউ যদি তা করে তবে তার ন্যায়বিচারের পতন ঘটবে। ইমাম হিসেবে নেওয়ার পাশাপাশি, তাকে অবশ্যই অনৈতিকতার পাপ করতে হবে।" [৩০]

সুন্নাহর সাথে সম্পৃক্ত[সম্পাদনা]

  • পূর্ববর্তী জাতির আইন যা এখনো বাকি আছে, রসূল যা বলেননি এবং যা রসূল করেছেন তা ব্যতীত। তারপর তিনি স্পষ্টভাবে এই বলে গল্পটিকে অস্বীকার করলেন: একই কাজ করবেন না, বা একটি ইঙ্গিত যে তিনি বলেছেন যে তাদের অন্যায়ের প্রতিদান হিসাবে . [৩১]
  • সাহাবায়ে কেরামের অযৌক্তিক বক্তব্য, এবং যদি তাদের মধ্যে মতভেদ হয় এবং তাদের বক্তব্য অসংখ্য হয়, তবে তিনি তাদের মধ্য থেকে শরিয়ার চেতনার সবচেয়ে কাছাকাছি যা মনে করেন তা বেছে নিতে পারেন এবং এটি তাদের বক্তব্য থেকে সরে যায় না, [৩২] এবং সম্ভাবনার কারণে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে শ্রবণ করা, বরং এটি তাঁর অধিকারে স্পষ্ট, যদিও তা তাঁর প্রতি আরোপিত নাও হয়।[৩৩]

ইজমা[সম্পাদনা]

যদি কোন বিষয়ে কুরআন বা সুন্নাহতে কোনো পাঠ পাওয়া না যায়, অথচ এ ব্যাপারে ইজমা (ঐকমত্য) খুঁজে পাওয়া যায়; তাহলে তাই গ্রহন করা হবে এবং তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।[৩৪] কিয়াসের ব্যাপারে হাদিস উত্থাপনের ব্যাপারে এ দিকে ইশারা করে ইমামের এর এই বক্তব্য: "এই হল কিয়াস যার মধ্যে আমরা আছি....আর আমল হবে কিতাব, সুন্নাহ এবং ইজমার উপর ভিত্তি করে।"[৩৫]

ইজমার সাথে সম্পৃক্ত[সম্পাদনা]

  • উরফ বা জনগণের ক্রিয়াকলাপ।[৩৬] ইহা তখনই, যখন কোনো নস না থাকে, কোনো ইজমা না থাকে এবং কিয়াস বা ইস্তিহসান পদ্ধতির দ্বারাও নসের কোনো অবকাশ করা না যায়; তাহলে মুসলমান জনগোষ্ঠীর ক্রিয়াকলাপের দিকে নজর দিতে হবে এবং হুকুম তৈরি করা হবে তারা যা জানে তার উপর ভিত্তি করে।[৩৭] ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ইজমার সাথে ইসতিহসান করা বৈধ, কিন্তু কিয়াসে এমনটা করা বৈধ নয়।[৩৮]

কিয়াস[সম্পাদনা]

যদি কেউ উপরের কোন কিছুতেই সমাধান খুঁজে না পায়, তাহলে যদি[৩৯] সে ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করে তবে সে ইজতিহাদ করে কিয়াস করবে। পূর্বের তিনটি উসুলের উপর একে কখনোই অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না। এমনকি কিছু মাসআলায় কিয়াস করে প্রকাশ্য বিবৃতি দিতে দেখা যায়, কিন্তু নসের খাতিরে তা পরিত্যাগ করতে হবে; যেমন আবু হুরায়রার এক বর্ণনায় দেখা যায় তিনি ভুলে খেয়ে ফেলেন বা পান করে ফেলেন; আবু হানিফা এই হাদিসকেও কাজে লাগান এবং তার নিকট উক্ত কাজ কিয়াসের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও তিনি এর দ্বারাই বিবৃতি দেন। ইমাম বলেন: "যদি রেওয়ায়েত না থাকত, তাহলে আমি কিয়াস দিয়ে সমাধান করতাম।"[৪০]

কিয়াসের সাথে সম্পৃক্ত[সম্পাদনা]

  • ইসতিহসান, ইহা এমন দলিল যা কিয়াসে জাহিরের বিরোধিতা করে। এবং ইহা তখনই প্রযোজ্য যখন কিয়াস নিন্দনীয় হয়ে পরে এবং ইস্তিকামাত অর্জন হয় না, এমতাবস্থায় ইস্তিহসান করতে হবে। ইমামের দৃষ্টিতে, ইস্তিহসান কোন বিদ্রোহী বক্তব্য নয় বা এমন কোন আমল নয় যা শরিয়ত অনুযায়ী কোন প্রমাণ ব্যতীত সম্পাদিত করা হয়েছে। এসব থেকে ইমামের কর্ম বেশি পবিত্র। বরং, ইমামের নিকট ইস্তিহসান হল, যেমনটি আবুল হাসান আল-কারখী উল্লেখ করেছেন: "প্রথম থেকে প্রত্যাবর্তন তলব করে এমন শক্তিশালী কারণের জন্য ব্যাক্তিকর্তৃক কোন মাসআলায় তার দৃষ্টান্তের ব্যাপারে তার বিপরীতে যেভাবে রায় দেওয়া হয়েছে তা থেকে পরহেজ করা।"[৪১] ইস্তিহসানের সংজ্ঞায় এটাই সর্বোত্তম সংজ্ঞা যেমনটি বলেছেন শায়খ মুহাম্মদ আবু যাহরা।[৪২]
  • সাহাবিদের বোধ্য বিবৃতি, ইহা কিয়াসের সাথে সম্পৃক্ত। ইহা কারও কারও অভিযোগের জবাবস্বরূপ উসুল হিসেবে গ্রহন করা হয়।

প্রসিদ্ধ হানাফি গ্রন্থসঙ্কলন[সম্পাদনা]

কিতাব আল-আসার
কিতাবুল আসার, কৃ. মুহাম্মদ বিন হাসান শায়বানী। হানাফি মাযহাবের ভিত্তি লেভেলের গ্রন্থ। পুস্তকটি হানাফী মাযহাবের প্রথম দালিলিক বইগুলির অন্যতম।
ফতোয়ায়ে আলমগিরি।ইসলামি আইনশাস্ত্রের অনবদ্য সংকলন, যা ফতোয়ায়ে হিন্দিয়্যাহ নামেও প্রসিদ্ধ। হানাফী মাযহাবের চিন্তাধারা থেকে নেওয়া আইনশাস্ত্রের বিধিবিধানের একটি সুবিশাল সংগ্রহ। এর সংকলন সম্পাদনায় নেতৃত্ব দেন শেখ নিজামুদ্দিন ব্রহ্মপুরীর অধীন ৫০০ সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ওলামাগণ। উপমহাদেশের বাদশাহ আবুল মুজাফ্ফর মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেবের আদেশক্রমে এটি রচনা হয়।
খুলাসাতুল বাহিয়্যাহ
কিতাব: আল-খুলাসাতুল বাহিয়্যাহ ফি মাযহাবিল হানাফিয়্যাহ।আইনশাস্ত্র শেখার ও শেখানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই, কারণ এতে হানাফী আইনশাস্ত্রে প্রস্তুতকৃত মোট পাঠ্যের একটি পর্যাপ্ত এবং পর্যাপ্ত পাঠ রয়েছে। বইটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেমন হানাফী মাযহাবের ইমামদের জীবনচরিত, আইনী বিধিবিধানের ধারা, হানাফি মাযহাবের বিষয়সমূহ, মাযহাবের  অনুমোদিত বই, হানাফি মাযহাবের উসুল এবং এর ওলামাদের পরিভাষাসমূহ।
তাতারখানি
কিতাব: ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া। সংকলক এতে ৩০টিরও বেশি গ্রন্থের সমন্বয় ঘটিয়ে রচনা করে ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া নামে নামকরণ করেন। তাতারখান হলেন ৮ম হিজরীর মুসলিম ভারতের সিনিয়র আমির ও মন্ত্রীদের একজন।

হানাফী মাযহাব হল সর্বাধিক বিস্তৃত এবং সর্বাধিক অনুসৃত মাযহাব। এজন্য এর মতন, মুখতাসার, শরাহ, মুতাওয়িলাত, হাশিয়া, তা'লিকাত, ফতওয়া, ও মানযুমাত এবং অন্যান্য সকল ধরণের গ্রন্থসংকলনের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে কিছু গ্রন্থসংকলনের চর্চা বেশ ত্বরান্বিত হয়েছে, এগুলোর সংবাদ সর্বত্র বিস্তৃত, এবং জ্ঞানারোহীরা এর উপর চলে থাকেন। মাযহাবের আলেমগণ এগুলোকে গ্রহণ করে থাকেন, এবং অন্যান্য কিতাবাদির চেয়ে এগুলিতে বেশি নির্ভর করেন; যেহেতু এগুলি মাযহাবের সহিহ এবং সবচেয়ে প্রাধান্য মতামতকে গর্ভ করে।[৪৩] পরিজ্ঞাত যে, হানাফী মাযহাবের পরবর্তী মুহাক্কিকরা, যেমন ইবনে আবেদিন শামী এবং আবদুল হাই লাখনভী মাযহাবের শ্রেণীবদ্ধ বইগুলিকে মাযহাবের প্রচারের জন্য নির্ভরযোগ্য কিতাব, অনির্ভরযোগ্য কিতাব, এবং ফতোয়া অযোগ্য এই তিনশ্রেণীতে ভাগ করেছেন।[৪৪] অনির্ভরতার আরেকটি কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন: এসব পুস্তকে দুর্বল বক্তব্য (কওলে যয়ীফ) ও অসঙ্গত মাসআলা (মাসাইলে শায) জমা করা হয়েছে, যদিও এসবের সংকলক সিনিয়র আইনবিদ হউন না কেন; এমনই হাল আল-জাহিদী (মৃ ৬৫৮ হি) রচিত আল-কুনিয়াহ গ্রন্থের, আবু বকর আল-হাদাদি (মৃ ৮০০ হি) রচিত আল-সিরাজুল ওয়াহহাজ শরহে মুখতাসার আল-কুদুরি গ্রন্থের এবং আলাউদ্দিন আল-হাসকাফি (মৃ ১০৮৮ হি) রচিত আল-দুররুল মুখতার গ্রন্থের। অন্য কারণ এ হতে পারে যে, এসব সংকলকদের হালত সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়নি; তারা কি নির্ভরযোগ্য আইনবিদ ছিলেন, নাকি তারা গমচর্বির মিশ্রণ ছিলেন; এমনই হাল, জামি'উল রামাউজ নামক শরহুন নুকায়ার লেখক শামসুদ্দিন আল-কুহেস্তানি (মৃ ৯৫৩ হি) এর, এবং শরহে কানযুদ দাকাইকের লেখক মানলা মিসকিনের (মৃত্যু ৯৫৪ হি) এর।[৪৫] আর এসবে নির্ভর না করার কারণ হতে পারে বড় বড় আলেম ও ফকীহ ইমামদের অনীহাপ্রকাশ। এটাই হানাফিদের নিকট এসবের উপর ই'তিবার না থাকার স্পষ্ট লক্ষণ।[৪৬]

আর নির্ভরযোগ্য গ্রন্থনার সংখ্যা প্রচুর। এদেরকে নিম্নবর্ণিত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:

শুরুতেই আসে যাহিরুর রিওয়ায়াহ কিতাবগুলি।[৪৭] মাযহাবে এসব কিতাবের মর্তবা হাদিসে বুখারী ও মুসলিমের মর্তবার মত;[৪৮] যেহেতু এগুলোই আবু হানিফা ও তার সাথিদের আইনশাস্ত্রের প্রতি রুজু হবার মৌলপুস্তক।[৪৯] সেজন্য ওলামারা এর খুব যত্নসহকারে গ্রহন করতেন, এমনকি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আল-মারওয়াযী, যিনি হাকিম আল-শাহিদ (মৃ ৩৩৪ হি.) নামে পরিচিত, তিনি এসব কিতাবকে একত্র করে একটি সংক্ষিপ্ত রূপ দেন, যার নাম হল: আল কাফি।[৫০]

ইবনে আবেদিন শামী, প্রধান বিচারক আল্লামা ইমাদুদ্দিন তারতুসির মাবসুতে সারাখসির উপর মন্তব্যকে নকল করেন, "মাবসুতে সারাখসি, যাহেরুর রেওয়ায়াতের খেলাফ হলে আমল করা যাবে না, মোতাবেক না হলে আস্থা করা যাবে না, ফতোয়া দেওয়া যাবে না, নির্ভরশীলও হওয়া যাবে না।"[৫১]

দ্বিতীয়: মতনে মু'তামাদসমূহ। এগুলো দুই প্রকারে বিভক্ত:

  1. মুতাকাদ্দিমিনদের মতনে মুতামাদ।
  2. মুতাআখখিরিনদের মতনে মুতামাদ।

মুতাকাদ্দিমিন অর্থ: বলা হয়ে থাকে তারা হলেন যারা আইম্মায়ে সালাস (আবু হানিফা, আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ) কে পেয়েছিলেন। আর মুতাআখ্খিরিন হল এ ইমামত্রয়ের সাক্ষাৎ পান নি। আরও বলা হয়: মুতাকাদ্দিমিন ও মুতাআখখিরিনদের মধ্যে সীমারেখা হল: তৃতীয় শতাব্দির অগ্রভাগ; মুতাকাদ্দিমিনগণ এর আগেকার, আর মুতাআখখিরিনগণ এর পরের।

অতএব, মুতাকাদ্দিমিনদের নিকট মতনে মু'তামাদ হল সেসব কিতাব যেগুলো সিনিয়র মাশাইখ ও আইনবিদেরা রচনা করেছেন; যেমন আবু বকর আল-খাসসাফ, আবু জাফর আল-তাহাবী, হাকিম শহীদ, আবুল হাসান আল-কারখী, আবু বকর আল-জাস্সাস ও অন্যান্যেরা।[৫২] এদের মতন ও মুখতাসারগুলো উসুলের মাসআলার সাথে সম্পর্কিত, এবং যাহেরুর রেওয়ায়াতসমূহ এসবের সত্যতা ও এদের বর্ণনাকারীদের বিশ্বস্ততা সম্পর্কিত।[৫৩] আল্লামা মুতিয়ী বলেন, "লাযেম হল উসুলের রেওয়ায়েতে যা কিছু আছে তা দিয়ে মাসআলা নেওয়া, এরপর মতন ও মুখতাসার থেকে মাসআলা নেওয়া; যেমন মুখতাসার আল-তাহাবী, মুখতাসার আল-কারখী, মুখতাসার আল-হাকিম আল-শাহিদ। কেননা এগুলো হল মুতাবার গ্রন্থ, মুতামাদ সঙ্কলন। উলামারা এগুলো ব্যবহার করতেন।"[৫৪]

আর মুতাআখখিরিনদের নিকট মতনে মুতামাদসমূহের ব্যাপারে ইবনে আবেদিন শামী বলেন: "সেগুলো হল বেদায়া, মুখতাসার আল-কুদুরী, মুখতার, নুকায়াহ, বেকায়া, কানয, আল-মুলতাকার মত মুতাবার মতনসমূহ। কেননা এগুলো যাহিরুর রিওয়ায়াহ থেকে মাযহাবকে ডেভেলপমেন্টের জন্য রচিত হয়েছে।[৫৫]

এই গ্রন্থগুলির একটি উপস্থাপনা এবং সংক্ষেপে তাদের কিছু ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:

মাযহাববিদদের জীবনচরিত পুস্তকাবলি[সম্পাদনা]

হানাফী মাযহাবের সুবিশাল গ্রন্থসম্ভারের একাংশ দখল করে রয়েছে মাযহাবের ওলামাদের জীবনচরিত (প্রা. তরজুমা) কিতাবগুলি, যার মধ্যে রয়েছে:

  • আখবার আবি হানিফা ওয়া আসহাবিহ — হুসাইন বিন আলী আল-সায়মারি
  • ওয়াফিয়াতুল আ'য়ান মিন মাযহাবিল নু'মান — নাজমুদ্দিন তারতুসি।
  • তাবাকাতুল ফুকাহাইল হানাফীয়াহ — সালাহুদ্দিন আবদুল্লাহ ইবনুল মুহান্দিস।
  • আল-তাযকিরা — তাকিউদ্দিন আল-মাকরিজি
  • নাযমুল জুমান ফি তাবাকাতি আসহাবি ইমামিনা আল-নু'মান — ইবনে দুকমাক
  • আল-জাওয়াহিরুল মুদ্বিয়াহ ফি তাবাকাতিল হানাফিয়্যাহ — আব্দুল কাদির বিন আবিল ওয়াফা আল-কুরাশি।
  • আল-মিরকাতুল ওয়াফিয়্যাহ ফি তাবাকাতিল হানাফিয়্যাহ — মাজদুদ্দিন ফিরোজাবাদী
  • তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ— ইবনে কাজী শুহবাহ
  • তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ — বদরুদ্দিন আইনি
  • তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ — ইমাম শামসুদ্দিন সাখাভি
  • তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ — আফিফুদ্দিন আল-শারওয়ানি।
  • তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ — শামসুদ্দিন আল-কুনুভী, যিনি ইবনে আজা নামে বেশি পরিচিত।
  • তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ — মুহাম্মদ আল-সাকাফি আল-হালাবি, যিনি ইবনে শিহনাহ সগীর নামে পরিচিত।
  • তাজ আল-তারাজিম ফি তাবাকাতিল হানাফিয়্যাহ — কাসিম বিন কুতলুবুগো
  • আল-তাবাকাতুল সুন্নিয়্যাহ ফি তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ — তাকিউদ্দিন আল-গাযযী (গাযা, ফিলিস্তিন)।
  • আল-আসমার আল-জানিয়্যাহ ফিল আসমাইল হানাফিয়্যাহ — মোল্লা আলী আল-কারী
  • খুলাসাতুল জাওয়াহির ফি তাবাকাতিল আইম্মাতিল হানাফিয়্যাহ আল-আকাবির — শামসুদ্দিন আল-দাগেস্তানি।
  • আল-ফাওয়াইদুল বাহিয়্যাহ ফি তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ — আব্দুল হাই লাখনভী

মাযহাবের প্রসিদ্ধ পরিভাষাসমূহ[সম্পাদনা]

ওলামা সংশ্লিষ্ট পরিভাষাসমূহ[সম্পাদনা]

এগুলো দুই প্রকার— শব্দক্রমিক ও বর্ণক্রমিক।

শব্দীয় পরিভাষা[সম্পাদনা]

  1. ইমাম, বা ইমামে আজম: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল আবু হানিফা রহ।
  2. ইমামে সানী: এর দ্বারা উদ্দেশিত হন ইমাম আবু ইউসুফ।
  3. ইমামে রব্বানী: ইমাম মুহাম্মদ আল-শায়বানী।
  4. শাইখাইন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য আবু হানিফা ও আবু ইউসুফ।
  5. তরফাইন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদ।
  6. সাহেবাইন (সহপাঠীদ্বয়): এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ।
  7. আইম্মায়ে সালাসা (ইমামত্রয়): এর দ্বারা উদ্দেশ্য— আবু হানিফা, আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ।
  8. আল-হাসান: ফিকহের কিতাবে আসলে হাসান বিন যিয়াদ লু'লুঈ উদ্দেশ্য। তাফসিরের কিতাবে আসলে হাসান বসরি উদ্দেশ্য।
  9. সালাফ: এর দ্বারা বোঝানো হয় ইমাম আবু হানিফা থেকে মুহাম্মদের মৃত্যু পর্যন্ত হানাফি মাযহাব গ্রহণকারী ওলামাগণ।
  10. খালাফ: এর দ্বারা ইমাম মুহাম্মদ থেকে আল-হালওয়ানির (মৃ ৪৪৮ হি) সময়কার হানাফি ওলামা।
  11. শাইখুনা: যদি এটি দুররে মুখতার কিতাবে আসে তবে উদ্দেশ্য হল, খাইরুদ্দিন রামাল্লি (রামাল্লা, ফিলিস্তিন)।
  12. আস-সদরুল আওয়াল: এর দ্বারা প্রথম তিন শতাব্দী উদ্দেশ্য।
  13. আল-হাকিম শহীদ: এর দ্বারা উদ্দেশ্য আল-কাফি প্রণেতা মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন আহমদ আল-মারুযী আল-বালখী (মৃ ৩৩৪হি)।
  14. আল-উস্তায: এর দ্বারা আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব আল হারেসি আল-সুবাযমুনি উদ্দেশ্য যিনি ফকিহ হারেসি নামেও প্রসিদ্ধ (মৃ ৩৪০ হি)।
  15. ইমামুল হুদা: এর দ্বারা তাফসিরে বাহরুল উলুমের লেখক ফকিহ আবুল লাইস সমরকন্দী উদ্দেশ্য হয় (মৃ ৩৭৩ হি / ৩৯৩ হি)।
  16. ফখরুল ইসলাম: এর দ্বারা ইমাম আলি বিন মুহাম্মদ আল-বযদভি উদ্দেশ্য। তাকে আবুল উসরও বলা হয় (মৃ ৪৮২ হি)।
  17. শামসুল আইম্মাহ: এর দ্বারা মাবসুতের লেখক শামসুদ্দিন সারাখসী উদ্দেশ্য (মৃ ৪৯০ হি)।
  18. আস-সদরুশ শহীদ: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল উমর বিন আব্দুল আজিজ বিন মাযাহ (মৃ ৫৩৬ হি)।
  19. মুফতিউস সাকালাইন: এর দ্বারা মানযুমাতুল ফিকহের প্রণেতা আবু হাফস উমর বিন মুহাম্মদ আল-নাসাফি উদ্দেশ্য (মৃ ৫৩৭ হি)।
  20. বুরহানুল ইসলাম: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাজিউদ্দিন আল-সারাখসি (মৃ ৫৪৪ হি)।
  21. ইমামযাদা: এর দ্বারা শারআতুল ইসলামের লেখক মুহাম্মদ বিন আবু বকর আল-জুগী উদ্দেশ্য (মৃ ৫৭৩ হি)।
  22. মালিকুল উলামা: এর দ্বারা বাদায়েউস সানাই' এর লেখক আলাউদ্দিন কাসানী উদ্দেশ্য (মৃ ৫৮৭ হি)।
  23. আল-হিসাম আল-আখসীকাসী: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন আল-মুন্তাখাব ফিল উসুল প্রণেতা মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন উমর বিন হুসামুদ্দিন (মৃ ৬৪৪ হি)।
  24. তাজুশ শরিয়ত: এর দ্বারা বেকায়া প্রণেতা মাহমুদ বিন আহ্মদ উবাইদুল্লাহ আল-মাহবুবি উদ্দেশ্য (মৃ ৬৭৩ হি)।
  25. মুতাআখখিরিন: শামসুদ্দিন হালওয়ানি থেকে হাফেযুদ্দিন আল-কাবির আল-বুখারির (মৃ ৬৯৩ হি) সময়কার সমস্ত ওলামায়ে আহনাফ।
  26. সদরুশ শরিয়ত: মুতলাকভাবে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল শরহে বেকায়া গ্রন্থকার উবাইদুল্লাহ বিন মাসউদ বিন মাহমুদ আল-মাহবুবি (মৃ ৭৪৫ বা ৭৪৭ হি)।
  27. আস-সদরুল আকবর বা বুরহানুল আইম্মাহ: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল আবদুল আযিয বিন উমর বিন মাযাহ।
  28. আস-সদরুস সাঈদ: এর দ্বারা তাজুদ্দিন আহমদ বিন আব্দুল আজিজ বিন উমর বিন মাযাহ উদ্দেশ্য।
  29. আল-মুহাক্কিক: এর দ্বারা সাধারণভাবে উদ্দেশ্য মুতাআখখিরিন হানাফি: কামাল ইবনুল হুমাম (মৃ ৮৬১ হি)।
  30. ইমামুল হারামাইন: ইহা দুইজন হানাফি ও শাফেয়ী ইমামের লকব। হানাফিজন হলেন আবুল মুযাফফর ইউসুফ আল-কাযী আল-জুরজানী। আর শাফেয়ীজন হলেন আবুল মাআলী আবদুল মালিক আল-জুয়াইনি।

বর্ণীয় পরিভাষা[সম্পাদনা]

  1. (س): এর দ্বারা আবু ইউসুফকে ইশারা করা হয়। আল-মওসেলি তার আল-মুখতার লিল-ফতোয়ায় এবং নাসাফি তার আল-ওয়াফি ও কানযুদ দাকাইকে উল্লেখ করেছেন।[৫৬]
  2. (ز): এদ্বারা ইমাম যুফারকে ইশারা করা হয়। আল-মাওসেলি এবং আল-নাসাফি তাদের পূর্বোক্ত বইগুলিতেও এ কথা উল্লেখ করেছেন।[৫৭]
  3. (م): মুহাম্মদ ইবন আল-হাসান আল-শাইবানী। প্রাগুক্ত।[৫৮]
  4. (سم): আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ। আল-মওসেলি আল-মুখতারে উল্লেখ করেছেন।[৫৯]
  5. (ح): ইবনে আবিদীন শামী কর্তৃক আল্লামা আল-হালাবিকে বোঝাতে দুররে মুখতার কিতাবের পাদটীকায় এমন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে।[৬০]
  6. (ط): ইবনে আবিদীন তার পাদটীকায় আল্লামা আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আল-তাহতাভীকে বোঝাতে ব্যবহার করেছেন।[৫৮]

কিতাব ও গ্রন্থনা সম্পর্কিত পরিভাষাসমূহ[সম্পাদনা]

সবচেয়ে প্রসিদ্ধগুলো নিম্নলিখিত হল:

  • মাসাইলুল উসুল বা যাহেরুর রেওয়ায়াত: এর অর্থ আবু হানিফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ ইবনে আল-হাসান আল-শায়বানীর থেকে বর্ণিত বিষয়গুলি। এর সাথে যোগ হতে পারেন ইমাম যুফার, হাসান ইবনে যিয়াদ এবং অন্যান্য ইমামগণ যারা আবু হানিফার কাছ থেকেই মাসআলা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু প্রণিধানযোগ্য হল প্রথম তিনজন বা বাকিদের কারও কারও বক্তব্য। এই মাসআলাগুলো ইমাম মুহাম্মদ তার ছয়টি বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছিলান সেগুলো হল: আসল, যিয়াদাত, জামে সগীর, জামে কবীর, সিয়ারে সগীর এবং সিয়ারে কবীর। এগুলোকে বলা হয় জাহিরুর রিওয়ায়াহ; কারণ এগুলি ইমাম মুহাম্মাদ থেকে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের রেওয়ায়েত সহকারে বর্ণিত হয়েছে। এবং মুতাওয়াতির কিবা মাশহুর সূত্রে হোক, এটি তার দ্বারা রচিত বলে সাব্যস্ত হয়ে গেছে।[৬১]
  • নাওয়াদির: এর দ্বারা জাহিরুর রিওয়ায়াতে অবর্ণিত আবু হানিফা ও তার সঙ্গীদের বর্ণিত বিষয়গুলিকে বোঝায়। এগুলো ইমাম মুহাম্মদের অন্যান্য কিতাবগুলিতে লিখিত হয়েছে; যেমন কায়সানিয়্যাত, রুকাইয়াত, হারুনিয়্যাত, জুরজানিয়াত, অথবা এগুলো ইমাম মুহাম্মদ ছাড়াও অন্য কারো কিতাবে লিপিবদ্ধ বোঝায়; যেমন ইমাম আবু ইউসুফের আমালি এবং হাসান বিন যিয়াদের মুজাররাদ। অর্থাৎ এরা জাহিরুর রিওয়ায়াতভিন্ন অন্য কিছু; কারণ এগুলি ইমাম মুহাম্মদ থেকে জাহিরুর রিওয়ায়তের সূত্রের মত সূত্রে বর্ণনা করা হয়নি।[৬২]
  • ফতোয়া, নাওয়াযিল বা ওয়াকিয়াত: এগুলি এমন বিষয় যা মুতাআখখিরিন মুজতাহিদগণ তাদেরকে প্রশ্ন করা সাপেক্ষে উত্তর সংবলিত করে রচনা করেছেন। এতে মুতাকাদ্দিমিনের কোন রিওয়ায়াত থাকে না।[৬৩]
  • আসল: যদি এটি এককভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে মুহাম্মদ বিন আল-হাসানের আল-মাবসুতকে বোঝানো হয়। কারণ এটিই জাহিরুর রিওয়ায়াতের প্রথম কিতাব। [৬৪]
  • আল-কিতাব: ফকীহগণ এটি মুখতাসারুল কুদুরি বোঝাতে ব্যবহার করেন।[৬৫]
  • আল-মুহিত: সাধারণভাবে বুরহানুদ্দিন আল-বুখারির আল-মুহিতুল বুরহানি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।[৬৬]
  • আল-মাবসূত: এটি ইমাম সারাখসির মাবসূত উদ্দেশ্য করতে ব্যবহৃত হয়। [৬৭]
  • আল-মুতুনুস সালাসা: এর দ্বারা তিনটি মতন (পাঠ্য) বোঝানো হয়: মুখতাসার আল-কুদ্দুরীর পাঠ্য, বেকায়া কিতাবের পাঠ্য, এবং কানযুদ দাকাইক এর পাঠ্য।[৬৮]
  • আল-মুতুনুল আরবাআ: এর দ্বারা বোঝানো হয় পূর্বের তিনটি মতন (পাঠ্য) এবং আল-মুখতারের অথবা মাজমাউল বাহরাইনের পাঠ্য।[৬৮]

উল্লেখযোগ্য হানাফি ওলামা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Hisham M. Ramadan (2006), Understanding Islamic Law: From Classical to Contemporary, Rowman Altamira, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৫৯১০৯৯১৯, pp. 24–29
  2. Gregory Mack, Jurisprudence, in Gerhard Böwering et al (2012), The Princeton Encyclopedia of Islamic Political Thought, Princeton University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৬৯১১৩৪৮৪০, p. 289
  3. Sunnite Encyclopædia Britannica (2014)
  4. "المذهب الحنفي… المذهب الأكثر انتشاراً في العالم"। مسجد صلاح الدين। ৫ জুন ২০১৫। ৭ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "المذهب الحنفي.. المذهب الأكثر انتشاراً"। بوابة الحركات الإسلامية। ১৭ নভেম্বর ২০১৪। ৭ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. Jurisprudence and Law – Islam Reorienting the Veil, University of North Carolina (2009)
  7. Siegbert Uhlig (2005), "Hanafism" in Encyclopaedia Aethiopica: D-Ha, Vol 2, Otto Harrassowitz Verlag, আইএসবিএন ৯৭৮-৩৪৪৭০৫২৩৮২, pp. 997–99
  8. Abu Umar Faruq Ahmad (2010), Theory and Practice of Modern Islamic Finance, আইএসবিএন ৯৭৮-১৫৯৯৪২৫১৭৭, pp. 77–78
  9. আহমদ আলি, ড. মুহাম্মদ ইবরাহিম; ইবনে আবদুল আজিজ আল-হিন্দী, আলি বিন মুহাম্মদ; ও অন্যান্য (তুর্কি মুহাম্মদ হামিদ আল-নাসর) (২০১২)। "১"। المذهب عند الحنفية والمالكية والشافعية والحنابلة। কুয়েত: আল-ওয়াঈ আল-ইসলামি। পৃষ্ঠা ৩৬-৬১। 
  10. আহমদ আলি, ড. মুহাম্মদ ইবরাহিম; ইবনে আবদুল আজিজ আল-হিন্দী, আলি বিন মুহাম্মদ; ও অন্যান্য (তুর্কি মুহাম্মদ হামিদ আল-নাসর) (২০১২)। "১"। المذهب عند الحنفية والمالكية والشافعية والحنابلة। কুয়েত: আল-ওয়াঈ আল-ইসলামি। পৃষ্ঠা ৬২। 
  11. انظر: المذهب عن الحنفية، ص: 66 وما بعدها.
  12. انظر: المدخل إلى مذهب الإمام أبي حنيفة، ص: 106.
  13. انظر: المدخل إلى مذهب الإمام أبي حنيفة، ص: 106.
  14. انظر: المذهب عن الحنفية، ص: 37.
  15. انظر: المذهب عن الحنفية، ص: 85.
  16. شرح منظومة عقود رسم المفتي - ضمن رسائل ابن عابدين 24/1.
  17. انظر: شرح منظومة عقود رسم المفتي 24/1، وانظر: المذهب عند الحنفية، ص: 87-88.
  18. انظر: المنار للنسفي، ص:١، ونور الانوار للملأ احمد جيون، ص:٧.
  19. انظر: قمر الاقمار حاشية نور الانوار لمحمد عبد الحليم، ص: ٨، حاشية:٤.
  20. انظر: أبو حنيفة: آراؤه وفقهه، ص: 265، المدخل لدراسة الشريعة الإسلامية، ص: 158.
  21. مناقب الإمام الأعظم 80/1.
  22. مناقب الإمام الأعظم 82/1.
  23. مناقب الإمام الأعظم 89/1، 90.
  24. انظر: تاريخ المذاهب الإسلامية، ص: 355.
  25. نور الانوار في شرح المنار (আরবি ভাষায়)। حاشية: محمد عبد الحليم। পৃষ্ঠা ٧। 
  26. انظر: المدخل إلى مذهب الإمام أبي حنيفة، ص: 118.
  27. انظر: المذهب عن الحنفية، ص: 45.
  28. انظر: أبو حنيفة: آراؤه وفقهه، ص: 337.
  29. تأسيس النظر، ص: 99.
  30. جامع بيان العلم وفضله لابن عبد البر 1080/2. وانظر: تاريخ الفقه الإسلامي لإلياس دردور، ص: 371.
  31. نور الانوار في شرح المنار (আরবি ভাষায়)। حاشية: محمد عبد الحليم। পৃষ্ঠা ٧। 
  32. انظر: المدخل إلى مذهب أبي حنيفة، ص: 118.
  33. قمر الاقمار حاشية نور الانوار لمحمد عبد الحليم،ص:٩، حاشية:١١.
  34. انظر: المذهب عن الحنفية، ص: 42، والمدخل إلى مذهب أبي حنيفة، ص: 118، وأبو حنيفة: آراؤه وفقهه، ص: 350.
  35. الطبقات السنية في تراجم الحنفية، ص: 146.
  36. نور الانوار لشرح المنار للملا احمد جيون، ص: ٩.
  37. انظر: أبو حنيفة: آراؤه وفقهه، ص: 396، والمدخل إلى مذهب الإمام أبي حنيفة، ص: 118.
  38. المرغيناني: كتاب الهداية في شرح بداية المبتدي، ج:٣، ص:٧٧.
  39. انظر: أبو حنيفة: آراؤه وفقهه، ص: 267.
  40. كشف الأسرار للبخاري 559/2، طبقات الحنفية 417/2، الإنصاف للدّهلوي، ص: 91.
  41. انظر: كشف الأسرار 4/4.
  42. انظر: أبو حنيفة: آراؤه وفقهه، ص: 389.
  43. انظر: المدخل إلى مذهب الإمام أبي حنيفة، ص: 424.
  44. رسم المفتي ১৩/১, والنافع الكبير لمن يطالع الجامع الصغير للكنوي، পৃ: ১১.
  45. انظر: رسم المفتي 13/1، والنافع الكبير، ص: 11.
  46. انظر: النافع الكبير، ص: 11.
  47. النافع الكبير, পৃ: ১৫.
  48. إرشاد أهل الملّة إلى إثبات الأهلّة للمطيعي الحنفي, পৃ: ৩৪৯-৩৫০, والمذهب عند الحنفية, পৃ: ১০৪।
  49. أبو حنيفة: آراؤه وفقهه, পৃ: ২৪৪
  50. رسم المفتي ১/২০, ২১
  51. انظر: رسم المفتي 20/1.
  52. انظر: التعليقات السنية على الفوائد البهية للكنوي، ص: 107.
  53. انظر: النافع الكبير، ص: 4.
  54. إرشاد أهل الملة، ص: 351.
  55. رسم المفتي 1/ 36، 37.
  56. انظر: المذهب الحنفي 1/ 330.
  57. انظر: المذهب الحنفي 1/ 330.
  58. انظر: المذهب الحنفي 1/ 331.
  59. انظر: المذهب الحنفي 1/ 330.
  60. انظر: الفتح المبين، ص: 16، والمذهب الحنفي 1/ 329.
  61. انظر: شرح منظومة عقود رسم المفتي 1/ 16.
  62. انظر: رسم المفتي 1/ 16، 17، ومقدمة (عمدة الرعاية في حل شرح الوقاية)، ص: 9.
  63. انظر: الفتح المبين، ص: 12.
  64. انظر: رسم المفتي 1/ 19، مقدمة (عمدة الرعاية)، ص: 9.
  65. انظر: قواعد الفقه لمحمد عميم الإحسان المجدّدي البركتي، ص: 439.
  66. انظر: المذهب الحنفي 1/ 341.
  67. انظر: رسم المفتي 1/ 21.
  68. انظر: مقدمة (عمدة الرعاية)، ص: 10.