সৈয়দা শাহার বানু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সৈয়দা শাহার বানু
জন্ম১৯১৪
মৃত্যু২১ শে অক্টোবর, ১৯৮৩
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯১৪-১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১)
বাংলাদেশী(১৯৭১-১৯৮৩)
পেশারাজনীতি
পরিচিতির কারণভাষা আন্দোলন
দাম্পত্য সঙ্গীআবু আহমদ আব্দুল হাফিজ
সন্তানআবু আহমদ আব্দুল মুহসি
আবুল মাল আবদুল মুহিত
এ কে আব্দুল মুবিন
এ কে আব্দুল মোমেন
ড. শাহলা খাতুন
আত্মীয়দেওয়ান সৈয়দ আজমল আলী চৌধুরী (প্রপিতা)
মৌলভী আব্দুল করীম (শাশুড়ির চাচা)
আব্দুল হামীদ (শাশুড়ির ভাই)

সৈয়দা শাহার বানু (১৯১৪-১৯৮৩) ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং সিলেটের নারী জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন । তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ভাষা আন্দোলন এবং সিলেটের ঐতিহাসিক গণভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন তার সন্তান। [১]

জন্ম ও পরিবার[সম্পাদনা]

১৯১৪ সালে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের সৈয়দপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহার বানু। তার পিতা সৈয়দ আবুল বাশার চৌধুরী। তার দাদা ছিলেন মরমী কবি সৈয়দ আশহর আলী। এবং প্রপিতা দেওয়ান সৈয়দ আজমল আলী চৌধুরী ছিলেন জমিদার।

তাঁর স্বামী আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ উকিল মিঞা ছিলেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সিলেট শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সিলেট গণভোটপাকিস্তান আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।[২] তাঁর শ্বশুর খান বাহাদুর আব্দুর রহীম ছিলেন রায়নগরের মুন্সী আব্দুল কাদের ও মতি বিবি বিনতে মুহম্মদ উজায়েরের ছেলে। তাঁর শাশুড়ি হাফিজা বানু ছিলেন পাঠানটুলার আব্দুল কাদেরের মেয়ে, মৌলভী আব্দুল করীমের ভাতিজি এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামীদের বোন।[৩] তাঁর ১৪ সন্তানদের মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাঁতুন[৪][৫]

সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

স্বামী এডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ ছিলেন একজন বলিষ্ঠ আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ। স্বামীর প্রেরনায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।[৬] ছিলেন সিলেট মহিলা মুসলিম লীগের অন্যতম উদ্যোক্তা। ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সিলেট মহিলা মুসলিম লীগের সহ সভানেত্রী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সিলেট মহিলা সমিতির সভাপতি হন। সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ছিলেন আসাম পার্লামেন্টে প্রথম মুসলমান মহিলা এমপি। সিলেটের ঐতিহাসিক গণভোটে তার অবদান ছিলো অপরিসীম।ঘরে ঘরে মহিলাদের কাছে যেয়ে তাদেরকে সংগঠিত করতেন। যা গণভোটে প্রত্যক্ষ ভুমিকা রাখে। এসময় রক্ষনশীল সমাজ এবং কংগ্রেসের শক্তিশালী বাঁধা উপেক্ষা করে ঝুঁকির মধ্যে তাকে কাজ করতে হয়। সিলেট মহিলা কলেজের শুরু থেকেই এর সাথে জড়িত ছিলেন শাহার বানু চৌধুরী[৭]। ১৯৫০ এ কলেজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে এটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। মেয়েদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। মেট্রিক পাস মেয়েদেরকে কলেজে ভর্তি করার জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে মেয়েদেরকে বুঝাতেন।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা[সম্পাদনা]

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরুর দিকেই সিলেট জেলার মহিলাদের পক্ষ থেকে পূর্ববঙ্গের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। আর ঐতিহাসিক এই স্মারকলিপির অন্যতম উদ্যোক্তা ও স্বাক্ষরদাতা ছিলেন শাহার বানু চৌধুরী।[৮] সিলেটে ভাষার জন্য সমস্ত আন্দোলনে তিনি অন্যতম নেতৃত্ব প্রদান করেন। আরেক মহান ভাষা সৈনিক জোবেদা খানম চৌধুরী এবং অন্যান্যদের সাথে ভাষার অধিকার আদায়ের এই সংগ্রামের কারণে বিভিন্ন পাকিস্থানপন্থী মহলের কাছে তাদেরকে নিগৃহীত হতে হয়। পত্রিকায় কুৎসা রটানো থেকে শুরু করে সামাজিক ভাবে বিভিন্ন লাঞ্চনার শিকার হন এই মহান ভাষা সংগ্রামীরা।[৯]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

সৈয়দা শাহার বানু ১৯৮৩ সালের ২১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. [১] জননেতা ডট কম
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"sylhetsadar.sylhet.gov.bd। ১৬ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  3. কামাল শাহ, সম্পাদক (জুলাই ২০০০)। আবু আহমদ আবদুল হাফিজ জন্মশতবার্ষিকী স্মারক 
  4. মুহিত আগের চেয়ে ভালো আছেন, জানালেন ভাই মোমেন, বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ৫ আগস্ট ২০২১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. ‘জীবনটা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট’, প্রথম আলো, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭
  6. [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ মার্চ ২০১৪ তারিখে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওয়েবসাইট
  7. [৩] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ —– ৭৫ বছরের আলোকবর্তিকা
  8. [৪] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী
  9. [৫] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে সিলেট এক্সপ্রেসঃ ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারী সমাজের ভূমিকা