সবুজ ঘুঘু
সবুজ ঘুঘু Chalcophaps indica | |
---|---|
পুরুষ সবুজ ঘুঘু, বাল্টিমোর, যুক্তরাষ্ট্র | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Columbiformes |
পরিবার: | কলাম্বিডি |
গণ: | Chalcophaps |
প্রজাতি: | C. indica |
দ্বিপদী নাম | |
Chalcophaps indica (লিনিয়াস, ১৭৫৮) |
রাজ ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু বা বাঁশঘুঘু (ইংরেজি: Common Emerald Dove, Green Dove, Green-winged pigeon; বৈজ্ঞানিক নাম: Chalcophaps indica) কলাম্বিডি গোত্রের অন্তর্গত অত্যন্ত সুন্দর ঘুঘু পাখিবিশেষ।[১] কোথাও কোথাও এরা পাতি শ্যামাঘুঘু নামেও পরিচিত। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস। সংখ্যার বিশালতার কারণে এদের মোট সংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি। গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এসে পৌঁছায়নি, যদিও কোন কোন দেশে এদের অবস্থা খুব খারাপ। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. সবুজ ঘুঘুকে আশঙ্কাহীন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।[২] সবুজ ঘুঘু ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের প্রাদেশিক পাখি হিসেবে পরিচিত।
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ফিলিপাইন, জাপান, পাপুয়া নিউগিনি, চীনের দক্ষিণাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তর ও পূর্বাংশ সবুজ ঘুঘুর প্রধান আবাস।[২][৩] এছাড়া পুয়ের্তো রিকোতে এদের অবমুক্ত করা হয়েছে।[২] বাংলাদেশে এদের সংখ্যা দারুণভাবে কমে গেছে। সুন্দরবনে প্রচুর আছে। সিলেটের বিভিন্ন বনেও আছে বেশ। একসময় প্রায় সারা দেশেই গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। কিন্তু শিকারীদের কবলে পড়ে এবং বাঁশঝাড় ও ঝোঁপ-জঙ্গল কমে যাওয়ায় বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না। বলা যায় বিপন্ন। তবে বাগেরহাটের গ্রামীণ বনগুলোতে আর যশোরের পানের বরজে এরা এখনো মোটামুটি আছে।[৪] পশ্চিমবঙ্গের অভয়ারণ্যগুলোতে এরা বেশ ভাল পরিমাণেই টিকে আছে।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনানুসারে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।[৫]
উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]সবুজ ঘুঘুর ছয়টি উপপ্রজাতি পাওয়া যায়:
- C. i. indica (লিনিয়াস, ১৭৫৮) - দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
- C. i. robinsoni বেকার, ১৯২৮ - শ্রীলঙ্কা
- C. i. maxima হার্টের্ট, ১৯৩১ - আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ
- C. i. augusta বোনাপার্টে, ১৮৫৫ - নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
- C. i. natalis লিস্টার, ১৮৮৯ - ক্রিসমাস দ্বীপপুঞ্জ. অপর নাম ক্রিসমাস এমারেল্ড ডাভ.
- C. i. minima হার্টের্ট, ১৯৩১ - নুমফোর, বিয়াক ও মিওস নুম দ্বীপপুঞ্জ
বিবরণ
[সম্পাদনা]ঘুঘুর দ্বিতীয় কোন প্রজাতির এমন রঙ নেই; পুরুষ ঘুঘুর পিঠের দিক এবং ডানা ধাতব সবুজ বা পান্না রঙের; পেটের দিক গোলাপী ধূসর বা উজ্জ্বল গোলাপী; মাথা এবং ঘাড় ধূসরাভ। কপাল ভ্রু এবং কাঁধ সাদা। ঠোঁট লাল এবং পা ও পাতা সিঁদুরে লাল। স্ত্রীজাতীয় ঘুঘুর রঙ প্রায় পুরুষের মত তবে ফিকে, কপাল ও ভ্রু ধূসর, মাথা এবং ঘাড় বাদামী, কাঁধে সাদা পট্টি নেই বা অস্পষ্ট। পিঠের উপর সাদা ও কালো মোটা পট্টি। লেজ ও ডানার ডগা কালো। বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়ের মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি-ধূসর, কপালে দুটো ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে-বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে।[১] দৈর্ঘ্যে কম-বেশি ২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৩০ থেকে ১৩৫ গ্রাম। বাঁচে ছয় থেকে সাত বছর।[৪]
আচরণ
[সম্পাদনা]মূলত পাতাঝরা, চিরসবুজ, শাল ও বাঁশবনের বাসিন্দা। সচরাচর একাকি ছায়াঘেরা বনের নির্জন জায়গায় বা ঝোঁপ-ঝাড়ের মেঝেতে হেঁটে বেড়িয়ে মাটিতে পড়ে থাকা ফল ও তার বিচি, শস্যদানা, বীজ এবং কিছু কীটপতঙ্গ, বিশেষ করে উইপোকা খায়। খুব সকালে ও বেলা শেষের দিকে খাবার খুঁজে বেড়ায়। বাকি সময় বৃক্ষডালে বসেই সময় কাটায়। এরা খুব সতর্ক ও লাজুক স্বভাবের। কোনো রকম শব্দ পেলেই দ্রুতবেগে উড়ে যায়। বনের ভেতরে খুব কম উচ্চতায়ও বেশ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে।[৪] খুবই করুণ সুরে বিলাপের মত করে কু-উ বা হুউন করে ডাকে।[১]
প্রজনন
[সম্পাদনা]সারা বছর প্রজনন করতে পারলেও সাধারণত বর্ষার আগে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ডিম দেয় বেশি। ছোট গাছ, বাঁশঝাড় বা ঝোঁপ-ঝাড়ে কয়েকটি কাঠিকুটি জড়ো করে ছোট্ট ও অগোছালো বাসা বানায়। স্ত্রীজাতীয় ঘুঘু দুটো হালকা ঘিয়ে বা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১২ দিনে।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ১৪৯।
- ↑ ক খ গ [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, BirdLife International, সবুজ ঘুঘু বিষয়ক নিবন্ধ।
- ↑ [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ এপ্রিল ২০১২ তারিখে, সবুজ ঘুঘু বিষয়ক নিবন্ধ।
- ↑ ক খ গ ঘ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;বাঁশঘুঘু
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০ ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা- ১১৮৪৫৯
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- ঘুঘু
- এশিয়ার পাখি
- ভারতের পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- ক্যালকোফ্যাপ্স
- অস্ট্রেলিয়ার পাখি
- ভুটানের পাখি
- ওশেনিয়ার পাখি
- ব্রুনাইয়ের পাখি
- কম্বোডিয়ার পাখি
- চীনের পাখি
- হংকংয়ের পাখি
- ক্রিস্টমাস দ্বীপের পাখি
- ইন্দোনেশিয়ার পাখি
- জাপানের পাখি
- লাওসের পাখি
- মালয়েশিয়ার পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- নেপালের পাখি
- নিউ ক্যালিডোনিয়ার পাখি
- নরফোক দ্বীপের পাখি
- পাপুয়া নিউ গিনির পাখি
- ফিলিপাইনের পাখি
- সিঙ্গাপুরের পাখি
- শ্রীলঙ্কার পাখি
- তাইওয়ানের পাখি
- থাইল্যান্ডের পাখি
- পূর্ব তিমুরের পাখি
- ভানুয়াতুর পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- ১৭৫৮-এ বর্ণিত পাখি
- কার্ল লিনিয়াস কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা
- দক্ষিণ এশিয়ার পাখি
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাখি