সুদান

স্থানাঙ্ক: ১৫° উত্তর ৩২° পূর্ব / ১৫° উত্তর ৩২° পূর্ব / 15; 32
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুদানের প্রজাতন্ত্র

جمهورية السودان
Jumhūriyyat as-Sūdān
সুদানের জাতীয় পতাকা
পতাকা
সুদানের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: "Al-Nasr Lana"(আরবি)
"Victory is Ours" (ইংরেজি)
"জয়লাভ আমাদের" (বাংলা)
Sudan in dark green, disputed regions in light green.
Sudan in dark green, disputed regions in light green.
সুদানের অবস্থান
রাজধানীখার্তুম
বৃহত্তম নগরীOmdurman
সরকারি ভাষাআরবি
জাতীয়তাসূচক বিশেষণসুদানিজ
সরকারপ্রবাসী সরকার
আবদেল ফাত্তাহ্ এল-বুরহান
আবদালা হামদক
আইন-সভামজলিস
রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিষদ
জাতীয় বিধানসভা
প্রতিষ্ঠান
২০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ
১৫০৪
১৮২১
• স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে
১লা জানুয়ারি ১৯৫৬
৯ই জানুয়ারি ২০০৫
আয়তন
• মোট
১৮,৮৬,০৬৮ কিমি (৭,২৮,২১৫ মা) (15th)
জনসংখ্যা
• 2017 আনুমানিক
38,647,803 (35th)
• 2008 আদমশুমারি
30,894,000 (disputed) [১]
• ঘনত্ব
২১.৩/কিমি (৫৫.২/বর্গমাইল)
জিডিপি (পিপিপি)2017 আনুমানিক
• মোট
$186.715 billion[২]
• মাথাপিছু
$4,578[২]
জিডিপি (মনোনীত)2017 আনুমানিক
• মোট
$115.874 billion[২]
• মাথাপিছু
$2,841[২]
জিনি (2009)35.3[৩]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (2015)বৃদ্ধি 0.490[৪]
নিম্ন · 165th
মুদ্রাসুদানিজ পাউন্ড (SDG)
সময় অঞ্চলইউটিসি+২ (কেন্দ্রীয় আফ্রিকার সময়)
কলিং কোড২৪৯
ইন্টারনেট টিএলডি.sd

সুদান (ইংরেজি: /sˈdɑːn/ or /sˈdæn/; আরবি: السودان, প্রতিবর্ণীকৃত: as-Sūdān) উত্তর আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম খার্তুম। সরকারি ভাবে এর নাম সুদান প্রজাতন্ত্র (আরবি: جمهورية السودان, প্রতিবর্ণীকৃত: Jumhūriyyat as-Sūdān)। এটি এলাকার দিক থেকে আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ। এর উত্তরে মিশর, উত্তর-পূর্বে লোহিত সাগর, পূর্বে ইরিত্রিয়াইথিওপিয়া,দক্ষিণে দক্ষিণ সুদান,দক্ষিণ-পূর্বে কেনিয়াউগান্ডা ,দক্ষিণ-পশ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রমধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিমে চাদ এবং উত্তর-পশ্চিমে লিবিয়া অবস্থিত।

সুদান পৃথিবীর সবচেয়ে অন্তর্দন্দ্ববহুল দেশগুলোর অন্যতম। এর উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক ভাবে অগ্রসর এলাকার অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। দক্ষিণাঞ্চলের অনগ্রসর এলাকার অধিবাসীদের অধিকাংশই অমুসলিম। সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, ও রাজনৈতিক বিভাজন ও মতবিরোধের ফলে সুদানে আধুনিক কালের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীন নগর কেরমাতে পশ্চিমের ডেফুফা নামে পরিচিত বড় মাটির ইটের মন্দির

৬০ হাজার বছর আগেও সুদানে মানব বসতি ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে এমনই প্রমাণ মেলে। প্রায় আট হাজার বছর আগে এ অঞ্চলে স্থায়ীভাবে মানববসতি শুরু হয়। তারা গৃহে পশুপালন করত, শস্য ফলাতো ও মাছ ধরত।

কুশ রাজ্য (আনুমানিক ১০৭০ খ্রিষ্টপূর্ব-৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ)[সম্পাদনা]

প্রাচীনকাল থেকেই সুদানের সাথে মিসরের শক্তিশালী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিল। সুদানে তখন সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল ‘কুশ’। কুশের রাজধানী ছিল ‘নাপাটা’। ৭৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কুশ রাজা কাস্তা মিসর দখল করে নেন। পরে তার উত্তরাধিকারীরা ওই অঞ্চলে প্রায় ২০০ বছর কুশ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখে। ৬৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সর্বশেষ কুশ রাজা মিসর থেকে রাজত্ব গুটিয়ে নাপাটে ফিরে আসেন। 

৫৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এক মিসরীয় সেনা নাপাটার পতন ঘটান। তিনি সেখানে মিসর থেকে পৃথক মেরোটিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত তা টিকে ছিল। মিসর থেকে পৃথক সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হলেও মেরোটিক শাসকদের মধ্যে ফেরউন শাসকদের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। মেরোটিকরাও পিরামিড নির্মাণ করেছিল।

ষষ্ঠ শতকে নুবিয়ানরা নীল নদের পশ্চিম তীরে আধিপত্য বিস্তার করে। এ সময় তারা মেরোটিকদের সাথে যৌথ জাতিসত্তা গড়ে তোলে। 

মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান নুবিয়ান রাজ্য (সি. 350-1500)[সম্পাদনা]

পঞ্চম শতাব্দীর শুরুতে ব্লেমিয়েস (পূর্ব মরুভূমির জনমানুষ) উচ্চ মিশর এবং নিম্ন নুবিয়ায় একটি স্বল্পস্থায়ী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, সম্ভবত তালমিস ( কালাবশা যা বর্তমানের মিশরীয় আসওয়ান শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ) এর চারপাশে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল, কিন্তু 450 সালের আগে নোবাটিয়ানরা তাদের নীল উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করেছিল। শেষ পর্যন্ত নোবাটিয়ানরা নিজস্ব একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, নোবাটিয়া নামে । খ্রীষ্টধর্ম প্রবর্তনের পূর্বে মানুষের মধ্যে আইসিস দেবীর উপাসনা বিদ্যমান ছিল যার মন্দিরটি ফিলাই মন্দির কমপ্লেক্স এ সংরক্ষিত।

ষষ্ঠ শতকে মেরোটিক রাজ্যের তিনটি প্রদেশে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থান ঘটে। আনুমানিক ৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে বাইজানটাইন সম্রাজ্ঞী থিওডোরা নুবিয়াতে একদল মিশনারি পাঠান। এর মাধ্যমেই সেখানে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রসার ঘটে।  

আরব বিজয়ীরা নুবিয়াতে বহুবার সেনা অভিযান পরিচালনা করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত মিসরের আরব প্রধান নুবিয়ানদের সাথে একটি চুক্তি করেন। এ চুক্তি-পরবর্তী ৬৮৭ বছর টিকে ছিল। এ সময় দুই অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ অনেক বেড়ে যায়। পারস্পরিক বিবাহ, আরব বণিক ও বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে সেখানে ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে। ১০৯৩ সালে সর্বপ্রথম একজন মুসলিম শাসক নুবিয়ার ক্ষমতায় আসেন। 

সেনার এবং দারফুরের ইসলামিক রাজ্য (সি. 1500-1821)[সম্পাদনা]

পঞ্চদশ শতকে এ অঞ্চলে ফাঞ্জ সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ষোড়শ শতকে এর আরো বিস্তৃতি ঘটে। তবে ধীরে ধীরে এ সালতানাত দুর্বল হতে থাকে। ১৮২০ সালে মিসরের রাজা মুহাম্মদ আলি সুদান দখলের জন্য প্রায় চার হাজার সেনা পাঠান। এতে দুর্বল ফাঞ্জ সালতানাতের পতন ঘটে। আত্মসমর্পণ করেন শেষ ফাঞ্জ শাসক সপ্তম বাদি।

আধুনিক মিসরীয় ইউনিয়ন[সম্পাদনা]

১৮২০ সালে মিসরের ওসমানীয় শাসক মুহাম্মদ আলি পাশা সুদান দখল করেন। নামেমাত্র ওসমানীয়দের অধীনে থাকলেও পাশা মূলত নিজেকে মিসরের স্বাধীন শাসক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পাশা তার ছেলে ইসমাইলকে সুদান শাসনের দায়িত্ব দেন। ইসমাইল ও তার পরবর্তী শাসকরা সুদানে বহু অবকাঠামো গড়ে তোলেন।

১৮৭৯ সালে ইসমাইল পদত্যাগে বাধ্য হন এবং ইসমাইলের ছেলে প্রথম তৌফিক বাবার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে তৌফিকের দুর্নীতির কারণে সেখানে অল্প দিনের মধ্যেই একটি বিপ্লব হয়। তৌফিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ব্রিটিশদের সাহায্য কামনা করেন। এ সুযোগে ব্রিটিশরা ১৮৮২ সালে মিসর দখল করে নেয়। স্বাভাবিকভাবে সুদানও ব্রিটিশদের দখলে চলে আসে। তখন শুরু হয় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। এতে নেতৃত্ব দেন মুহাম্মদ আহমদ ইবনে আবদ আল্লাহ। ১৮৮৫ সালে সুদানে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল গর্ডনের পতন হয়। সুদান থেকে প্রত্যাহার করা হয় মিসরীয় ও ব্রিটিশ সৈন্য।

আবদ আল্লাহর শাসন[সম্পাদনা]

জিহাদি চেতনায় জনগণকে সংগঠিত করলেও বিপ্লবের পর তিনি দেশটিতে কোনো ইসলামি আইন চালু করেননি। তার উদ্দেশ্য ছিল অনেকটা রাজনৈতিক। তিনি ছিলেন এক ধরনের সামরিক শাসক। তবে ক্ষমতায় আরোহণের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে তিনি মারা যান। এরপর ক্ষমতায় আসেন আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ। তিনি নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেন। এ খলিফার শাসনও ছিল স্বৈরাচারীর মতো। তার নির্দেশে ১৮৮৭ সালে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্য ইথিওপিয়ায় অভিযান চালায়। ১৮৮৯ সালে তারা মিসরেও অভিযান চালায়। তবে মিসর অভিযানে পরাজিত হয় তারা। ব্রিটিশ বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মিসরীয়রা হটিয়ে দেয় সুদানিদের। ১৮৯৩ সালে বেলজিয়ান ও ইতালিয়ানরা ইথিওপিয়া থেকে সুদানিদের হটাতে সহায়তা করে।

ইঙ্গ-মিসরীয় সুদান[সম্পাদনা]

১৮৯০ সালে ব্রিটিশরা সুদানে আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। বহু চেষ্টার পর ব্রিটিশরা ১৮৯৯ সালে ইঙ্গ-মিসরীয় সুদান প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে সুদান শাসনের ভার এক মিসরীয় গভর্নরের হাতে ন্যস্ত হয়। ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শে এ গভর্নর নিয়োগ করা হতো। সুদান এ সময় মূলত ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯২৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা সুদানকে দু’টি ভাগে ভাগ করে শাসন করত। দেশটির উত্তরাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এবং দক্ষিণাঞ্চলে খ্রিষ্টানদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখে। ১৯৫৬ সালে সুদান ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

স্বাধীনতা ও গৃহযুদ্ধ[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই মিসরীয়রা দাবি করতে থাকে, মিসর ও সুদান এক রাষ্ট্র হবে। কিন্তু মিসরীয়রা শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করে, সুদানের ওপর মিসরীয় সার্বভৌমত্ব দাবি বাতিল না করলে ব্রিটিশরা স্বাধীনতাকে বিলম্বিত করবে। এ উপলব্ধির পর ১৯৫৪ সালে মিসরীয়রা ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি করে। ওই চুক্তি অনুসারে ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি সুদান স্বাধীনতা লাভ করে। ইসমাইল আল আজহারি সুদানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও আধুনিক সুদানের প্রথম সরকারের নেতৃত্ব দেন।

তবে স্বাধীনতার এক বছর আগে ১৯৫৫ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলের আশঙ্কা, স্বাধীন সুদানে নেতৃত্ব দেবে উত্তরের মুসলমান জনগোষ্ঠী। কারণ উত্তরাঞ্চলের মুসলমানদের সাথে মিসরসহ আরব বিশ্বের সুসম্পর্ক রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দুই অঞ্চলে দুই ধরনের প্রশাসন চালুর দাবি জানায় ব্রিটিশরা।

১৯৫৫ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলে। গৃহযুদ্ধ চলতে থাকলে স্বাধীনতার পরপরই একজন সামরিক কর্মকর্তা দেশটির ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৭২ সালে এক চুক্তিতে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের অবসান হলেও ১৯৮৩ সালেই আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয় দেশটিতে।

সাম্প্রতিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৮৯ সালের ৩০ জুন কর্নেল ওমর আল বশির একদল সামরিক কর্মকর্তার সমর্থন নিয়ে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থান ঘটান। তিনি দেশটিতে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন এবং ইসলামি আইন চালু করেন।

ক্ষমতা দখলের পরপরই তিনি গেরিলাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। ১৯৯৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি নিজেকে সুদানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। সে বছর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও হয়। একমাত্র প্রার্থী ছিলেন তিনি নিজেই। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।

প্রেসিডেন্ট বশির শান্তিপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে নানা পদক্ষেপ নেন। তিনি ২০০৫ সালের ৯ জানুয়ারি একটি চুক্তি করেন। চুক্তি অনুসারে চুক্তির পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চল স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে এবং স্বাধীনতার জন্য ছয় বছর পর গণভোট হবে। কিন্তু চুক্তির পর দক্ষিণের এক নেতা বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলে দেশটিতে আবার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ দেশটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তবে এ বাহিনী মোতায়েনের বিরোধিতা করেন প্রেসিডেন্ট বশির।

দারফুর সমস্যা[সম্পাদনা]

১৯৭০ সালে দারফুরের পশ্চিমাঞ্চলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ ঘটনার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহীরা এবং দারফুরের জনতা কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে। সরকার এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করলে দারফুরের কয়েক লাখ লোক পার্শ্ববর্তী দেশ শাদে আশ্রয় নেয়। ১৯৯৪ সালে দারফুরে সরকারি বাহিনী বিজয় ঘোষণা করে। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র দারফুরে গণহত্যার অভিযোগ আনে। ২০০৬ সালের ৫ মে দারফুর শান্তিচুক্তি হয়। কিন্তু চুক্তির পরও সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।

সরকারপদ্ধতি[সম্পাদনা]

সুদান জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রেসিডেন্সিয়াল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং সেনাপ্রধান হলেন প্রেসিডেন্ট। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার ও নির্বাচিত দু’টি কক্ষের। বিচার বিভাগ স্বাধীন। 

দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ১৯৮৯ সালে বিপ্লবের পর দেশটিতে নতুন আঙ্গিকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ১৯৯৩ সালে সুদান একদলীয় সরকারের দেশে পরিণত হয়। সুদানে নিম্নকক্ষের সদস্য ৪৫০ জন এবং উচ্চকক্ষের সদস্য ৫০ জন।

পররাষ্ট্রনীতি[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তেমন ভালো সম্পর্ক নেই সুদানের। ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। আলকায়েদার ঘাঁটি রয়েছে সন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র সুদানের রাজধানী খার্তুমে মিসাইল হামলা চালায়। 

সুদানি তেলের অন্যতম গ্রাহক চীন। স্বাভাবিকভাবেই দেশটির সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে সুদানের। তবে প্রতিবেশী দেশ শাদ ২০০৫ সালে সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০৮ সালে সুদান শাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।  

সামরিক শক্তি[সম্পাদনা]

রাষ্ট্রের নিয়মিত বাহিনীর নাম ‘সুদানিস পিপলস আর্মড ফোর্সেস’। এর মোট সদস্য দুই লাখ। সেনা, নৌ, বিমান, সীমান্ত ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত আর্মড ফোর্সেস বাহিনী। সুদানের এই বাহিনীটি অত্যন্ত দক্ষ।

আইনব্যবস্থা[সম্পাদনা]

দেশটির বিচারব্যবস্থা ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত। ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে পুরো উত্তরাঞ্চলে শরিয়াহ আইন চালু করা হয়। তবে চুক্তি অনুসারে দক্ষিণাঞ্চলে এ ব্যবস্থা চালু হয়নি।

ভৌগোলিক অবস্থান[সম্পাদনা]

অবস্থানগত দিক থেকে দেশটির অবস্থান উত্তর আফ্রিকায়। লৌহিত সাগরের সাথে দেশটির ৮৫৩ কিলোমিটার উপকূল রয়েছে। আয়তনে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় ও বিশ্বে দশম সুদান। এর আয়তন ২৫ লাখ ৫ হাজার ৮১০ বর্গকিলোমিটার। সুদনের উত্তরে মিসর, পূর্বে ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে কেনিয়া ও উগান্ডা, দক্ষিণ-পশ্চিমে কঙ্গো ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিমে শাদ ও উত্তর-পশ্চিমে লিবিয়া। এর বেশির ভাগ ভূমি সমতল। তবে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে পর্বতমালা। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ নীলের একটি অংশ সুদানের রাজধানী খার্তুমের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। 

সুদানের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। উত্তরে নুবিয়ান অঞ্চলে সামান্য মরুভূমি রয়েছে। তবে দেশটিতে মরুকরণ অব্যাহত রয়েছে। 

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও সুদানের অর্থনীতিতে সমস্যা লেগেই আছে। ফলে আইএমএফ’র পরামর্শে ১৯৯৭ সালে সুদান সামষ্টিক অর্থনীতিতে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালে দেশটি অপরিশোধিত তেল রফতানি শুরু করে। সে বছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রফতানি আয় সম্ভব হয়। তেল রফতানির ফলে ২০০৩ সালে দেশটিতে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ১ শতাংশে। 

বর্তমানে দেশটির প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছে তেল। আর দেশটিতে তেলের উৎপাদন দিন দিন নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। তেল রফতানি বাড়ানোর ফলে ২০০৭ সালে সুদানের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৯ শতাংশে।

পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, স্বর্ণ, সিলভার, ক্রোমি, অ্যাসবেস্টস, ম্যাঙ্গানিজ, জিপসাম, জিঙ্ক, লোহা, সীসা, ইউরেনিয়াম, কপার, কোবাল্ট, গ্রানাইট, নিকেল ও তামাসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ সুদান। 

তবে দেশটির অর্থনীতির অন্যতম খাত হচ্ছে কৃষি। উৎপাদক শ্রেণীর ৮০ শতাংশই এ পেশায় নিয়োজিত। দেশের মোট জাতীয় আয়ের ৩৯ শতাংশের জোগান আসে কৃষি থেকে। কিন্তু সেচের ক্ষেত্রে এখনো সুদানিরা বেশির ভাগ সময় বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। ধারাবাহিক অস্থিতিশীলতার কারণে কৃষিপণ্যের দাম এখানো খুব বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুদানের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি।

জনসাংখ্যিক তথ্য[সম্পাদনা]

১৯৯৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে সুদানের জনসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক তথ্যে দেশটির জনসংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখ বলা হয়। সুদানের বহু মানুষ অন্য দেশগুলোতে বসতি স্থাপন করলেও বহু মানুষ আবার এ দেশেও বসতি স্থাপন করেছে। ২০০৮ সালের ওয়ার্ল্ড রিফিউজি সার্ভে অনুসারে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সুদানে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার ৫০০ জন। তাদের বেশির ভাগ এসেছে প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়া, শাদ, ইথিওপিয়া ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র থেকে। এসব শরণার্থীকে জাতিসংঘ সাহায্য করতে চাইলে অসহযোগিতা করে সুদানি সরকার।

উপজাতি[সম্পাদনা]

সুদানে প্রায় ৫৯৭টি জাতির বসবাস করে। তারা প্রায় ৪০০ ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। প্রধান জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে আরবীয়। তাদের প্রায় সবাই মুসলমান। উত্তরাঞ্চলে তাদের বসবাস। কালো সুদানিদের বেশির ভাগই খ্রিষ্টান। তারা সাধারণত দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করে। এ দু’টি প্রধান জাতি আবার ছোট ছোট কয়েক শ’ উপজাতিতে বিভক্ত। 

এ ছাড়া সুদানে রয়েছে মরক্কান, আলজেরিয়ান, ভাষাভাষী আরব, নুবিয়ান, মিসরীয় ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠীর লোক। সুদানি আরবদের বেশির ভাগই ভাষাভাষী আরব, জাতিগত নয়। এ অঞ্চলের আদি অধিবাসী হচ্ছে নুবিয়ানরা। তাদের ইতিহাস মিসরীয়দের সাথে জড়িত। 

ভাষা[সম্পাদনা]

সুদানের সরকারি ভাষা আরবি ও ইংরেজি। উত্তরাঞ্চলের প্রধান ভাষা আরবি। এ ছাড়া পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য সুদানেও আরবি প্রচলিত। তবে এসব এলাকায় উপজাতীয় ভাষাও প্রচলিত রয়েছে। সুদানের সব অঞ্চলেই শিক্ষিত উপজতীয়রা ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করেন। সুদানে বর্তমানে দেশটিতে ১৩৩টি ভাষা টিকে আছে।

ধর্ম[সম্পাদনা]

দেশটির ৭০ শতাংশ জনগণই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আদিবাসী ২৫ শতাংশ ও মাত্র ৫ শতাংশ খ্রিষ্টান। এখানকার খ্রিষ্টানরা রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী। সব মুসলমানই সুন্নি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Discontent over Sudan census"News24। Cape Town। Agence France-Presse। ২১ মে ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১১ 
  2. "Sudan"। International Monetary Fund। 
  3. "Gini Index"। World Bank। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১১ 
  4. "2016 Human Development Report" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৭ 

[পূর্ণ তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]