পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Sammay Sarkar (আলোচনা | অবদান)
দেয়াল, তন্তু, নোড এবং শুন্যস্থান
ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা
Sammay Sarkar (আলোচনা | অবদান)
তথ্যসূত্র
ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{কাজ চলছে/২০১৮}}
{{কাজ চলছে/২০১৮}}


'''পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব''' হচ্ছে [[মহাবিশ্ব|মহাবিশ্বের]] এমন একটি গোলাকার অঞ্চল যার অন্তর্গত বস্তুসমূহ [[পৃথিবী]] থেকে বর্তমান সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। [[স্থানের মেট্রিক সম্প্রসারণ|মহাজাগতিক প্রসারণের]] শুরু থেকে কেবল এই অঞ্চলে অবস্থিত বস্তুসমূহের নির্গত [[তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ]] পৃথিবীতে পৌঁছানোর সময় পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মোট বালুকণার সংখ্যার চেয়েও বেশি [[তারা]] সহ অন্তঃত দুই লক্ষ কোটি [[ছায়াপথ]] পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে অবস্থিত। মহাবিশ্ব [[আইসোট্রপি|সর্বত্র প্রতিসম]] ধরে নিলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সীমানা সবদিকেই প্রায় সমান দূরত্বে বিদ্যমান। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে পর্যবেক্ষক-কেন্দ্রিক একটি [[গোলক|গোলাকার ক্ষেত্র]]। মহাবিশ্বের প্রতিটি স্থানের নিজস্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব রয়েছে, যা [[ভূকেন্দ্রিক মডেল|পৃথিবী-কেন্দ্রিক]] এলাকাটির সাথে অধিক্রমণ করতে পারে।
'''পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব''' হচ্ছে [[মহাবিশ্ব|মহাবিশ্বের]] এমন একটি গোলাকার অঞ্চল যার অন্তর্গত বস্তুসমূহ [[পৃথিবী]] থেকে বর্তমান সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। [[স্থানের মেট্রিক সম্প্রসারণ|মহাজাগতিক প্রসারণের]] শুরু থেকে কেবল এই অঞ্চলে অবস্থিত বস্তুসমূহের নির্গত [[তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ]] পৃথিবীতে পৌঁছানোর সময় পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মোট বালুকণার সংখ্যার চেয়েও বেশি [[তারা]]<ref name="SU-20020201">{{cite web |last=Mackie |first=Glen |title=To see the Universe in a Grain of Taranaki Sand |url=http://astronomy.swin.edu.au/~gmackie/billions.html |date=1 February 2002 |work=[[Centre for Astrophysics and Supercomputing]] |accessdate=28 January 2017 }}</ref><ref>{{Cite web|url=http://www.cnn.com/2003/TECH/space/07/22/stars.survey/|title=CNN.com - Star survey reaches 70 sextillion - Jul. 23, 2003|website=www.cnn.com|access-date=2017-09-17}}</ref><ref>{{Cite news|url=http://www.npr.org/sections/krulwich/2012/09/17/161096233/which-is-greater-the-number-of-sand-grains-on-earth-or-stars-in-the-sky|title=Which Is Greater, The Number Of Sand Grains On Earth Or Stars In The Sky?|work=NPR.org|access-date=2017-09-17|language=en}}</ref> সহ অন্তঃত দুই লক্ষ কোটি [[ছায়াপথ]] পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে অবস্থিত<ref name="Conselice">{{cite journal|title=The Evolution of Galaxy Number Density at z < 8 and its Implications|author=Christopher J. Conselice et al|journal=The Astrophysical Journal|volume=830|issue=2|year=2016|arxiv=1607.03909v2|bibcode= 2016ApJ...830...83C|doi=10.3847/0004-637X/830/2/83|pages=83}}</ref><ref name="NYT-20161017">{{cite news |last=Fountain |first=Henry |title=Two Trillion Galaxies, at the Very Least |url=https://www.nytimes.com/2016/10/18/science/two-trillion-galaxies-at-the-very-least.html |date=17 October 2016 |work=[[New York Times]] |accessdate=17 October 2016 }}</ref>। মহাবিশ্ব [[আইসোট্রপি|সর্বত্র প্রতিসম]] ধরে নিলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সীমানা সবদিকেই প্রায় সমান দূরত্বে বিদ্যমান। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে পর্যবেক্ষক-কেন্দ্রিক একটি [[গোলক|গোলাকার ক্ষেত্র]]। মহাবিশ্বের প্রতিটি স্থানের নিজস্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব রয়েছে, যা [[ভূকেন্দ্রিক মডেল|পৃথিবী-কেন্দ্রিক]] এলাকাটির সাথে অধিক্রমণ করতে পারে।


{{Infobox
{{Infobox
৫২ নং লাইন: ৫২ নং লাইন:
}}
}}


এক্ষেত্রে ''পর্যবেক্ষণযোগ্য'' শব্দটি দ্বারা কোন বস্তুর আলোক বা অন্যান্য তথ্য শনাক্ত করার সম্ভাব্যতা বা আদৌ পর্যবেক্ষনের মত কিছু উপস্থিত কিনা তা বোঝায় না, বরং [[আলোর গতিবেগ|আলোর গতি]] থেকে উদ্ভুত প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতাকেই নির্দেশ করে। যেহেতু কোন সংকেতই আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করতে পারে না, সেহেতু [[মহাবিশ্বের বয়স|মহাবিশ্বের বয়সের]] সময়কালে (২০১৫ সালে আনুমানিক ১৩.৭৯৯×১০<sup>৯</sup> বছর) আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, তার অধিক দূরত্বে অবস্থিত বস্তুুসমূহ কোন উপায়েই পৃথিবী হতে শনাক্ত করা যাবে না। তাছাড়া সম্ভবত কিছু বহির্জাগতিক বস্তু আলোর অধিক গতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এজাতীয় বস্তুগুলোও পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যাবে না।
এক্ষেত্রে ''পর্যবেক্ষণযোগ্য'' শব্দটি দ্বারা কোন বস্তুর আলোক বা অন্যান্য তথ্য শনাক্ত করার সম্ভাব্যতা বা আদৌ পর্যবেক্ষনের মত কিছু উপস্থিত কিনা তা বোঝায় না, বরং [[আলোর গতিবেগ|আলোর গতি]] থেকে উদ্ভুত প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতাকেই নির্দেশ করে। যেহেতু কোন সংকেতই আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করতে পারে না, সেহেতু [[মহাবিশ্বের বয়স|মহাবিশ্বের বয়সের]] সময়কালে (২০১৫ সালে আনুমানিক ১৩.৭৯৯×১০<sup>৯</sup> বছর<ref name="Planck 2015"/>) আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, তার অধিক দূরত্বে অবস্থিত বস্তুুসমূহ কোন উপায়েই পৃথিবী হতে শনাক্ত করা যাবে না। তাছাড়া সম্ভবত কিছু বহির্জাগতিক বস্তু আলোর অধিক গতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এজাতীয় বস্তুগুলোও পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যাবে না।


কার্যত পর্যবেক্ষণযোগ্যতার সীমা মহাবিশ্বের বয়স অনুসারে ১৩.৭৯৯×১০<sup>৯</sup> [[আলোকবর্ষ]] নয়, যার কারণ দুইটি। প্রথমত, [[স্থানের মেট্রিক সম্প্রসারণ|স্থানের সম্প্রসারণের]] কারণে এমন অনেক বস্তুর আলো শনাক্ত করা যায়, যা বর্তমানে প্রায় ৪৫৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, কিন্তু অতীতে কোন এক সময় যথেষ্ট নিকটবর্তী ছিল। আর দ্বিতীয়ত, [[মহাবিশ্বের_কালানুক্রম#সমন্মীকরণ|মহাবিশ্বের সমন্মীকরণকালে]] ([[বিগ ব্যাং]] এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পরে) মহাবিশ্ব একরকম অস্বচ্ছ [[প্লাজমা]] দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল, এবং [[ফোটন|ফোটনগুলো]] দ্রুত অন্যান্য কণা দ্বারা শোষিত হয়ে যেত, যে কারণে আলো বা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের সাহায্যে এই সময়ের পূর্বের কোন বস্তু শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে [[মহাকর্ষীয় তরঙ্গ]] এবং নিউট্রিনো পটভূমি এভাবে প্রভাবিত হয় না। এ সময়-পরবর্তী উৎপন্ন সবচাইতে পুরাতন ফোটনগুলোই বর্তমানে [[মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ]] হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যত প্রযুক্তির দ্বারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং নিউট্রিনো পটভূমি বিশ্লেষণ করে আরও অতীতে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কখনো কখনো সমন্মীকরণকালের পর হতে উৎসারিত তথ্য নিয়ে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক প্রসারণকাল হতে উৎসারিত তথ্য নিয়ে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বকে পৃথকভাবে গণনা করেন।
কার্যত পর্যবেক্ষণযোগ্যতার সীমা মহাবিশ্বের বয়স অনুসারে ১৩.৭৯৯×১০<sup>৯</sup> [[আলোকবর্ষ]] নয়, যার কারণ দুইটি<ref name="expandingconfusion">{{cite journal|last = Davis|first = Tamara M.|author2=Charles H. Lineweaver |title=Expanding Confusion: common misconceptions of cosmological horizons and the superluminal expansion of the universe|journal = Publications of the Astronomical Society of Australia|volume = 21|issue = 1|pages = 97–109|date = 2004|doi = 10.1071/AS03040 |arxiv=astro-ph/0310808|bibcode = 2004PASA...21...97D }}</ref>। প্রথমত, [[স্থানের মেট্রিক সম্প্রসারণ|স্থানের সম্প্রসারণের]] কারণে এমন অনেক বস্তুর আলো শনাক্ত করা যায়, যা বর্তমানে প্রায় ৪৫৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, কিন্তু অতীতে কোন এক সময় যথেষ্ট নিকটবর্তী ছিল<ref name="expandingconfusion"/>। আর দ্বিতীয়ত, [[মহাবিশ্বের_কালানুক্রম#সমন্মীকরণ|মহাবিশ্বের সমন্মীকরণকালে]] ([[বিগ ব্যাং]] এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পরে) মহাবিশ্ব একরকম অস্বচ্ছ [[প্লাজমা]] দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল, এবং [[ফোটন|ফোটনগুলো]] দ্রুত অন্যান্য কণা দ্বারা শোষিত হয়ে যেত, যে কারণে আলো বা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের সাহায্যে এই সময়ের পূর্বের কোন বস্তু শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে [[মহাকর্ষীয় তরঙ্গ]] এবং নিউট্রিনো পটভূমি এভাবে প্রভাবিত হয় না। এ সময়-পরবর্তী উৎপন্ন সবচাইতে পুরাতন ফোটনগুলোই বর্তমানে [[মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ]] হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যত প্রযুক্তির দ্বারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং নিউট্রিনো পটভূমি বিশ্লেষণ করে আরও অতীতে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কখনো কখনো সমন্মীকরণকালের পর হতে উৎসারিত তথ্য নিয়ে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক প্রসারণকাল হতে উৎসারিত তথ্য নিয়ে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বকে পৃথকভাবে গণনা করেন।


== মহাবিশ্ব এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব ==
== মহাবিশ্ব এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব ==

০৪:০৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে মহাবিশ্বের এমন একটি গোলাকার অঞ্চল যার অন্তর্গত বস্তুসমূহ পৃথিবী থেকে বর্তমান সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। মহাজাগতিক প্রসারণের শুরু থেকে কেবল এই অঞ্চলে অবস্থিত বস্তুসমূহের নির্গত তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ পৃথিবীতে পৌঁছানোর সময় পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মোট বালুকণার সংখ্যার চেয়েও বেশি তারা[১][২][৩] সহ অন্তঃত দুই লক্ষ কোটি ছায়াপথ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে অবস্থিত[৪][৫]। মহাবিশ্ব সর্বত্র প্রতিসম ধরে নিলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সীমানা সবদিকেই প্রায় সমান দূরত্বে বিদ্যমান। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে পর্যবেক্ষক-কেন্দ্রিক একটি গোলাকার ক্ষেত্র। মহাবিশ্বের প্রতিটি স্থানের নিজস্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব রয়েছে, যা পৃথিবী-কেন্দ্রিক এলাকাটির সাথে অধিক্রমণ করতে পারে।

পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব
সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের চিত্র। প্রতিটি উজ্জ্বল বিন্দু প্রচুর সুপারক্লাস্টারের সংগ্রহকে নির্দেশ করে। চিত্রের কেন্দে রয়েছে Virgo Supercluster – যেখানে আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ অবস্থিত – কিন্তু খালিচোখে দেখার জন্য অত্যন্ত ক্ষুদ্র।
ব্যাস৮.৮×১০২৬ মিটার (২৮.৫ গিগাপারসেক বা ৯৩×১০ আলোকবর্ষ)[৬]
আয়তন৪×১০৮০ ঘনমিটার[৭]
ভর (সাধারণ পদার্থ)১০৫৩ কিলোগ্রাম[৮]
ঘনত্ব৯.৯×১০-৩০ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার (প্রতি ঘনমিটারে ৬টি প্রোটন এর সমতুল্য)[৯]
বয়স১৩.৭৯৯±০.০২১×১০ বছর[১০]
গড় তাপমাত্রা২.৭২৫৪৮ কেলভিন[১১]
উপাদানসাধারণ (ব্যারিয়নিক) পদার্থ (৪.৯%)
গুপ্ত পদার্থ (২৬.৮%)
কৃষ্ণশক্তি (৬৮.৩%)

এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণযোগ্য শব্দটি দ্বারা কোন বস্তুর আলোক বা অন্যান্য তথ্য শনাক্ত করার সম্ভাব্যতা বা আদৌ পর্যবেক্ষনের মত কিছু উপস্থিত কিনা তা বোঝায় না, বরং আলোর গতি থেকে উদ্ভুত প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতাকেই নির্দেশ করে। যেহেতু কোন সংকেতই আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করতে পারে না, সেহেতু মহাবিশ্বের বয়সের সময়কালে (২০১৫ সালে আনুমানিক ১৩.৭৯৯×১০ বছর[১০]) আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, তার অধিক দূরত্বে অবস্থিত বস্তুুসমূহ কোন উপায়েই পৃথিবী হতে শনাক্ত করা যাবে না। তাছাড়া সম্ভবত কিছু বহির্জাগতিক বস্তু আলোর অধিক গতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এজাতীয় বস্তুগুলোও পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যাবে না।

কার্যত পর্যবেক্ষণযোগ্যতার সীমা মহাবিশ্বের বয়স অনুসারে ১৩.৭৯৯×১০ আলোকবর্ষ নয়, যার কারণ দুইটি[১২]। প্রথমত, স্থানের সম্প্রসারণের কারণে এমন অনেক বস্তুর আলো শনাক্ত করা যায়, যা বর্তমানে প্রায় ৪৫৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, কিন্তু অতীতে কোন এক সময় যথেষ্ট নিকটবর্তী ছিল[১২]। আর দ্বিতীয়ত, মহাবিশ্বের সমন্মীকরণকালে (বিগ ব্যাং এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পরে) মহাবিশ্ব একরকম অস্বচ্ছ প্লাজমা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল, এবং ফোটনগুলো দ্রুত অন্যান্য কণা দ্বারা শোষিত হয়ে যেত, যে কারণে আলো বা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের সাহায্যে এই সময়ের পূর্বের কোন বস্তু শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং নিউট্রিনো পটভূমি এভাবে প্রভাবিত হয় না। এ সময়-পরবর্তী উৎপন্ন সবচাইতে পুরাতন ফোটনগুলোই বর্তমানে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যত প্রযুক্তির দ্বারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং নিউট্রিনো পটভূমি বিশ্লেষণ করে আরও অতীতে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কখনো কখনো সমন্মীকরণকালের পর হতে উৎসারিত তথ্য নিয়ে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক প্রসারণকাল হতে উৎসারিত তথ্য নিয়ে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বকে পৃথকভাবে গণনা করেন।

মহাবিশ্ব এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব

মহাবিশ্বের কিছু এলাকা এত দূরে অবস্থিত যে বিগ ব্যাং হতে বর্তমান সময়ের মধ্যে সেখানকার আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারেনি। এই এলাকাগুলো মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণযোগ্য অঞ্চলের বাইরে অবস্থিত। ভবিষ্যতে অতি-দূরবর্তী উৎসের আলো পৃথিবীতে আগমনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাবে, ফলে পর্যবেক্ষণযোগ্য এলাকা বর্ধিত হবে। কিন্তু হাবলের সূত্র অনুসারে পৃথিবী হতে যথেষ্ট দূরবর্তী স্থানগুলো আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে (বিশেষ আপেক্ষিকতা নিকটবর্তী দুটি বস্তুর একে-অপরের সাপেক্ষে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে স্থানান্তরে বাধা দেয়, কিন্তু দূরবর্তী দুটি বস্তু যাদের মধ্যবর্তী স্থান স্ফীতিশীল, সেক্ষেত্রে নয়), উপরন্তু কৃষ্ণশক্তির প্রভাবে এই প্রসারণের হার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি কৃষ্ণশক্তির পরিমাণকে ধ্রুবক (একটি অপরিবর্তনশীল মহাজাগতিক ধ্রুবক) ধরে নেয়া হয়, অর্থাৎ মহাবিশ্বের স্ফীতির হার ক্রমবর্ধমান থাকে, তবে একটি "ভবিষ্যৎ দৃষ্টির সীমা" পাওয়া যাবে, যার বাইরের বস্তুসমূহ অসীম সময় পেলেও কখনোই আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে প্রবেশ করবে না। স্থানের স্ফীতি অগ্রাহ্য করে এই সীমার দূরত্ব পাওয়া যায় ১৯০০ কোটি পারসেক বা ৬২০০ কোটি আলোকবর্ষ। এই তথ্য ইঙ্গিত করে যে পৃথিবী থেকে ভবিষ্যতে তাত্ত্বিকভাবে সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণযোগ্য ছায়াপথের সংখ্যা, বর্তমান সংখ্যার চেয়ে কেবল ২.৩৬ গুণ বেশি হতে পারে।

শিল্পীর কল্পনায় লগারিদমিক পরিসরে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের চিত্র: কেন্দ্রে সৌরজগত, গ্রহসমুহ, কাইপার বেষ্টনী, উর্ট মেঘ, আলফা সেন্টরাই, পার্সিয়াস বাহু, আকাশগঙ্গা ছায়াপথ, এন্ড্রোমেডা ছায়াপথ, নিকটবর্তী ছায়াপথসমুহ, মহাজাগতিক জাল, মহাজাগতিক অনুতরঙ্গ বিকিরণ এবং সর্বশেষে বিগ ব্যাংয়ের অদৃশ্য প্লাজমা।

তাত্ত্বিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য ছায়াপথের সংখ্যা যদিও ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে, তবে চলমান সম্প্রসারণের কারণে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ছায়াপথে অত্যাধিক লোহিত সরণ ঘটবে, এবং এরা আপাতঃদৃষ্টিতে অদৃশ্য হয়ে যাবে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট কো-মুভিং দূরত্বে অবস্থিত কোন ছায়াপথ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের অন্তর্গত হয় যদি সেখান থেকে অতীতের যেকোন সময়ে নির্গত সংকেত পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ফলে ভবিষ্যতে এমন একটা সময় আসতে পারে যখন ঐ ছায়াপথ থেকে নির্গত সংকেত পৃথিবীতে আর পৌঁছাতে পারবে না, যদিও তার কো-মুভিং দূরত্ব অপরিবর্তিত এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের কো-মুভিং ব্যাসার্ধের চেয়ে কম। এই তথ্য ব্যবহার করে এক ধরণের ঘটনা দিগন্ত সংজ্ঞায়িত করা যায়, পৃথিবী হতে যার দূরত্ব সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। উদাহরণরূপে, বর্তমানে পৃথিবী হতে এই ঘটনা দিগন্তের দূরত্ব ১৬০০ কোটি আলোকবর্ষ, অর্থাৎ এই দূরত্বের মধ্যে বর্তমানে ঘটমান কোন ঘটনার তথ্য ভবিষ্যতে কোন সময়ে পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু ঐ তথ্য কখনোই পৃথিবীতে পৌঁছাবে না যদি ঘটনাটি ১৬০০ কোটি আলোকবর্ষের অধিক দূরত্বে হয়ে থাকে।

প্রচলিত গণমাধ্যমে এবং পেশাদার গবেষণায়ও সাধারণত মহাজাগতিক আলোচনার সময় "মহাবিশ্ব" শব্দটি "পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব" অর্থেই ব্যবহৃত হয়। এর ব্যাখ্যায় বলা যায় যে, পৃথিবীর সাথে কারণিকভাবে বিচ্ছিন্ন, মহাবিশ্বের এমন এলাকার সম্বন্ধে সরাসরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা কিছুই জানতে পারা সম্ভব নয়, যদিও অনেক গ্রহণযোগ্য মহাজাগতিক তত্ত্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের তুলনায় অনেক বড় পরিধির মহাবিশ্ব দাবি করে। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বই যে পরিপূর্ণ মহাবিশ্ব, এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমনকি সুপ্রচলিত মহাজাগতিক মডেলগুলো মহাবিশ্বের কোন সীমা থাকতে হবে এমন কোন শর্তও আরোপ করে না। অবশ্য কিছু মডেলে একটি সসীম কিন্তু সীমান্তহীন মহাবিশ্বের ধারণা দেয়া হয় (অনেকটা একটি গোলকের দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠতলের মত, যার আয়তন সীমিত তথাপি কোন কিনারা নেই)। এমনটিও সম্ভাব্য হতে পারে যে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বভুক্ত ছায়াপথগুলো সম্পূূর্ণ মহাবিশ্বের অতি নগণ্য অংশ। অ্যালান গুথ (এবং ডি. কাজানাস) এর মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা তত্ত্ব অনুযায়ী বিগ ব্যাংয়ের ১০-৩৭ সেকেন্ড পরে স্ফীতি শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। এই সময়ের পূর্বমুহূর্তে মহাবিশ্বের ব্যপ্তি আলোর গতি × এর বয়স হলে বর্তমানে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের আয়তন, পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের তুলনায় অন্তঃত ৩×১০২৩ গুণ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন মডেলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের তুলনায় সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের আয়তন সর্বনিম্ন ২৫০ গুণ হতে সর্বোচ্চ ১০১০১০১২২ এরও বেশি বলে ধারণা করা হয়।

আবার মহাবিশ্ব যদি সসীম কিন্তু সীমান্তহীন হয়, তবে সম্পূর্ণ মহাবিস্বটি প্রকৃতপক্ষে পর্যবেক্ষণযোগ্য অঞ্চলের চেয়ে ছোটও হতে পারে। এক্ষেত্রে অতি দূরবর্তী মনে হয় এমন ছায়াপথগুলো আসলে নিকটবর্তী ছায়াপথের প্রতিবিম্ব, যে প্রতিবিম্বের সৃষ্টি হয়েছে সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসা আলোর দ্বারা। কিন্তু এ প্রস্তাবনার পরীক্ষণ কষ্টসাধ্য, কারণ একই ছায়াপথের বিভিন্ন প্রতিবিম্ব তার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের চিত্র দেখাবে, যা অনেকটাই বিসদৃশ হয়ে থাকে।

বিয়েলেউইজ ও প্রমুখ সর্বশেষ বিক্ষেপণ পৃষ্ঠের প্রসার সর্বনিম্ন ২৭.৯×১০ পারসেক (৯.১×১০ আলোকবর্ষ) বলে প্রতিপাদনের দাবি করেন (যেহেতু এটি কেবল সর্বনিম্ন সীমা, তাই গবেষণাপত্রটিতে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের এর চেয়েও ব্যাপক, এমনকি অসীমও হবার সম্ভাবনা উন্মুক্ত থেকে যায়)। এই মানটি ডব্লিউএমএপি এর ৭ বছরব্যাপী সংগৃহীত তথ্যের ম্যাচিং-সার্কেল বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাপ্ত। এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত মান বিতর্কিত।

আয়তন

পৃথিবী হতে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের শেষপ্রান্তের কো-মুভিং দূরত্ব যেকোন দিকে প্রায় ১৪.২৬×১০ পারসেক, বা ৪৬.৫×১০১৮ আলোকবর্ষ, বা ৪.৪০×১০২৬ মিটার। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হল ২৮.৫×১০ পারসেক ব্যাসবিশিষ্ট গোলক। স্থান মোটামুটি মসৃণ ধরে নিলে কো-মুভিং আয়তন পাওয়া যায় ১.২২×১০গিগাপারসেক (৪.২২×১০গিগা-আলোকবর্ষ বা ৩.৫৭×১০৮০মিটার)।

পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ফরনাক্স নক্ষত্রমন্ডলের কাছাকাছি ক্ষুদ্র একটি এলাকার হাবল অতি-গভীর ক্ষেত্র চিত্র (বামের নিম্নকোণে দেখানো আকাশের এলাকার সমতুল্য)। প্রতিটি ফোঁটা একটি ছায়াপথ। ক্ষুদ্রতম, সর্বাধিক লোহিত-সরণ ঘটা ছায়াপথের আলো প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে সৃষ্ট।

উল্লিখিত মানগুলো মহাজাগতিক সময়ে বর্তমানকালের দূরত্ব, আলো উৎপন্ন হবার সময়কালীন দূরত্ব নয়। উদাহরণরূপে, বর্তমানকালে যে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ দেখা যায়, তার আলো উৎপন্ন হয়েছিল ফোটন বিযোজনের সময়, বিগ ব্যাংয়ের আনুমানিক ৩৮০,০০০ বছর পর, অর্থাৎ প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে। যে পদার্থ থেকে ওই আলো বিকিরিত হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে ছায়াপথে পরিণত হয়েছে, এবং এই ছায়াপথগুলো বর্তমানে প্রায় ৪৬০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। কোন বস্তু থেকে আলো নিক্ষিপ্ত হবার সময়ে তার দুরত্ব অনুমান করার পূর্বে উল্লেখ্য, ফ্রিদম্যান-ল্যমেত্র-রবার্টসন-ওয়াকার সমীকরণ অনুযায়ী বর্তমানে প্রাপ্ত আলোর লোহিত সরণ যদি z হয়, তবে আলো বিকিরিত হবার সময় মহাবিশ্বের আকারের গুণক:

ডব্লিউএমএপি এর নয়-বছরব্যাপী তথ্য এবং অন্যান্য নিরীক্ষার সমন্বয়ে ফোটন বিযোজনের লোহিত সরণ পাওয়া যায় z = ১০৯১.৬৪±০.৪৭, অর্থাৎ সে সময় আকারের গুণক ১/১০৯২.৬৪। অর্থাৎ মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের সবচেয়ে পুরাতন ফোটন বিকিরণকারী বস্তুর বর্তমান দুরত্ব যদি ৪৬০০ কোটি আলোকবর্ষ হয়, তবে ফোটন বিকিরণের সময় তার দুরত্ব ছিল মাত্র ৪২০ লক্ষ আলোকবর্ষ।

আয়তন বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণা

পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আকার-বিষয়ক একটি সাধারণ ভ্রান্তির উদাহরণ। এই ফলকটি নিউ ইয়র্কের রোজ সেন্টার ফর আর্থ অ্যান্ড স্পেস-এ অবস্থিত।

বিভিন্ন গৌণ উৎসে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আকারের বিষয়ে প্রচুর পার্থক্যময় বর্ণনা দেয়। এধরণের কিছু আকার ও এর সম্ভাব্য কারণ এখানে দেখানো হয়েছে।

১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষ
ধারণা করা হয় মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে কিছুই চলতে পারে না, এই তথ্যের ভিত্তিতে অনেক ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয় পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ কোনমতেই ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষের বেশি হয়ে পারে না, যা একটি ভুল বিবেচনা। এই যুক্তি অর্থপূর্ণ হত কেবল যদি বিশেষ আপেক্ষিকতার মসৃণ অপরিবর্তনীয় মিঙ্কোয়স্কি স্থান-কালের ধারণাটি সঠিক হত। অথচ বাস্তব মহাবিশ্বে স্থানকাল বক্রভাবে রয়েছে যা হাবলের সূত্রে বর্ণীত স্থানের সম্প্রসারণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ কারণে আলোর গতির সাথে মহাজাগতিক সময় পরিসরের গুণফলে প্রাপ্ত দুরত্ব মানের কোন ভৌত গুরুত্ব নেই।
১৫৮০ কোটি আলোকবর্ষ
এই আকারও পূর্ববর্তী ধারণার মত একই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত, তবে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি গণমাধ্যমে প্রকাশিত মহাবিশ্বের বয়সের একটি ভুল তথ্য ভিত্তিক।
২৭৬০ কোটি আলোকবর্ষ
এটি ১৩৮০ কোটি আলোকবর্ষকে ব্যাসার্ধ (যা ভুল) হিসেবে নিয়ে প্রাপ্ত ব্যাস।
৭৮০০ কোটি আলোকবর্ষ
২০০৩ সালে কর্নিশ প্রমুখ সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের আকারের এই নিম্নসীমা আবিষ্কার করেন যা মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের দুই বিপরীত প্রান্তের দুরত্বের ভিত্তিতে প্রাপ্ত, যদি ধরে নেয়া হয় যে অগতানুগতিক টপোলজির কারণে মহাবিশ্বের আকার সীমিত। যদি সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব এই গোলকের তুলনায় ছোট হয় তবে ইতোমধ্যে আলো সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসার সময় পেয়েছে, এর ফলে একাধিক প্রতিবিম্ব তৈরি হবে, যা পুনরাবৃত্ত বৃত্তাকার নকশা হিসেবে প্রকাশ পাবে। কর্নিশ প্রমুখ ২৪ গিগাপারসেক আকার পর্যন্ত এ ধরণের নকশা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা বলেন, যদি সম্ভাব্য সকল সজ্জায় অনুসন্ধান চালানো হয়, তবে "এই সম্ভাবনা বাতিল করা যাবে যে আমরা ২৪×১০ পারসেক এর কম ব্যাসের মহাবিশ্বে বাস করছি"। তাঁরা আরও ধারণা করেন যে "অল্প দূষণ ও উচ্চ রেজ্যলুশনের সিএমবি মানচিত্র (ডব্লিউএমএপি-এর বর্ধিত মিশন ও প্ল্যাংক স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত) দ্বারা ক্ষুদ্রতর বৃত্তাকার নকশা অনুসন্ধান করতে পারলে আমরা নিম্নসীমা ~২৮×১০ পারসেক পর্যন্ত বর্ধিত করতে পারবো"। ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণে প্রাপ্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ নিম্নসীমা ১৪×১০ পারসেক (৪৬০০ কোটি আলোকবর্ষ) ব্যাসার্ধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের বর্তমান আনুমানিক ব্যাসার্ধের প্রায় সমান। কর্নিশ প্রমুখ গবেষকদের প্রায় সকলের লিখিত ২০১২ এর একটি প্রাক-মুদ্রণে বর্তমান সর্বনিম্ন সীমাকে অনুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের ব্যাসের ৯৮.৫%, প্রায় ২৬×১০ পারসেক, এ উন্নীত করেছে।
১.৫৬×১০১১ আলোকবর্ষ
এই মানটি উল্লিখিত ৭৮০০ কোটি আলোকবর্ষ মানকে ব্যাসার্থ ধরে দ্বিগুণ করে প্রাপ্ত। কিন্তু এটি ভুল, কারণ ৭৮০০ কোটি আলোকবর্ষ ইতোমধ্যেই একটি ব্যাসার্ধ। এই মান বহুল প্রচারিত হয়েছিল। জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কর্নিশের কর্মস্থল মন্টানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংবাদলিপিতে, ডিসকভার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করার সময় এই ভুলটির কথা উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, "ডিসকভারে ভুলবশত প্রচারিত হয়েছে মহাবিশ্বের প্রশস্ততা ১৫৬০০ কোটি আলোকবর্ষ, যেখানে ৭৮০০ কোটি আলোকবর্ষকে মহাবিশ্বের ব্যাসের পরিবর্তে ব্যাসার্ধ মনে করা হয়েছে"।
১.৮০×১০১১ আলোকবর্ষ
এই অনুমানের উৎস হল ১.৫৬×১০১১ আলোকবর্ষ মানের সঙ্গে এম৩৩ ছায়াপথ পূর্বের অনুমানের চেয়ে ১৫% দূরে থাকার সমর্থনকারী প্রমাণের সংয়োজন, য়ার কারণে মনে হয় হাবল ধ্রুবক ১৫% কম। ১.৮০×১০১১ মানটি ১.৫৬×১০১১ আলোকবর্ষের সাথে ১৫% যোগ করে প্রাপ্ত।

মহাবিশ্বের বৃহৎ-পরিসর গঠন

আকাশ জরিপ এবং তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণের বিভিন্ন তরঙ্গদদৈর্ঘ্যের (বিশেষত ২১-সেন্টিমিটার নিঃসরণ) প্রক্ষেপন মহাবিশ্বের উপাদান এবং গঠন-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রচুর তথ্য প্রদান করেছে। মহাবিশ্বের গঠনবিন্যাস দৃশ্যত একধরণের অনুক্রমে সজ্জিত, যা বিশাল মহাগুচ্ছ এবং তন্তু পর্যন্ত বিদ্যমান, যার প্রসার প্রায় ৩০ থেকে ২০০ মেগাপারসেক। আ এই ধারাবাহিকতায় বড় আকারের আর কোন অব্যাহত গঠন দেখা যায় না, যে বিষয়টিকে বিশালত্বের সমাপ্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

দেয়াল, তন্তু, নোড এবং শুন্যস্থান

2dF ছায়াপথের অভ্যন্তরের লোহিত সরণ জরিপের ডিটিএফই পুনর্গঠন

মহাজাগতিক সংগঠন তর্কসাপেক্ষে নক্ষত্রের পর্যায় থেকে শুরু হয়, যদিও খুব অল্পসংখ্যক মহাবিশ্বতত্ত্ববিদগণ এ জ্যোতির্বিজ্ঞানকে এই ধাপ হতে পর্যালোচনা করেন। নক্ষত্র দিয়ে ছায়াপথ গঠিত হয়, যা ছায়াপথমন্ডল গঠন করে, এবং পর্যায়ক্রমে ছায়াপথগুচ্ছ, মহাগুচ্ছ, স্তর, দেয়াল ও তন্তু, যা বিরাট শুন্যস্থান দ্বারা বিচ্ছিন্ন। সব মিলিয়ে ফোমের মত বিশাল গঠন দৃশ্যমান হয় যাকে কখনো "মহাজাগতিক জাল" বলা হয়। ১৯৮৯ এর আগে স্বীকৃত ছিল যে মহাকর্ষীয়ভাবে স্থীতিশীল ছায়াপথগুচ্ছই সর্ববৃহৎ গঠন এবং মহাবিশ্বের সর্বত্রই মোটামুটি সমবন্টিত। তবে ১৯৮০ দশকের শুরু থেকেই এর চেয়ে বড় বেশ কিছু গঠন আবিষকৃত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে আদ্রিয়ান ওয়েবস্টার, ৫টি কোয়েজারের সমন্বয়ে ওয়েবস্টার বৃহৎ কোয়েজার দল আবিষ্কার করেন। এটি ছিল প্রথম চিহ্নিত বিশাল-পরিসরের গঠন, এবং মহাবিশ্বের পদার্থের পুঞ্জীভবনের তথ্যে সম্প্রসারণ আনে। ১৯৮৭ সালে রবার্ট ব্রেন্ট টুলি প্রায় ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দীর্ঘ পিসেস-সিটাস মহাগুচ্ছমিশ্রণ আবিষ্কার করেন, যে ছায়াপথতন্তুতে আকাশগঙ্গার অবস্থান। ওই বছরেই প্রায় ১৩ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত ছায়াপথবিহীন শুন্যস্থান, "বিশাল শুন্যতা", আবিষ্কৃত হয়। ১৯৮৯ সালে লোহিতসরণ জরিপের উপাত্তের ভিত্তিতে মার্গারেট জেল্যার ও জন হুখরা আবিষ্কার করেন "বিশাল দেয়াল", ছায়াপথের একটি স্তর যা প্রায় ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দীর্ঘ ও ২০০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত, কিন্তু মাত্র ১৫০ লক্ষ আলোকবর্ষ পুরু। দুই বছর পরে রজার জি. ক্লাউজ ও লুই ই. কাম্পুসানো প্রায় ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দৈর্ঘ্যের ক্লাউজ-কাম্পুসানো বৃহৎ কোয়েজার গ্রুপ আবিষ্কার করেন, যা ছিল ওই সময়ে জানা সর্ববৃহৎ মহাজাগতিক গঠন। পরবর্তীতে ২০০৩ এর এপ্রিলে আবিষ্কৃত হয় স্লোন বিশাল দেয়াল, এবং ২০০৭ এর এপ্রিলে ইরিদানাস নক্ষত্রপুঞ্জের কাছাকাছি আরেকটি সম্ভাব্য বিশাল শুন্যতা। উল্লেখ্য, এই শুন্যতাটি অনুতরঙ্গ পটভুমি বিকিরণের 'শীতল বিন্দু' এর সাথে কাকতালীয়ভাবে সঙ্গতিপূর্ণ, কিন্তু এই শীতল বিন্দু বর্তমানে গৃহীত মহাজাগতিক মডেলে অত্যন্ত অসম্ভাব্য।

মহাবিশ্বের প্রায় পাঁচ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত এলাকার কম্পিউটার সিমুলেশন দ্বারা তৈরি চিত্র। এখানে মহাবিশ্বের বিশাল পরিসরের আলোক উৎসের বিন্যাস দেখানো হচ্ছে — তবে এক্ষেত্রে কোয়েজার ও ছায়াপথের নিখুঁত অবদান স্পষ্ট না।

আরেকটি বৃহৎ-পরিসরের গঠন হল প্রায় ২০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত নিউফাউন্ডল্যান্ড পিন্ড, ছায়াপথ ও প্রচুর ফেনায়িত গ্যাসের সমাবেশ।

২০১১ সালে ইউ১.১১ নামক আরো একটি কোয়েজার দল আবিষ্কৃত হয়, যা প্রায় ২৫০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত হিউজ-এলকিউজি নামের আরো একটি কোয়েজারদল শনাক্ত করা হয়। ২০১৩ সালের নভেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ হারকিউলিস—করোনা বোরেয়ালিস বিশাল দেয়াল আবিষ্কার করেন, যা পূর্বোল্লেখিত গঠনের চাইতেও আকারে দ্বিগুণ। এটি গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ হতে নির্ধারিত।

বিশালত্বের সমাপ্তি

বিশালত্বের সমাপ্তি হল এমন একটি পর্যবেক্ষণীয় প্রসার, প্রায় ১০০ মেগাপারসেক (৩০ কোটি আলোকবর্ষ) যখন মহাবিশ্বের উচ্চমাপের গঠনসমূহ মহাজাগতিক নীতি মেনে সমসত্ত্ব ও সমতাপীয় হয়ে ওঠে। এই মাপনীতে কোন আধি-অনিয়মিত ফ্র্যাক্টাল বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। ক্ষুদ্র পরিসরের জরিপে মহাগুচ্ছ ও তন্তুগুলো যথেষ্ট অসমন্বিত থাকে যে কারণে মহাবিশ্বের মসৃণভাবে বিন্যস্ত বলে মনে হয়। ১৯৯০ এর লোহিতসরণ জরিপসমূহ সম্পন্ন হবার আগ পর্যন্ত এই বিশাল মাত্রার গঠনসমূহ প্রতীয়মান হয়নি।

পর্যবেক্ষণ

"সম্পূর্ণ নিকট-অবলোহিত আকাশের প্যানোরামিক চিত্রে আকাশগঙ্গা ছাড়িয়ে ছায়াপথসমূহের বন্টন উন্মোচিত হয়। এই চিত্রের উৎস প্রায় ১৫০ লক্ষ ছায়াপথসম্পন্ন ২এমএএসএস এক্সটেন্ডেড সোর্স ক্যাটালগ (এক্সএসসি), এবং আমাদের ছায়াপথের প্রায় ৫ কোটি নক্ষত্রসম্পন্ন পয়েন্ট সোর্স ক্যাটালগ (পিএসসি). ছায়াপথগুলোর রঞ্জনের উৎস ইউজিসি, সিএফএ, টুলি এনবিজিসি, এলসিআরএস, ২ডিএফ, ৬ডিএফজিএস, এবং এসডিএসএস জরিপ থেকে গৃহীত 'লোহিতসরণ' ও নাসার এক্সট্রাগ্যালাক্টিক ডেটাবেজ সম্পাদিত উপাত্ত, অথবা আলোকমিতি দ্বারা কে-ব্যান্ড (২.২ মাইক্রোমিটার) থেকে অনুমিত। সবচেয়ে নিকটবর্তী উৎসগুলো নীল (z < ০.০১); মধ্যবর্তী দুরত্বে সবুজ (০.০১ < z < ০.০৪) এবং ২এমএএসএস এ দৃশ্যমান সবচেয়ে দুরবর্তী উৎসগুলো লাল (০.০৪ < z < ০.১). চিত্রটি আকাশগঙ্গাকে মাঝামাঝি রেখে আইটফ অভিক্ষেপে অঙ্কিত।" [১৩]

বিশাল পরিসরের গঠনের আর একটি সূচক 'লাইম্যান-আলফা বনানী', যা কোয়েজার থেকে আগত আলোর বর্ণালীতে বিদ্যমান বিশোষণ রেখার সমষ্টি। এর মাধ্যমে আন্তঃছায়াপথীয় গ্যাসের (মূলত হাইড্রোজেন) বিশাল পাতলা স্তরের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা নতুন ছায়াপথ গঠনের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে হয়।

মহাজাগতিক পরিসরের গঠন বর্ণনায় সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ এক্ষেত্রে প্রায়ই দৃশ্যমান ও বাস্তব চিত্রে ভিন্নতা থাকে। মহাকর্ষের প্রভাবে আলোর বক্রতার ফলে কোন বস্তুর চিত্র সঠিক অবস্থান থেকে ভিন্ন কোথাও তৈরি হতে পারে। এ ধরণের ঘটনা ঘটে যখন পুরোভুমির কোন বস্তু (যেমন কোন ছায়াপথ) নিজের চারপাশের স্থানকালের সংকোচন করে এবং সেখান দিয়ে গমনকারী আলোর প্রতিসরণ ঘটে। সুবিধাজনকভাবে, শক্তিশালী লেন্সিংয়ের ফলে অনেকসময় দুরবর্তী ছায়াপথের আলোর বিবর্ধন ঘটে, ফলে তা শনাক্ত করা সহজ হয়। দুর্বল লেন্সিং সাধারণত বিশাল-পরিসরের গঠনের পর্যবেক্ষণে সামান্য পরিবর্তন আনে, যা বিভিন্ন মহাজাগতিক মডেলের পরীক্ষা করা অর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে।

তাছাড়া লোহিতসরণ দিয়ে ছায়পথের দুরত্ব পরিমাপকালে মহাজাগতিক বিশালকায় গঠন ভিন্নভাবে প্রতীয়মান হয়। ছায়াপথগুচ্ছের পেছনের ছায়াপথগুলো তার দিকে আকর্ষণ বোধ করে ও তার দিকে সরে আসে, ফলে ওই ছায়াপথের স্বাভাবিক অবস্থানের তুলনায় কম লোহিতসরণ ঘটে। একই কারণে সম্মুখবর্তী ছায়াপথগুলোর তুলনামূলক সামান্য বেশি লোহিতসরণ হয়। ফলে ছায়াপথগুচ্ছের আশপাশের এলাকা ঘন মনে হয়। আবার গুচ্ছের আভ্যন্তরীণ ছায়াপথগুলোর ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটনা দেখা যায়। গুচ্ছের কেন্দ্র ঘিরে এদের সামান্য এলোমোলো গতি থাকে, যাকে লোহিতসরণে রূপান্তর করলে ছায়াপথগুচ্ছটি দীর্ঘায়িত মনে হয়। ফলে পৃথিবীর দিকে নির্দেশকারী দীর্ঘ ছায়াপথের শিকলের বিভ্রম দেখা যায়, যাকে "ঈশ্বরের আঙুল" নাম দেয়া হয়েছে।

আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশ

হাইড্রা-সেন্টরাস মহাগুচ্ছের কেন্দ্রে "মহা আকর্ষক" নামের একটি মহাকর্ষীয় অস্বাভাবিকতা শত শত লক্ষ আলোকবর্ষ এলাকাজুড়ে ছায়াপথের গতিকে প্রভাবিত করে। এ ছায়াপথগুলোট সবগুলোতেই লোহিতসরণ ঘটছে, অর্থাৎ হাবলের সূত্রমতে এরা পৃথিবী থেকে (এবং একে অপরের থেকে) দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এদের লোহিতসরণের পার্থক্য থেকে হাজার দশেক ছায়াপথের ভরের সমতুল্য কোন সমাবেশের প্রমাণ পাওয়া যায়।

১৯৮৬ সালে আবিষ্কৃত মহা আকর্ষক ১৫ থেকে ২৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে হাইড্রা ও সেন্টরাস নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে অবস্থিত। এর আশপাশে পুরনো বড় আকারের ছায়াপথের আধিক্য রয়েছে, এদের অনেকে একে-অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত, নতুবা প্রচুর পরিমাণে বেতার তরঙ্গ বিকিরণ করছে।

১৯৮৭ সালে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর. ব্রেন্ট টুলি দশ কোটি আলোকবর্ষ দীর্থ এবং ১৫ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত একটি গঠন চিহ্নিত করেন এবং এর নাম দেন পিসেস-সিটাস মহাগুচ্ছমিশ্রণ। টুলির মতে, এর ভিতরেই আঞ্চলিক মহাগুচ্ছ নিহিত আছে।

বস্তুগত উপাদান

-১৩ —
-১২ —
-১১ —
-১০ —
-৯ —
-৮ —
-৭ —
-৬ —
-৫ —
-৪ —
-৩ —
-২ —
-১ —
০ —

পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ভর প্রায়ই ১০৫৩ কিলোগ্রাম বলে উদ্ধৃত হয়। তবে এই ভর গুপ্ত পদার্থ ও কৃষ্ণশক্তি ব্যতিরেকে সাধারণ বস্তুকণা, আন্তঃনক্ষত্র ও আন্তঃছায়াপথ মাধ্যমের সমন্বয়ে গঠিত। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের এই উদ্ধৃত ভর সংকট ঘনত্বের ভিত্তিতে অনুমান করা যায়।

সংকট ঘনত্বের ভিত্তিতে অনুমিত ভর

সংকট ঘনত্ব হল সমতল মহাবিশ্বের উপযোগী শক্তির ঘনত্ব। কৃষ্ণশক্তির অনুপস্থিতিতে এটি সেই ঘনত্ব যার জন্য মহাবিশ্বের স্ফীতি সম্প্রসারণ ও সংকোচনের মধ্যে ভারসাম্যে থাকে। ফ্রিদমান সমীকরণ অনুসারে সংকট ঘনত্ব এর মান:

যেখানে G মহাকর্ষীয় ধ্রুবক এবং H0 হাবল ধ্রুবক। ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থার প্ল্যাংক টেলিস্কোপের উপাত্ত অনুযায়ী H0 এর সাম্প্রতিককালীন মান ৬৭.১৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড-মেগাপারসেক। ফলে সংকট ঘনত্ব পাওয়া যায় ০.৮৫×১০-২৬ কিলোগ্রাম/ঘনমিটার, যা সাধারণত প্রতি ঘনমিটারে ৫টি হাইড্রোজেন অণু হিসেবে বর্ণিত হয়।

প্রধানত চার ধরণের ভর/শক্তি এই ঘনত্বের অন্তর্ভুক্ত:

  1. ৪.৮% সাধারণ পদার্থ
  2. ০.১% নিউট্রিনো
  3. ২৬.৪% শীতল গুপ্ত পদার্থ
  4. ৪.৮% কৃষ্ণশক্তি

(উল্লেখ্য, এখানে নিউট্রিনো পৃথকভাবে দেখানো হয়েছে কেননা তা শনাক্ত করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য সেহেতু সাধারণ পদার্থ হতে যথেষ্ট ভিন্ন।) প্ল্যাংক এর পরিমাপ অনুযায়ী সাধারণ পদার্থের ঘনত্ব সামগ্রিক সংকট ঘনত্বের ৪.৮% বা ৪.০৮×১০-২৮ কিলোগ্রাম/ঘনমিটার। এ ঘনত্বকে ভরে পরিণত করতে হলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আয়তন দিয়ে গুণ করতে হবে। মহাবিশ্ব ১৩৮০ কোটি বছর ধরে প্রসারিত হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক কো-মুভিং দুরত্ব (ব্যাসার্ধ) ৪৬৬০ কোটি আলোকবর্ষ, সেহেতু আয়তন () হবে ৩.৫৮×১০৮০ ঘনমিটার। অতএব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সাধারণ পদার্থের ভর ১.৪৬×১০৫৩ কিলোগ্রাম। যদি ধরা হয় সাধারণ পদার্থের অণুগুলো সবই হাইড্রোজেন অণু (যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের ছায়াপথের প্রায় ৭৪% গঠন করে), তাহলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের মোট অণুর সংখ্যা সহজেই অনুমান করা যায়: মোট সাধারণ পদার্থের ভর ÷ হাইড্রোজেন অণুর ভর, অর্থাৎ প্রায় ১০৮০ টি অণু।

সর্ব-দূরবর্তী বস্তুসমূহ

পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত (জানুয়ারি ২০১১ পূর্বক) প্রকাশিত পৃথিবী হতে সর্ব-দূরবর্তী জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু হল UDFj-39546284 নামাঙ্কিত একটি সম্ভাব্য ছায়াপথ। ২০০৯ সালে একটি গামা রশ্মি বিস্ফোরণ GRB 090423 এর লোহিত সরণ ৮.২ পরিমাপ করা হয়, অর্থাৎ মহাবিশ্বের মাত্র ৬৩ কোটি বছর বয়সে এই গামা রশ্মির উৎস তারাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। প্রায় ১৩০০ কোটি বছর পূর্বে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছিল, ফলে ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরত্বের কথা গণমাধ্যমে বহুলপ্রচারিত হয়। কিন্তু এটি কেবল আলোর অতিক্রান্ত দূরত্ব, হাবলের সূত্র এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আকার পরিমাপে ব্যবহৃত "সরল দূরত্ব" নয়। ৮.২ লোহিত সরণের জন্য সরল দূরত্ব হবে ৯.২×১০ পারসেক বা প্রায় ৩০০০ কোটি আলোকবর্ষ।সর্ব-দূরবর্তী রেকর্ডের অংশীদার আরেকটি বস্তু হচ্ছে Abell 2218 ছায়াপথপুঞ্জের মধ্য দিয়ে এবং এর চেয়েও দূরবর্তী একটি ছায়াপথ। এই ছায়াপথ থেকে আগত আলোর অতিক্রান্ত দূরত্বও পৃথিবী হতে প্রায় ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ। হাবল টেলিস্কোপ হতে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে এর লোহিত সরণ ৬.৬ থেকে ৭.১, এবং কেক টেলিস্কোপ অনুসারে প্রায় ৭। অর্থাৎ এই ছায়াপথের যে আলো বর্তমানে পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যায়, তা বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ৭৫ কোটি বছর পরে উৎপন্ন হয়েছে।

প্রান্তসীমা

মহাবিশ্বে আমাদের পর্যবেক্ষণক্ষমতা কিছু মহাজাগতিক দিগন্ত দ্বারা সীমিত, যা বিভিন্ন ভৌত সীমাবদ্ধতা থেকে উদ্ভুত হয়েছে। এর মধ্যে তুলনামূলক সুপরিচিত হচ্ছে কণিকাদিগন্ত যা নির্ধারণ করে দেয় মহাবিশ্বের বয়স সসীম হওয়ার কারণে ঠিক সর্বোচ্চ কতটুকু দূরত্ব পর্যন্ত দেখা সম্ভব। আরও একটি সুপরিচিত দিগন্ত হচ্ছে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ হিসেবে বিদ্যমান আলোকদিগন্ত। তাছাড়া স্থানের স্ফীতির কারণে পর্যবেক্ষণক্ষমতার বর্ধনের সাথে, এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ও নিউট্রিনো পটভূমি বিকিরণের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য দিগন্ত রয়েছে।

পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে পৃথিবীর অবস্থান।(বিকল্প চিত্র.)

তথ্যসূত্র

  1. Mackie, Glen (১ ফেব্রুয়ারি ২০০২)। "To see the Universe in a Grain of Taranaki Sand"Centre for Astrophysics and Supercomputing। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. "CNN.com - Star survey reaches 70 sextillion - Jul. 23, 2003"www.cnn.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৭ 
  3. "Which Is Greater, The Number Of Sand Grains On Earth Or Stars In The Sky?"NPR.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৭ 
  4. Christopher J. Conselice; ও অন্যান্য (২০১৬)। "The Evolution of Galaxy Number Density at z < 8 and its Implications"। The Astrophysical Journal830 (2): 83। arXiv:1607.03909v2অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.3847/0004-637X/830/2/83বিবকোড:2016ApJ...830...83C 
  5. Fountain, Henry (১৭ অক্টোবর ২০১৬)। "Two Trillion Galaxies, at the Very Least"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬ 
  6. Itzhak Bars; John Terning (নভেম্বর ২০০৯)। Extra Dimensions in Space and Time। Springer। পৃষ্ঠা 27–। আইএসবিএন 978-0-387-77637-8। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০১ 
  7. What is the Universe Made Of?
  8. Paul Davies (২০০৬)। The Goldilocks Enigma। First Mariner Books। পৃষ্ঠা 43–। আইএসবিএন 978-0-618-59226-5। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৩ 
  9. http://map.gsfc.nasa.gov/universe/uni_matter.html January 13, 2015
  10. Planck Collaboration (২০১৫)। "Planck 2015 results. XIII. Cosmological parameters (See Table 4 on page 31 of pfd)."। Astronomy & Astrophysics594: A13। arXiv:1502.01589অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1051/0004-6361/201525830বিবকোড:2016A&A...594A..13P 
  11. Fixsen, D. J. (ডিসেম্বর ২০০৯)। "The Temperature of the Cosmic Microwave Background"। The Astrophysical Journal707 (2): 916–920। arXiv:0911.1955অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1088/0004-637X/707/2/916বিবকোড:2009ApJ...707..916F 
  12. Davis, Tamara M.; Charles H. Lineweaver (২০০৪)। "Expanding Confusion: common misconceptions of cosmological horizons and the superluminal expansion of the universe"। Publications of the Astronomical Society of Australia21 (1): 97–109। arXiv:astro-ph/0310808অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1071/AS03040বিবকোড:2004PASA...21...97D 
  13. 1Jarrett, T. H. (২০০৪)। "Large Scale Structure in the Local Universe: The 2MASS Galaxy Catalog"। Publications of the Astronomical Society of Australia21 (4): 396–403। arXiv:astro-ph/0405069অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1071/AS04050বিবকোড:2004PASA...21..396J