হের্টা মুলার
হের্টা মুলার | |
---|---|
জন্ম | নিৎসকিডর্ফ, তিমিশ কাউন্টি, রোমানিয়া | ১৭ আগস্ট ১৯৫৩
পেশা | লেখক |
জাতীয়তা | জার্মান, রোমানীয় |
সময়কাল | ২০ শতকের শেষ থেকে–২১ শতকের শুরু পর্যন্ত |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ২০০৯ |
দাম্পত্যসঙ্গী | রিশার্ড ভাগনার |
হের্টা মুলার[টীকা ১](জার্মান: Herta Müller) (জন্ম: ১৭ই আগস্ট, ১৯৫৩) রোমানিয়ায় বংশোদ্ভূত জার্মান ঔপন্যাসিক। তিনি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। মুলার একাধারে কথাসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার এবং কবি হিসেবে পরিচিত। তার জন্ম রোমানিয়ায়। রোমানিয়ায় তার ওপর সরকারি পীড়নের কারণে ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রোমানিয়া থেকে জার্মানি চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি তিমিসোয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে জর্মণ ও রোমানীয় সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি রোমানীয় একনায়ক চসেস্কুর বিরোধিতা করেন এবং মানুষের চিন্তা ও মত-প্রকাশের স্বাধীনতার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। ২০০৯-এ প্রকাশিত হয়েছে তার সর্বশেষ উপন্যাস ডি আটেমশাউকেল।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]রোমানিয়ার একটি জার্মান-প্রধান ছোট্ট গ্রামে তার জন্ম ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট।[১] জীবিকার অর্জন শুরু হয় একটি ট্র্যাক্টর নির্মাতা কারখানার ম্যানুয়াল বা নির্দেশিকা অনুবাদের কাজের মধ্য দিয়ে। এরই মধ্যে সিক্রেট পুলিশ তাকে গুপ্তচরবৃত্তির প্রস্তাব দেয়। তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে শুরু হয় নিপীড়নমূলক আচরণ। সিক্রেট পুলিশের নির্দেশে তাকে অফিসে কাজ করতে দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে ছাঁটাই করা হয়। গুজব ছড়ানো হয় তিনি সিক্রেট পুলিশের গুপ্তচর। তার বাসা তল্লাশী করা হয়। নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ সময় লেখালেখির মধ্যে একটি যাপনযোগ্য জীবনের ঠিকানার সন্ধান লাভ করেন। এভাবেই তিনি একজন লেখিকায় পরিণত হন।[২] ১৯৮২ সাল প্রকাশ করেন প্রখম গ্রন্থ।[১]
সাহিত্যিক চেতনা
[সম্পাদনা]১৯৮৭-তে মুলার রোমানিয়া থেকে জামার্নিতে অভিবাসী হন। তা স্বত্ত্বেও রোমানিয়ার জীবন এখনও তার সাহিত্যিক চিন্তা-চেতনার প্রধান উপজীব্য। মুলারের শৈশব-যৌবনের ৩০টি বছর কেটেছিল একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি চিন্তা ও প্রকাশের স্বাধীনতার আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, "আমি গল্প খুঁজি না, গল্প আমাকে খুজেঁ নেয়"। অন্যত্র বলেছেন, "আমি মুলত নিজের জন্য লিখি"। লেখার মধ্য দিয়েই বাস্তবতার প্রকৃত রূপটি সঠিকভাবে উপলব্ধ হয়। ফলে তার অধিকাংশ কাহিনীতে আত্মজীবনীমূলক বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট। অন্যদিকে তার ভাষাভঙ্গী ও কাহিনী বিন্যাস জটিল। তার মাতৃভাষা জার্মান হলেও ভাষাশৈলীতে রোমানীয় ভাষা-সংস্কৃতির প্রভাব প্রত্যক্ষ হয়। লেখালেখির মধ্যেই জীবনধারণ করে আছেন মুলার। ইউরোপের রাজনীতি ও যুদ্ধগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা তাকে ভাবায়। মিলোসেভিচকে নিয়ে তার মন্তব্য, "এ এমন এক লোক, যেখানেই সে যায়, নতুন নতুন সমাধিক্ষেত্র বানায়।"[৩]
প্রকাশিত গ্রন্থাদি
[সম্পাদনা]মুলারের প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ২০ (২০০৯)। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়; এটি ছিল ১৫টি ছোট গল্পের সঙ্কলন যার শিরোনাম নিডারুঙেন (Niederungen)।[৪] ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে এটি ইংরেজিতে অনূদিত ও প্রকাশিত হয় Nadirs প্রচ্ছদনামে। তার বিভিন্ন গ্রন্থ ইংরেজি, ফরাসি, স্পেনীয় এবং সুয়েডীয় ভাষায় অনূদিত এবং প্রকাশিত হয়েছে।[৫]
জার্মান ভাষায়
[সম্পাদনা]- নিডারুঙেন Niederungen : Bukarest : Kriterion-Verlag, ১৯৮২ এবং Berlin : Rotbuch-Verlag, ১৯৮৪।
- ড্রুকেন্ডার টাঙ্গো Drückender Tango : Erzählungen. – বুখারেস্ট: Kriterion-Verlag, ১৯৮৪; Reinbek bei Hamburg : Rowohlt, ১৯৯৬।
- ডের মেন্শ ইস্ট আইন গ্রোসার ফাজান আউফ ডের ভেল্ট Der Mensch ist ein groβer Fasan auf der Welt : Roman. – বার্লিন: Rotbuch-Verlag, 1986
- বারফুসিগার ফেব্রুয়ার Barfüβiger Februar : Prosa. – বার্লিন: Rotbuch-Verlag, ১৯৮৭।
- রাইজেন্ডে আউফ আইনেম বাইন Reisende auf einem Bein. – বার্লিন: Rotbuch-Verlag, ১৯৮৯।
- ডের টয়ফেল জিৎস্ট ইম ষ্পিগেল Der Teufel sitzt im Spiegel. – বার্লিন: Rotbuch-Verlag, ১৯৯১।
- ডের ফুখ্স ভার ডামাল্স শোন ডের ইয়েগার Der Fuchs war damals schon der Jäger : Roman. – Reinbek bei Hamburg : Rowohlt, ১৯৯২।
- আইনে ভার্মে কার্টফেল ইস্ট আইন ভার্মেস বেট Eine warme Kartoffel ist ein warmes Bett – Hamburg : Europäische Verlagsanstalt, ১৯৯২।
- ডের ভেক্সটার নিম্ট জাইনেন কাম: ফম ভেগ্গেএন উন্ড আউসশেরেন Der Wächter nimmt seinen Kamm : vom Weggehen und Ausscheren. – Reinbek bei Hamburg : Rowohlt, ১৯৯৩।
- হের্ৎসটিয়ার Herztier" : Roman. – Reinbek bei Hamburg : Rowohlt, ১৯৯৪।
- হুঙার উন্ড জাইডে Hunger und Seide : Essays. – Reinbek bei Hamburg : Rowohlt, ১৯৯৫।
- ইন ডের ফালে In der Falle. – Göttingen : Wallstein-Verlag, 1996
- 'হয়টে ভের ইশ মির লিবার নিশ্ট বেগেগ্নেট Heute wär ich mir lieber nicht begegnet. – Reinbek bei হামবুর্গ: Rowohlt, ১৯৯৭।
- ডের ফ্রেমডে ব্লিক ওডার ডাস লেবেন ইস্ট আইন ফুর্ৎস ইন ডের লাটের্নে Der fremde Blick oder Das Leben ist ein Furz in der Laterne. – Göttingen : Wallstein-Verlag, ১৯৯৯।
- ইম হারক্নোটেন ভোন্ট আইনে ডামে Im Haarknoten wohnt eine Dame. – Reinbek bei হামবুর্গ: Rowohlt, ২০০০।
- হাইমাট ইস্ট ডাস, ভাস গেষ্প্রখেন ভির্ড Heimat ist das, was gesprochen wird. – Blieskastel : Gollenstein, ২০০১।
- ডের কোনিগ ফেরনাইগ্ট জিশ উন্ড টোটেট Der König verneigt sich und tötet. – মিউনিখ: Hanser, ২০০৩।
- ডি ব্লাসেন হেরেন মিট ডেন মোক্কাটাসেন Die blassen Herren mit den Mokkatassen. – মিউনিখ: Hanser, ২০০৫।
- আটেমশাউকেল Atemschaukel : Roman. – মিউনিখ: Hanser, ২০০৯।
- Immer derselbe Schnee und immer derselbe Onkel. – মিউনিখ: Hanser, ২০১১।
- Vater telefoniert mit den Fliegen. – মিউনিখ: Hanser, ২০১২।
পুরস্কার
[সম্পাদনা]নোবেল পুরস্কার
[সম্পাদনা]৮ অক্টোবর ২০০৯ সুইডিশ কমিটি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারের জন্য হের্টা মুলারের নাম ঘোষণা করে। ঘোষণায় বলা হয়, কবিতার একাগ্রতা এবং গদ্যের নিরাবরণতা দিয়ে তিনি উদ্বাস্তু ঊণ্মূল মানুষের জীবনমণ্ডপের চিত্র অঙ্কন করেছেন। আরো বলা হয়, তার ভাষা তুলনারহিত, এবং একনায়কতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থায় মানব জীবনের বাস্তব কাহিনী পাওয়া যায় তার রচনাবলীতে। বিশ্বের সাহিত্য মহলে প্রায় অপরিচিত এবং স্বল্প পঠিত হের্টা মুলারকে নোবলের জন্য মনোনয়ন দেয়ায় বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন ওঠে। ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার মূল্যমানের এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচন স্বয়ং হের্টা মুলারকেও বিস্মিত করে।[৬] নোবেল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে এ বৎসর একটি ভোটগ্রহণ প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে ১২ অক্টোবর ২০০৯ পর্যন্ত ১১ হাজার ২৯২ জন ভোটদাতার মধ্যে ৯৩ শতাংশ তার কোন লেখাই পড়েননি।[৭] ১৯৯৯-এ গুণ্টার গ্রাসের পর তিনিই প্রথম জার্মান যাকে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো।
অন্যান্য পুরস্কার
[সম্পাদনা]- International Dublin Impac Literary Award in 1998.
- বার্লিন সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৫
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ এই জার্মান ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপেডিয়া:বাংলা ভাষায় জার্মান শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ-এ ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "ভোরেরকাগজ.নেট"। ১৯ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ রেডিও ফ্রি ইওরোপ-এর রোমানিয়া-মালদোভা সার্ভিসের কর্মী মিরসিয়া ইয়োরগুলেস্কু কর্তৃক গৃহীত হের্টা মুলারের সাক্ষাৎকার, ১৯৯৯ খ্রীস্টাব্দ।।
- ↑ http://www.nytimes.com/2009/10/09/books/09nobel.html?_r=1
- ↑ [২]
- ↑ [৩]
- ↑ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2009-10-16/news/12604[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Herta Muller, সম্পাদনাঃ BRIGID HAINES. (Contemporary German Writers) Cardiff: University of Wales Press. 1998. xi + 157 pp. 7.99 [pounds sterling].
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ২০০৯-এর নোবেল ঘোষণা
- সুইডিশ কমটির স্থায়ী সচিবের সাক্ষাৎকার
- দ্য ল্যান্ড অব গ্রীন গ্রাস-এর আলোচনা, ১৯৯৬
- দ্য এপয়েন্টমেন্ট গ্রন্থটির আলোচনা, ২০০১
- হের্টা মুলারের "ফিউনেরাল সারমন" গল্পটির বাংলা অনুবাদ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে
- হের্টা মুলারের সাক্ষাৎকারঃ "আমি তাই লিখি যা আমাকে গ্রাস করে"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]