মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ
নীতিবাক্য | 'In Pursuit of Knowledge And Excellence' |
---|---|
ধরন | সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় |
স্থাপিত | ২০০০ |
উপাচার্য | অধ্যাপক সব্যসাচী সেনগুপ্ত |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ | ১৭ (প্রায়) |
শিক্ষার্থী | ৭৮,০০০ (অফ-ক্যাম্পাস প্রায়) |
অবস্থান | , , |
শিক্ষাঙ্গন | শহরাঞ্চলীয় |
অধিভুক্তি | বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ভারত) |
ওয়েবসাইট | পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইট |
পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (ডব্লিউবিইউটি) পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি কলকাতার সমীপবর্তী বিধাননগর উপনগরীতে অবস্থিত। ডব্লিউবিইউটি বা ইউটেক নামে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন বিষয়ে পঠনপাঠনের সুবিধা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার পাঠগ্রহণ ও গবেষণার একটি উৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এছাড়া বিভিন্ন অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিগ্রি ও অ্যাডভান্স স্তরের কোর্স চালু হয় ম্যানেজমেন্ট, প্যারামেডিক্যাল ও অন্যান্য পেশাগত ক্ষেত্রেও। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এর এক্তিয়ারভুক্ত অঞ্চল হল সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]পশ্চিমবঙ্গে একটি জেলা ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যৌক্তিকতা ও সুযোগের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার জন্য ১৯৯৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ডক্টর অশেষ প্রসাদ মিত্রকে চেয়ারম্যান করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। রাজ্যে তথা সমগ্র দেশে ডিগ্রি ও উচ্চতর স্তরে প্রযুক্তি শিক্ষার হালহকিকত বিবেচনা করে কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে পশ্চিমবঙ্গে ডিগ্রিস্তরে প্রযুক্তিশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজনীয়। বর্তমান ও ভবিষ্যতের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি কলেজগুলির বিকাশ ও মানোন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রায়িত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা ও নির্দেশনা।
আত্মনির্ভরতা বাড়াতে দেশের প্রয়োজন বিশ্বমানের প্রযুক্তির বিকাশ। আর সেই জন্য প্রয়োজন কিছু উচ্চমানের শিক্ষাকেন্দ্র। কমিটি পশ্চিমবঙ্গে পৃথক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য দুটি লক্ষ্য ধার্য করে :
- শিক্ষণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে উৎকর্ষকেন্দ্র হিসেবে কাজ করা, এবং
- ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুমোদন দান করা।
২০০০ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাক্ট এক্সভি-র অধীনে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যাক্ট ২০০০ বিধানসভায় পাস হওয়ার পর ৫ অগস্ট, ২০০০ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৫ জানুয়ারি, ২০০১ তারিখে উপাচার্যের কার্যালয় সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়। এই আইনবলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ও উপদেশনার জন্য সাধারণ সমিতি, কার্যনির্বাহী সমিতি, শিক্ষা সংসদ, অর্থ সমিতি ও উপদেষ্টা সমিতি গঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের মহামান্য রাজ্যপাল পদাধিকার বলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। বর্তমানে আইনের জরুরি অস্থায়ী ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরামর্শে আচার্য কর্তৃক গঠিত একটি উপদেষ্টা সমিতির হাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনার ভার ন্যস্ত।
লক্ষ্য
[সম্পাদনা]- ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি, বিশেষত সংযোগমূলক প্রযুক্তির উপর বিভিন্ন স্নাতক কোর্স চালু করা।
- মৌলিক ও ফলিত বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি ইত্যাদি জ্ঞানবিজ্ঞানের যে সকল শাখার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শগত সম্পর্ক সেগুলির উপর স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা। এই কোর্সগুলির লক্ষ্য বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিবিদ ও ম্যানেজার গড়ে তোলা যাঁরা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শিল্পের বিকাশের পথে দেশকে সহায়তা করতে পারেন। এই কাজে বিভিন্ন সংস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণাগার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।
- মৌলিক ও ফলিত বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে উৎকর্ষকেন্দ্র গড়ে তোলা।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে শিক্ষাসংক্রান্ত সহায়তা ও নির্দেশনা দান সহ অনুমোদন করা।
- পরিবেশ বিজ্ঞান, শক্তিসম্পদের রক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার, তথ্য ও প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজির প্রতি সাধারণ আগ্রহ তৈরি করা।
- একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে দূরশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
- কর্মরত পেশাদারদের জ্ঞান ও দক্ষতা হালনাগাদ করতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
- বিভিন্ন শিল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে তাদের কনসালটেন্সি পরিষেবা দান।
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কোনও নতুন ক্ষেত্র বিকাশলাভ করলে সেই ক্ষেত্রে জ্ঞানবিতরণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রাঙ্গণ
[সম্পাদনা]বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম শুরু হয়েছিল ৪৩, শেকসপিয়র সরণির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহাফেজখানা ভবনে। পরে এটি উঠে আসে বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজ প্রাঙ্গণের একটি তিনতলা ও ৪৫০০০ বর্গফুট ভবনে। ক্যাম্পাস পরিবর্তনের কাজ এখনও চলছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধান ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ১০০ একর জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। মূল প্রাঙ্গণের অঙ্গ হিসেবে কল্যাণীর কাছে হরিণঘাটায় ৩৪ নং জাতীয় সড়কের ধারে ৪০ একর জমি দানও করা হয়েছে। এখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ও পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস গঠনের কাজ চলছে।
পাঠক্রম
[সম্পাদনা]প্রাথমিকভাবে একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিটেক, বিওপিটিএম, বিসিএ, বিটিটিএম, বিবিএ, বিই (হাউস কোর্সে) এবং বিভিন্ন স্নাতকোত্তর কোর্স, যেমন এমটেক, এমবিএ ও পিএইচডি কোর্স অফার করে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যে সকল ডিগ্রি অফার করে সেগুলি হল – বিটিটিএম, এইচপিএম, এমএসসি, বিএনএস, পিজি ডিপ্লোমা, বিবিএ (এইচ), বিএসএম, এমফার্ম, বিএসসি (এইচ), এমফিল, এমএইচএ, এমটেক, বিফার্ম, বিআর্ক, বিটেক, এমসিএ, এমসিএ (এইচ), এমবিএ, আইএমটি পিএইচডি, বিবিএ, বিসিএ, বিএইচএম, বিওপিটিএম, বিই, এইচএম, এমই, বিএমএস ও মাস্টার।
অনুমোদিত কলেজ
[সম্পাদনা]সারা পশ্চিমবঙ্গে মোট ১৩১টি কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত। এগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে আছে –
- ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইইএম)
- নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (এনএসইসি)
- মেঘনাদ সাহা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি
- ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, দুর্গাপুর
- সেন্ট টমাস কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি
- জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- হলদিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি
- টেকনো ইন্ডিয়া, সল্টলেক
- হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, কলকাতা
- ফিউচার ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (এফআইইএম)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইট
- পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওয়েবসাইট
- প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলির তথ্য[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ].
- পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে