শঙ্খ চৌধুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শঙ্খ চৌধুরী (২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬ –  ২৮ আগস্ট ২০০৬) ছিলেন একজন খ্যাতিমান ভারতীয় বাঙালি ভাস্কর। আসল বা পোশাকি নাম নরনারায়ণ, কিন্তু তিনি 'শঙ্খ' ডাকনামেই পরিচিত ছিলেন ভারতের শিল্পকলা জগতে। [১][২]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শঙ্খ চৌধুরীর জন্ম ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি বৃটিশ ভারতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে গঠিত বিহার রাজ্যের বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে। পিতা সংস্কৃতজ্ঞ নরেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন ঢাকার অ্যাডভোকেট। মাতা কিরণময়ী। তিনি ছিলেন পিতামাতার কনিষ্ঠ সন্তান। শঙ্খ ঢাকায় বাল্যশিক্ষা সমাপ্তির পর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীতে ভরতি হন এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দেস্নাতক হন। এরপর রামকিঙ্কর বেইজের তত্ত্বাবধানে ভাস্কর্যকলার অনুশীলনে ব্রতী হন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে কলাভবনের ফাইন আর্টস তথা চারুকলার শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। স্নাতকোত্তর পর্বে তিনি রামকিঙ্করের সাথে নেপালে যান এবং সেখানে তিনি  ষুদ্ধ-স্মারক গড়তে রামকিঙ্কর বেইজকে সহায়তা করেন। নেপালের ব্রোঞ্জ ঢালাইয়ের কাজ প্রত্যক্ষ করেন এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করেন।

কর্মজীবন ও শিল্পকর্ম[সম্পাদনা]

প্রায় দুবৎসর পর তিনি ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রকের অনুদান পেয়ে নির্বিঘ্নে সৃজনশীল কর্মে মনসংযোগ করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কুড়িটি শিল্পকর্ম নিয়ে বোম্বাইয়ে প্রথম একক প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এখানে সফলতা পাওয়ার পর তিনি প্রাচীন ও সমকালীন রীতিনীতি পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলনের জন্য ওই বছরেই ইউরোপ গমন করেন। সেই সময়কার আভঁ-গার্দ শিল্প আন্দোলনের কিউবিজম প্রথায় কিছু কাজ তিনি শুরু করার পর প্যারিসে ইভস্থান বেথির দ্বারা প্রভাবিত হন। শিক্ষার্থীর অনুসন্ধিৎসা নিয়ে ঘুরে দেখেন ইটালি, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও হল্যান্ডের শিল্পকেন্দ্রগুলি। এ সকল স্থানের প্রখ্যাত চিত্র ও সংগ্রহশালা পরিদর্শনে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন এবং দেশে ফিরে আসেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বরোদার মহারাজা সয়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্টস এর বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন। শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। প্রায় কুড়ি বৎসর অধ্যাপনা পর স্বেচ্ছা-অবসর নেন।

শঙ্খ চৌধুরীর ভাস্কর্যকলার আদিপর্বের মাধ্যম ছিল প্রধানত দারু ভাস্কর্য। আবলুস,পাইন, ওক ইত্যাদি কাঠের গড়া ভাস্কর্যগুলিতে "ফর্ম" অর্থাৎ আকার-আকৃতির সংক্ষিপ্ত রূপারোপ ছিল তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য। শ্বেতপাথর, ব্লাক মার্বেল, লাইমস্টোনে গড়া ভাস্কর্যে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে তৈরি ব্লাক মার্বেলে খোদিত মসৃণ ভাস্কর্য শৃঙ্গারনেহেরু মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে। ধাতুর পাতে গড়া ভাস্কর্যের মধ্যে  তামা'য় গড়া কক, অ্যালুমিনিয়াম ও পিতলে গড়া মিউজিক এবং পিতলে গড়া কেমিস্ট তাঁর উদ্ভাবনী মানসিকতার নিদর্শন। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রতিকৃতি ভাস্কর্য হল–

  • আমার পিতা
  • আবদুল গফুর খান
  • একজন ইংরেজের প্রতিমৃর্তি
  • মহাত্মা গান্ধী
  • ইন্দিরা গান্ধী

দিল্লির প্রগতি ময়দানেগ্রামীণ ভারত প্রাঙ্গণ শঙ্খ চৌধুরীর নকশায় তৈরি করা হয়েছে এবং ললিত কলা একাডেমিতে গঠিত স্টুডিও তৈরি হয়েছিল তাঁরই প্রচেষ্টায়। স্মৃতিবিস্মৃতি হল শঙ্খ চৌধুরী রচিত একটি গ্রন্থ।

অলংকৃত পদসমূহ[সম্পাদনা]

শঙ্খ চৌধুরী কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে যে যে পদে কর্মরত ছিলেন ও সাম্মানিক পদ অলংকৃত করেন সেগুলি হল–

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

শঙ্খ চৌধুরী শিল্পকর্মের জন্য দেশ বিদেশ হতে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

অংশগ্রহণ এবং প্রতিনিধিত্ব[সম্পাদনা]

উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী[সম্পাদনা]

দেশে-বিদেশের বহু স্থানে  শঙ্খ চৌধুরীর ভাস্কর্যকলা প্রদর্শিত হয়েছে।

  • ১৯৪৬:  বোম্বাইয়ে প্রথম  একক প্রদর্শনী।
  • ১৯৫৪: সমসাময়িক ভাস্কর্যের প্রদর্শনী, আধুনিক শিল্পকলার জাতীয় গ্যালারি।
  • ১৯৫৭: নয়াদিল্লিতে একক প্রদর্শনী।
  • ১৯৬৯:  বোম্বাইয়ে একক প্রদর্শনী।
  • ১৯৭১: রেট্রোস্পেক্টিভ শো: ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট।
  • ১৯৭৯:  বোম্বাইয়ে ইরা চৌধুরীর সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনী।
  • ১৯৮৭:  নয়াদিল্লি একক প্রদর্শনী।
  • ১৯৮৭: স্কেচ এবং অঙ্কন ইত্যাদির একক প্রদর্শনী, কলকাতা
  • ১৯৯১: কলকাতায় একক প্রদর্শনী।
  • ১৯৯২: এলটিজি গ্যালারি, নয়া দিল্লিতে একক প্রদর্শনী।
  • ১৯৯৫: বোম্বাইয়ের সাইমরোজা আর্ট গ্যালারিতে  - একক প্রদর্শনী
  • ২০০৪: সরোজান আর্ট গ্যালারি দ্বারা আয়োজিত বরোদায় একক প্রদর্শনী।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Publications, Europa (২৩ জুন ২০১৭)। The International Who's Who 2004। Psychology Press। আইএসবিএন 9781857432176 – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  2.   অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৬৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]