১৯৭২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

১৯৭২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক (জার্মান: Olympische Sommerspiele 1972), সরকারীভাবে বিংশতম অলিম্পিয়াডের ত্রীড়া অলিম্পিক নামে পরিচিত। এটি পশ্চিম জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি আন্তর্জাতিক বহ-ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এটি ১৯৭২ এর ২৬ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই পুরো ক্রীড়ানুষ্ঠানের আনন্দ ম্লান হয়ে যায় অনুষ্ঠান চলার দ্বিতীয় সপ্তাহে ফিলিস্তিনী আততায়ী গোষ্ঠী কালো সেপ্টেম্বর দ্বারা ১১ জন ইসরাইলি খেলোয়াড় ও কোচকে হত্যার মাধ্যমে। যা ইতিহাসে মিউনিখ হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।

১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক; বার্লিনের ১৯৩৬ খেলার পর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বিতীয় গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, যা নাৎসী জার্মানির শাসনকালে হয়েছে। পশ্চিম জার্মানি; মিউনিখ অলিম্পিকের মাধ্যমে বিশ্বকে এটা দেখাতে বেশি উদগ্রীব ছিল যে, তারা কতটা গনতান্ত্রিক ও আশাবাদী। খেলার স্লোগান ছিল "ডাই হেইটার্ন স্পিল",[১] অথবা "আনন্দদায়ক ক্রীড়া"।[২] এই ক্রীড়ার লোগো ছিল ওটিল এইচার এর নীলবর্ণের সৌর প্রতীক ("উজ্জ্বল সূর্য")।[৩] অলিম্পিকে ঘোষিত মাস্কট ছিল ডাচশুন্ড "ওয়ালদি"। হার্বার্ট রেহবিন অলিম্পিকের ফ্যানফেয়ার কম্পোজ করেছিলেন।[৪]

অলিম্পিক পার্ক (অলিম্পিয়াপার্ক) ফ্রেই অট্টোর পরিকল্পনা অনুসারে গড়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতার সাইটের নকশা; স্থাপত্যশিল্পী গানথার বেসনিছ করেন। তার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অলিম্পিক হল, অলিম্পিক স্টেডিয়াম (অলিম্পিয়াস্টেডিওন), এবং অলিম্পিক গ্রাম, যা পার্কের খুব কাছেই অবস্থিত। আক্রিলিক কাচেঁর তৈরী চলনসক্ষম চাঁদোয়া দিয়ে করা স্টেডিয়ামের নকশা বৈপ্লবিক ছিল। এই ধরনের নকশা সেবারই প্রথম ছিল।[৫]

স্বাগতিক শহর নির্বাচন[সম্পাদনা]

১৯৭২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ফলাফল[৬]
শহর দেশ প্রথম রাউন্ড দ্বিতীয় রাউন্ড
মিউনিখ  পশ্চিম জার্মানি ২৯ ৩১
মাদ্রিদ টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Francoist Spain Spain ১৬ ১৬
মনট্রিল  কানাডা ১৩
ডেট্রয়েট  যুক্তরাষ্ট্র

১৯৬৬ সালের ২৬ এপ্রিল ইতালীর রোমে অনুষ্ঠিত ৬৪ তম আইওসি অধিবেশনে মিউনিখ তার অলিম্পিক নিলামে ডেট্রয়েড, মাদ্রিদ ও মন্ট্রিলকে হারিয়ে বিজয়ী হয়। মন্ট্রিলে পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পক অনুষ্ঠিত হয়।[৭]

মিউনিখ হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

এই খেলার আনন্দধারায় কালো ছায়ার চিহ্ন পরে মিউনিখ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। ৫ সেপ্টেম্বর ভোর হবার পূর্বে ফিলিস্তিনী সন্ত্রাসী সংগঠন কালো সেপ্টেম্বর অলিম্পিক গ্রামে প্রবেশ করে এবং ১১ জন ইসরায়েলী খেলোয়াড়, কোচ এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মানুষদের তাদের এপার্টমেন্ট থেকে জিম্মী করে। ২ জন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সেখানেই খুন হন। পরবর্তী আঠারোো ঘণ্টা তারা সেখানেই থাকে।

একইদিন ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে আততায়ী ও তাদের ৯ জন জিম্মীরা হেলিকপ্টার দ্বারা ফুরস্টেনফেল্ডব্রুকের সামরিক বিমানবন্দরে স্থানান্তরিত হয়। কারণ সন্ত্রাসীরা কোনো আরব দেশকে নির্ধারণ করতে পারে নি। জার্মান সংস্থা তাদেরকে সেখানেই এম্বুশ করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু সন্ত্রাসীদের থেকে কী পরিমাণ প্রতিরোধ আসবে, সে বিষয়ে সঠিক চিন্তা না করায়, সৈন্য কম পাঠায়। উদ্ধার কাজ চলার সময়, সমস্ত ইসরায়েলী জিম্মীরা মারা যায়। চারজন সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়; একজন সন্ত্রাসী জিম্মীরা যেখানে বসে ছিল, সেখানে আআত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। ৫ জন জিম্মী মেশিনগানের গুলিতে মারা যায়।

"আমরা অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে জানাচ্ছি যে, সন্ত্রাসীদের জিম্মায় ১১ জন ছিল। যাদের মধ্যে ২ জন গতকাল সকালে খুন গিয়েছেন এবং আজ রাতে ৯ জন খুন হয়েছেন। তারা সবাই চলে গিয়েছেন।"

—দফায় দফায় সংঘর্ষের খবরের নানামুখি গুজবের পর এবিসিএ জিম ম্যাককে স্থানীয় সময় ৩:২৪ এ এই খবর সম্প্রচার করেন।[৮]

তিনজন বাদে সমস্ত সন্ত্রাসীই মারা যান। তারা গ্রেফতার হন এবং যাবজ্জীবনের বিচার চলাকালে পশ্চিম জার্মানি সরকার কর্তৃক ১৯৭২ সালের ২৯ অক্টোবর জামিন পান ছিনতাইকৃত লুফথানসা বিমানের বিনিময়ে। অনুমান করা হয়, এদের মধ্যে দুইজন পরবর্তীতে মোসাদ কর্তৃক খুঁজে বের করে গুপ্তহত্যা করা হয়[৯] বিশ্বাস করা হয় একমাত্র আততায়ী জামাল আল-গেসে আজো বেচেঁ আছে, এবং লুকিয়ে আফ্রিকার কোনো দেশে বাস করছে, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে। অলিম্পিক এই আক্রমণের পর কিছু ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল। কিন্তু পুরো ঘটনা শেষ হবার পর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি এভ্রে ব্রুন্ডেজ ঘোষণা দিয়েছিলেন, "এই গেম চলবে"। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে একটি স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২৪ ঘমটা বন্ধ থাকার পর প্রতিযোগিতা পুনরায় চালু হয়। এই আক্রমণের পর কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়, ১৯৭৬ সালের শীতকালীন অলিম্পিকে। এরপর ২০০২ সালের শীতকালীন অলিম্পিকেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। কারণ সেটা ছিল ওয়ান ইলেভেনের পরের অলিম্পিক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, জার্মানি যে শান্তিকামী চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোচ্ছিল,তার কেন্দ্রীয় সরকার,এই হত্যাকান্ডের পর সন্ত্রাস বিরোধী পুলিশ নিয়ে পুনরায় চিন্তা করা শুরু করে। এরপর তারা অভিজাত সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট GSG 9 গঠন করে; যা ব্রিটিশ সাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এরপর ইসরায়েল ঈশ্বরের প্রতিশোধ নামে একটা ক্যাম্পেইন তৈরী করে, যার মূল কাজ ছিল এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করা ও গুপ্তহত্যা করা।

এই ঘটনা নিয়ে অস্কার বিজয়ী প্রামাণ্যচ্চিত্র ওয়ান ডে ইন সেপ্টেম্বর নির্মিত হয়।[১০] এর উপর ভিত্তি করে হয়েছে তিনটি চলচ্চিত্রঃ ১৯৭৬ সালে টিভি চলচ্চিত্র মিউনিখে ২১ ঘণ্টা, ১৯৮৬ সালে সোর্ড অব গিডিওন[১১] এবং স্টিভেন স্পেইলবার্গের ২০০৫ সালের চলচ্চিত্র মিউনিখ[১২] তার ১৯৭২ এর চলচ্চিত্রে সারাগ মোরিস ড. জিওগের সাক্ষাৎ নেন, যিনি পূর্বে পুলিশ মনস্তাত্ত্বিক ছিলেন। অলিম্পিকে হামলা চলার সময় তিনি পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছিলেন।[১৩]

শিরোনাম[সম্পাদনা]

অটেল এইচারের পিক্টোগ্রাম; যা মিউনিখ অলিম্পিকের জন্য নকশা করা
জার্মানির মিউনিখে ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদদের শোভাযাত্রা
  • এটা ছিল আইওসি সভাপতি এভ্রি ব্রুনডেজ এর নের্তৃত্বে সর্বশেষ অলিম্পিক প্রতিযোগিতা
  • মার্ক স্পিটজ, যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাঁতারু; তিনি সাতটা স্বর্ণপদক বিজয় করে বিশ্ব রেকর্ড করেন। তিনি ৪ বছর পূর্বে মেক্সিকো শহরের খেলায় আরো ২ টি স্বর্ণপদক জিতে মোট ৯ টি স্বর্ণপদক জিতেন)। স্পিটজের রেকর্ড ২০০৮ সালে মাইকেল ফিলিপ্স অতিক্রম করে।
  • অল্গা করবু৫, একজন সোভিয়েত শারীর-ক্রিয়াবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন দলগত ভাবে স্বর্ণ পদক পাওয়ার পর।
  • পুরুষদের বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায়, যুক্তরাষ্ট্রকে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিযোগিতায় হারায়; যা আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল প্রতিযোগিতার মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত প্রতিযোগিতা হিসেবে প্রখ্যাত।[১৪] টানটান সেই খেলায় যুক্তরাষ্ট্র ৫০-৪৯ এ ছিল। এরপর শেষ ৩ সেকেন্ডে সোভিয়েত ৫১-৫০ এ এগিয়ে যায়। সেসময় খেলাটি ৩ বার পুনরাবৃত্ত হয়েছিল[১৫] সবশেষে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রৌপ্য পদক স্বীকারে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে ও তাদের পদক সুইজারল্যান্ডের লুজানে সংরক্ষিত আছে।
  • ভ্যালেরি বরযোভ সোভিয়েত ইউনিয়নের, তিনি ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার ট্র্যাক ও ফিল্ড বিজয়ী হন। দুইজন শীর্ষ যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার রেয় রবিনসনএডি হার্ট, কোয়ার্টার ফাইনাল হেরে যান কারণ তারা ভুল সময়ে শুরু করেছিলেন।
  • দুইজন মার্কিন দৌড়বিদ ভিঞ্চেন্ট ম্যাথিউওয়াইন কলেট তাদের পদক (স্বর্ণ ও রোপ্য) কে ঘুরিয়েছেন একে অপরের সাথে মজা করেছেন এবং আমেরিকার পতাকাকে জাতীয় সংগীত দ্য স্টার স্প্যাংগল্ড ব্যানার বাজার সময় মুখ দেখাননি। তারা ১৯৬৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে টমি স্মিথজন কারলোসের ন্যায় আজীবন অলিম্পিক থেকে নিষিদ্ধ হয়ে যান।
  • যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াবিদ ডেভ ওটেল পুরুষের ৮০০ মি. এ বিজয়ী হবার পর, আনন্দ উৎযাপনের সময় নিজে গলফ টুপি খুলতে ভুলে যান। একে অনেকে ব্যাখ্যা করেন, ভিয়েতনামের যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ হিসাবে। পরবর্তীতে ওটেল একে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে তার জন্য ক্ষমা চান।
  • অস্ট্রেলীয় সাতারু; ১৫ বছর বয়সেই সান গুল্ড তিনটি স্বর্ণপদক, একটি ব্রোঞ্জ ও একটি সিলভার পদক জয় করেন
  • আবডালা বুকারাম ইকুয়েডরের পতাকা বহন করেন। তার ২৪ বছর পর তিনি ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি হন।
  • হ্যান্ডবল (১৯৩৬ সালে শেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল) এবং ধনুর্বিদ্যা (১৯২০ সালে শেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল) দীর্ঘসময় পর পুনরায় ফিরে আসে।
  • প্রতিবন্ধক ক্যানো চালনা সেবারই প্রথম অলিম্পিকে আয়োজিত হয়েছিল।
  • ড্যান গেবল কুস্তিতে স্বর্ণ পদক জিতেছেন; প্রতিপক্ষকে তার বিরুদ্ধে কোনো স্কোর করার সুযোগ না দিয়েই। অন্য কোনো খেলোয়াড় অলিম্পিকের ময়দানে আজ পর্যন্ত তার এ রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে নি।
  • উইম রুস্কা প্রথম জুডো খেলোয়াড় যিনি ২ টি স্বর্ণপদক পেয়েছেন।
  • প্রথমবারের মত রেফারীদের প্রতিনিধি অলিম্পিক শপথ নেন।
  • মার্কিন ফ্রাঙ্ক সর্টার জন্মগ্রহণ করেছেন মিউনিখে, তিনি ৬৪ বছরে তার দেশের প্রথম যিনি অলিম্পিক ম্যারাথনে স্বর্ণ জিতেছেন। জার্মান শিক্ষার্থী নোবার্ট সুধাস প্রতিযোগিতার ইউনিফর্ম পরে খেলায় ঢুকেন ও দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি শেষ কিলোমিটার অবধি দৌড়ান। জনগণ তাকেই বিজয়ী মনে করে, চিৎকার দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। এরপরই তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা বের করে দেয়। কিছু সেকেন্ড পর সর্টার পৌছানোর পর হতবিহ্বল হয়ে দেখতে পান, জনতা অন্যজনকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এটা অলিম্পিকের ইতিহাসে তৃতীয়বার ঘটেছে।
মিউনিখ অলিম্পিকে স্মরণীয় ১০ চিহ্ন সংবলিত মুদ্রা, ১৯৭২

স্থানসমূহ[সম্পাদনা]

অলিম্পিয়াপার্ককে আকাশথেকে দেখা

খরচ[সম্পাদনা]

অক্সফোর্ড অলিম্পিক স্টাডি ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে খরচের উপাত্ত তুলে ধরে। তাদের হিসাবে ২০১৫ সালের ডলার হিসেব ইউএসডি ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে।[১৬] এই হিসাবে শুধুমাত্র ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট হিসাবকেই পরিমাপ করা হয়েছে; অর্থাৎ যা ক্রীড়ার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যেমনঃ ক্রীড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত খরচ; ক্রীড়াবিদদের পরিবহন; সেখানে কর্মক্ষেত্র, প্রশাসন, নিরাপত্তা, খাদ্যাদি পরিবেশন, অনুষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সরাসরি অর্থের হিসাব যেমন ভেন্যু নির্বাচন, অলিম্পিক গ্রাম তৈরী, মিডিয়া ও সাংবাদিক সম্মেলন এসবকিছুর খরচ হিসাব করা হয়েছে। পরোক্ষ খরচ যেমন; এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে; রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, হোটেলের নানামুখি কর্মসুচি এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকে হিসাবে আনা হয় নি। মিউনিখ ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে খরচের হিসাবকে তুলনা করা হয় ২০১৬ সালের রিওর ৪.৬ বিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রীয় ডলারের সাথে। তুলনা করা হয় ২০১২ সালের লণ্ডনের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ১৫ বিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের সাথে, (যা গ্রীষ্মকালের অলিম্পিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি) তুলনা করা হয় ২০১৪ সালে সোচির ৫১ বিলিয়ন অর্থব্যয় করে আয়োজিত হওয়া অলিম্পিক ক্রীড়ার সাথে;যা ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান।[১৭] ১৯৬০ থেকে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেম এর হিসাবে গড়পড়তায় খরচ ৫.২ বিলিয়ন ইউএসডি ডলার।

পদক বিজয়ী[সম্পাদনা]

নিম্নোক্ত ২১ টি ক্রীড়ার জন্য ১৯৫ টি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল

প্রদর্শিত ক্রীড়া[সম্পাদনা]

অংশগ্রহণকারী জাতীয় ন্যাশনাল কমিটি[সম্পাদনা]

অংশগ্রহণকারী
দেশ অনুসারে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা

মিউনিখে ১১ জাতি অলিম্পিকে প্রথম পদার্পণ করে। এখানে আছে: আলবেনিয়া, দাহমে (বর্তমানে বেনিম), গাবন, উত্তর কোরিয়া, লেসোথো, মালওয়াই, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, টোগো, আপার ভল্টা (এখন বুর্কিনা ফাসো).

কুচকাওয়াজে জাতিগোষ্ঠী, জার্মান বর্ণঅনুসারে অংশগ্রহণ করে। এজন্য মিশর (ইজিপ্ট) থাকা সত্ত্বেও আগে গ্রিস গিয়েছে। পূর্ব জার্মানিকে সূচিত করা হয়েছে ডিডিআর হিসাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে সূচিত করা হয়েছে ইউডিএসএসআর হিসাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সূচিত করা হয়েছে ইউএসএ হিসাবে।[১৮]

রোডেসিয়ার ১৯৭২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে আমন্ত্রণ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি দ্বারা অনুষ্ঠান শুরুর ৪ দিন পূর্বে বাতিল করা হয়। কারণ, আফ্রিকার দেশগুলোতে রোডেসিয়ার সরকারের যে প্রতিরোধ চালু রেখেছিল, তার প্রতিক্রিয়ায় অলিম্পিক কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও রোডেসিয়া গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের কিছুদিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হওয়া হেইডেলবার্গের ১৯৭২ সালের প্যারা অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছিল।[১৯][২০]

অংশগ্রহণকারী জাতীয় অলিম্পক কমিটি

পঞ্জিকা[সম্পাদনা]

সকল সময় মধ্য ইউরোপীয় সময় (ইউটিসি+১) অনুসারে
OC উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ইভেন্ট প্রতিযোগিতা স্বর্ণ পদকের ইভেন্ট MS স্মারক সেবা CC সমাপনী অনুষ্ঠান
আগস্ট/সেপ্টেম্বর ২৬
শনি
২৭
রবি
২৮
সোম
২৯
মঙ্গল
৩০
বুধ
৩১
বৃহ

শুক্র

শনি

রবি

সোম

মঙ্গল

বুধ

বৃহ

শুক্র

শনি
১০
রবি
১১
সোম
ইভেন্ট
উদ্বোধনী OC MS CC
ধনুর্বিদ্যা
শরীরচর্চা ৩৮
বাস্কেটবল
বক্সিং ১১ ১১
নৌকা বাইচ ১১
সাইকেল চালনা
ডাইভিং
ঘোড়দৌড়
অসিক্রীড়া
মাঠে হকি
ফুটবল
ব্যায়াম (জিমন্যাস্টিকস) ১৪
হ্যান্ডবল
জুডো
আধুনিক পেনথালটন
রোয়িং
সেইলিং
শুটিং
সাতাঁর ২৯
ভলিবল
জলে ফুটবল
ভারোত্তোলন
কুস্তি ১০ ১০ ২০
দৈনিক পদকের ইভেন্ট ১২ ২৭ ১৬ ২৩ ১৪ ১৩ ১৬ ২৬ ২৩ ১৯৫
ক্রমবর্ধমান মোট ১০ ১৮ ৩১ ৫৮ ৭৪ ৯৭ ১১১ ১২৪ ১২৬ ১৪২ ১৪৫ ১৭১ ১৯৪ ১৯৫
আগস্ট/সেপ্টেম্বর ২৬
শনি
২৭
রবি
২৮
সোম
২৯
মঙ্গল
৩০
বুধ
৩১
বৃহ

শুক্র

শনি

রবি

সোম

মঙ্গল

বুধ

বৃহ

শুক্র

শনি
১০
রবি
১১
সোম
মোট ইভেন্ট


‡ ৫ সেপ্টেম্বর কোনো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজিতও হয় নি ও পুরস্কার দেওয়াও হয় নি এবং মিউনিখ হত্যাকান্ডের দরুণ পরদিন ২৪ ঘন্টা সকল প্রতিযোগিতামুলক কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়েছিল

‡ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৬ সেপ্টেম্বত স্মরণীয় স্তম্ভ তৈরী করা হয়েছিল। সেখানে ৮০ হাজার দর্শক ও ৩০০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহন করেছিল। পরদিন থেকে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা পুনরায় চালু হয়েছিল।


পদক গণনা[সম্পাদনা]

১৯৭২ সালের অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় নিম্নোক্ত দশটি দেশ পদক জয়ে শীর্ষে থাকে।

অবজাতিস্বর্ণরৌপ্যব্রোঞ্জমোট
 সোভিয়েত ইউনিয়ন৫০২৭২২৯৯
 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৩৩৩১৩০৯৪
 পূর্ব জার্মানি২০২৩২৩৬৬
 পশ্চিম জার্মানি*১৩১১১৬৪০
 জাপান১৩২৯
 অস্ট্রেলিয়া১৭
 পোল্যান্ড২১
 হাঙ্গেরি১৩১৬৩৫
 বুলগেরিয়া১০২১
১০ ইতালি১০১৮
মোট (১০টি জাতি)১৬১১৩৮১৪১৪৪০
চাবি

  *   স্বাগতিক জাতি (পশ্চিম জার্মানি)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Ein Geschenk der Deutschen an sich selbst"Der Spiegel (German ভাষায়) (35/1972)। আগস্ট ২১, ১৯৭২। পৃষ্ঠা 28–29। … für die versprochene Heiterkeit der Spiele, die den Berliner Monumentalismus von 1936 vergessen machen und dem Image der Bundesrepublik in aller Welt aufhelfen sollen 
  2. Digitized version of the Official Report of the Organizing Committee for the Games of the XXth Olympiad Munich 1972 (Volume 2) (জার্মান ভাষায়)। proSport GmbH & Co. KG. München Ed. Herbert Kunze। ১৯৭২। পৃষ্ঠা 22। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮… the theme of the "cheerful Games"… 
  3. "Official Emblem – Munich 1972 Olympics"। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৮, ২০১৩ 
  4. Herbert Rehbein: Olympic Fanfare Munich 1972 (TV Intro)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Uhrig, Klaus (মার্চ ২০, ২০১৪)। "Die gebaute Utopie: Das Münchner Olympiastadion" (জার্মান ভাষায়)। ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫ 
  6. "Past Olympic host city election results"GamesBids। ১০ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১১ 
  7. "IOC VOTE HISTORY"aldaver.com। ২৫ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৮ 
  8. "Transcend – Munich Massacre"Bleacher Report Media Lab। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৭ 
  9. Countering Terrorism: The Israeli Response To The 1972 Munich Olympic Massacre And The Development Of Independence Covert Action Teams, M.A. thesis by Alexander B. Calahan at Marine Corps Command and Staff College, 1995.
  10. Deming, Mark। "Movies  – One Day in September (1999)"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৫ 
  11. "Television  – Sword of Gideon"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৫ 
  12. Dargis, Manohla। "An Action Film About the Need to Talk"nytimes.com। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৫ 
  13. Herbert, Martin। "Sarah Morris"frieze.com। Frieze Magazine। ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৫ 
  14. "USA Basketball"। ২০০৭-০৮-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  15. "120 years, 120 stories (Part 15) : Soviets beat the Americans amidst controversies involving communist judges"। ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৪, ২০১৬ 
  16. Flyvbjerg, Bent; Stewart, Allison; Budzier, Alexander (২০১৬)। The Oxford Olympics Study 2016: Cost and Cost Overrun at the Games। Oxford: Saïd Business School Working Papers (Oxford: University of Oxford)। পৃষ্ঠা 9–13। এসএসআরএন 2804554অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  17. "Sochi 2014: the costliest Olympics yet but where has all the money gone?"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-১২ 
  18. ইউটিউবে Munich 1972 Opening Ceremony
  19. "1972: Rhodesia out of Olympics"
  20. "Rhodesia expelled", Montreal Gazette, August 23, 1972

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • "Munich 1972"Olympic.org। International Olympic Committee। 
  • "Results and Medalists" [ফলাফল ও পদক তালিকা]। Olympic.org (ইংরেজি ভাষায়)। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। 
  • The main theme of the 1972 Summer Olympics by Gunther Noris and the Big Band of Bundeswehr "Munich Fanfare March-Swinging Olympia ইউটিউবে ভিডিও

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Schiller, Kay, and Christopher Young. The 1972 Munich Olympics and the Making of Modern Germany (University of California Press; 2010) 348 pages
  • Preuss, Holger. The Economics of Staging the Olympics: A Comparison of the Games, 1972–2008 (2006)
  • Oxlade, Chris, et al. Olympics. Rev. ed. London: DK, 2005. Print.
ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
মেক্সিকো সিটি
গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস
মিউনিখ

১৯৭২
উত্তরসূরী
মন্ট্রিয়ল